পূ’বপ্রস্তুতিঃ গত বছরের অক্টোবরের দিকে চারজন(আমি - উদাস , সুপারি , সৈনিক , সিরাজ ভাই) মিলে ঢাকার বাহিরের কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম। কেউ প্রস্তাব করল সেন্টমা'টিন, কেউবা সুন্দরবন,কেউ কুয়াকাটা। তবে আমাদের চারজনের একজন(সুপারি) প্রস্তাব করল সব'শেষ ইত্যাদিতে বান্দরবানের অনেক ভিতরে বড়পাথর/তিন্দুর নামক একটা জায়গা দেখিয়েছে, ঐ জায়গায় যাওয়া যায়। কিভাবে যাওয়া যায় প্রশ্ন করতেই, সুপারি উত্তর দিল সে জানেনা। ২/৩ দিন খোজ খবর নিলাম কিভাবে যাওয়া যায়, কতদিন লাগবে যেতে ইত্যাদি? কোন নিভ'রযোগ্য উত্তর পেলাম না- কেউ বলল বান্দরবান থেকে তিন্দুর ২৪ ঘন্টার বেশি রাস্তা এবং ইত্যাদি ইত্যাদি। অপরিচিত জায়গা, অনিভ'রযোগ্য সুত্র সব মিলিয়ে আমার এবং সিরাজ ভাইয়েররক্ত কেমন যানি চনমন করে উঠল। আমি এবং সিরাজ ভাই রাজি, ভাবটা এমন যেন- কপালে যা থাকে দেখা যাক কতদূর যেতে পারি।বলে রাখি, আমাদের হাতে সময় ছিল বৃহস্পতিবারের রাত্র থেকে সোমবার অফিস টাইমের পূব' মোমেন্ট পয'ন্ত।
বুধবারে সকালের দিকে বাস কাউন্টারে খবর নিয়ে জানলাম ঢাকা থেকে বান্দরবানের সরাসরি বাসের টিকেট ফিনিশ। উপায়ন্তর না দেখে ঢাকা থেকে চট্রগ্রামের টিকিট কিনলাম বৃহস্পতিবার রাতের।
যাত্রা শুরুঃ বৃহস্পতিবার রাতে ১১ টার পর যাত্রা শুরু হল চট্রগ্রামের উদ্দেশ্য। চট্রগ্রামে নামলাম ভোর ছয়টার দিকে। নেমে সুপারির চট্রগ্রামের বাসায় সকালের নাস্তা ৩০ মিনিটের ফিনিশ করে চান্দগাওয়ের বান্দরবান বাস কাউন্টারে ছুটলাম। বান্দরবান শহরে পৌছলাম সকাল ১০ টার একটু পরে। বাস থেকে নেমেই রিক্সা নিলাম গন্তব্য থানচি বাস স্টেশন।
রিক্সাওয়ালা বলল, ১০ টার দিকে একটা বাস ছাড়ে থানচির উদ্দেশ্য, কিন্তু যেহেতু এখন ১০ টার বেশি হয়ে গিয়েছে তাই বাস মিস, আমাদের হয়ত বিকল্প চান্দের গাড়ি করে যেতে হবে কিন্তু দেরি হবে তখন। রিক্সাওয়ালা ঝড়ের গতিতে আমাদেরকে নিয়ে যখন স্টেশনে পৌছল তখন দেখলাম বাস যাস্ট স্টা'ট দিয়েছে। অতি দ্রুত বাসে উঠলাম চারজন। বাসে উঠলাম কিন্তু দেখলাম কোন সিট নেই। আমাদের চারজনের মধ্য সৈনিকের পায়ে একটু ব্যথা ছিল। সারা রাত্রির যাত্রা এবং বান্দরবানের আকা-বাকা পাহাড়ি পথ সৈনিক সহ আমাদের সবার অবস্থা দেখার মতোই বিধ্বস্ত ছিল। যেহেতু আমরা জানতাম না কিভাবে তিন্দুর যেতে হয় অথবা কত ঘন্টা লাগবে অথবা থানচি, তিন্দুরে কোথায় থাকবো তাই আমি এবং সুপারি বাসে বসে থাকা স্থানীয় দুইজনকে প্রশ্ন করলাম। তারা আমাদেরকে নি'ভার করল যে, থানচিতে রেস্ট হাউস আছে এবং থানচি থেকে তিন্দুর ৪/৫ ঘন্টার নৌপথ।কিন্তু সেই সাথে বলল, রেস্ট হাউসে সিট নাও মিলতে পারে। তথ্য হিসেবে আরো বলল যে থানচি পৌছতে বান্দরবান থেকে সাড়ে চার থেকে পাচ ঘন্টা লাগবে।
এক-দেড় ঘন্টা পর একজন যাত্রী নেমে যাওয়ায় অতি বিধ্বস্ত সৈনিকের বসার জায়গা মিলল।
আরো একঘন্টা পর এক ঢালু রাস্তায় বাসের চাকা নস্ট হয়ে গেল। বাসের সব যাত্রী সাথে আমরা চারজন নেমে গেল। নেমে ৩০ সেকেন্ড এগিয়ে যা দেখলাম তাতে পুরা হতবাক, এযে পুরা ব্যকুল করা সৌন্দ'য। কিছু ফটোসেশন করলাম(শুয়ে, বসে, দাড়িয়ে) বাসের চাকা ঠিক হওয়া পয'ন্ত। ১৫/২০ মিনিট পর বাস আবার থানচির উদ্দেশ্য রওনা দিল।
ছবিঃ মধ্যপথে চাকা নস্ট হয়ে যাওয়া বাস।
ছবিঃ যেখানে বাস নস্ট হয়ে গিয়েছিল সেখানে প্রাকৃতিক দৃশ্য
থানচি এবং আড্ডাবাজিঃ তিনটা নাগাদ আমরা থানচি বাজারের বিপরীতে(নদীর ওপারে) পৌছলাম। নৌকায় করে বাজারে পৌছলাম যখন তখন পেটের মধ্য ক্ষুদ্রান্ত-বৃহদান্ত হজম হয়ে যাবার প'যায়ে। বাজারের একটা হোটেলে দুপরের খাবার প্রথমেই ফিনিশ করলাম এবং দেখলাম ঢাকা থেকে কিছু অভিযাত্রী আগে থেকেই অবস্থান করছে। খাওয়ার পর হোটেলে ক্যাশিয়ারকে জিজ্বাসা করলাম-তিন্দুর কিভাবে যাওয়া যায়?? ক্যাশিয়ার বক্তব্য হল-আজ আর থানচি থেকে তিন্দুর যাওয়ার নৌকা পাওয়া যাবে না, কাল সকালে যাওয়া যাবে। ক্যাশিয়ার আমাদের সাহায্য করল, থানচির রেস্ট হাউসে আমাদের এক রাত্রি যাপনের বন্দোবস্ত করে দেওয়ার জন্য এবং সেই সাথে বলল সন্ধ্যার পর আসলে তিন্দুর যাওয়ার মাঝি থিক করে দিতে পারবে।
থানচির রেস্ট হাউজের যে স্মৃতি আজো আমায় নাড়া দেয় সেটা হল- রেস্ট হাউজের নিকটের এক মাঠে জোৎস্না প্লাবিত মাঠের অধে'ক নিমি'ত ঘরে রাত্রি ১২ টা পয'ন্ত আড্ডা, বিষয়- নারী,বিবাহিত জীবন কেমন হতে পারে,সেক্স,রোনাল্ডো থেকে মেসি, শচীন থেকে লারা এবং পরিশেষে ভূত। পূ'নিমা রাত্র, হালকা কুয়াশা, খোলা মাঠ, নাম না জানা পোকার ডাক, ভূতের গল্প এ যেন এক অন্যরকম অন্যরকম অনুভূতি, সেই অনুভূতিতে সৈনিকের রীতিমত ভীতিজনক ভুতের আতঙ্ক শুরু হল-যা তার ঘুমের যথেস্ট ব্যাঘাত ঘটিয়েছিল।
ছবিঃ থানচিতে আড্ডার জায়গা
তিন্দুরের উদ্দেশ্য যাত্রা ও তিন্দুর বাজারঃ পরের দিন অতি ভোরেই যখন আমরা থানচি থেকে তিন্দুরের উদ্দেশ্য নৌকায় উঠলাম থানচি বাজারের বিডিআর ভাইরা আটকে দিল, তাদের বক্তব্য থানচি থেকে যারা ঐদিকে যাবে তাদের উপরের পারমিশন নিতে হবে, আমাদের পারমিশন নেই তাই যাওয়া যাবে না।নিয়ম হল, যে দিন থানচি থেকে অন্যদিকে যেতে হয় তার আগের দিন থানচি বাজারের বিডিআর বাহিনীকে ইনফরম করতে হয় এবং তারা তখন উপর থেকে পারমিশন নিয়ে রাখে।অনেক অনুরোধের পর তারা উপরের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের যাওয়ার অনুমতি দিল।
ছবিঃ থানচি বাজারের কাছে সাঙ্গু নদী
যাত্রা শুরু হল তিন্দুরের উদ্দেশ্য। যাত্রাপথের প্রথম কিছুদূর দেখার মত তেমন কিছু নেই। ২০-৩০ মিনিট পর যেন অপরুপা প্রকৃতি আমাদের দেখা দিল।দুই ধারে পাহাড়ী বন মধ্য স্রোতস্বিনী সাঙ্গু নদী। নদীর কিছু দূর পর-পর পাথরের স্তুপ যা নদীর স্রোত বহুগুন বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ইতিমধ্য আমার এবং সিরাজ ভাইয়ের নিম্নাঙ্গের কাপড় ব্যতিত বাকি কাপড় উধাও এবং যেখানেই পাথরের দেখা সেখানে নেমে যাওয়া ও সাতারঅজ্ব আমি এবং সিরাজ ভাইয়ের সাতারের কসরত প্রদশ'নী। প্রখর রৌদ্রে কিছুটা কস্ট হচ্ছিল আমাদের সবার কিন্তু দুই ধারের বুনো পরিবেশ যেন চোখে তৃপ্তির হাওয়া বুলিয়ে দিচ্ছিল। সৈনিক রৌদ্র থেকে নিজের মাথা রক্ষা'থে আমার সা'ট মেয়েদের ওড়নার মত করে নিজের মাথায় দিল যেমনটি মেয়েরা আযানের সময় নিজেদের মাথায় ওড়না দেয়।
ছবিঃ থানচি থেকে তিন্দুর যাওয়ার পথে সাঙ্গু নদী
ছবিঃ সাঙ্গু নদীর নিচে ছোট পাথর
ছবিঃথানচি তিন্দুরের পথে পাথরের বাক
যাত্রাশুরুর চার-পাচ ঘন্টা পড়ে তিন্দুর বাজারে এসে পৌছলাম। মাঝিরা দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করল তিন্দুর বাজারস্থ এক উপজাতির কুটিরে। দুপুরের আহারের পূ'বে আমরা সাঙ্গু নদীতেই গোছল শেষ করলাম অথচ কিনা সারা পথেই আমি এবং সিরাজভাই গোছল করেছি। এই গোছলের পরে যখন কাপড় পাল্টাতে যাব তখন দেখি নদীর ঘাটে ঢাকা থেকে আসা কিছু মেয়ে বসে আছে।
তাই দেখে আমাদের বাকি তিনজন কেউ নৌকায় প্যান্ট চেঞ্জ করবে না এমন কি সিরাজ ভাই ও যে কিনা থানচি থেকে তিন্দুরের পথে ৯০% শরীর নগ্ন রেখে এসেছিল, সেও মেয়েদের দেখে তাড়াতাড়ি উপরেও একখান গেঞ্জি পড়ে নিল। আর আমি বাকি তিনজনকে গালি দিয়ে বললাম- লজ্বা নারীর ভূষন এবং আমার সঙীদের কায’কালাপের প্রতিবাদ স্বরুপ নৌকাতেই টাওয়াল দিয়ে প্যান্ট চেঞ্জ করলাম, যা কিনা বাকীতিনজন ভিডিও সহ স্টিল পিকচার হিসেবে তুলে রাখল- ফিউচারে আমায় ব্ল্যাকমেল করার জন্য।
দুপুরের আহারের মেনু আজ ঠিক মনে নেই, যতটুকু মনে পড়ে ডিম এবং ডাল ছিল। তবে লবনের পরিমান যে বেশি ছিল এটুকু স্পস্ট মনে আছে। দুপুরের খাবারের পড়ে ৫-১০ মিনিট বাজার ঘুরে দেখলাম এবং যেহেতু রাতে থাকার পরিকল্পনা ছিল তিন্দুরে, তাই থাকার জায়গা সন্ধান করলাম। মাঝিরা আবার আমাদের উধ্বার করল। ঠিক করা হল বাজারের স্থানীয় উপজাতি এবং মেম্বারের
রাত্রিকালীন আতিথ্য আমরা গ্রহন করব।সিরাজ ভাই এতই উত্তেজিত ছিল যে, যেখানে আমরা দুপুরের খাবার নিয়েছিলাম সেখানে ৪/৬ মাস পর নতুন বউ নিয়ে আসল থাকা যাবে কিনা ইত্যাদি(সিরাজ ভাই এই ভ্রমণের ৩/৪ মাস পর বিয়ে করে সেন্টমা'টিন- থাইল্যান্ড ঘুরেছেন কিন্তু দরিদ্র তিন্দুর আসেননি বিবাহিত সঙ্গীর অভাবে) । বলে রাখা ভাল তিন্দুরের কাছে প্রকৃতিও কিন্তু চমৎকার। অনেক ছোট পাথর, পাহাড় এবং কুলকুল করে বয়ে যাওয়া নদী।
ছবি:তিন্দুর বাজার
ছবি:তিন্দুরের কাছে প্রকৃতি।
ছবি:তিন্দুরের কাছে প্রকৃতি-২
বড়পাথরঃযাত্রা শুরু হল বড়পাথরের উদ্দেশ্য। নদী একটু শান্ত মনে হল এই অংশে কেবল ১/২ টি জায়গা ছাড়া।
ছবি:তিন্দুর থেকে বড়পাথর যাওয়ার পথে
সিরাজ ভাই এবং আমার মনের আহাজারি নদীর পাড়ে পাহাড়ী ঘরে থাকার ইচ্ছা। নদীর পাড়ে এক ঘর দেখে এই ইচ্ছা যেন আকাশ ছুয়ে গেল। একঘন্টা পর বড়পাথরে নৌকা ভিড়ল। সরু পাহাড়ী নদীর বুকে বড় বড় পাথর দুই পাশে উচু পাহাড়। এক পাহাড়ের আবার খাড়া কিয়দাংশ নেই, অথা'ৎ ঐ পাহাড়ের শক্ত মাটি দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে। বুঝাই যাচ্ছিল যে, কোন এক অতীত কালে ঐ পাহাড় ভরাট ছিল এবং ঐ পাহাড়ের কিছু অংশ নদীর বুকে পড়েছিল, সেই ভেঙে পড়া অংশ কালক্রমে শক্তপাথরে রুপ নিয়েছে। মাঝি বলল এরমধ্য বড় পাথর দুইটি
রাজাপাথর নামে পরিচিত।তখন শেষ বিকেলের আভা পাহাড়ে-পাহাড়ে ও নদীতে খেলা করছে। প্রকৃতি যেন মনে হচ্ছে বিয়ের আসরে সেজেগুজে থাকা কোন রুপবতী কনের লালচে আভাযুক্ত গাল। আমি তো তখন পুরা উদাস।
সহযাত্রীদের নিষেধ উপেক্ষা করে আমার থেকে ডাবল খাড়া উচু এক পাথর(রাজা পাথর) অতি কস্টে উঠলাম। উঠেই একবার আল্লাহকে শুকরিয়া জানালাম, কারন পিছলে পড়লে
নদীর ঐ জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাথরে আমার মাথা ফিনিস। তারপর দুই হাত দুই দিকে প্রসারিত করে মধ্যর দুই আঙ্গুল দিয়ে V চিহ্নসহ একখানা ফটো তুললাম(আমার খুব পছন্দের একটি পিকচার, যা কিছুদিন পর পর আমার ল্যাপটপের ওয়ালপেপার হিসেবে ব্যবহ্রত হয়)।
ছবি:বড়পাথর
ছবি:বড়পাথরের পাশ্বব’তী পাহাড়
অনেক ফটোসেশন শেষে তিন্দুরে ফিরার পথ ধরলাম। মাঝি ইতিমধ্য বনের থেকে একটা
টকটকে লাল ফল নিয়ে আসল। মাঝির কথামতে ঐ ফল- পাহাড়ীরা খাবার হিসেবে ব্যবহার করে। সিরাজ ভাই যথারীতি উত্তেজিত, সবার আগে উনি খাবে- উনার বড় অংশ লাগবে ইত্যাদি। আমি বললাম এই সুন্দর নামনা জানা ফলের একখান ছবি তুইল্যা নেই। অবশেষে উত্তেজিত সিরাজ ভাই- ফলে বিশাল একখান কামড় লাগাল এবং তারপরেই উনি
মুখখান এমনভাবে বিকৃত করল মনে হল উনার পিছনে কোন তীর এসে লেগেছে। একটু পরেই বলল ফাউল ফল,এমন তিতা বিস্বাদ জিনিস উনি কখনো খায় নাই।
ছবি:পাহাড়ী ফল
তিন্দুরে রাত্রি যাপনঃ সন্ধ্যার দিকে তিন্দুর বাজারে পৌছলাম। কিছুক্ষন নদীর ঘাটে গল্প শেষে পূ'বে ঠিক করে রাখা স্থানীয় মেম্বারের বাসায় মুরগি-লাউ,ডাল দিয়ে রাতের খাবার ফিনিশ করলাম। আমাদের কাছে এর স্বাদ জটিল মনে হয়েছে। তারপর আবার নদীর পাড়ে
প্রায় পূ'ণ চাদের আলোয় গল্প, গান। রাত্রে ঘুমানোর জন্য প্রথমে ঠিক হল মেম্বারের বাড়ীর দোতলায়(বাশের তৈরি) ঘুমাব, কিন্তু ঢাকা থেকে আসা অন্য যাত্রীদের কারনে জায়গা পরিব'তন হয়ে ঠিক হল স্থানীয় স্কুলঘরে ঘুমাব। পরিশেষে, আমরা চারজন ঘুমানোর জন্য স্কুলঘরে গেলাম, যেখান সৈনিককে আবার ভুতের ভয় তাড়া করল। ঘুমানোর আগে স্কুলঘরের টিনের চাল থেকে ঝুলা কিছু বস্তা কোন পজিশনে আছে মনে করে নিল, যেন ঘুম ভেঙে বস্তা দেখে চিৎকার না দেয়।আর সিরাজ ভাইতো রাত্রি তিনটায় আধো ঘুম থেকে উঠে উল্টোদিক করে বসে থাকা আমায় দেখে ভূতীয় সন্ন্যাসি ভেবে ভয়ে ভয়ে বাকি রাত্র পার করল।
ফিরতি যাত্রা আধো আলো-অন্ধকারে এবং তেলবিহীন চান্দের গাড়ীঃ যেহেতু ফিরে যাওয়ার তাড়া ছিল, তাই রাত্রি সাড়ে চারটায় সবাই উঠে যাই। তারপর ঘাটে গিয়ে যখন দেখলাম পুরো অন্ধকার- কিছুক্ষন অপেক্ষা করলাম। আধাঘন্টা পর আলো ফুটতে শুরু করল। সেই আধো আলো-আধো অন্ধকারে আমাদের ফিরতি যাত্রা শুরু হল উদ্দেশ্য থানচিতে গিয়ে বাস ধরব। পাহাড়ী নদীর বুকে ভোর হওয়া এবং তার মধ্য নৌকায় যাত্রা এই যেন অন্যরকম সৌন্দ'য- ঠিক ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব।
ছবি:ফিরতি পথে তিন্দুর থেকে থানচি- অতি ভোরবেলার ছবি।
তিন ঘন্টা পর থানচি পৌছে দেখি বাস নেই। তারপর চান্দের গাড়ীর ছাদে করে রওনা দিলাম মধ্য একটি জায়গায় চান্দের গাড়ী পরিব'তন হল। দ্বিতীয় চান্দের গাড়ী কিছুদুর যাওয়ার পর ড্রাইভার দেখল তেল শেষের দিকে।এরপর শুরু হল ড্রাইভারের প্রায় তেলবিহীন অবস্থায় গাড়ী চালানোর কেরামতি। উচু থেকে নিচে নামার সময় ড্রাইভার ইঞ্জিন বন্ধ করে দিত, আর সেই অবস্থায় ইঞ্জিনবিহীন গাড়ি হুড়মুড় করে ঢালু রাস্তায় দিয়ে নামতো আর সেই চান্দের গাড়ীর ছাদে বসে আছি ঢাকা থেকে আগত ভদ্রলোক কিছু আমরা। আবার উপরে উঠতে হলে ইঞ্জিন একটু চালু করতো। এভাবে চালানোর ১~২ ঘন্টা পর বান্দরবান শহরে চলে আসলাম আমরা ।
ছবি:ফিরতি পথে চান্দের গাড়ীর উপর থেকে
তারপর ফিরতি বাস যাত্রা শুরু হল ঘিঞ্জিধরা রাস্তাঘাট,পরিবেশ এবং তার থেকে খারাপ কিছু মানুষের শহর ও অবশ্যই আমার ভালবাসার শহর ঢাকার উদ্দেশ্য,যেখানে আমার কিছু ভাললাগার এবং ভালবাসার মানুষ ও বাস করে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৮:০৪