প্রথম যখন আমি গতকাল বিকালে ভিডিওটি দেখি তখন খুব বেশি মজা পাইনি। শুধু পিথাগোরাসের পার্টটা আসার পর নিজের অজান্তেই হাসি এসে গিয়েছিল। এরপর এর কথা একরকম ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু সন্ধ্যা পেড়োতে না পেড়োতে এই ভিডিও ভাইরালে রূপান্তরিত হল। অনেক ধরনের ব্যঙ্গাত্ত্বক ছবি বানানো হতে লাগলো এর বিভিন্ন অংশকে নিয়ে। তখন ভালই উপভোগ করতে লাগলাম। কিন্তু আজ সকালে সামহোয়্যার ইন ব্লগে যখন প্রবেশ করলাম এই বিষয়ে কে কি লিখছে জানার জন্য। কোন এক ব্লগে কোন এক ব্লগার প্রশ্ন করেছিল এই বাচ্চাদের কেউ যদি এখন সুইসাইড করে তাহলে এই দায় কে নিবে? প্রশ্নটা ঠিক যেন বুকের ভেতর গিয়ে বিধল বলে মনে হল। আর সাথে সাথে ভিডিওটির আর সবগুলো চিত্র আমার কাছে ধুসর হয়ে শুধু সেই নিথর ছবিটি মনে গেথে রইল:
ক্ষণিকের জন্য নিজের প্রতি তীব্র ঘৃণা অনুভূত হল। নিজের অতীত হঠাৎ নিজের চোঁখের সামনে স্পষ্ট দেখা দিল। এই তো আমি, সেদিনের খোকা। ইংরেজিতে পাশ মার্ক তুলতে পারিনি বলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে দ্বিতীয়বার পড়ে থাকা। এরপরের অংশ কেবল প্রার্থনা, প্রার্থনা, খোদা তা'লার কাছে নিজের দীনতা প্রকাশ করে যাচনা, অত:পর খোদা তা'লার অনুগ্রহে আজ আমি ইংরেজিতে পাঁকা। গণিতের অবস্থায়ও ছিল অনুরূপ কাঁচা-আধাপাঁকা। আর সাধারণ জ্ঞানে আজও আমার বিশ্বাস আমি আগের মতই কাঁচা। কিন্তু তারপরও শুধু প্রশ্নগুলো কমন পড়ে গিয়েছিল বলে আজ তোমাদের বিদ্রুপ করতে মনে একবারও বাঁধল না! বিশ্বাস করতে পারছি না! এখন আমার কানে কেবল একটি ধ্বনিই বাজছে, "আমি আর নেই সে আমি", আমার উচ্চশিক্ষার সার্টিফিকেটগুলোকে আজ কেমন যেন মূল্যহীন মনে হচ্ছে। নিজেকে আজ খোদা তা'লার প্রচণ্ড অকৃতজ্ঞ বান্দা মনে হচ্ছে। আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন। আমার ভাই, আমার বোন! আমি তোমাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, দয়া করে এই নির্বোধ ভাই কে ক্ষমা করে দিও। তোমাদের জন্য আমি দোআ করি আল্লাহ তা'লা তোমাদেরকে সেইসব গুণে গুণান্বিত করুন যা এই মুহুর্তে না থাকার দরুন তোমাদেরকে আজ তিরস্কার করা হচ্ছে। আল্লাহ তােমাদেরকে বিশ্ব জয় করার তৌফিক দান করুন। আমীন। তোমরা মনোবল হাড়িও না, এই বিশ্বাস রেখো: যে ব্যক্তি খোদার উপর ভরসা করে, তার জন্য খোদা তা'লাই যথেষ্ট।
পোস্টটি শেষ করব স্মরণ না করত: ভুলে যাওয়া সেই উদ্বৃতিকে আবার স্মরণ করে:
"অতএব বিপদ দেখলে তোমরা আরো সম্মুখে অগ্রসর হবে এবং নিশ্চিয় জানবে যে এটাই তোমাদের উন্নতির পন্থা। তাঁর সৃষ্ট জীবের প্রতি দয়া কর এবং তাদের প্রতি নিজ জিহ্বা বা হস্ত দ্বারা বা অন্য কোন উপায়ে উৎপীড়ন করো না এবং সর্বদা সৃষ্ট জীবের উপকার সাধনের তৎপর থাক। কারও প্রতি সে তোমার অধীন হলেও, অহংকার দেখিও না এবং কেউ গালি দিলেও তুমি তাকে গালি দিও না। নম্র, ধৈর্যশীল, সাধু এবং জীবের প্রতি দয়াশীল হও যেন খোদা তা'লার নিকট তোমরা গ্রহণীয় হতে পার। অনেক ব্যক্তি এরূপ আছে, যারা বাহ্যত: ধৈর্যশীল, কিন্তু অভ্যন্তরে ব্যঘ্র স্বভাব-বিশিষ্ট। অনেকে এরকম আছে যারা বাহ্যত: সুশীল, কিন্তু অভ্যন্তরে অতি কুটিল। তোমরা কখনো তাঁর নিকট গ্রহণীয় হবে না যে পর্যন্ত তোমাদের বাহির এবং অভ্যন্তরীণ অবস্থা এক না হয়। বড় হলে ছোটকে লাঞ্ছনা দিবে না বরং তার প্রতি সর্বদা দয়া করবে। যদি বিদ্ব্যান হও তবে বিদ্যাহীনকে নিজের বিদ্যার অহংকারে অবমাননা না করে তাকে সদুপদেশ দিবে। যদি ধনী হও তবে আত্মভিমানে দরিদ্রের উপর গর্ব না করে তাদের সেবা করবে। ধ্বংসের পথ হতে সাবধান থাকবে। আল্লাহ ছাড়া কোন সৃষ্ট জীবের পূজা করবে না। সকল কিছু হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে আপন প্রভুর প্রতি একনিষ্ঠ হও। সংসার হতে মনকে নির্লিপ্ত রাখ এবং কেবল তাঁরই প্রেমে বিভোর থেকো। মাত্র তাঁরই উদ্দেশ্যে জীবন যাপন কর এবং তাঁর জন্য সকল প্রকার পাপ ও অপবিত্রতাকে ঘৃণা কর, কারণ তিনি পবিত্র। প্রত্যেক প্রভাত যেন সাক্ষ্য দেয় যে তুমি রাত্রিকাল তাকওয়ার (খোদা-ভীতির) সাথে কাটিয়েছ এবং প্রত্যেক সন্ধ্যা যেন সাক্ষ্য দেয় যে তুমি ভীতির সাথে দিবস যাপন করেছো।" (আমাদের শিক্ষা, পৃষ্ঠা-৫-৬)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৬ সকাল ৯:৪১