somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভিটক: ট্রিলজি অব ডেথ: বাবেল (শেষ পর্ব)

৩১ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ৯:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ট্রিলজি অব ডেথ: অ্যামোরেস পের্রোস (প্রথম পর্ব)

ট্রিলজি অব ডেথ: ২১ গ্রামোস (দ্বিতীয় পর্ব )


স্থান মরক্কোর এক দুর্গম অঞ্চল, মরুভূমি। চরিত্র দুটো কিশোর ছেলে, ইউসুফ ও আহমেদ। ছাগল পাল চড়ায়। শেয়ালের আক্রমন প্রতিরোধ করতে তার বাবা তাদের একটি বন্দুক কিনে দেন। বন্দুক বিক্রেতা বলেছিল, প্রায় তিন কিলোমিটার পর্যন্ত দুরত্বে গুলি করা সম্ভব এই বন্দুক দিয়ে। সত্যি বলেছিল তো? একটা পরীক্ষা করলেই প্রমাণ হয়ে যাবে। দূরে রাস্তায় যে বাসটি দেখা যাচ্ছে সেখানে গুলি করে লাগানো যায় কিনা ট্রাই করা যেতে পারে। বয়সে ছোট হলেও অপেক্ষাকৃত বুদ্ধিমান আহমেদ বন্দুক কাধে ঠেকায়, তারপর নিশানা করে গুলিটা ছোড়ে। ধুস! লাগে নাই, তারমানে বিক্রেতা ঠকিয়েছে। সিদ্ধান্তে উপনীত হতে দেরী হয় না কিশোরদ্বয়ের। কিন্তু একি, বাসটা গতি কমিয়ে দাড়িয়ে যাচ্ছে কেন?
সুসান এবং রিচার্ড জোনস স্বামী স্ত্রী। ঘুরতে বেরিয়েছে তারা। কোন একটা ব্যাপার নিয়ে মন কষাকষি। তাই তাদের মধ্যে কোন কথা হচ্ছিল না। মন খারাপ সুসান জানালায় মাথা দিয়ে ভাবছিল বিভিন্ন কথা। হঠাৎ কোথা থেকে একটা বুলেট এসে একদম সুসানের ঘাড়ে বিধে গেল। রক্ত বেরোতে লাগল গল গল করে। কি হবে এখন? এই দুর্গম মরুভূমির মধ্যে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে সুসান বেচে থাকবে আর অল্প কিছুক্ষন।

স্থান জাপানের এক শহর। চরিত্র একটি কিশোরী মেয়ে, নাম চিকো ওয়াটাওয়া, শ্রবন এবং বাক প্রতিবন্ধী। সুন্দরী কিন্তু প্রতিবন্ধীত্ব তাকে একজন বয়ফ্রেন্ড জোগাড় করতে বাধা দেয়। সদ্য মাতৃহারা এই মেয়েটির একাকিত্বই তাকে উগ্র যৌনতার দিকে আহবান জানায়। সিদ্ধান্ত নেয়, আজই কিছু একটা হবে। নিজের দিকে আকর্ষন করতে প্রয়োজনে তার শরীরকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে সে।

অ্যামেলিয়া যদিও মেক্সিকোর বাসিন্দা, বহু বছর ধরে আমেরিকায় অবৈধ ভাবে বসবাস করে আসছে। ছোট ছোট দুটো জমজ বাচ্চার আন্টি সে, দেখা শোনা করে তাদের। তার ছেলের বিয়ে, কিন্তু তার মেক্সিকো যাওয়া অনিশ্চিত, কারণ বাচ্চাদের বাবা-মা বাড়িতে নেই। কিন্তু তার ভাগ্নে বাচ্চাদের সহই মেক্সিকোতে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করে, অবশ্যই অবৈধভাবে। সব ঠিকই আছে, কিন্তু ফেরার সময় বর্ডারে পুলিশ তাদের গাড়িটা থামালো। বাচ্চারা বলল, অ্যামিলিয়া তাদের আন্টি নয়। তবে? অ্যামিলিয়া কি শিশু অপহরনকারী?

ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের বিচ্ছিন্ন কিছু কাহিনী একই সাথে দেখানোর মাধ্যমে যে টেনশনটা তৈরী হয় সেটা সামলানো মোটেও সহজ না। টেনশন তৈরীর এই কঠিন কাজটাই বেশ অবলীলায় করেছেন পরিচালক আলেসান্দ্রো গনজালেস ইনারতুতু তার বাবেল সিনেমায়। ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটি দেখেন নি এমন দর্শক হয়তো দুর্লভ হবে। ছবিটি বেশ আলোচিত হয়েছিল কারণ অস্কারে সেরা ছবির তালিকায় এটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে দ্য ডিপার্টেড সিনেমার সাথে। পরিচিত ব্যাক্তিদের মধ্যে অভিনয় করেছে রিচার্ড চরিত্রে ব্রাড পিট এবং সুসান চরিত্রে কেট ব্ল্যাঙ্কেট।

সব মিলিয়ে ট্রিলজি অব ডেথ
তিনটি পর্ব দেখার পরে ডেথ ট্রিলজি এবং আলেসান্দ্রো গনজালেস ইনারতুতু নিয়ে একটা উপসংহার টানার চেষ্টা করা যায়। সাবজেক্ট হিসেবে ডেথ বা মৃত্যু একটা ভালো বিষয়। কিন্তু ইনারতুতুর মুন্সিয়ানা গল্প বাছাইয়ে এবং পরিচালনায়। তার তিনটি সিনেমারই কাহিনী লিখেছেন গুলিয়ানো অ্যারিগা। এ জন্য তাকে বাহবা দিতেই হয়। তিনটি সিনেমার মধ্যে ২১ গ্রামোস বা ২১ গ্রাম সিনেমাটা তুলনামূলকভাবে জটিল বিশেষ করে পলের সাথে ক্রিস্টিনার সম্পর্ক নিয়ে বেশ দ্বন্দ্বে পড়তে হয়। আমার কাছে এই সিনেমাটা আবেদন হারিয়েছে এ কারনে, তবে এর পেছনে পলের মৃত্যু সম্ভাবনা নিয়ে যে গতিহীনতা সেটাও একটা কারণ। বাবেল সিনেমায় টেনশন পুরো সিনেমা জুড়ে বিদ্যমান থাকে গল্প বলার ঢংয়ে। অ্যামোরেস পেরস সিনেমার অক্টোভিয়া এবং তার কুকুরের লড়াই এবং হিটম্যান এল চিভো কাহিনীর গতিশীলতা তৈরীতে বেশ সাহায্য করে।
তিনটি সিনেমায়ই একটা ব্যাপার লক্ষ্যনীয়। মৃত্যু আসে বেশ হঠাৎ করে এবং প্রায় সব ক্ষেত্রেই সুখের জীবনে বাগড়া দেয়ার জন্যই এর আগমন। তবে মৃত্যুকে ছাপিয়ে যে ব্যাপারটা উঠে এসেছে সেটাকে আমরা নিয়তি বলতে পারি। প্রত্যেকটি ঘটনাই বারবার প্রমাণ করেছে যে আমাদের প্রচেষ্টাই সব নয়, নিয়তির অনুমতি সাপেক্ষেই আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবতার মুখ দেখতে পারে।
ট্রিলজির তিনটি সিনেমাতে গল্প বলার যে স্টাইল একে অ্যান্থলজি ফিল্ম কিংবা হাইপারটেক্সট ফিল্ম নামে অভিহিত করা হচ্ছে। বৈশিষ্ট্য হলো আলাদাভাবে প্রত্যেকটি কাহিনীই স্বাধীন কিন্তু সামান্য একটি সুতো কাহিনীগুলোর মধ্যে একটা সম্পর্ক গড়ে দেয়।
তিনটি সিনেমায়ই মিউজিক, বিশেষ করে বাবেল সিনেমায় বেশ দারুণ। সিনেমাটোগ্রাফি ভালো লাগবে বাবেল সিনেমায়, বোধহয় মরূভূমির বিবর্ন প্রান্তরগুলোর কারণেই। সব মিলিয়ে ডেথ অব ট্রিলজির জন্য আলেসান্দ্রো গনজালেস ইনারিতুকে আমরা 'হ্যাটস অফ' দিতে পারি, বিনে খরচায় এর থেকে বড় পুরস্কার কিছু কি আছে?


দারাশিকো. ইনফোতে আপনার আমন্ত্রন
১৪টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×