somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফাল্গুনের পরশ

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিন ছিল পহেলা ফাল্গুন।
ক্যাম্পাসের চারপাশ ছিল হলুদ রঙে মাতানো। কি সুন্দর লাগছিল সবাইকে। মেয়েদের বেশিরভাগের খোঁপায় ছিল গাঁধাফুলের মালা বাঁধা। কেউ কেউ বা এসেছিল লাল পেঁড়ে সাদা শাড়ি পড়ে। ছেলেরা ছিল ফতুয়া বা পান্জাবি গায়ে। সব মিলিয়েই ছিল অদ্ভুত এক প্রফুল্লতা। ব্যাগ কাঁধে ছিলাম আমি শুধু ছিলাম এক বোকার মতো মানুষ, যার কিনা মনে ছিলনা পহেলা ফাল্গুনের কথা। কালো শার্ট আর ডেনিমের জিন্স ছিল পড়নে। বড্ড বেমানান লাগছিল আমাকে বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু আমার খুব ভাল লাগছিল চারপাশের এই উৎসবমুখর পরিবেশ দেখে।

বন্ধুরা সব বকছিল কেন আমি আজ ফতুয়া বা পান্জাবি পড়ে আসিনি। শুধু শুনে যাচ্ছিলাম ওদের আদরমাখা রাগের কথন। আমার মন মনে হয় খুঁজছিল কোনো একটা কিছু। আমি চারপাশ সেই জিনিসের আশায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। সবাই কত উৎফুল্ল ছিল সেদিন। কাউকে আলাদা করতে পারছিলামনা আমি। সবার উৎফুল্লতা দেখে নিজেও কিছুটা উপভোগ করা শুরু করলাম ফাগুনের আমেজ। দূর থেকে হঠাৎ দেখলাম মনে হয় একজনকে। আস্তে আস্তে আরেকটু এগিয়ে গেলাম। সাদা সালোয়ার-কামিজের সাথে গোলাপী ওড়নায় একজনকে লাগছিল বেশ আলাদা। মনে হয় তারও
খেয়াল ছিলনা আজ যে পহেলা ফাল্গুন। আরেকটু কাছে এগিয়ে গেলাম, অনুভব করতে চাইলাম তাকে আরও কাছে থেকে। কত ব্যস্তই না ছিল সে। এদিক সেদিক ঘুরে কি না কি সব ব্যবস্থা করছিল সবার জন্য। অথছ তার চারপাশ যে ঘুরে বেড়াচ্ছিল এক ছেলে সেদিকে কি খেয়াল ছিল তার?

আমার কাছে সময় গিয়েছিল থেমে। প্রতিটি জিনিস মনে হয় ঘোলাটে হয়ে গিয়েছিল শুধু তুমি ছাড়া। চারপাশ কেমন যেন সাদাকালো লাগছিল। শুধু তোমার প্রতিই ছিল আমার দৃষ্টি। বন্ধুরা টেনে নিয়ে যাচ্ছিল আমায়। তারা কি আর জানতো আমি আমার হৃদয় হারিয়ে খুঁজছিলাম তখন? এক সিঁড়িতে বসে শুধু দেখে যাচ্ছিলাম তোমার কর্মকান্ড। বন্ধুদের কথায় কোনো মনযোগ যে ছিল না। তোমার তো ছিলনা বোঝার কোনো চেষ্টা যে একটি ছেলে কতই না ভালবাসে তোমায়। উঠে যে সরাসরি তোমার সামনে দাড়ালাম।

"কেমন আছেন"
"এই তো ভাল, তুমি ভাল তো"
"হুমম"
ব্যস, এতটুকুই ছিল শুধু আমাদের কথন। অথচ তুমি তো জানতেনা সেই ছোট্ট কথপোকথনই ছিল আমার জন্য কত পাওয়া। জীবনে না চাইতেই কত কি না পেয়েছি। কিন্তু সেদিনের সেই ক'সেকেন্ডের কথাগুলোই ছিল মনে হয় বড় পাওয়া। মনটা খুশিতে নেচে উঠেছিল। হয়তো বয়সটাও অল্প ছিল বলে, নাকি তোমায় অনেক ভালবাসতাম বলে?

দুপুরে এক টেবিলে ভুলে রেখেছিলে তুমি চুলের রবার ব্যান্ড। লাল রঙের ছিল ব্যান্ডটি। তুমি কি জানতে আস্তে করে সেটা আমি সরিয়ে নেই? কি অদ্ভুত পাগলামীই না করতাম আমি। তোমার দীঘল কালো চুলগুলো আমি খোলা দেখতে চাইতাম সবসময়। কেন যে বেঁধে রাখতে তুমি? যখন বাতাসে তোমার চুলগুলো হালকা দুলে যেত, সেই দৃশ্যতো ছিল আমার কাছে পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর একটি দৃশ্য। মন চাইতো শুধু বার বার দেখি সেই দৃশ্য। সেই ফাল্গুনের দিনটিতে আমি শুধু ঘুরে ফিরে তোমাকেই দেখছিলাম, জানতে কি এই কথা তখন? পেরেছিলে কি বুঝতে?

বেশ ক'মাস পর। রাত ২টা হয়তো বাজে।
হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল তখন। মন চাইতেই ঘর হতে চুপিচুপি বের হয়ে চলে যাই তোমার বাড়ির সামনে। বৃষ্টি তখন আস্তে আস্তে বেড়ে চলেছিল। আমি ভেবেছিলাম ডাকবো তোমায় ফোন করে। কিন্তু কি কারনে তুমি ঠিক বারান্দায় ছিলে দাড়িয়ে। তুমি কি সেই বৃষ্টির মাঝেও আনন্দ দেখেছিলে আমার চোখের মাঝে? অনুভব করেছিলে কি কত ভালবাসি তোমাকে? বারবার ফোন দিচ্ছিলে আমায়, কিন্তু আমি তো জানতাম, ফোন ধরলেই চলে যেতে বলবে তুমি। কি দরকার ছিল যাবার। তোমাকে এই বৃষ্টির মাঝে অনুভব করছিলাম। রাস্তার এক প্রান্তে আমি, আর দোতালার বারান্দায় তুমি। বৃষ্টির শব্দ পাচ্ছিলাম না আমি, শুধু তার ফোঁটাগুলো অনুভব করছিলাম সর্বাঙ্গে। তুমি ইশারায় হাতজোড় করে মিনতি করছিলে যেন বৃষ্টিতে না ভিজি। তুমি কি বুঝতে পেরেছিলে আমার অশ্রু ফোঁটা পড়ছিল গাল বেয়ে? নাহ, সেটা দুঃখের ছিলনা, ছিল আনন্দের, অনেক অনেক ভালবাসার অশ্রু মিশেছিল তখন বৃষ্টির সাথে। বৃষ্টি যেন তার হাত বুলিয়ে মুছে নিচ্ছিল আমার অশ্রুগুলো। আস্তে করে চলে এসেছিলাম সেখান থেকে। কিছুটা পথ পেরিয়ে ফিরে তাকিয়েছিলাম তোমার বারান্দায়। এতদূর থেকেও অনুভব করছিলাম তোমার ভালবাসা, তোমার দু'চোখের অশ্রুবিন্দু।

একদিন যে দু'জন বৃষ্টির মাঝে আশ্রয় নিয়েছিলাম এক গাছের মাঝে।
তুমি গুনগুন করে একটি পুরনো দিনের গান গাইছিলে তখন।

"বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি
এ কোন অপরূপ সৃষ্টি,
এত মিষ্টি মিষ্টি মিষ্টি,
আমার হারিয়ে গেছে দৃষ্টি"
আমি আনমনা হয়ে তোমার সেই ভেজা মুখখানি দেখছিলাম শুধু। এত ভালবাসা থাকতে পারে জীবনে বুঝিনি কখনো।

অনেকদিন কেটে গেল। কিভাবে যে সময় চলে যায় অবাক লাগে। মনে হয় এই তো সেদিনের কথা। মাঝে মাঝে বেশ রাতে আজও চলে যাই সেই রাস্তাটিতে। শুধু চেয়ে থাকি সেই বারান্দাটির দিকে। কেউ আর দাড়িয়ে থাকে না সেখানে। কিছুক্ষন শুধু তাকিয়ে থেকে হেঁটে এসে পড়ি। হঠাৎ পিছু ফিরে চাই, অনুভব করি একদিন তুমি দাঁড়িয়ে থাকতে আমার দিকে তাকিয়ে।

গায়ে চাদর জড়িয়ে আমার বারান্দায় এসে দাঁড়াই।
কেমন যেন নিরব চারপাশ। হাতের মুঠো খুলে দেখি সেই লাল রবার ব্যান্ডটি। কাছে এনে কেমন যেন একটি অদ্ভুত ঘ্রাণ পাই ব্যান্ডটিতে। কি মিষ্টি একটি সুবাস যেন জড়িয়ে আছে সেখানে। আবার শক্ত করে সেটা মুঠিবদ্ধ করে আগলে রাখি। তোমার সেই গানটা কেন যেন খুব কানে বাজছে আজ। আকাশটা কেমন মেঘলা হয়ে গেল। এই সময়গুলোতে তোমাকে খুব অনুভব করি। আবার এক নতুন ফাল্গুন এসে যাচ্ছে। চারপাশ আবারও হবে রঙিন। মেতে উঠবে এক উৎসবে। আমার স্মৃতি না হয় থাকুক আমার অতীতকে নিয়েই রঙিন।



সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ২:৩৪
৭৮টি মন্তব্য ৭৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×