আসসালামুয়ালাইকুম, আমরা বোধহয় এখন পাসওয়্যার্ড চালিত পৃথিবীতে বসবাস করছি! চলতে ফিরতে সব কিছুতেই পাসওয়্যার্ড। কম্পিউটারে পাসওয়্যার্ড, মোবাইলে পাসওয়্যার্ড সব জায়গায় শুধু পাসওয়্যার্ড আর পাসওয়্যার্ড! যেন মেলা বসেছে পাসওয়্যার্ড-এর। যদিও এই পাসওয়্যার্ড কোন সাধারণ বস্তু না। কারো কাছে এটি নস্যি আবার কারো কাছে যখের ধন। ইন্টারনেটে সুরক্ষিতভাবে বিচরণ করতে আপনার প্রয়োজনীয় পাসওয়্যার্ড সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করুন। নইলে হয়তোবা এই পাসওয়্যার্ড-এর জন্যই আপনাকে বেশ ঝামেলায় পড়তে হবে। এমনকি আপনার টিউটোরিয়াল বিডির পাসওয়্যার্ডকেও ভালো ভাবে মনে রাখুন।
ইন্টারনেটে বিভিন্ন সাইটে একান্ত প্রবেশের জন্য প্রয়োজন পাসওয়্যার্ড৷ এটি এমনই এক বিষয় যা মনে রাখা যেমন জরুরি, তেমনি কঠিন করাও আবশ্যক৷ কেননা সহজ পাসওয়্যার্ড আপনার অ্যাকাউন্টকে তুলে দিতে পারে হ্যাকারদের হাতে৷
আধুনিক হ্যাকারদের বিচক্ষণতায় সকলেই অভিভুত। তারা নিত্যনতুন কৌশল বের করছে পাসওয়্যার্ড হাতিয়ে নেয়ার জন্য। যেমনঃ Phishing সাইট তৈরি, কি-লগার, নানা ভাবে প্ররোচনা মূলক ই-মেইল বা বিজ্ঞাপন সহ রয়েছে আরো বিভিন্ন পন্থা। এছাড়াও না জানা আরো অনেক পন্থা ব্যবহার করছে হ্যাকাররা।
নানা রকম প্রোগ্রামের বদৌলতে আট বর্ণের সাধারণ পাসওয়্যার্ড ভাঙতে পারে মাত্র দু’ঘন্টার মধ্যে৷ তবে যদি পাসওয়্যার্ড ভালো, কঠিন এবং ট্রিকি হয় তবে হয়তোবা সেই পাসওয়্যার্ড ভাংতে বেশ বেগ পেতে হবে হ্যাকারকে।
জর্জিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে ১২ বর্ণের বা অক্ষরের পাসওয়ার্ড অনেক নিরাপদ৷ অন্তত হ্যাকাররা বর্তমানে যে পদ্ধতিতে আট বর্ণের পাসওয়ার্ড দু’ঘন্টায় ভাঙে, একই পদ্ধতিতে ১২ বর্ণের পাসওয়ার্ড ভাঙতে সময় লাগবে ১৭,১৩৪ বছর! আর এই একই বিষয় আমি বেশ কয়েকটি বইয়েও পড়েছি।
হ্যকারদের হাত থেকে আপনার পাসওয়্যার্ড রক্ষা করতে যা যা করবেনঃ
১. আলাদা পাসওয়্যার্ড ইউজ করুনঃ
সব জায়গায় একই রকম পাসওয়্যার্ড ইউজ করাকে অনেকে সাপোর্ট করেন একারণে যে এতে করে পাসওয়্যার্ড মনে রাখা সহজ হয়, কিন্তু সব মিলিয়ে এটাই সবচেয়ে বোকামির কাজ! কখোনোই এমনটি মনে করবেন না যে “আমি অনেক সাইটের মেম্বার, এত পাসওয়্যার্ড মনে রাখতে পারবোনা, তাই একটা পাসওয়্যার্ড সব জায়গাতেই চালিয়ে দেই”। এমন মনে করলে আমি নিঃসন্দেহে বোকা। সকল স্থানেই আলাদা আলাদা পাসওয়্যার্ড ইউজ করবেন। যেমন আপনি টেকটিউন্সে যে পাসওয়্যার্ড ইউজ করেন সেই একই পাসওয়্যার্ড সামুর জন্য বা অন্য কোন ফোরামের জন্য ব্যবহার করবেন না। উদাহরণ হিসেবে যদি ফেসবুককে ধরি তাহলে বলা যায় ফেসবুক পাসওয়্যার্ড হিসেবে ৭৫% ব্যবহারকারী তার ইমেইল-এর পাসওয়্যার্ড ইউজ করে থাকেন। বিটডিফেন্ডার এর মতে অ্যামাজন আর পেপালের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। তাই পাসওয়্যার্ড রক্ষার্থে আলাদা পাসওয়্যার্ড ইউজ করা পূর্বশর্ত ।
২.কয়েকদিন পরপর পাসওয়্যার্ড চেঞ্জ করুনঃ
আপনি একটি কাপড় নিশ্চই দুই-তিন দিনের বেশি পড়েন না, সেক্ষত্রে আপনি কেন একই পাসওয়্যার্ড দিনকে দিন ব্যবহার করবেন? আপনার উচিত অন্তত পক্ষে মাসে একবার করে হলেও পাসওয়্যার্ড চেঞ্জ করা। এতে আপনা পাসওয়্যার্ড সুরক্ষিত থাকবে।
৩. কমোন পাসওয়্যার্ড ইউজ করা থেকে বিরত হোনঃ
আপনি যদি এমন কোন পাসওয়্যার্ড ইউজ করেন যা কিনা ডিকশনারিতে আছে, তাহলে কখনোই সেটা ভালো পাসওয়্যার্ড না! এমন পাসওয়্যার্ড ইউজ করবেন যার মানে ডিকশনারীতে তো দূরে থাক আপনি নিজেই জানেন না! এতে করে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে আপনি সুরক্ষিত পাসওয়্যার্ড ইউজ করছেন ১২৩৪ বা ৬৭৮ অথবা আপনার নাম কখনোই উত্তম পাসওয়্যার্ড না। এগুলো বের করতে হ্যাকারদের সেকেন্ডও লাগার কথা না।
৪.পাসওয়্যার্ড জেনারেটর ব্যবহার থেকে বিরত থাকুনঃ
অনেকেই উত্তম পাসওয়্যার্ড বানানোর জন্য পাসওয়্যার্ড জেনারেটর ব্যবহার করেন। কিন্তু আমি একে মোটেই সাপোর্ট করি না, কারণ কে জানে এই পাসওয়্যার্ড জেনারেটরই আপনার পাসওয়্যার্ডকে পৌছে দিচ্ছে হ্যাকারদের হাতে? নিজে থেকে যতটুকু পারা যায় ততটুকুই চেষ্টা করুন। যেমনঃ “আমার নাম অমুক” কে পরিণত করুন “কমুঅ মনা রমাআ” এজাতীয় পাসওয়্যার্ড সাধারণত হ্যকাররা অনুমান করতে পারে না।কার্নেগি ম্যালন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা উদাহরন হিসেবে বলছে, এ জাতীয় পাসওয়্যার্ডটির কথা, ‘‘নো, দ্যা ক্যাপিটাল অফ উইসকনসিন ইজ নট সিজোপলিস!”
৫.পাসওয়্যার্ড শেয়ার করাঃ
কখোনোই কারে কাছে পাসওয়্যার্ড শেয়ার করবেন না, হোক তা যত তুচ্ছই। কেউ যদি আপনার পিসির পাসওয়্যার্ড জানতে চায়, তা বলা থেকেও বিরত থাকবেন।
৭.যেভাবে মনে রাখবেন পাসওয়্যার্ডঃ
ধরলাম আপনি পাসওয়্যার্ড তৈরি করলেন, এখন মনে রাখবেন কিভাবে? এক্ষেত্রে সফটওয়্যার ইউজ করা যেতে। আর সফটওয়্যারটি হচ্ছে কিপাস পাসওয়্যার্ড সেফ। প্রশ্ন করতে পারেন পাসওয়্যার্ড তৈরির জন্য সফটওয়্যার ব্যবহার করলাম না অথচ পাসওয়্যার্ড মনে রাখার জন্য সফটওয়্যার ব্যবহার করছি কেন? কারণ হল এই সফটওয়্যারটি খোদ পিসি ম্যাগাজিন এর মাধ্যমে রিভিউ কৃত। ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন
পাসওয়ার্ড তৈরির ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় মাথায় রাখা আবশ্যক৷ ইংরেজি ভাষায় অক্ষরের সংখ্যা ২৬টি হলেও কম্পিউটার কী বোর্ডে কিন্তু সব মিলিয়ে বর্ণ আর সঙ্কেত আছে ৯৫টি৷ তাই, সম্ভব হলে আপনার পাসওয়ার্ডে যোগ করুন কিছু সঙ্কেত৷ যেমন: ‘‘@Y;V%w$/%5/-”৷ এমন একটি পাসওয়ার্ড যদি বানাতে পারেন, তবে তা ভাঙার সাধ্যি কার!
আশা করি যা বোঝাতে চেয়েছি তা বুঝতে পেরেছেন। সকলকে ধন্যবাদ পোস্টটি পড়ার জন্য।
(তাড়াতাড়ি লেখার ফলে বানান ভুল হতে পারে, ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
ধন্যবাদ।
ডিজে আরিফ
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৪৬