অনেকেই বলে যে ইন্টারনেট বন্ধু গন আসল হয় না। হাঁ, সেক্ষেত্রে আমিও আপনার আসল বন্ধু নয়। যদিও আমি এই সম্পর্কে অন্য কিছুই ভাবি। কিন্তু চলুন জেনে নেওয়া যাক, এই ব্যাপারে বিজ্ঞান কি বলছে। বন্ধুরা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কেনোনা, মানুষ হচ্ছে এক প্রকার সামাজিক জীব। আমরা আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব, অথবা পাড়া প্রতিবেশী ছাড়া নিজেদের অস্তিত্ব পর্যন্ত কল্পনা করতে পারি না। মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে এক সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে যে, যে ব্যাক্তি তার জীবনের অধিক সময় একাকী কাটায়, তার মৃতু্য ঝুঁকি ততো বেড়ে যায়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল এর গবেষকগন জানিয়েছেন যে, একটি গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রত্যেক অংশেই পর্যাপ্ত ঘুম, খাদ্যসংযম অভ্যাস করা এবং ধূমপান না করার চেয়ে বেশি শক্তিশালী এবং স্বাস্থ্যকর।
ইন্টারনেট বন্ধু দের কি আসল বন্ধু হিসেবে গণ্য করা হয়?
সাম্প্রতিক স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর এক গবেষণায় খুঁজে পাওয়া যায় যে, যখন মানুষ অনলাইন সম্প্রদায়ের সাথে সংযুক্ত হয় তখন তারা খুব তাড়াতাড়ি অপরিচিত কাওকে বিশ্বাস করে ফেলে। এবং সময়ের সাথে সাথে সেই বিশ্বাস নষ্টও হয়ে যায়। অনলাইন জনপ্রিয় সাইটগুলোতে কোনো ব্যাক্তির জনপ্রিয়তা এবং রেটিং দেখে সহজেই মানুষ তাকে বিশ্বাস করে ফেলে, যদিও সে অপরিচিত। তবে আমি মনে করি এই বিশ্বাস করার পেছনে কিছুটা যুক্তিও আছে। শুধু অনলাইনে না, বাস্তব জীবনেও আমরা কোনো কিছুর উপর বিশ্বাস অনেকটা এভাবেই করে থাকি। মনে করুন আপনি এক জায়গাতে ভ্রমন করতে গেলেন এবং রাত হয়ে গেলো। এখন আপনার আশ্রয়ের জন্য কোনো বাসা বা হোটেল দরকার। ঠিক তখনই রাস্তার পাশে একসাথে দুইটি হোটেল দেখতে পেলেন। হোটেল এ এবং হোটেল বি। মনে করুন আপনি “হোটেল এ” সম্পর্কে লোক মুখে অনেক সুনাম শুনেছিলেন। এখানকার বেড সাইজ বড়, সকালে অনেক চমৎকার নাস্তা পাওয়া যায় ইত্যাদি। যদিও আপনি নিজে কখনো প্রত্যক্ষ করেন নি। এই অবস্থায় আমি জানি, আপনি “হোটেল বি” তে না উঠে “হোটেল এ” তেই উঠবেন। কেনোনা আপনি এই হোটেলের অনেক সুনাম শুনেছেন, এবং আপনি জানেন যে অনেক মানুষের এখানে ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে। অনুরুপ ভাবে ইন্টারনেট এ অনেকটা এমনভাবেই অপরিচিত কারো সাথে বিশ্বাস এবং বন্ধুত্ব গড়ে উঠে।
আমি মনেকরি অনেকেই ইন্টারনেট বন্ধুত্ব নিয়ে খুব একটা পক্ষপাতি নয়। এমনকি আমি নিজেই যখন কাওকে দেখি যে সে ফেসবুকে প্রেম করছে, সে তাকে চেনে না বা কখনই দেখেনি তখন প্রায়ই উপদেশ দিয়ে থাকি, “কি করছ এই সব? এই সব বন্ধুত্ব বা প্রেম কখনোয় আসল নয়, ইত্যাদি।” আমি জানি এটা শুধু আমি নয় আপনারাও অনেকেই তাই ভাবেন।
দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস এ প্রকাশিত এই আর্টিকেলে দাবি করা হয় যে, নিজের অভিজ্ঞতা গুলো শেয়ার করায় হলো ভালো বন্ধুত্বের মূল ভিত্তি। কিন্তু বিজ্ঞান বলে যে, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং তথ্য শেয়ার করার মাধ্যমে গড়ে উঠে পারে এক শক্তিশালী সামাজিক বন্ধন। গবেষকগন একে “স্ব-প্রকাশ” করা বলে থাকেন। যখন আপনি নিজের সম্পর্কে কিছু শেয়ার করবেন তখন এটি আপনাকে ভালো অনুভূতি প্রদান করবে। কিছু গবেষণায় এটা জানা গেছে যে, নিজের ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং তথ্য শেয়ার করার মাধ্যমে মানুষের কাছে আরো অধিক জনপ্রিয়তা পাওয়া যায়, এবং মানুষ আপনাকে আরো বেশি পছন্দ করতে শুরু করে। এমনকি আপনি নিজেও সেই ব্যাক্তিকে বেশি পছন্দ করেন যিনি আপনার কাছে তার অধিকাংশ গোপন কথা শেয়ার করেন।
গবেষণা ইন্টারনেট বন্ধুত্বের উপর বিশেষ আস্থা রাখে। কারন কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, মানুষ তার সামনা সামনি বন্ধুদের চাইতে নেট ফ্রেন্ড দের সাথেই বেশি অন্তরঙ্গ বিবরণ শেয়ার করে থাকে। কিন্তু কিছু গবেষণা সম্পূর্ণ এর আলাদা কথা বলে। দ্যা পাবলিক লাইব্রেরী অফ সায়েন্স এর এক গবেষণায় তারা জীবনের বাস্তব সুখের উপর ভিত্তি করে বাস্তব বন্ধু এবং নেট ফ্রেন্ড দের সাথে তুলনা করেন। এবং এই গবেষণায় ইন্টারনেট বন্ধুত্বের ভালো দিক প্রায় শূন্য লখ্য করা হয় এবং ইন্টারনেট বন্ধুত্বের উপর কিছু অমঙ্গলকর বিষয় তুলে ধরা হয়। এতে চিন্তা করার কিছু নেই, কারন এই গবেষণা গুলোর ফলাফল গড়ে প্রায় ৪৫%। আমি মনেকরি যুবকেরা আজকাল বিভিন্ন ভাবে ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে। তারা সকলেই জীবনের তথ্য এবং ঘটনা শেয়ার করার মাধ্যম হিসেবে এই সামাজিক যোগাযোগ সাইট গুলো ব্যবহার করে থাকে। এবং তারা নেট ফ্রেন্ড গনদের সাথে সবকিছু শেয়ার করতে আনন্দ বোধ করে।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে, বন্ধুত্ব একটি ব্যাক্তিগত বিষয়। সাধারন কম্পিউটার এ মানুষের আচরন এর উপর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গুলো মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে খুলে দিয়েছে এক নতুন পথ। এবং এই সম্পর্ক মানুষের দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা বা একাকীত্ব কমিয়ে দেয় এবং বেঁচে থাকার তৃপ্তি প্রদান করে। এই নেট ফ্রেন্ড গুলোর মধ্যে প্রায় ৩০% ই বাস্তব জীবনের বন্ধু হয়ে উঠে। আরেক গবেষণায় জানা গেছে যে, ৩০% মানুষ তার অনলাইন বন্ধুদের সাথে দেখা করে। সুতরাং, ইন্টারনেট বন্ধুদের সম্পর্কে আপনি কি মনে করেন? আপনার কি নেট ফ্রেন্ড আছে? যদি থাকে তবে কমেন্ট এ আমাকে তার সম্পর্কে বলতে পারেন। আর যাই হোক আমিও তো আপনার একজন নেট ফ্রেন্ড, তাই না?
পূর্বে প্রকাশিতঃ এখানে
এই রকম টেক টিপস, প্রযুক্তি জ্ঞান এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে জানতে আমার বাংলা টেক ব্লগ ঘুরে আসতে ভুলবেন না। আশা করি প্রযুক্তির নেশায় নেশা গ্রস্থ হয়ে পড়বেন। ভালো থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৬ ভোর ৫:০০