আমার মন খুব কাঁদে বাচ্চাগুলোর জন্য। প্রথম মা হয়েছিলাম। এক সাথে দুইটা বাচ্চা। হুবুহু একই রকম দেখতে। রাইসা আপু নাম রেখে গিয়েছিল রুনু আর ঝনু। ওদের বাবার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল পাশের বাড়িতে। তারপর প্রেম, প্রণয়। আমি খুব কেঁদেছি। রাইসা আপু থাকলে বাচ্চাগুলো আমার সাথে থাকত। বারবার ওদেরকে বলেছি আমার বাচ্চাগুলোকে ফেলে দিও না। ফেলে দেওয়ার পর কেঁদে কেঁদে বলেছি, আমার বাচ্চাদের খুঁজে এনে দাও। আমি যেই সমাজে বাস করি। এই সমাজে পুরুষগুলো আসে নিজেদের প্রয়োজনে। রুনু-ঝুনুর বাবাও ছিল এমন। যদিও ক্ষমতাবান মানুষগুলোর সাথে সে কখনোই সংগ্রাম করে বাচ্চাদের বাঁচাতে পারত না। আমি ছাড়াও তার কয়েকটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তাও আমি তাকে অনেক ভালবাসতাম। আমার প্রতি ওর পজেসিভনেস আমাকে ওর কাছে টানতো। অন্য কোন পুরুষ আমাকে এটেনশন দিলে সে সহ্য করতে পারত না। যেদিন রুনু-ঝুনুকে ফেলে দিল ওরা সেদিনকার কথা। ওদের বাবা রাস্তা পাড় হয়ে আমার দিকে আসছিল তখন ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মারা গেল। তার কয়েক ঘণ্টা পর ওরা রুনু-ঝুনুকে ফেলে দিল। সঙ্গী হারানোর সব বেদনা ভুলে গিয়েছিলাম আমার বুকের ধন রুনু-ঝুনুকে হারিয়ে। এই নির্মম পৃথিবী ওদের আসাটাকে পাপ হিসেবে নিল। তাই ওরা আমার নারী ছেঁড়া ধনদের ফেলে দিল। মাঝেমাঝে মনে হয় ওরা কি বেঁচে আছে? আবার মনেহয় কেউ ওদেরকে এডোপ্ট করেছে। নিশ্চয়ই ওরা অনেক ভাল
আছে।
রাইসা আপু আমাকে রাস্তা থেকে তুলে এনেছিল। মা প্রথমে আমাকে সহ্যই করতে পারত না। ছোট ছিলাম তো। যেখানে সেখানে হাগু করে দিতাম। তারপর একদিন রাইসা আপু পেপারের উপর বালি রেখে দিত, আমি বুঝে গিয়েছিলাম ওখানেই আমাকে কাজটা সাড়তে হবে। আপু আমাকে অনেক ভালবাসত। আমার নামটাই বলা হয়নি। আমি পুশি। এই নামটাও আপুর রাখা।
বাবা যেদিন চিটাগং বদলি হয়ে গেল, আমি ভেবেছিলাম আমাকেও নিয়ে যাবে ফ্যামিলি শিফট করে। কিন্তু আপু আর আসেনি। এখন এই বাড়িতে পড়ে থাকি মাটি কামড়ে। মাঝেমাঝে লাথি মারে ছোট ছেলেটা, লেজ ধরে টানও মারে। কিন্তু সবচেয়ে কষ্ট পেয়েছি আমার বাচ্চা দুটোকে ফেলে দেওয়াতে। এই বাড়ির নতুন মা আমাকে মাঝেমাঝে খাবার দেন। বাচ্চাগুলো ফেলে দেওয়ার পর কয়দিন খুব কেঁদেছি নতুন মাকে বলে। কিন্তু আমার ভাষা তো মা বুঝেনি। মা যখন নামাজ পড়েন। আমি পাশে বসে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকি। চুপ করে বসে থাকি।
শুনেছি বিলেতে আমাদের মতদের অনেক আদর যত্ন করে রাখা হয়। ইচ্ছা করে বিলেত চলে যাই

