somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিনবিঘা করিডোর কিছু না বলা কথা

১২ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পেপার পত্রিকা , সংবাদ মাধ্যম, গণমাধ্যম, সভা-সমাবেশের বক্তৃতা-বিবৃতিতে সেই কবে থেকে পড়ে আসছি,শুনে আসছি “তিন বিঘা করিডোর”, “তিন বিঘা করিডোর”। প্রায় একই সুরে সবাই এর বন্দনা করছে। কিন্তু এর কিছু না বলা রহস্য অনেকেই হয়ত পেশাদারিত্বের কারণে বলতে চান না বা বলতে পারেন না। সেই পিছনে থাকা অনেক রহস্যের কিছু না বলা কথা এখানে তুলে ধরছি।

এক ফাঁকে পারলে পূর্ববর্তী নীচের পোস্ট দুটিও পড়ে দেখবেন-
ছিটমহল সমস্যাঃ অজানা অধ্যায়
তিনবিঘা করিডোরে এক দিন

(১) এপাশে ওপাশে দু’রকম দুটো মাইল ফলকঃ-বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ড(পাটগ্রাম)থেকে তিনবিঘা করিডোরে ঢুকতে হাতের বাম পাশে যে মাইল ফলক সেখানে লেখা দহগ্রাম ৬ কি.মি।তিন বিঘা


বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ড থেকে তিনবিঘা করিডোরে ঢুকতে লেখা দহগ্রাম ৬ কি.মি

করিডোরের দৈর্ঘ্য ১৭৮মিটার। এই ১৭৮মিটার দৈর্ঘ্যের করিডোর পার হয়ে দহগ্রামে ঢুকতে রোডের ডানপাশে আরেকটা মাইল ফলক। সেখানে লেখা দহগ্রাম ০১ কি.মি। মাত্র ১৭৮মিটার দৈর্ঘ্যের করিডোর পার হয়ে ৫ কি.মি উধাও!


তিনবিঘা করিডোর পেরিয়ে দহগ্রামে ঢুকতে লেখা দহগ্রাম ১ কি.মি

(২) দুই পাশের দু’গেটে ভারতের পতাকার রংঃ- বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ড থেকে তিনবিঘা করিডোরে ঢুকতে গেটে ভারতের পতাকার রঙে রং। আবার দহগ্রাম থেকে তিনবিঘা করিডোরে ঢুকতেও ঐ গেটে ভারতের পতাকার রঙে রং। যেন মনে থাকে আপনি ভারতের ভূ-খন্ডে প্রবেশ করছেন। অথচ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের (লীজ) মাধ্যমে বাংলাদেশ তিন বিঘা করিডোর সহ আগমণ নির্গমন উভয় গেটের মালিক।


তিনবিঘা করিডোরের উভয় গেটে ভারতের পতাকার রঙে রং

(৩) বাংলাদেশ কাগুজে মালিক বাস্তবে নয়ঃ-চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের (লীজ) মাধ্যমে বাংলাদেশ পুরো তিন বিঘা করিডোরের মালিক। কিন্তু এর রক্ষনাবেক্ষণ,শাসন, ভক্ষণ,পর্যবেক্ষণের পুরো দায়িত্ব ভারতের। বাংলাদেশ যে রোডটি দিয়ে করিডোর অতিক্রমের অনুমতি পেয়েছে সে রোডে রাতের বেলার লাইটের সুইচ টেপার অধিকারও বাংলাদেশের নেই।

(৪) নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎঃ-বাংলাদেশ ভারতের মূল ভূ-খন্ডে বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করলেও ভারত যে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বাংলাদেশকে ঘিরে রেখেছে তার উপর স্থাপিত লাইট পোস্টে সন্ধ্যার আগে থেকে সকাল পর্যন্ত থাকে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ। দহগ্রাম থেকে তিনবিঘা করিডোরে ঢুকে হাতের ডানপার্শ্বে বিএসএফের যে চেকপোস্ট রয়েছে তার সাথেই রয়েছে একটি জেনারেটর রুম। কেবল করিডোর এলাকায় ২৪ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্যই ভারত আলাদাভাবে এ জেনারেটর বসিয়েছে।

(৫) কেবল ভারতের পতাকাঃ- “২” তে বলেছি করিডোরের গেটে ভারতের পতাকার রঙে রঙ। করিডোরের চারকোনায়ও পতপত করে উড়ছে ভারতীয় পতাকা।


করিডোরের চার কোণায় ভারতীয় পতাকা পতপত করে উড়ছে

(৬) ভেতরে বিএসএফ বাইরে বিজিবিঃ-কাউকে কোন বাড়ীর সামনে দেখে বললেন – বাড়ী কার? লোকটি বলল -আমার। বললেন – ভেতর থেকে একটু আগুণ এনে দিন। লোকটি বলল - বাড়ীর ভেতর যেতে দেয়না। বিজিবির দু’পাশের দু’টা চেকপোস্ট এবং দুটোই তিনবিঘা করিডোরের বাইরে। আর বিএসএফের দু’পাশের দুটা চেকপোস্ট এবং দুটোই তিনবিঘা করিডোরের ভেতরে। অথচ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের (লীজ) মাধ্যমে বাংলাদেশ পুরো তিন বিঘা করিডোরের মালিক।



(৭) একটি সতর্কবাণীঃ- তিনবিঘা করিডোরের ভেতর দিয়ে কেবল পিচ ঢালা রাস্তা ধরেই বাংলাদেশীদের চলার অধিকার রয়েছে। ঘূণাক্ষরেও এর নীচে নামা যাবে না। আগন্তুকদের এ কথা বিজিবি দু’পাশ থেকেই স্বরণ করে দেয়। আর যারা নিত্য যাতায়াত করে দেখলাম তারা সতর্কবাণীটি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। দর্শণার্থীদেরকে বিজিবির মতন তারাও কথাটি স্বরণ করিয়ে দিচ্ছে।


দর্শনার্থীদের এই রাস্তার ডানে বামে নামা নিষেধ

(৮) উপরে ভারত নীচে বাংলাদেশঃ-২০১১ সাল থেকে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা গেছে। তবে ভারতের বাঁধায় বিদ্যুৎ লাইনটি নিতে হয়েছে মাটির নীচ দিয়ে। অথচ ভারতীয় লাইনগুলি করিডোর পার হয়েছে মাথার উপর দিয়ে।


করিডোরে মাথার উপরে ভারতীয় খুঁটি ও তার

(৯) কেবল বাংলাদেশের পাশে গেট ভারতের পাশে নয়ঃ- বাংলাদেশের উভয় পার্শ্বে(পাটগ্রাম ও দহগ্রাম) তিনবিঘা করিডোরে ঢুকতে গেটের ব্যবস্থা রয়েছে যা ইচ্ছা করলেই ভারত যখন তখন বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু ভারতের দু’পাশ থেকে করিডোরে ঢুকতে কোন গেট নেই। দুই পাশই উম্মুক্ত।


বাংলাদেশের দু’দিকে লোহার গেট থাকলেও ভারতের দু’দিকে কোন গেটই নেই

(১০) সড়ক বনাম মহাসড়কঃ-করিডোরের ভেতর দিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের রাস্তার প্রশস্থতা মাত্র ৮ ফুট। একটি বড় গাড়ী পার হতে চাইলে রাস্তায় মানুষ দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না। বিপরীতে করিডোরের ভেতর দিয়ে যাওয়া ভারতের রাস্তা মহাসড়কের ন্যায় প্রশস্থ।


বাংলাদেশের ৮ ফিটের রাস্তা দিয়ে একটা বড় গাড়ী পার হতে পথচারীদের রাস্তা থেকে নেমে দাঁড়াতে হয়


করিডোরের ভেতর দিয়ে ভারতের মহাসড়কের মত রাস্তা

(১১) কুচলিবাড়ীর একমাত্র স্থল যোগাযোগের মাধ্যম তিন বিঘা করিডোরঃ-বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ড থেকে তিনবিঘা করিডোরে ঢুকে সামান্য কিছুদূর এগুতেই ভারতের মূল ভূ-খন্ড থেকে অপেক্ষাকৃত প্রশস্থ আরেকটা পিচ ঢালা রাস্তা তিনবিঘা করিডোরে ঢুকে বাংলাদেশের রাস্তাটি ক্রস করে কুচলিবাড়ী চলে গেছে। ভারতের মূল ভূ-খন্ডের সাথে কুচলিবাড়ীর লোকজনের স্থল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই রোডটি। অর্থাৎ ভারতের মূল ভূ-খন্ডের সাথে কুচলিবাড়ীর লোকজনের স্থল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যমও তিনবিঘা করিডোর।


তিনবিঘা করিডোরের চার মাথা
কারণ তিস্তা নদী ভারতের চর খড়খড়িয়াতে বাঁধা পেয়ে এর বড় মুখটা চর খড়খড়িয়ার ডান পাশ দিয়ে বাংলাদেশের দহগ্রামে ঢুকে পড়েছে। আর ছোট মুখটা চর খড়খড়িয়ার বাম পাশ দিয়ে সরাসরি বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ডে ঢুকেছে। ওদিকে তিস্তার বড় মুখটা দহগ্রাম থেকে বের হয়ে আবার চর খড়খড়িয়ার ডান পাশ দিয়ে ভারতীয় ভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সরাসরি বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ডে স্থায়ীভাবে ঢুকে পড়েছে। তিনবিঘা করিডোর ছাড়া কুচলিবাড়ীর লোকজনকে হলদিবাড়ী বা ভারতের মূল ভূ-খন্ডে যেতে হলে জলপথ(দুই বার তিস্তা পার হতে হবে)ছাড়া কোন পথ নেই। সেখানে কুচলিবাড়ীর লোকজনকে একবার তিস্তা নদী পার হয়ে চর খড়খড়িয়াতে যেতে হবে। আবার চর খড়খড়িয়া থেকে মূল তিস্তা পার হয়ে হলদিবাড়ী বা ভারতের মূল ভূ-খন্ডে প্রবেশ করতে হবে।


কুচলিবাড়ী থেকে বেরুতে ২টা রাস্তা

(১২) বাংলাদেশের মূল ভূমিকে ঘিরে কাঁটাতার দহগ্রাম-আঙ্গরপোতায় নয়ঃ-গোটা বাংলাদেশের মূল ভূমিটা অনেক যত্ন ও পয়সা কড়ি খরচ করে ভারত কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দিয়েছে। কিন্তু দহগ্রাম-আঙ্গরপোতায় ভারত কাঁটাতারের অভাববোধটা এখনও অনুভব করেনি। যে কেউ ইচ্ছা করলেই দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা দিয়ে ভারতে যেতে আসতে পারে।


করিডোরের সাথেই সীমান্ত পিলার কাঁটাতারের বেড়া এর পর থেকে আর এগোয়নি

পেছনের কথা
(১) রাজনীতির ফ্রি বিজ্ঞাপনের মোড়কে প্রতারণাঃ- দক্ষিণ বেরুবাড়ী এবং এর পেটের মধ্যে থাকা ৪ টি ছিটমহল ছিল বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ডের সাথে লাগোয়া।কিন্তু দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ড থেকে ১৭৮মিটার দৈর্ঘ্যের ভারতীয় ভূমি দ্বারা বিচ্ছিন্ন। বাংলাদেশকে বোঝানো হয় বেরুবাড়ী দিলে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা যাবার জন্য ১৭৮মিটার দৈর্ঘ্যের ভূমির সাথে আরও ৮৫মিটার প্রস্থের ভূমি (আজকের তিনবিঘা করিডোর)বাংলাদেশকে ফ্রি (চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত)দেয়া হবে। পেপার পত্রিকা –গণমাধ্যমের চটকাদার বিজ্ঞাপনে যেমনটি বলা হয় “বড়টা কিনলে ছোটটা ফ্রি” ঠিক তেমনি। ১৯৭৪ সালের ১৬ই মে স্বাক্ষরিত চুক্তির বলে ভারত ১১.২৯ বর্গ কিলোমিটারের দক্ষিণ বেরুবাড়ী এবং ৪ টি ছিটমহল(৬.৮৪ বর্গ কিলোমিটার) সহ মোট ১৮.১৩ বর্গ কিলোমিটার ভূমি ঐ বছরের নভেম্বর মাসেই দখল করে নেয়। আর দহগ্রাম-আঙ্গরপোতায় যাবার জন্য ভারত কৌশলে বাংলাদেশকে ভারতীয় আদালতের গলায় ঝুলিয়ে দেয়। একেই বলে রাজনীতির ফ্রি বিজ্ঞাপনের মোড়কে প্রতারণা।

(২) ১৯৮২ সালের ৭ই অক্টোবরের চুক্তিঃ -বারংবার চেষ্টায় ১৯৮২ সালের ৭ই অক্টোবর দীর্ঘ ৮ বছর পর তিনবিঘা করিডোর নিয়ে ভারত- বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে লীজের ধারা/শর্তাবলী নিয়ে আরেকটা চুক্তি হয়।
Terms of Lease in perpetuity of Tin Bigha - Area , October 7, 1982


New Delhi
7 October 1982
Excellency,
I have the honour to refer to item 14 of Article 1 of the Agreement between the Government of Republic of India and the Government of the People's Republic of Bangladesh concerning the Demarcation of the Land Boundary between India and Bangladesh and Related Matters, signed in New Delhi on 16th of May 1974, and to state that in connection with the lease in perpetuity by India to Bangladesh of an area of approximately 178 metres x 85 metres near "Tin Bigha" to connect Dahagram with Panbari Mouza (P.S. Patgram) of Bangladesh, the follwoing understanding has been reached between our two Governments:
1 The lease in perpetuity of the aforementioned area shall be for the purpose of connecting Dahagram and Angarpota with Panbari Mouza (P.S. Patgram) of Bangladesh to enable the Bangladesh Government to exercise her sovreignty over Dahagram and Angorpota.
2 Sovereignty over the leased area shall continue to vest in India. The rent for the leased area shall be Bangladesh Tk. 1/- (Bangladesh Taka One) only per annum. Bangladesh shall not, however, be required to pay the said rent and the Government of India hereby waives its right to charge such rent in respect of the leased area.
3 For the purposes stated in para 1 above Bangladesh shall have undistributed possession and use of the area leased to her in perpetuity.
4 Bangladesh citizens including police, paramilitary and military personnel along with their arms, ammunition, equipment and supplies shall have the right of free and unfettered movement in the leased area and shall not be required to carry passports or travel documents of any kind. Movement of Bangladesh goods through the leased area shall also be free. There shall be no requirement of payment of customs duty, tax or levy of any kind whatsoever or any transit charges.
5 Indian citizens including police, paramilitary and military personnel along with their arms, ammunition, equipment and supplies shall continue to have the right of free and unfettered movement in the leased area in either direction. Movement of Indian goods across the leased area shall also be free. For the purposes of such passage the existing road running across it shall continue to be used. India may also build a road above and/or below the surface of the leased area in an elevated or subway form for her exclusive use in a manner which will not prejudice free and unfettered movement of Bangladesh citizens and goods as defined in paras 1 and 4 above.
6 The two governments shall cooperate in placing permanent makers along the perimeters of the leased area and put up fences where necessary.
7 Both India and Bangladesh shall have right to lay cables, electric lines, water and sewerage pipes etc. over or under the leased area without obstructing free movement of citizens or goods of either country as defined in paras 4 and 5 above.
8 The modalities for implementing the terms of the lease will be entrusted to the respective Deputy Commissioners of Rangpur (Bangladesh) and Cooch Behar (India). In case of differences, they will refer the matter to their respective Governments for resolution.
9 In the event of any Bangladesh/Indiaan national being involved in an incident in the leased area, constituting an offence in law, he shall be dealt with by the respective law enforcing agency of his own country in accordance with its national laws. In the event of an incident in the leased area involving nationals of both countries, the law enforcing agency on the scene of the incident will take necessary steps to restore law and order. At the same time immediate steps will be taken to get in touch with the law enforcing agency of the other country. In such cases, any Indian national apprehended by a Bangladeshi law enforcing agency shall be handed over forthwith to the Indian side and any Bangladeshi national apprehended by an Indian law enforcing agency shall be handed over forthwith to the Bangladeshi side. India will retain residual jurisdiction in the leased area.

I shall be grateful if you kindly confirm that the above sets out correctly the understanding reached between our two Governments. I have also the honour to purpose that this letter and your reply confirming the understanding shall constitute an agreement between our two Governments in respect of the leased area, which shall be an integral part of the Agreement concerning the Demarcation of the Land Boundary between India and Bangladesh and Related Matters. Signed on the 16th of May 1974.
Accept, Excellency, the assurances of my highest esteem.
H.E. Mr. A. R. Shams-Ud-Doha (P.V. Narshimha Rao)
Minister for Foreign Affairs Minister of External Affairs
Government of the People's Republic of Bangladesh Government of the Republic of India

(৩) আন্দোলনের দাবানলঃ- ১৯৭৪ সালে ভারত বেরুবাড়ী দখলে নিলে শান্ত হয় বেরুবাড়ীর লোকেরা। কিন্তু এদিকে নতুন করে অশান্ত হয়ে ওঠে কুচলিবাড়ীর জনতা। ১৯৭৪ সালের চুক্তিতে বলা হয়-“ India will retain the southern half of South Berubari Union No.12 and the adjacent enclaves, measuring an area of 2.64 square miles approximately, and in exchange Bangladesh will retain the Dahagram and Angarpota enclaves. India will lease in perpetuity to Bangladesh an area of 178 metres x 85 metres ijear 'Tin Bigha' to connect Dahagram with Panbari Mouza (P.S. Patgram) of Bangladesh. ” কুচলিবাড়ীর লোকজন তিন বিঘা করিডোর এলাকার ভূমির মালিকদের সাথে নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দিনটি ১৯৮১ সালের ৬ই জুলাই। তিন বিঘাতে মিছিল চলাকালে ভারতীয় পুলিশ মিছিলের উপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে কুচলিবাড়ী সংগ্রাম কমিটির সুধীর রায় মারা যান। আহত হন আরো ১০জন।


সুধীর রায়ের স্মৃতি স্তম্ভ

সুধীর রায়ের মৃত্যু যেন আন্দোলনে ঘি ঢেলে দেয়। এবার কুচলিবাড়ীর জনতার সাথে ধপারহাট ও মেখলিগঞ্জের জনগণও বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। কুচলিবাড়ী সংগ্রাম কমিটিতিনবিঘা সংগ্রাম কমিটি নামক দুটি সংগঠনের ছায়াতলে তারাও লীজের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। এভাবে এ দ্রোহের দাবানল তিনবিঘা পেরিয়ে মূল ভারতের লোকজনকেও জাগিয়ে তোলে।


দ্রোহে ফুঁসছে জনতা

The opposition to the 1974 and 1982 Agreements came from the people of Kuchlibari. Dhaprahat and Mekhliganj. Two organisations to spearhead the agitation, the Kuchlibari Sangram Committee and the Tin Bigha Sangram Committee were formed. In March 1983, the agitators took recourse as the judicial system. Three writ petitions challenging the 1982 Lease Agreement on various constitutional grounds were filed in the Calcutta High Court by some persons including the owner of a plot of land which would have to be acquired for being leased to Bangladesh.
এক ধাপ এগিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ফরোয়ার্ড ব্লক নেতা নির্মল বোস কলকাতা হাইকোর্টে ১৯৮২ সালের লীজ চুক্তির বিরুদ্ধে মামলা করে। আদালতের রায়ে বলা হয়,বিষয়টি সংবিধান সংশোধনের দরকার আছে কিনা তা যাচাই করা দরকার।এই মামলার ফলে ভারত সরকার তিনবিঘা লীজ প্রদানের বিষয়টিকে বন্ধ রাখে। এর পর থেকে বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষ এটাকে ভারতীয় হঠকারিতা এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এটাকে আইনি জটিলতা বলে সময় পার করতে থাকে। ঠিক যা করেছিল ১৯৫৮ সালের চুক্তির বেলায়। দিল্লী এভাবেই বিভিন্ন কৌশলে তার দায় এড়ায়। বাংলাদেশের উত্তর বঙ্গের কিছু মানুষকে ঢাকার মানুষেরা এদের মাত্রাতিরিক্ত সরলতার জন্য মফিজ বলে ডাকে। এই মফিজরা যেমন গাবতলীর টাউটদের থেকে গুলিস্থানের টাউটের কাছে হাত বদল হয় তেমনি ভারতীয় সরকার প্রধানরাও উত্তর বঙ্গের মফিজদের মত বাংলাদেশের সরকার প্রধানদের ইচ্ছে মতন নাকানি চুবানি খাইয়ে তাদের স্বার্থসিদ্ধি করে ভারতীয় আদালতের কাছে হাতবদল করতে থাকে।
অবশেষে দীর্ঘ ১৬ বছর পর ১৯৯০ সালের ৩রা জুন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়- "১৯৭৪ ও ১৯৮২ সালে সম্পাদিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী ভারতের তিনবিঘা করিডোর সীমানার মধ্য দিয়ে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলের তথা বাংলাদেশের জনগণের যাতায়াত লিজকৃত ভূ-খন্ডের ওপর ভারতের সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন হওয়া বা অধিকার ছেড়ে দেওয়া বুঝায় না। “ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট তিনবিঘা করিডোর চুক্তির অনুমোদন দেয়।”


তিনবিঘা করিডোরের মানচিত্র

(৪) ১৯৯২ সালের ২৬শে মার্চের চুক্তিঃ-১৯৯০ সালের ৩রা জুন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে করিডোর চুক্তির অনুমোদন দেয়ার ফলে ভারত - বাংলাদেশ ১৯৯২ সালের ২৬শে মার্চ আরেকটা চুক্তি করে।
Letter of Foreign Secretary of India Implementing Tin Bigha Lease , 26 March, 1992


New Delhi
26th March 1992
Excellency,
I have the honour to refer to item 14 of Article 1 of the Agreement of 16th May, 1974, signed by the Prime Ministers of India and Bangladesh concerning the demarcation of the land boundary between India and Bangladesh and related matters, and the Exchange of Letters dated 7 October, 1982, between the Minister of External Affairs of India and the Minister of Foreign Affairs of Bangladesh, regarding the terms of lease in perpetuity of the Tin Bigha Area. This is to confirm that in the subsequent discussions regarding the modalities for leasing out the above-mentioned area, the following understanding has been reached:
1. Indian flags will fly at the four corners of the Tin Bigha corridor as a manifestation of India's sovereignty over the area;

2. An East-West road to connect Dahagram (Bangladesh) with Patgram (Bangladesh) will be constructed by India before 26th June 1992 roughly at right angles to the existing North-South road. The new East-West road is to conform to the specifications and width of the existing North-South road;

3. Landscaping (horticulture) protected by fencing, on both sides, of the proposed road, is to be carried out and maintained by India, so as to prevent the possibility of encroachment and infiltration, keeping adequate provision for drains, laying of cables, water-supply etc., in future;

4. Two check points each are to be set up at both ends of the East-West road where it touches the Bangladesh boundary. They will be separately manned by Indian and Bangladesh authorities with a view to regulating the movement of traffic;

5. Traffic in the corridor will be regulated by the Indian authorities, and the opening and closing of the check points on the East-West road will be coordinated accordingly in such a manner that there is no intermixing of Indian and Bangladeshi streams of traffic;

6. At the intersection, i.e., the specific point where East-West road will cross the North-South road, there will be an Indian traffic Police control to direct the traffic movement;

7. Indian traffic movement on the North-South road will continue as heretofore. Bangladesh traffic will use the East-West road in the corridor at alternate hours during the daylight period. However, exceptions will be made at the local level to the above arrangements in cases of emergency, such as natural calamities, movement of civil administrators and medical emergencies;

8. Suitable lighting arrangements will be made for the entire corridor in order to facilitate monitoring by security agencies on both sides;

9. Differences, if any, regarding modalities for implementing the terms of lease will be resolved in the first instance through consultations between the Deputy Commissioner of Cooch Behar (India) and the Deputy Commissioner of Lalmonirhat (Bangladesh). Remaining differences, if any, will be referred to their respective Governments for resution;

10. India and Bangladesh will provide mutual judicial assistance to each other to the extent necessary, in all matters relating to the prosecution, trails, etc. concerning incidents constituting offences in the leased area;

11. Agreed arrangements will come into effect from 26th June, 1992.

I shall be grateful if Your Excellency could confirm that the above sets out correctly the understanding reached between out our two Governments.
Please accept, Excellency, the assurances of my highest consideration.
H. E. Mr. A. H. Mahmood Ali (J.N Dixit)
Additional Foreign Secretary, Foreign Secretary
Ministry of Foreign Affairs,
Government of People's Republic of Bangladesh

(৫) একই দিনে স্বাধীনতা দিবস ও শহীদ দিবসঃ- ১৯৭৪ সালের চুক্তিতে তিন বিঘা করিডোরের জন্ম। কিন্তু সেই করিডোর অতিক্রম করার অনুমতি না থাকায় ১৯৭৪সাল থেকে ১৯৯২ সাল দীর্ঘ ১৮ বছর দহগ্রাম-আঙগরপোতার লোকজন ছিল ভারত কর্তৃক চর্তুদিক থেকে অবরুদ্ধ।ভারত - বাংলাদেশ ১৯৯২ সালের ২৬শে মার্চের চুক্তির পর দহগ্রাম-আঙগরপোতার লোকজন এই অবরুদ্ধতা থেকে মুক্তি পায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া উদ্বোধন করেন বহু প্রতিক্ষিত তিনবিঘা করিডোর দিয়ে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসীর যাতায়াতের দ্বার। ১৯৯২ সালের চুক্তি ও তা কার্যকরের ফলে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রতি ১ ঘণ্টা পরপর ১ ঘণ্টা ধরে দহগ্রাম-আঙগরপোতার লোকজন তিনবিঘা করিডোর পার হয়ে বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ডে যাতায়াতের সুযোগ পায়। আক্ষরিক অর্থে ১৯৯২ সালের ২৬শে মার্চ দহগ্রাম-আঙগরপোতার মানুষের কাছে স্বাধীনতা দিবস।


কখন খুলবে গেট অপেক্ষার প্রহর ২২শে জুলাই ২০১১ এর ছবি

কথায় বলে কারও পৌষ তো কারও সর্বনাশ।১৯৯২ সালের ২৬শে মার্চ দহগ্রাম-আঙগরপোতার মানুষের কাছে শুভ দিন হলেও ভারতীয়দের কাছে সর্বনাশা দিন। চুক্তির খবরে ঐ চুক্তি বাতিল ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দাবিতে বিদ্রোহী জনতা রাস্তায় নেমে আসে। জনতার উপর ভারতীয় পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়।পুলিশের গুলিতে মারা যান ক্ষিতীন অধিকারী ও জিতেন রায় (বর্মন)। ভারতীয়দের কাছে ১৯৯২ সালের ২৬শে মার্চ তাই শহীদ দিবসও বটে।


১৯ জুন, ২০১৪ ভারতীয় পত্রিকার কাটিং

দহগ্রাম আঙ্গরপোতায় সুখের হাওয়াঃ-শুরুটা জাতির জনক বঙ্গ বন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের হাতে ১৯৭৪ সালে। মধ্যমটা মহামান্য রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময় ১৯৮২ সালে। স্বাধীনতা পর্বটা প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরে ১৯৯২ সালে। আর বর্তমান পর্বটা বঙ্গ বন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে।


দেশের সরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানি টেলিটক দহগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ভবনের ওপর টাওয়ার স্থাপন করে দিয়েছে।দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলবাসী পেয়েছে ১০ শয্যা বিশিষ্ট একটি মনোরম হাসপাতাল সেই সাথে পুরো ছিটমহলে বিদ্যুৎ ব্রবস্থা।

এপার বাংলার দ্রোহের কিছু কথাঃ- বাংলার উভয় পাড়ে আমরা যারা বসবাস করি বাঙ্গালী বলে পরিবার প্রথার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। আমরা দেখি একটা বৃহৎ পরিবার থেকে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র অংশ যখন ভেঙে যায় তখন দেখা যায় ক্ষুদ্র অংশটা হয় একটু কৃপণ। আর পরিবারের থেকে যাওয়া বৃহৎ অংশটি থাকে অপেক্ষাকৃত উদার।এটা উভয় বাংলার নাটক সিনেমাতে হরহামেশাই দেখি। কিন্তু বৃহৎ ভারত ক্ষুদ্র বাংলাদেশের সাথে সামান্য তিন বিঘা করিডোর নিয়ে যা করছে তাতে বলতে হয়- “কুকুরকে ভাতের থালা এগিয়ে দিয়ে পিছনে লাঠির মাথা বের করে দাঁড়িয়ে থাকা” ।



সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×