ছেলেবেলা, কৈশোর ও একটি ঝাপসা আয়না! (২)
ছেলেবেলা, কৈশোর ও একটি ঝাপসা আয়না! (৩)
ছেলেবেলা, কৈশোর ও একটি ঝাপসা আয়না! (৪)
ছেলেবেলা, কৈশোর ও একটি ঝাপসা আয়না! (৫)
(পূর্ববর্তী অংশের পর)
সবুজের পথ বলতে সত্যিকারের সবুজ; মেকী নয়-এমন একটা বনের মালিক ছিলাম আমরা। স্বঘোষিত মালিক। পাঁচালীপথটা ছিল মাটির আর তাতে গরুর গাড়ির কাঠের চাকার গভীর দাগ। লোহার রিং চালানোর জন্য, ওই গভীর দাগ গুলো ছিল আমাদের খুব প্রিয়, কারণ, সরু দাগের ভেতর দিয়ে রিংটা চালানো ছিল খুব পান্ডিত্যের ব্যাপার। সে যাই হোক, পথে পড়ত ২টা বাঁশের সাঁকো। কয়েকজন (আমাদের চোখে তারা ছিলেন আইডল) ছিল, সিনিয়র, সাঁকোর ওপর দিয়েও রিং নিয়ে অবলীলায় পার হয়ে যেত। আর আমরা পার হতাম রিং গলায় ঝুলিয়ে। সময়টা শৈশব আর কৈশোরের মাঝামাঝি। দ্বিতীয় সাঁকো পার হবার পর, ১.৫ কিঃমিঃ গেলেই বন। মধুপুর আর ভাওয়ালের গড়ের বেশীর ভাগ আদি অংশই পড়েছিল আমাদের ভাগে, কারণ, যাতায়াত ব্যাবস্থা ভালো না থাকায় তখন করাতকলের মুখ দেখেনি এখানকার শাল আর গজারী বন। প্রতিদিনই একটা না একটা নতুন পথ ধরে হাঁটতাম। ক্ষুধা পেলে হাফপ্যান্ট এর পকেট ভর্তি মুড়ি তো আছেই! পিপাসা পেলে, বনের ভিতর খুঁজে বের করতাম বাড়ি। আর পুকুর পেলে তো কথাই নেই! খাওয়া আর গোসল একসাথে হয়ে যেত। অবারিত বন, একজীবনে হেঁটেও যেন হাঁটার ক্লান্তি আসেনা! ধনুকের মত আচমকা বাঁক নেয়া কোন টিলা কিংবা বনের ভেতর জমে থাকা জলজ পথে পায়ের গোড়ালি ডুবিয়ে খুঁজে বেড়াতাম করমচা, বড়ই আর বেতফল গাছের। আমার মনে আছে, হাঁটতে হাঁটতে একদিন একঝাঁক খরগোশ দেখেছিলাম-যদিও শত চেষ্টা করে ওদের টিকিটির'ও নাগাল পাইনি!
ক্লান্তি নয়, ফিরতাম সূর্যের তাড়া খেয়ে। একলয়ে রিং গাড়ি চালিয়ে, বাঁশের সাঁকোর মাথা খেয়ে-শেষ বিকেলের সাথে পাল্লা দিয়ে, সূর্য বাড়ি ফেরার আগেই আমরা ফিরতাম। সন্ধ্যা শুরু হত গুনগুনিয়ে...। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ২:৫০