নিস্তব্ধ রাত, নির্জন ঘর, হালকা কুয়াশায় মোড়ানো চারপাশটা ফিনফিনে চাঁদের আলোয় প্লাবিত। ঘরটা আংশিক অন্ধকারাচ্ছন্ন। তবে টেবিল ল্যাম্পের মৃদু আলো অন্ধকারের গুমোট ভাব দূরীভূত করেছে খানিকটা।
এমন আলো-আঁধারের খেলায় অনমনা গৃহের কর্তা নীলকান্তের হঠাৎ গল্প লেখার সাধ জাগল। অদ্ভুত সব খায়েশ হুটহাট জাহির করা ওর বেশ পুরোনো অভ্যেস।এরমধ্যে গল্প লেখার বদভ্যেসটা আরো পুরোনো।তবে গল্প যে এর আগে ও খুব একটা লিখতো না এমনটা নয়। পরিবেশ এমন হলেতো কথাই নেই।
এমন পরিবেশেও আজ গল্প লিখতে গিয়ে কান্তর হাতটা কেমন যেন কেঁপে উঠলো!!
এই তো সেই কান্ত, গত সপ্তাহের তিনটে খুন যে নিজ হাতে করেছিলো! দশ দিন আগে পঁইত্রিশ হাজার টাকার ঘুষ ওটা কিন্তু ওই নিয়েছিলো! আর গত মাসের ধর্ষণের মহানায়ক?? তাও ও ই ছিলো!
ওসবে ওর হাত কিন্তু একবারের জন্যও কাঁপেনি।
অথচ আজ কিনা যখন সামান্য পশু লিখতে গেল অমনি ওর হাঁত কেঁপে উঠলো! এর পরে যখন লিখতে চাইলো কুকুর হাতটা যেন ওর আরো বেশি কাঁপতে চাইলো! পরের বারের শুয়োর লেখার প্রচেষ্টাও বন্ধ হলো মূলত হাতটা ভূমিকম্পের মতো কাঁপতে চাইলো বলে!
নাহ! নীলকান্তকে দিয়ে গল্প আজ আর হচ্ছে না!কিছু একটা লিখতে চাইলেই যখন হাত কেঁপে উঠছে, তখন আস্ত একটা গল্প কি আদৌ সম্ভব?
কেউ নিজেই যখন গল্প হয়ে ওঠে তখন নাকি নিজের গল্প লিখতে গেলে তার হাত কেঁপে ওঠে। অথচ পরের বারের চেষ্টায় গল্পের ধবধবে সাদা পাতায় ও বিনে বাঁধাই নিজের নাম( নীলকান্ত) লিখলো এবং থামলো। আসলে ওকে থামালো জানালার পাশের কদমের ডালে ঝুপ করে ওঠা একটা শব্দ।
পরিস্তিতিটা বোঝার জন্য জানালার বাহিরে যখন চিবুক বাড়িয়ে ধরলো, ফিনফিনে চাদের আলোয় ওর মুখটা প্লাবিত হয়ে গেল।
ও কি ঐ প্লাবনের মানে বুঝল? নাকি ওর কাছে চন্দ্র প্লাবনের বার্তাটা অধরাই রইলো-কারো নিজস্বতা নামে হয় না বরং সেটি হয় তার আচরন ও কর্মকান্ডে! আর একারনেই নীলকান্ত নামধারী হওয়ার সত্ত্বেও ওর নিজের গল্প আসলে নিছক একটা পশু, শুয়োর কিংবা কুকুরেরই গল্প!
অনুগল্প:: গল্পের গল্প
:: বিলিয়ার রহমান রিয়াজ::
ঢাকা
২২-২-২০১৮ ইং
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৮