ঢাকা শহরে কাকের চেয়ে কবির সংখ্যা বেশি!!! কথাটি কত বার শুনেছেন?? আমি বহুবার শুনেছি! তবে ভদ্রতা দেখিয়ে কেউই আমাকে বলেনি।কিন্তু হাবভাবে বুঝে নিতে হয় অনেক কিছু! আমিও বুঝে নিয়েছি(যেহেতু আমি নিজেও কবিতা লেখার চেষ্টা করি তাই আমার সামনে অন্যান্য কবিদের অপমান করে বলা সে তো আমাকেই বলা)।
উপরের ভাবনাটা যারা ভাবেন তদের কাছে আমারো জানতে ইচ্ছে হয় আসলে কবি বলতে আপনারা কাকে বোঝান?? যিনি কবিতা লেখেন তাকেই কি??? কিন্তু কবিতা লিখলেই তো সবাই কবি হয়ে যান না। আপনি কি জানেন জীবনানন্দ দাশ কি বলেছেন? তিনি বলেছেন, ‘সবাই কবি নন, কেউ কেউ কবি???’
কবিদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে তিনি আরো বলেছেনঃ- কবি; তাদের হৃদয়ে কল্পনার এবং কল্পনার ভিতরে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার সারবত্তা রয়েছে এবং তাদের পশ্চাতে অনেক বিগত শতাব্দী ধরে এবং তাদের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক জগতের নব নব কাব্যবিকীরণ তাদের সাহায্য করেছে। কিন্তু সকলকে সাহায্য করতে পারে না ; যাদের হৃদয়ে কল্পনা ও কল্পনার ভিতরে অভিজ্ঞতা ও চিন্তার সারবত্তা রয়েছে তারাই সাহায্যপ্রাপ্ত হয় ; নানারকম চরাচরের সম্পর্কে এসে তারা কবিতা সৃষ্টি করবার অবসর পায়।( কবিতার কথা)
এবার আবার ঢাকা শহরে কাকের চেয়ে কবিদের সংখ্যা বেশি এই কথাটায় ফিরে আসি। এই কথার দ্বারা আপনারা কি বোঝাতে চান??? সত্যিকারের কবিদের সংখ্যা আধিক্য! যদি এটাই বোঝাতে চান তবে এ তো আনন্দের কথা!! দেশে প্রতিভাবানদের সংখ্যা তাহলে অধিক!
কিন্তু আপনি এটা যে বোঝাতে চাননা তা অনুমান করার জন্য আমাদের আইনস্টাইন হতে হবে না । আপনাদের নজরটা যে কবিতা লেখা অকবিদের প্রতি সে আমরা বুঝি!
আপনারা কাউকে অকবি বলে গালি দিতেই পারেন সে আপনাদের স্বাধীনতা। তবে আপনাদের কাছে আমাদের( অকবিদের) যে কিছু জিজ্ঞেসা আছে??
আচ্ছা বলেনতো যদি অকবিরা কবিতা লেখে তবে কি__
রাজার দুয়ারে আগুন লাগে?
নাকি নব বিবাহিত দম্পতির সংসার ভেঙে যায়?
অ কবিদের কবিতার কারনে কি শীতকাল বেশি স্থায়ী হয়; বসন্ত দেরি করে আসে??
অকবিদের কবিতার কারনে কি কৃষকের ফসলের ক্ষেত পুড়ে যায়??
নাকি বন্যার জলে ভেসে যায় ধান?
অকবিদের কবিতার কারনে কি কখনো আপনাদের প্রেম ভেঙে গেছে??
নাকি বিলুপ্ত হয়ে গেছে সুন্দর বনের কোন পশু??
ঢাকা শহরের কোন সেতু ভেঙে পড়েছে? অথবা পেঁকে গেছে কোন কোন পুরুষের দাড়ি???
এসব কিছুই না হলে কবিতার মতো করে একজন অকবির মনের কথা বলে যেতে দোষ কোথায় ?? আপনারা অকবির কবিতা না পড়লেইতো হয়?
আরো একটা ব্যাপার লক্ষ্যণীয় যে কবিতার সমালোচনা করতে গিয়ে আপনারা প্রায়ই বলেন আধুনিক কবিতা কোন কবিতাই নয়( জীবনান্দদাশের কবিতাকেও তাই বলা হত)। এখন কেউ যদি ক্লাসিক কবিতার মতো কিছু কাব্যিক শব্দ ব্যবহার করে কবিতা লেখে আপনারা তখন বলেন সচেতন ভাবেই কঠিন শব্দ ব্যবহার করছেন। আরে মশাই আপনার সকল ক্লাসিক কবিরাই এটা করেছেন এবং আপনি তা মেনেও নিয়েছেন। তাদেরটা মেনেছেন কারন তাদের নামটা বড় তাই না! তবে আমাকেতো বলতেই হচ্ছে মশাই আপনি কবিতাই বোঝেন না!
কবিতা ‘চিন্তার ব্যায়াম’ নয়।কবিতার জন্মরহস্য বর্ণনাতীত একটি ঘটনা। কোনও কবির পক্ষেই বলা সম্ভব নয়, আজ আমি একটি কবিতা লিখবো। কবিতা লেখার শর্ত হলো কবির মনে বিশেষ একটি ভাবনা বা চিন্তার স্বয়ম্ভূ স্ফূরণ।কবিতা সকলের জন্যে নয়, অনেকের জন্যেও নয়। কবিতা কেবল কবিতাবোদ্ধাদের জন্য।
তাই কবিতা আপনার জন্য কিনা সেটা ভাবুন!! একবার নয় প্রয়োজনে সাত বার ভাবুন!
আপনারা আরো বলেন ওমুক সময়ে অমুক অমুক ভালো লিখতেন! ঠিক আছে যারা ভালো লিখতেন তারা নতুনদের প্রেরণা! কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো আপনারা নিজেরা তখন কি করতেন?? কিছুই না এবং এখনো তাই করছেন?? আপনাদেরই বলছি, এই প্রবাদটা কি জানেন যে যারা লিখতে জানেন না তারাই হয়ে যান লেখার সমালোচক !! উদাহরণ পেতে চান তবে স্যামুয়েল জনসনের নামটা শুনে নেন।( তেমন কিছুই লেখেননি ভদ্রলোক। তবে বাঘা বাঘা কবিদের সমালোচনা করে গেছেন। অবশ্য তার মতো সমালোচনা করতে গেলেও কিছু যোগ্যতার দরকার।)
একজন অকবি নিজের মতো করে লেখেন। আপনরা পারেন তার লেখার নিচে গিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করতে যাতে তার লেখার মানের উন্নায়ন ঘটে। কিন্তু আপনারা সেটি না করে বরং চাচ্ছেন একজন অকবি পরিপক্ক হয়েই লিখতে আসুক! আরে মশাই আছাড় না খেলে সে হাটতে শিখবে কিভাবে???
পরিশেষে আমি আপনাদের ( যারা কবি শব্দটাকে গালি ভাবেন) কবিতার জ্ঞাণের একটা ধারনা পেতে চাইছি( সামুতে যারা একটা কবিতাও পোস্ট করেছেন তারা এই টেস্টের আওতার বাইরে)। আপনার জন্য কবিতা নয় একটা ছড়া দিলাম মাত্র। আপনাকে বলতে হবে এর প্লট কি, রাইম স্কিম কি, এটা কোন ধরনের ছড়া এবং এর মূলথিম কি, এতে সিমিল, মেটাফোর আছে কিনা, এখানে হয়েছে কি কোন পারসনিফিকেশন?
ছড়া
লালকে যখন লালই বলি
নীলকে যখন নীল
সাদা চোখে সবই সমান
তখন কিসে গরমিল।
লাল, নীল, সবুজ ,হলুদ
সবই যখন কালো
মন্দ দুষ্ট লোভী পুষ্ট
সবই তখন ভালো।
গলা বাজিতে গলা মিলিয়ে
বৈধ যখন অবৈধতা
পেশির জোরে ছোড়ার ভয়ে
উচ্চকন্ঠে আসে মৌনতা।
তখন উর্দি কুর্তি হয়ে
নিজের যশকে বাড়ায়
স্পর্ধার ঐ উর্ধাকাশে চড়ে
রাজাকে ভিখারী করায়।
এই ভুলেরই ভুল সংশোধনী
কখনো কি কাজে আসে
ভুলের শিক্ষায় উদাসীনতায়
ভুলই তখন হাসে।
আপনি যদি এর ৭০ ভাগ উত্তরও ঠিক ঠিক দিতে পারেন তবে আপনাদের সব কথাই মেনে নেব! না পারলে আবার বলব কবিতা সবার জন্য নয় অনেকের জন্যও নয়। কবিতা কেবল কবিতা বোদ্ধাদের জন্য আর আপনি কবিতা বোদ্ধা নন। সো মুখে কুলপ আঁটুন এবং বসে থাকুন!
আপডেট:-
কবি খলিল ভাই এর আদেশ পেয়ে আমি নিজেই বিশ্লেষণ করলাম! আপনাদের সুবিধার উপরে জন্য পুরো ছড়াটিই তুলে দিলাম!
আমার বিশ্লেষণঃ-
ছড়াটি একটি অ্যালিগোরিক্যাল( এর বাইরের অর্থ এবং ভিতরের অর্থ আলাদা) ছড়া। এতে কোন, সিমিল, মেটাফোর, পারসনিফিকেশন নেই! অ্যালিগরিকাল হওয়ায় শেষে একটা মোরাল লেসন আছে!
এর প্লট হল সেচ্ছাচারিতা ও এর পরিনাম!
এর প্রতি স্ট্যানজার রাইমস্কিম ABCB
এটি স্বরবৃত্ত ছন্দে রচিত। এখানে প্রতিলাইন দুই পর্বের। প্রতি পূর্ণ পর্ব চার মাত্রার এবং অপূর্ণ পর্ব দুই মাত্রার । ছড়াটিতে তিনটি বিশিষ্ট উচ্চারণ রয়েছে। তাই ঐ সকল স্থানের মাত্রাভাগ সাধারণত এক হলেও ওখানে হবে দুই।আর একটি ব্যাপার স্বরবৃত্ত ছন্দে বদ্ধাক্ষরকে একমাত্রা ধরে মাত্রা ভাগ করা হয়েছে। বোঝার জন্য আমি আমার হাতে লেখা একটা ছবি আপলোড করে দিলাম!
এর মূল কথা
লালকে যখন লালই বলি
নীলকে যখন নীল
সাদা চোখে সবই সমান
তখন কিসে গরমিল
সত্যকে যখন সত্য বলি এবং মিথ্যাকে যখন বলি মিথ্যা তখন সাধারন বিচক্ষণতা দিয়েই আমরা বুঝতে পারি যে কোন সমস্যা নেই!
লাল, নীল, সবুজ ,হলুদ
সবই যখন কালো
মন্দ দুষ্ট লোভী পুষ্ট
সবই তখন ভালো।
কিন্তু যেখানে ভালো বেশধারী সকলের ভিতরটাই কালো মানে মন্দ হয় সেখানে সব মন্দই ভালোর বেশ ধরে থাকে
গলা বাজিতে গলা মিলিয়ে
বৈধ যখন অবৈধতা
পেশির জোরে ছোড়ার ভয়ে
উচ্চকন্ঠে আসে মৌনতা।
যে সমাজে গলাবাজি করে অবৈধতাকে বৈধ করা হয় সেখানে প্রতিবাদি কন্ঠ বাধ্য হয়ে চুপ থাকে।
তখন উর্দি কুর্তি হয়ে
নিজের যশকে বাড়ায়
স্পর্ধার ঐ উর্ধাকাশে চড়ে
রাজাকে ভিখারী করায়।
ফলাফল স্বরূপ রাজার রক্ষীবাহিনীরা নিজেদের অবস্থানের কথা ভুলে যান এবং এক সময় রাজাকে হটিয়ে নিজেরাই ক্ষমতা দখল করে নেয়।
এই ভুলেরই ভুল সংশোধনী
কখনো কি কাজে আসে
ভুলের শিক্ষায় উদাসীনতায়
ভুলই তখন হাসে।
আশা করি এই মোরাল লেসনটুকুর ব্যাখ্যা করতে হবে না!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৫০