একজন ধর্ষকের রাহু থেকে বাঁচার জন্য জীবন দেয় আর অন্যজন ধর্ষিত হওয়ার জন্য হাসিমুখে যৌনাচারে মেতে ওঠে। মান,ইজ্জত, নৈতিকতা নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেই যে তার মধ্যে বিরাজ করবে এমনটি নয়। সেটা বর্তমান ধর্ষণ উৎসব দেখলেই বোঝা যায়। একটা কথা প্রচলিত আছে নারীদের "না" বলা না নয়। সেখানে যদি কেউ শুধু হাঁ নয় বরং যৌনাচার করার সম্মতি ও সকল ব্যবস্থা করে তাহলে সেটাকে কি বলা যায়?
আজ থেকে প্রায় ৩৮ বছর আগের কথা। একটি ধর্ষণের মামলায় বিচারক ডেভিড ওয়াইল্ড যখন বলেছিলেন, ‘মেয়েদের সব ‘না’-ই না নয়। তখন মন্তব্য করে নারীবাদীদের চরম তোপের মুখে পড়েন মি. ওয়াইল্ড। শুধু তাই নয়, সারা বিলেত জুড়ে হৈচৈ পরে গিয়েছিল।
কিন্তু সবাই তো আর ডেভিড ওয়াইল্ডের ভাগ্য নিয়ে জন্ম নেয় না। Tamaitirua Kaitamaki v R [১৯৮৪] UKPC ১৫-এর লর্ডদের অভিজ্ঞতা হয়তো ভিন্ন ছিল। তাই হয়তো বাস্তব জীবনে কোথাও না কোথাও তিনি যথার্থই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তবে একথা খুবই সত্য যে সেইখান থেকেই ইংলিশ জুরিসপ্রুডেন্স সত্যিকারের একটি মাইলফলক তৈরি হয়েছিল। রমণীর প্রাথমিক আমন্ত্রণ তাই অপরিবর্তনীয় কোনো সম্মতি নয়। যৌনমিলনের যে কোনো পর্যায়ে একজন নারী চাইলেই তার সম্মতি তুলে নিতে পারে। বাংলাদেশের আইনে আছে যদি স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া স্বামী যৌনাচারে মিলিত হয় সে ক্ষেত্রেও সেটা ধর্ষণ বলে গণ্য হবে যদিও Penal Code আমাদের দেশে বৈবাহিক ধর্ষণ বলতে কোনো কিছুর প্রায়োগিক অস্তিত্বই রাখেনি তবে পূর্বের কথার সাথে এখানে ফারাক আছে। যৌনমিলনের যে কোনো পর্যায়ে একজন নারী চাইলেই তার সম্মতি তুলে নিতে পারে তবে সম্মতি তুলে নেওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ধর্ষণ বলে অভিহিত করা যাবেনা কিন্তু যদি সম্মতি তুলে নেওয়ার পর নারীকে যৌনাচারে বল প্রয়োগ করা হয় সেক্ষেত্রে ধর্ষণ বলে গণ্য হবে।
কিন্তু নারীর সম্মতিতে যৌনকর্ম সম্পাদন করার ৬-৮ মাস পরে ধর্ষণ হয়েছে বলে প্রমাণ করার কোন যৌক্তিকতা নেই।
কোন ক্রিমিনাল অফেন্স Actus Reus I Mens Rea ছাড়া সংঘটিত হতে পারে না। তবে Strict Liabilty অপরাধসমূহের ক্ষেত্রে যদিও Mens Rea-এর দরকার পড়ে না, কিন্তু ধর্ষণ সেই আওতার বাইরে তবে ব্যতিক্রম শুধু মেয়েটির বয়স ১৪ বছরের নিচে হলে। আমাদের Penal Code অনুযায়ী ধর্ষণের যে সংজ্ঞা, তাতে যৌনমিলনের পেনিট্রেশন পয়েন্টে অপরাধ সংঘটিত হয়। কিন্তু শর্ত হচ্ছে, যৌনমিলনটি হতে হবে অপর পক্ষের সম্মতি বা ইচ্ছে ছাড়া। বাস্তবতা হলো—বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে কোনো মেয়ে যখন একটি ছেলের সঙ্গে সহবাসে লিপ্ত হয়, এ কাজে তার ইচ্ছে ও সম্মতি দুটোই থাকে। ফলে Penal Code’র বাতলে দেওয়া পথে Actus Reus সংঘটিত হয় না। আরো বড় সমস্যা হলো—বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ না হলে কথিত ভিকটিমও যৌনমিলনটিকে কখনো ধর্ষণ বলে দাবি করত না বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। সেক্ষেত্রে এ প্রকারের দৈহিক সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে অপরাধের Actus Reus সংঘটিত হবে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের পয়েন্টে, পেনিট্রেশনের পয়েন্টে নয়। কিন্তু হতাশার বিষয়, এটা অবান্তর এবং কোনোভাবেই Penal Code’র শর্ত পূরণ করে না। এতে অপরাধের একটি নিয়ামক পুরোপুরিই বাদ থেকে যায়। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ছেলেটি যদি ‘প্রতারণা’ও করে, তা ধর্ষণের সংজ্ঞায় পড়বে না। Actus Reus কখন সম্পন্ন হবে? তাছাড়া প্রতারণা আর ধর্ষণের উপাদানও ভিন্ন। তখন ৩৭৫-৩৭৬ ধারা বাদ দিয়ে Penal Code-এর ৪১৫-৪২০ ধারার আশ্রয় নিতে হবে। ধর্ষণ অধরাই থেকে যাবে।
তবে বাস্তব কর্মকাণ্ড দেখে খুবই স্পষ্ট যে এখানে অপরাজনীতির চেষ্টা হচ্ছে। তবে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিক আর নাই দিক বিবাহ বহির্ভূত যৌনাচার ধর্মীয় বাস্তবতায় মারাত্মক শাস্তি যোগ্য পাপ। আর এর জন্য নর-নারী এই দুইজনই কঠিন শাস্তি পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে।