আল্লামা ইবনে রজব রহঃ বলেন, শাওয়াল মাসে রোযা রাখার তাৎপর্য অনেক। রমজানের পররাখা রমজানের রোযা কবুল হওয়ার আলামত স্বরূপ। কেননা আল্লাহ তাআলা কোন বান্দার আমল কবুল করলে, তাকে পরেও অনুরূপ আমল করার তৌফিক দিয়ে থাকেন। নেক আমলের প্রতিদান বিভিন্নরূপ। তার মধ্যে একটি হলো পুনঃরায় নেক আমল করার সৌভাগ্য অর্জন করা। তাই নামাজ রোযা ও অন্যান্য ইবাদত বাকি এগার মাসেও চালু রাখা চাই। কেননা যিনি রমজানের রব, বাকি এগার মাসের রব তিনিই।
তিনি আরো বলেন, তবে ইবাদতের মোকাবেলায় গুনাহের কাজ করলে নেয়ামতের অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ পায়। অতএব, কোন ব্যক্তি রমজানের পরপরই হারাম ও গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়ে গেলে, তার সিয়াম স্বীয় মুখের উপর নিক্ষেপ করা হয়। এবং রহমতের দরজা তার জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
গুনাহের পর ভাল কাজ করা কতইনা উৎকৃষ্ট আমল। কিন্তু তার চেয়ে আরো উৎকৃষ্ট আমল হলো নেক কাজের পর আরেকটি নেক কাজে মশগুল হওয়া। অতএব, আল্লাহর নিকট প্রার্থনা কর, যাতে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত হকের উপর অটল থাকার তৌফিক দান করেন। সাথে সাথে অন্তর বিপথে যাওয়া থেকে পরিত্রাণ চাও। কেননা আনুগত্যের সম্মানের পর নাফরমানির বেইজ্জতি কতইনা নিকৃষ্ট।
প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেছন,
"যে ব্যক্তি রমজানের রোযা রাখার পরে-পরেই শাওয়াল মাসে ৬টি রোযা রাখে, সে যেনো পূর্ণ এক বছর (৩৬৫ দিন) রোযা রাখার সমান সওয়াব লাভ করে।"
মুসলিম ১১৬৪, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ।
সুবাহানাল্লাহ !! আলহামদুলিল্লাহ !!
এই সওয়াব এই জন্য যে, কেউ একটি ভালো কাজ করলে আল্লাহর অনুগ্রহে সে তার ১০ গুণ সওয়াব পাবে। দয়াময় আল্লাহ বলেন,
"...কেউ কোনো ভালো কাজ করলে সে তার ১০ গুণ প্রতিদান পাবে। "
সুরা আল-আন'আম, আয়াত ১৬০।
অতএব, এই ভিত্তিতে ৩০+৬ = ৩৬টি রোযা রাখলে ৩৬×১০ = ৩৬০ অর্থাত চন্দ্র মাস অনুআয়ী সারা বছর রোযা রাখার সমান সওয়াব পাওয়া যাবে।
তবে শাওয়াল মাসের প্রথম দিন অর্থাৎ ঈদ-উল-ফিতরের দিন রোযা রাখা ইসলামে নিষিদ্ধ, তাই ঐ দিন বাদে এই রোজাগুলো রাখার নিয়ম।
ঈদ-উল-ফিতরের পর দিন থেকে মাসের শেষ দিন পর্যন্ত কোনো বিরতি না দিয়ে অথবা ভেঙ্গে ভেঙ্গে রাখা যায়।
নারীদের পিরিয়ডের জন্য কাজা রোযা রেখে তার পরে শাওয়াল মাসের ৬ রোযা রাখা যায় অথবা আগে শাওয়াল মাসের ৬ রোযা রেখে তার পরে বছরের সুবিধামত অন্য সময়ে কাজা রোযা আদায় করা যায়। দুইটাই জায়েজ, যার কাছে যেটা সুবিধাজনক সেভাবে রোজা পালন করবেন, তবে জেনে রাখা ভালো, আগে কাজা রোযা আদায় করা উত্তম। কারন, কাজা রোযা আদায় করা ফরয আর শাওয়াল মাসের ৬ রোযা রাখা সুন্নাত।
আমাদের দেশে শাওয়াল মাসের ৬ রোজাকে সাক্ষী রোযা বলা হয়, এটা ভুল। কারণ কোরান হাদীসের কোথাও একে সাক্ষী রোযা বলা হয় নি।
আল্লাহ আমাদের সকলকে শাওয়াল মাসের ৬ রোযা রেখে সারা বছর রোজা রাখার সমান সওয়াব পাওয়ার তৌফিক দান করুন, আমীন।
হে তওবাকারী যুবসমাজ;
গুনাহ একবার ছেড়ে দিয়ে আবার সেদিকে ফিরে যেও না। যদি তোমরা ভাল কাজের উপর ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পার, তাহলে প্রবৃত্তির অস্থায়ী আনন্দের পরিবর্তে স্থায়ী ঈমানি স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে। কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে কোন পার্থিব স্বার্থ পরিত্যাগ করবে, আল্লাহ তাআলা বিনিময়ে তাকে তার চেয়েও উত্তম বস্তুর দ্বারা পুরস্কৃত করবেন।
এরশাদ হচ্ছে :
"আল্লাহ তাআলা যদি তোমাদের অন্তরে কল্যাণের আলো দেখতে পান, তাহলে তোমাদের হারানো বস্তুর চেয়েও উত্তম জিনিস দান করবেন। শুধু তা-ই নয়, সাথে সাথে তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন"। (সূরা আনফাল: ৭০)
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রোযাঃ
কোরআন ও হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রোজা সম্পর্কে বিষদ বর্ণনা রয়েছে। কোরআন ও হাদীস দ্বারা আমরা জানতে পারি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনে যেসব রোযা রেখেছেন তা দুই ভাগে বিভক্ত।
১।রমজানের রোযা (ফরজ)।
২।অন্যান্য সময়ের রোযা (নফল)।
অন্যান্য সময়ের রোযার ভিতর রয়েছে
১. আইয়্যামে বীজের রোযা , প্রতিমাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ (আরবী মাস)
২. সাত্তমে বেসাল, তার জন্য নির্দিষ্ট রোযা ।
৩. শাবান মাসের রোযা প্রায় পুরো শাবান মাস।
৪. আশুরার রোযা ।
৫. শাওয়াল মাসের ৬টি রোযা ।
হাদীস শরীফে পাওয়া যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। এই সব রোজার মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচেয়ে বেশি ফযীলতপূর্ণ যেই রোজার কথা বলেছেন তা হচ্ছে মহরম ও রমজানের ফরজ রোজা। এক বর্ণনা দ্বারা পাওয়া যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিল হজ্জের প্রথম দশদিনও রোজা রাখতেন। বর্ণনাটি সহীহ। আম্মাজান হযরত হাফসা রাদ্বীয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারটি বিষয় কখনো ছাড়তেন না।
১।আশুরার দিনের রোযা ,
২।জিল হজ্জের প্রথম দশ দিনের রোযা ,
৩।প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোযা ,
৪।ফজরের পূর্বের দু’রাকাত (সুন্নাত) নামায ।
শরীয়তে সারা বছরে পাঁচ দিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ঈদুল ফেতর ও ঈদুল আযাহার দু’দিন এবং ঈদুল আজহা (দশই জিল হজ্জের পর) তিন দিন। অর্থাৎ ১১, ১২, ১৩ জিল হজ্জ ।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের প্রত্যেককে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
তথ্য সুত্রঃ
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৪:৩২