বড় আকারের মসজিদ যেগুলোতে নিয়মিত নামাজ ও জুমু'আর নামাজের সাথে সাথে অন্যান্য ইসলামিক কার্যাবলী সম্পাদিত হয়, সেগুলোকে জামে মসজিদ বলা হয়।জামে মসজিদ হবার অন্যতম শর্ত, তার জমি ওয়াকফকৃত হতে হবে।
মসজিদুল উমজুয়াইত, কাতার(নির্মান কালঃ অজানা )
বিবর্তনঃ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের আভিযানের সাথে সাথে মসজিদ আরব উপদ্বীপের সীমা ছাড়িয়ে বিস্তারলাভ করতে থাকে। ৬৪০ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে মিসরে অনেক মুসলমানের সমাগম ঘটে। তখন এই দেশে এতো মসজিদ নির্মিত হয় যে, রাজধানী কায়রোকে ডাকা হত হাজার মিনারের শহর বলে।
মিশরীয় মসজিদগুলোতে সু্যোগ-সুবিধার ভিন্নতা ছিলো, যেমন, কিছু মসজিদে ছিলো মাদ্রাসার মতো স্কুল, আবার অন্য মসজিদগুলোতে হাসপাতাল কিংবা কবরস্থান।
মিশরীয় মসজিদ
৬৭০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত কাইরোয়ান জামে মসজিদ, তিউনেশিয়া। এটি পশ্চিমা মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন মসজিদ।
সিসিলি এবং স্পেনের মসজিদগুলোতে তাদের পূর্বতন ভিসিগোথিক স্থাপত্যশৈলীর চিহ্ন মিলে না, বরং মোরদের ইসলামী স্থাপত্যের প্রতিফলন দেখা যায়।
মসজিদ ডা করডোবা স্পেইন
চীনের জি-এন মসজিদের মিনারে চীনা স্থাপত্যিক নিদর্শন।
চীনে অষ্টম শতাব্দিতে প্রথম জি-এন মসজিদটি নির্মিত হয়।
সচরাচর মসজিদগুলোর আদল যেমন হয়, জি-এন মসজিদটি তার ব্যতিক্রম। এতে অনেক সনাতন চীনা স্থাপত্যিক ঐতিহ্য পরিস্ফুটিত হয়েছে।পূর্ব চীনের মসজিদগুলো দেখতে অনেকটা প্যাগোডার মতো।
চীনের জি-এন মসজিদের মিনারে চীনা স্থাপত্যিক নিদর্শন
জাপানিজ আদলে ওগিয়াকারতা জামে মসজিদ, ইন্দোনেশিয়া।
পনেরো শতাব্দিতে, ইন্দোনেশিয়ার দুইটি জনবহুল দ্বীপ; সুমাত্রা ও জাভাতে ইসলাম নেতৃস্থানে চলে আসে। বহিরাগত এই মুসলমানদের নিজস্ব ভাবধারার সাথে স্থানীয় বুদ্ধ এবং হিন্দুয়ানী শিল্পের এক সংমিশ্রণ ঘটে, যার প্রতিফলন এখানকার মসজিদগুলো্র নির্মাণে এক অনন্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসে। মুসলিম বিশ্বের সর্বব্যাপী মসজিদে গম্বুজের যে বহুল উপস্থিতি আছে তা এখানে উনিশ শতাব্দির পূর্বে দেখা যায়নি। বরং অনেক মসজিদে কাঠের তৈরি বহুতল উঁচু ছাদ দেখা যায়, যা সাথে বালি দ্বীপের পেগোডার অনেকটা মিল আছে। জাভার উত্তর তীরে এখনও এই ধরণের অনেক পুরাতন মসজিদ দেখা যায়। এর মধ্যে ১৪৭৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত আগুং মসজিদ এবং ইয়গ্যাকারতা জামে মসজিদে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ একাধিক তলা রয়েছে। জাভার মসজিদগুলোর এই স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য প্রতিবেশী দেশ মালয়েশিয়া, ব্রুনাই এবং দক্ষিণ ফিলিপাইনের মসজিদেও প্রভাব ফেলে।
জাভানিজ আদলে ওগিয়াকারতা জামে মসজিদ, ইন্দোনেশিয়া।
ষোল এবং সতেরো শতাব্দিতে মোঘল সাম্রাজ্যের সময় ভারতে মসজিদের বিস্তার ঘটে। মোঘলরা তাদের নিজস্ব স্থাপত্যকলার ব্যবহার করে। দিল্লীর জামে মসজিদের পেঁয়াজ আকৃতির সূঁচালো শীর্ষবিশিষ্ট গম্ভুজ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মোঘলদের এই স্থাপত্য ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের অনেক পুরাতন মসজিদে মূখ্য প্রভাব রাখে।
এগারো শতাব্দিতে, অটোম্যান সাম্রাজ্যের সময় তুরস্কের অনেক স্থানীয় বাসিন্দা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তখন সেখানে অনেক মসজিদের আবির্ভাব ঘটে। অটোম্যান সাম্রাজ্যের প্রথমদিকের বেশকিছু মসজিদ
যেমন: হায়া সফিয়া মসজিদ, ইস্তাম্বুল মসজিদ তৈরি হয়, যা পূর্বে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের চার্চ বা ক্যাথেড্রাল ছিলো। অটোম্যানরা এই মসজিদগুলোতে তাদের নিজস্ব ডিজাইন ব্যবহার করেন, যেমন: বিশাল কেন্দ্রীয় গম্ভুজ, একাধিক মিনার, খোলা সম্মুখভাগ, ইত্যাদি। তাদের মসজিদগুলোতে কারুকাজময় থাম, এর মাঝে সুপরিসর স্থান, উঁচু ছাদ এবং মিহরাবও দেখা যায়।[ বর্তমান তুরস্কের অনেক মসজিদই অটোম্যানদের সেই স্থাপত্যশৈলীর ধারক।
হায়া সফিয়া মসজিদ, ইস্তাম্বুল
ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে মসজিদের বিস্তার ধীরে ধীরে হয়। তবে বিগত শতাব্দিতে অনেক মসুলমানদের আগমনের ফলে এই অঞ্চলে মসজিদের দ্রুত প্রসার ঘটে। ইউরোপের প্রধান শহরগুলোতে যেমন: রোম, লন্ডন, মউনিখ গতানুগতিক গম্ভুজ আর মিনারবিশিষ্ট অনেক মসজিদই তাদের স্থান করে নিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ওয়কিংয়ে অবস্থিত এধরণের প্রথম মসজিদটি হল শাহ জাহান মসজিদ।
যুক্তরাষ্ট্রে ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০০ মসজিদ আছে। এখানে বিংশ শতাব্দির প্রথমদিকে মাইনিতে প্রথম মসজিদের আবির্ভাব হয়, যা ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে আলবেনীয় আভিবাসী দ্বারা তৈরী বলেই মনে হয়।বাহিরাগত আভিবাসি বিশেষত দক্ষিণ আফ্রিকানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদের খুব দ্রুত বিস্তার হয়। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিলো এই দেশের মসজিদের সংখ্যার ২ শতাংশ এবং ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের পর এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৭ শতাংশে। এখানে ৫০ শতাংশের বেশি মসজিদ নির্মিত হয় ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে পর।
The Islamic Center of America in Dearborn, Michigan
পূর্বতন মুসলিম ইতিহাসবিদদের তথ্যানুসারে, যেসব শহর মুসলিম আভিযানে সময় বিনা প্রতিরোধে বিজিত হয় এবং মুসলমাদের সাথে চুক্তি করে তাদের উপাসনাগুলো মসজিদের জন্য দিয়ে দেয়।এ ই ধরনের রূপান্তরের একটি প্রথমিক উদাহরণ হলঃ ৭০৫ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া খেলাফতের আল-ওয়ালিদ জন ব্যপ্টিস্ট চার্চ (দামস্কস, সিরিয়া) খ্রষ্টানদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে তা মসজিদ হিসাবে পুনঃনির্মাণ করেন এবং দামস্কসে খ্রিষ্টানদের জন্য আরো কিছু চার্চ নির্মাণ করেন।
বলা হয় যে, আদ্ আল-মালিক (আল-ওয়ালিদের পিতা) এই ধরনের দশটি মসজিদের নির্মাণ করেন।
মসজিদুল উমাইয়া ৭০৫ সালে নির্মিত
মসজিদ সম্পর্কিত সামুর কিছু তথ্যবহুল চমৎকার ব্লগঃ
পৃথিবীর সুন্দরতম মসজিদগুলো এক নজরে দেখে নিন! (ছবি ব্লগ)
-ব্লগার হাশেম
ছবি ব্লগ ঃ বিশ্বের ১০টি বিউটিফুল মসজিদ
- ব্লগার সিটিজি৪বিডি
বিশ্বের প্রাচীণতম কিছু মসজিদ(ছবি ব্লগ)
- ব্লগার অগ্রপথিক...
বিশ্বের কয়েকটি বড় বড় মসজিদ, ছবি ব্লগ।
- ব্লগার ওয়াসিমছবি ব্লগ।
ছবিতে মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্র তিন মসজিদ এবং ইসলামি শিল্পকলার শ্রেষ্ঠ ১০ টি নিদর্শন
- ব্লগার তালহা তিতুমির
বিশ্বের বৃহত্তম দশটি মসজিদ
- ব্লগার কাব্য রহমান
***************************************************
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:১০