মনে পড়ে,
সিরডাপ মিলনায়তন। বন্ধু সন্মেলন। অদ্ভুত সেই মানুষগুলোকে। তারচেয়েও বেশি মনে পড়ে ঝাকড়া চুল, পুরুষ্ঠ গোঁফ, বিশ্বজয়ী হাসি। তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে ‘পাঠক সংগঠনের জনক’-এর ক্রেস্ট। নিলাম অটোগ্রাফ। বন্ধুসভা তখন চিনতাম। জানতাম না।
মনে পড়ে।
শুক্রবার। প্রথম আলোর দোতলার বোর্ডরুম। অচেনা বন্ধু। আমিই সবচেয়ে বেশি চেনা, নিজের কাছে। ধীরে ধীরে চিনলাম গিয়াস ভাই, ফারুখ ভাই, মেসবাহ ভাই...। লিস্টিটা শেষ হওয়ার নয়।
মনে পড়ে।
আগস্ট মাস। ‘ঢাকা দেখা’ অনুষ্ঠান।
মনে পড়ে।
সিএ ভবনের দোতলার সিড়ি। হাতে সাধু ভাষায় লেখা ‘ঢাকা দেখার হাড়ির খবর’-এর প্রিন্টেড কপি। বুক দুরুদুর। পান্থ’র হাতে দিয়ে বাঁচলাম।
গিয়াস ভাই, কোনো এক অজানা কারণে কিছু কিছু মানুষের সামনে আমি সহজ হতে পারি না। অবাক হয়ে আবিস্কার করি, সেই ‘কিছু কিছু মানুষ’ আমার কাছে অসম্ভব শ্রদ্ধার, ভালোবাসার, সন্মনের। সেই ‘কিছু কিছু মানুষ’-এর মধ্যে আপনিও একজন, জানেন গিয়াস ভাই?
মনে পড়ে।
বুধবার। দোতলার বোর্ডরুম। ‘গিয়াস ভাই, লেখাটা আমি-ই লিখেছিলাম। আমার নাম...’। ‘তাই নাকি?’ আমার বুকে হাতুড়ির ঘা। পিঠে আপনার হাত। সে স্পর্শ স্নেহের, ভালোবাসার, আশীর্বাদের; আমি বুঝেছিলাম।
মনে পড়ে।
তারপর...
কত লেখা দিয়েছি। কিছু কিছু গিয়েছে ছাপাখানায়। বাকি সব নীলক্ষেতে। কাগজ বিক্রেতাদের কাছে। বুধবার, বন্ধুসভা খুলে দেখি, এটা আমার লেখা? আমি এমন লিখতে পারি? পরে বুঝেছি, আসলে পাকা রাঁধুনির হাতের ছোঁয়ায়-ই এমন জাদুকরি পরিবর্তন।
মনে পড়ে। সবই মনে পড়ে।
গিয়াস ভাই,
এখনো কাঁচা-পাকা হাতেই ব্যর্থ চেষ্টা। পাকা রাঁধুনি আর পেলাম না। যে রাঁধুনির গল্প আপনি বললেন, তাঁর অনুজ’র হাতের কলম আমার লেখাকে ব্যবচ্ছেদ করেছিল। ভাবতেই মনটা ভরে ওঠে।
এই রাঁধুনি এখন রান্নাঘরে আসবেন না আর। শেখাবেন না নতুন নতুন রেসিপি। সুস্বাদু রান্না পাব না আমরা।
মনটা হু হু করে ওঠে। চোখটা ভেজে ওঠে। ভীষণ বিষাদে।
সঞ্জীব চৌধুরীর হাতে গড়া, গিয়াস আহমেদ, প্রিয় গিয়াস ভাই, আপনার হাত ধরেই আমার গুটি গুটি পায়ে চলা শুরু। সেই শুরুটা শেষ হবে কবে জানি না। শুধু জানি, পাকা রাঁধুনির বড় অভাব এখন। খুঁজছি, চোখ মেলে, চোখের নাগালে পাই না।
নিঃসীম শূণ্যতা যাকে নিয়ে গেছে চিরতরে, তার পথ চেয়ে থেকে আর কত? নির্ভার হতে চাইছি। পারছি না।
মনটা হু হু করে ওঠে।
চোখটা ভিজে ওঠে।
ভীষণ আফসোসে।