২০/২২ দিন আগে সু ব্লগার কৌশিকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। সে এক রক্তারক্তি কান্ড! মানে তার এক বন্ধুর বাবাকে রক্ত দিতে গিয়েই তার সঙ্গে পরিচয়। ব্ল¬গেই রক্ত চেয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন তিনি। পোস্টটি পড়ে সঙ্গে সঙ্গেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং অফিস শেষে বারডেমে যাই রক্ত দিতে। তখনও জানিনা, কাকে রক্ত দিতে যাচ্ছি। কৌশিকের বন্ধুর বাবাকে? কিন্তু কৌশিক আমার কে? বন্ধু? ‘বন্ধু’ শব্দটা কী এত সহজে, এত অল্প সময়ে তার নামের সামনে বসিয়ে দেওয়া যায়? কি জানি। কিন্তু বারডেমে যাওয়ার সময় রিকশায় বসেই শুনলাম যার বাবাকে রক্ত দিতে যাচ্ছি, তিনি আমার পরিচিত। মানে ‘একদা’ একই প্রতিষ্ঠানে আমি আর উনি কাজ করতাম। কিন্তু উনি ছিলেন ‘পারমানেন্ট’ আর আমি ‘অস্থায়ী।’
যা হোক, শেষ পর্যন্ত উনার, মানে কৌশিকের বন্ধু, মানে আমার পূর্বকলিগের সঙ্গে দেখা হয়নি। প্রয়োজনও ছিল না।
কথায় কথায় কৌশিক আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ব¬গে সময় কম দেন কেন? ব্যস্ততা?
আমি যথাযথ উত্তর দেইনি। অফিসে যতক্ষণ থাকি, ৯০ ভাগ সময়ই সা.ইনে লগইন থাকি।
কিন্তু তারপরও আমাকে চেনে না। অতটা হিট নই, আমার ব¬গে হিটের সংখ্যাও তাই প্রাইমারি লেভেলে!
এখন উত্তরটা দিতে চাচ্ছি....
ব¬গে আমি পড়তে ভালোবাসি। একসময় একটি প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকের ফিচার পাতায় ব্যাপক লেখালেখি করেছি। এখনও করছি। তবে খুব কম। ব¬গে লিখি না তেমন, কারণ অবাক হয়ে দেখি, আমার তুলনায় লক্ষ-কোটিগুন ভালো লেখক এখানে লেখেন। আমি সংকোচ বোধ করি।
কারণ....
আমি খুব ভালো রাজনীতি বুঝিনা, তবে রাজাকার বুঝি।
আমি খুব ভালো গালি দিতে পারি না, তবে তালি দিতে পারি।
অতএব....
পড়ি পড়ি এবং পড়ি।
কিন্তু....
গত কয়েকদিনে ব¬গারদের ব্যান-আনব্যান, রাজাকার-মুক্তিযোদ্ধা, ব্যক্তি আক্রমন-গালি, ইত্যকার ছেলেমানুষি খেলা দেখি আর হাসি। হাসি আর অবাক হই। অবাক হই আর ভাবি, এটাকেই কি অনলাইন ডায়েরি বলে? মুক্তচিন্তার উম্মুক্ত আকাশ কি এটাকেই বলা যায়?
ব¬গ-ব¬গারদের মুক্তচিন্তার কি এটাই পরিচয়?
আর সা.ইন কর্তৃপক্ষ! তাদের আসল উদ্দেশ্যটাই বুঝতে পারলাম না এখনো, ছিটেফোঁটাও।
শুধু বুঝি, বাংলা ব¬গে, এই স্বাধীন দেশে রাজাকার প্রশ্নে কোনো আপোস নেই। সেটা যত তুচ্ছই হোক না কেন।
বাঙালি বারবার হারতে জানে, তবে যাদেরকে হারিয়েছে তাদের কাছে হারাটা বড় কষ্টের, যন্ত্রনার, ক্ষোভের, শোকের।
‘বন্ধু’ প্রসঙ্গটা আবার আনি।
এই ব¬গে মাত্র কয়েকটি লাইন পড়ে, কাকে দিচ্ছি, কেন দিচ্ছি....সেসব চিন্তা না করেই যখন আমি কৌশিকের আহ্বানে রক্ত দিতে রাজি হই, তার ‘এক’ বন্ধুর বাবার জন্য...তখন এটা পরিস্কার বুঝি...কিছু কিছু ব¬গারকে ‘বন্ধু’ নয়, তারচেয়েও ঊর্ধ্বের কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে ফেলেছি।
এখন, এই দু:সময়ে, বিদায়ঘন্টা কানে বাজছে খুব।
জানি না, কার বিদায় হবে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী ব¬গারদের?
স্বাধীনতাবিরোধীদের?
নাকি আমার কিছু ‘বন্ধু’র।
অবশ্য অন্য একটা আশংকাও যে মনে আসছে না, সেটা নয়।
এভাবে চলতে থাকলে বিদায়ঘন্টাটা হয়তো ‘সা. ইনে’রও বেজে যেতে পারে!!!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:১১