সনঃ ২০২০
প্রেক্ষাপটঃ সামহ্যোয়ার ইন ব্লগ
ভূমিকাঃ১- গল্পটি লেখা হয়েছে ২০২০ সালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। গল্পের সব চরিত্রই নিরেট বাস্তব, ব্লগ থেকেই নেয়া। কারো সাথে মিলে গেলে তা ইচ্ছাকৃত বলেই গন্য করবেন পিটানী দিতে চাইলেও দিতে পারবেন।
২- আগেভাগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, কারন যাদের নিয়ে এই লেখা তারা হয়তো মাইন্ডাইতে পারেন। ফান হিসেবে নিলে খুশি হবো।
ব্লগারস মেন্টাল হসপিটাল-১ম পর্ব
অপসরার কক্ষ পরিদর্শনের পর ডিন বলিলেন, ''এইবার আমরা এমন একজনের কক্ষে প্রবেশ করিবো, যে কিনা এই পাগলখানার সবচাইতে হিংস্র অথচ মেধাবী একজন ব্লগার।''
''আচ্ছা!!'' কৌতুহল প্রকাশ করিলেন প্রেসিডেন্ট।
কক্ষে প্রবেশ করিতেই ডিনের কথার সত্যতা অনুধাবন করিলেন তিনি। লোকটাকে শিকল দিয়া বাঁধিয়া রাখা হ্ইয়াছে। ভালো করিয়া তাহাকে পর্যবেক্ষন করিলেন প্রেসিডেন্ট। মুখমন্ডলের অগ্রভাগটা ছুঁচালো। অনেকটা শেয়ালের ন্যায়। কোনো মানুষের চেহারা এইরকমও হইতে পারে?? আপন মনে ভাবিলেন প্রেসিডেন্ট। শেকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় লোকটি তারস্বরে চেঁচাইতেছে-''ধর্ম মুক্ত পৃথিবী চাই! ইসলাম মুক্ত রাষ্ট্র চাই!!''
''ঘটনা কি??'' শুধাইলেন প্রেসিডেন্ট।
''এর নাম আরিফুর রহমান। চাকুরি করিতো আর হরদম ব্লগে নাস্তিক্যবাদ নিয়া উন্নাসিকতায় মাতিয়া থাকিতো। খুবই মেধা আর প্রজ্ঞাসম্পন্ন হইলেও, চরমভাবে ইহার অপব্যবহার করিতে করিতে শেষে মস্তিষ্কবিকৃতির শিকার হয় এই লোক। ব্লগমন্ডলে এর উৎপাত এতোটাই বাড়িয়া গিয়াছিলো যে, ইসলাম নাম শুনিলেই তাহার উপর ঝাঁপাইয়া পড়িতো সে। তাহার কাছে ইসলাম শব্দের অর্থ মৌলবাদ। বস্তুত শুধু ইসলাম নয়, পৃথিবীর তাবৎ ধর্মের উপরই ইহার চরম অনীহা। তবে সেটার প্রয়োগ বেশিরভাগ সময় ইসলামরে উপরই ঘটাইতো সে। কেন ইসলামের উপর এই ক্ষোভ, পরিষ্কার ভাবে তাহা কেউই বলিতে পারেনা। তবে ব্লগে মুষ্টিমেয় কিছু উন্নাসিক আস্তিকও তাহার সাথে পায়ে পা বাঁধাইবার চেষ্টা করিতো। ''
''ইহার উপর বদজ্বীনের আছর হইয়াছে মনে হয়। তাবিজ-কবজে কাজ হইলেও হইতে পারে।'' বলিয়া মুচকি হাসিলেন প্রেসিডেন্ট।
ইহার পরের সেলের লোকটিকে দেখিয়া প্রথমেই যে কথাটা প্রেসিডেন্টএর মনে উদয় হইলো, তাহা ইহা- ''এই লোক মহা জ্ঞানী হইতে বাধ্য!!''
''কি নাম ইহার?''
''ত্রিভুজ''
''ওইসব বায়বীয় নাম বাদ দিয়া আসল নাম বলেন।''
''মহোদয় ইহার আসল নাম জানা যায়নি। ব্লগমন্ডলে ইনার শত্রুরা কেউ তিনকোনা, কেউ ছাগুচীফ বলিয়া ডাকিতো।''
''তিনকোনা তো বুঝিলাম, কিন্তু ছাগুচীফ কি বুঝাইয়া বলেন।''
''ছাগু চীফ কি বুঝিতে হইলে ছাগু সম্প্রদায় কি সেইটা বুঝিতে হইবে আগে। ৭১ এর পরে বহু অবৈধ গনিমতের মাল ইইদেশে রহিয়া গিয়াছিলো। ইহারা নেমক এইদেশের খাইলেও গুনগান পাকদেশেরই করিতো। যুদ্ধে ওই গনিমতেরা কেউ মারা পড়িয়াছিলো। বাকি যাহারা বাঁচিয়া গিয়াছিলো, তাহাদের উত্তরসুরিরাই ব্লগে বায়বীয় লাদি ছড়াইতে থাকে। তো সেইসব গনিমতের মালকেই পোলাপানগন আদর করিয়া ছাগু নামে ডাকে। এবং ওহাদেরই ভাষ্যমতে চশমাপরা এই ভদ্রলোক পালের গোদা। তাই ইনাকে চীফ বলিয়া সম্বোধন করা হইতো।''
''ইনার এখানে আগমনের হেতু?''
''অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়, এই লোক মগবাজার নামক স্থানে ব্যাপক যাতায়াত করিতো। কোনো কারনে হঠাৎ করিয়াই যাতায়াত বন্ধ হইয়া যায়। খোঁজ নিয়া দেখা যায়, গন্ডগোলটা টাকা সংক্রান্ত। বিস্তারিত জানা যায়নি, তবে কথিত আছে, ত্রিভুজ অভিমান করিয়া ব্লগিং ছাড়িয়া দেন। শুধু ব্লগিংই নয়, ভার্চূয়াল যতো কার্যক্রম আছে সব স্থগিত করিয়া দেন। একাকী কক্ষে নিজেকে আটকাইয়া রাখিবার কূফল হিসেবে তাহার মনোবৈকল্য দেখা দেয়।''
''মগবাজার জিন্দাবাদ!!!''
''মহোদয় কিছু বলিলেন??"
''না, তেমন কিছুনা। চলেন আগাইয়া যাই। ''
পরের সেলে প্রবেশ করিয়া খানিকটা থমকে গেলেন প্রেসিডেন্ট। কারন, এই প্রথম তিনি একই সাথে দুইজন পাগলকে দেখিতে পাইলেন। ''ব্যাপার কি? দুইজন একসাথে কেন??''
''মহোদয়, বয়স ভারী গাট্টাগোট্টা টাইপ যাহারে দেখিতেছেন তাহার নাম রোবট ''
''মানুষের নাম বোবট!!!! হায়রে!!
''জ্বি। আর অন্যজনের নাম কাঁকন। ইহাদের পাগলামীর ইতিহাস সম্পর্কে তেমন বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে মজার ব্যাপার হইতেছে, ইহারা আলাদা থাকিলে ব্যাপক পাগলমী করে। কিন্তু যেই না ইহাদের একসাথে রাখা হয়, ওমনি শান্ত-শিষ্ট সুবোধ বালকে পরিনত হয়। ইহার মাজেজা উদ্ধার করিবার জোর প্রচেষ্টা চলিতেছে মহোদায়।''
''মাজেজা উদ্ধার না করিয়া ইহাদের একসাথে থাকিবার ব্যবস্থা করিয়া গৃহে পাঠাইয়া দিলেই তো ল্যাঠা চুকিয়া যায়। যত্তোসব....!!'' বিরক্তি প্রকাশ করিলেন তিনি।
পরের জনকে দেখিয়া দারুন কৌতুক বোধ করিলেন প্রেসিডেন্ট। কারন আর কিছুই নয়, লোকটার বেশভূষা। চোখে ম্যাট্রিক্স স্টাইল চশমা, শরীরের উপরি ভাগে স্পাইডারম্যান এর পোষাক এবং নিম্নে ব্যাটম্যানের চাড্ডি পুরো হলিউড যেন সেলের মধ্যে।
''ঘটনা কি????'' অতিশয় আগ্রহ ফুটিয়া উঠিলো কন্ঠস্বরে।
''ইহার নাম বিডি আইডল। মুভি নিয়া ব্যপক পোস্টাইতো এই লোক। লোকে ডাউনলোড লিংক এর জন্য এর ব্লগে হানা দিতো। হলিউডি মুভিই বেশিরভাগ। তাহা ছাড়াও নরমকাপড়(সফটঅয়্যার) বিষয়ক পুস্টেও তাহার ব্লগ ভরিয়া থাকিতো। বউ নিয়া ভিনদেশে থাকিতো। ব্লগে মুভির ভূত ছড়াইয়া দিতে দিতে কখন যে ভূতটা নিজের মাথায় ঢুকিয়া যায়, বেচারা টেরই পায়নাই। ফলশ্রুতিতে মস্তিষ্কবিকৃতি এবং ভিনদেশ হইতে সোজা হাসপাতালে। ''
''ভালোই হইয়াছে। নাম নিয়াছে বিডি আইডল কিন্তু কাজ সব হলিউড নিয়া। পাগল কি আর বৃক্ষে ধরে???''
২য় পর্ব শেষ
পাগলের পরিমান বেশি হয়ে যাওয়ায়, ধারাবাহিক ভাবে চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে সেটা নির্ভর করছে মন-মিজাজের উপর।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১০ ভোর ৪:০২