অনেকক্ষন ধরে তাঁর আশায় বসে থাকলাম।আজই হয়ত শেষ দেখা তাঁর সাথে।এরপরই চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলব তাকে।হয়ত থাকবে এই শহরে,এই যান্ত্রিক নগরে হাজারো মানুষের ভীড়ে।তার হাত থাকবে অন্য কারো হাতে।যে হাতের সম্পূর্ন অধিকার আমি পেয়েছিলাম।আজ তার নির্বাসন হবে।
ঘড়িটা কি থেমে আছে?খুব বৃষ্টি হবে বলে মনে হচ্ছে।আকাশটা খুব ভারী হয়ে আছে।আমার মত।ওতো কাদঁতে পারে যখন তখন।আমি পারিনা কেন?আমি যেন হীন,ক্ষুদ্র,আমার কান্না দেখার সময় কারো নেই,যেখানে ওই ভয়ানক ধূসর আকাশটার দিকে সবাই চেয়ে থাকে।আমার আকাশটা তো কত বর্নময় ছিল।কত রোদ্দুর ছিল তোমার জন্য,কেন ঢেকে দিলে।
সময় বয়ে যাচ্ছে।আর তো অপেক্ষা করতে হবে না,আমার তো খুশী হওয়ার কথা।তুমি আসছো না কেন এখনও?আমার চারপাশটা খুব দ্রুত কালো হয়ে যাচ্ছে।প্লিজ তাড়াতাড়ি এসো,নইলে তো আমাকে হা্রিয়ে ফেলবে।এই কড়ই তলাটা হয়ত থাকবে অন্য কোন যুগলের বাহুডোরে।একটু দূরের গ্রন্ধাগার ভবনটা থাকবে,ঝালমুড়ি বা চাওয়ালাটাও আশে পাশেই থাকবে।আমি থাকবো না,তুমি থাকবে না।আমাদের চারপাশে যে আবছা নীল প্রজাপতিটা থাকতো সেটা থাকবে না।
এইভাবেই কি সব বাঁধনগুলো ছিড়ে যায়?এই দুর্মূল্যের বাজারে সম্পর্কগুলো কি এতই সস্তা?আবেগ,অনুভূতি,ভালোবাসার আরাধনা সব কি শুধুই কবিতা উপন্যাসের বইয়ের মোড়কেই চলে যাবে?আমি কি অভিমান করে একটু কাঁদতেও পারবো না?
এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেল কখন যেন।আমি বসা থেকে উঠিনি।তোমায় ভেবে ভেবে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে মন।আচ্ছা কেউ বলছে না কেন এই কি ভাবো?আমি ভাবি তোমাকে।কিভাবে থাকবো তোমাকে ছেড়ে ওপারে?হাহাহা বুঝে ফেলেছ?
প্রজাপতিটা ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে চলে গেল।আমার জীবনে দেখা শেষ প্রজাপতি।ফোনটা বেজে উঠলো।একটা মেসেজ।“তুমি চলে যাও,আসতে পারলাম না,কাল সকালে ফ্লাইট।জীবনটা এত ছোট না,আশাকরি আমায় ছাড়া জীবনে সুন্দর করে বাচঁবে,সুখে থাকবে,এক জীবনে সব কিছু পাওয়া হয় না।কিছুটা স্বপ্ন আমাদের নাহয় অবাঞ্চিতই রয়ে যাক।ভালো থেকো।“
আমি মুচকি হাসলাম,তুমি ছাড়া যে আমার বেচেঁ থাকা অর্থহীন সেটা বুঝলে না?চোখ দিয়ে দু ফোঁটা গরম জল বেয়ে পড়লো।চারিদিক তখন অন্ধকার হয়ে গেছে।নিঃশব্দে উঠে পড়লাম।কড়ই গাছটা যেন চিৎকার করে বলছে না না যেও না।আমি পা টেনে টেনে হাঁটতে লাগলাম।হাজার হাজার ঝিঝি পোকা গুঞ্জন করছে,কোথাও দেখলাম না প্রজাপতিটাকে।বুঝলাম,অন্ধকার কালো একটা জীবনে ভিজে চুপসে যাওয়া ঘ্রানহীন ফুলের কোন দামই নেই প্রজাপতিটার কাছে।ঠিক আমার মতো।হেটে হেটে উঠে গেলাম লাল বিল্ডিংটা ছাদে।আকাশটা কত কালো।একটা তারাও নেই আমাকে বিদায় জানানোর।বুক পকেটে রাখা লাল গোলাপটা বের করে রেলিংয়ের উপরে রেখে বুক ভরে শ্বাস নিলাম।আহা!লাফ দেওয়ার আগে ছোট করে একবার উচ্চারন করলাম,ভালো থেকো।ওপারের জগতে খুজঁবো তোমায়।
খুব বৃষ্টি শুরু হয়েছে আবার।ল্যাম্পপোষ্টের মৃদু আলোতে দেখা যাচ্ছে একটা নিথর দেহ।একটা হুডতোলা রিকশা পাশ দিয়ে টুংটাং করে চলে গেল।আকাশটা কি কান্না থামাবে না???