somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইলমে তাসাউফ , ইলমে মারেফাত

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৯:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

 সুফিবাদ বা সুফী দর্শন একটি ইসলামিক এমন দর্শন যা আত্মা অবস্থা সম্পর্কিত আলোচনা মুখ্য বিষয়। আত্মার পরিশুদ্ধির বা তাজকিয়ায়ে নফস এর মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনই হলো এই দর্শনের মুলকথা। পরম সত্তা মহান আল্লাহ কে জানার এবং চেনার আকাঙ্খা মানুষের চিরন্তন। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আধ্যাতিক ধ্যান ও কোর্আন হাদীসের জ্ঞানের মাধ্যামে জানার প্রচেষ্টাকে হল সূফী দর্শন বা সূফীবাদ । হযরত ইমাম গাজ্জালী(রঃ) এর মতে, "আল্লাহর ব্যাতীত অপর মন্দ সবকিছু থেকে আত্মাকে কোর্আন হাদীসের আলোকে তাজকিয়ায়ে নফস এর মাধ্যমে প্রবিত্র করে সর্বদা আল্লাহর আরাধনায় নিমজ্জিত থাকা এবং সম্পূর্ন রূপে আল্লাহুতে নিমগ্ন হওয়ার নামই সূফী বাদ । "‘সুফ অর্থ পশম আর তাসাওউফের অর্থ পশমী বস্ত্রে পরিধানের অভ্যাস - অতঃপর কোর্আন হাদীসের জ্ঞানের মাধ্যামে মরমীতত্ত্বের সাধনায় কাহারও জীবনকে নিয়োজিত করার কাজকে বলা হয় তাসাওউফ। যে নিজেকে এইরূপ সাধনায় সমর্পিত করেন ইসলামের পরিভাষায় তিনি সুফি নামে অভিহিত হন।’ ইসলামি পরিভাষায় সুফিবাদকে তাসাওউফ বলা হয়, যার অর্থ আধ্যাত্মিক তত্ত্বজ্ঞান। তাসাওউফ বা সুফিবাদ বলতে অবিনশ্বর আত্মার পরিশুদ্ধি বা তাজকিয়ায়ে নফস এর মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সাধনাকে বুঝায়। আত্মার পবিত্রতার মাধ্যমে ফানাফির রাসুল তারপর ফানাফিল্লাহ আল্লাহর সঙ্গে অবস্থান করা এবং ফানাফিল্লাহর মাধ্যমে বাকাবিল্লাহ (আল্লাহর সঙ্গে স্থায়িভাবে বিলীন হয়ে যাওয়া) লাভ করা যায়। যেহেতু আল্লাহ নিরাকার, তাই তাঁর মধ্যে ফানা হওয়ার জন্য নিরাকার শক্তির প্রতি প্রেমই একমাত্র মাধ্যম। তাসাওউফ দর্শন অনুযায়ী এই সাধনাকে আমরা‘তরিকত’ বা আল্লাহ-প্রাপ্তির পথ বলা হয়। তরিকত সাধনায় একজন পথপ্রদর্শকের প্রয়োজন হয়।এই পথের স্তর হলো ফানা ফিশ্‌শাইখ, ফানা ফিররাসুল ও ফানাফিল্লাহ। ফানাফিল্লাহ হওয়ার পর বাকাবিল্লাহ লাভ হয়। বাকাবিল্লাহ অর্জিত হলে একজন সুফি আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ নিয়ামত লাভ করেন আর এই অবস্থাই সুফির অন্তরে সার্বক্ষণিক শান্তি ও আনন্দ বিরাজ করে। হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) স্বয়ং এই দর্শনের প্রবর্তক। তিনি বলেন, মানবদেহে একটি বিশেষ অঙ্গ আছে, যা সুস্থ থাকলে সমগ্র দেহ পরিশুদ্ধ থাকে, আর অসুস্থ থাকলে সমগ্র দেহ অপরিশুদ্ধ হয়ে যায়। জেনে রাখো এটি হলো কল্‌ব বা হূদয়। আল্লাহর জিকর বা স্মরণে কল্‌ব কলুষমুক্ত হয়। সার্বক্ষণিক আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে কল্‌বকে কলুষমুক্ত করে আল্লাহর প্রেমার্জন সুফিবাদের উদ্দেশ্য তবে এই জিকির জাগতিক সকল কাজে আল্লাহক আদেশ নিষেধ মানার মাধ্যমে অর্জন হয়। যাঁরা তাঁর প্রেমার্জন করেছেন, তাঁদের তরিকা বা পথ অনুসরণ করে ফানাফিল্লাহর মাধ্যমে বাকাবিল্লাহ অর্জন করাই হলো সুফিদর্শন। চারটি প্রধান তরিকা সর্বাধিক প্রসিদ্ধি লাভ করে:যেমনঃ-
 
 ১)হযরত বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রঃ) প্রতিষ্ঠিত কাদেরিয়া তরিকা, ২)হযরত সুলতানুল হিন্দ খাজা মু’ঈনুদ্দীন চিশতি (রঃ) প্রতিষ্ঠিত চিশতিয়া তরিকা,
 ৩)হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দী (রঃ) প্রতিষ্ঠিত নকশবন্দিয়া তরিকা এবং ৪)হযরত শেখ আহমদ মুজাদ্দিদ-ই-আলফে ছানী সারহিন্দী (রঃ) প্রতিষ্ঠিত মুজাদ্দিদিয়া তরিকা।
 এছাড়া আরও ৩০০টির বেশি তরিকার সম্পর্কে জানা যায় য়েনন সুহ্‌রাওয়ার্দিয়া, মাদারীয়া, আহমদিয়া ও কলন্দরিয়া ইত্যাদি।

ডা: মাদকুর রচিত দুরসুন ফি তারিখুল ফালাছাতি নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে তাসাওউফ শব্দটি ছাফায়ান থেকে উrকিলত আর এটা এই জন্য যে,মুরীদের অন্তর ও বাহির প্রবিত্র।বাদুল ওলামায়ি বলেন,তাসাওউফ শব্দটি আছ ছাফাতু শব্দ থেকে উrপত্তি।যে দিকে নেজবত করা হয় তারা হল ঐ সাহাবী যারা আহলে ছুফ্ফা হিসাবে পরিচিত। তিনি আরো মনে করেন নিশ্চয় সূফীদের উপাধীর শব্দটি কোন কিছু থেকে উrকলিত হয়নি।আল্লামা কুরাইরী(র:)বলেন :আরবী ভাষার দিক থেকে এই ইসেমের উrপত্তির দলিল পাওয়া যায় না এবং এর কোন নিয়ম পাওয়া নেই।তবে প্রকাশ্য হল এর উপাধী করতে হয়েছে।
পারিভাষিক অর্থ হল:-
তাসাওউফ শব্দটির পারিভাষিক অর্থ হল-আল্লাহ তায়লা যে ভাবে ইচ্ছা করেন সে ভাবে নিজ আত্নাকে আল্লাহ তালার সাথে মিলানো।
আল্লামা বুসতানি তার বিখ্যত গ্রন্থ দায়েরাতুল মারেফাতে বলেন-নিজের আত্নাকে আল্লাহর সাথে এমন ভাবে সম্পর্ক স্থাপন করা যেমনটি তিনি ইচ্ছা করনে।
আবার অনেক আলেমের মতে তাসাওউফ লিখতে চারটি অক্ষর লাগে তা-ছোয়াদ-ওয়াও এবং ফা। তা শব্দটির মর্ম হল তওবা বুঝতে হবে।এই তওবা হল দুই প্রকার এক জাহেরী তওবা দুই বাতেনি তওবা।জাহেরী তওবা আবার দুই প্রকার।জাহেরী তওবা বলতে বুঝাই মানুষের যে সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ জাহেরা চোখে দেখা যায় সেই গুলিকে সকল প্রকার গুনাহ থেকে রক্ষাকরা।মুলত আল্লাহ তায়ালার হুকুম মত নিজেদের পরিচালনা করা এবং নিজেকে এব এবাদতে লিপ্ত রাখার মাধ্যমে জাহেরী ত্ওবা হাসিল হয়। বাতেনি তওবার মর্ম হল নিজের অন্তরকে সকল প্রকার মন্দ অবস্থা থেকে প্রবিত্রতা করতঃ একান্ত আন্তরিকতার সাথে ভাল অভ্যাস গ্রহন করাই হল বাতেনি ত্ওবা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৯:২৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সরু চিকেন নেক করিডর সমস্যা এবং সমাধান

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭



সরু চিকেন নেক করিডরের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্তের ব্যাপারে ভাবছে ভারত

ভারতের অর্থায়নে পরিচালিত বাংলাদেশের রেল সংযোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাকীত্ব: আত্মার ঘুণপোকা ও আধুনিক সমাজের অদৃশ্য মহামারী

লিখেছেন মি. বিকেল, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৫



‘একাকীত্ব’ সাধারণ বিষয় নয়। একা থাকা মানে অজস্র চিন্তার স্রোত মাথায় প্রবাহিত হওয়া। একা থাকা মানে নিজের সাথে থাকা। নিজের চিন্তা ও স্মৃতির সাথে একাকীত্ব আমাদের বেশি করে পরিচয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠকানোটাই ভাল শিখেছি আমরা

লিখেছেন ফেনা, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৭



এই বিশাল মহাকর্ষীয় বস্তু সবকিছু নিজের দিকে টেনে নেয়—এমনকি আলোও পালাতে পারে না। কিন্তু কৃষ্ণ গহ্বরের ভিতরে কী ঘটে? সেখানে সময় ও স্থান কেমন আচরণ করে? এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরব বিশ্বে নারীরা অপমানিত? আমার অভিজ্ঞতা বলছে ভিন্ন কথা

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬



বহুদিন ধরে একটি কথা শুনে আসছি—“নারীরা আরব দেশে অসম্মানিত অবস্থায় থাকে।”
কিন্তু আমি আরব দেশে গিয়েছি, থেকেছি, এবং প্রায় দুই মাস ধরে একাধিক জেলায় ঘুরেছি।
সত্যি বলছি—আমি সেখানে কোথাও নারীদের অসম্মানিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় দাবিদাওয়া নিষ্পত্তি সংস্থা : অরাজকতার পালে নতুন হাওয়া!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১:০৩


বাংলাদেশে আজকাল দাবি না জানালে কেউ আর মানুষ থাকে না—ছাত্র, শিক্ষক, গৃহিণী, পুলিশ, পিয়ন, কবি, কুস্তিগির, সবাই 'অধিকার' চায়। তবে অধিকার মানে এখানে মোটেই দায় বা কর্তব্য নয়, বরং ছিনিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×