সায়েন্স ল্যাব মোড়। মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল গামী একটা বাসে বসে আছি। কয়েক দিন ধরে ভাপসা গরম পড়ছে। বৃষ্টি পড়ি পড়ি করেও পড়ছে না। এই রুটে চলা বাসগুলোর জন্য সায়েন্স ল্যাবে কয়েক মিনিট থেমে থাকা যেন অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই চোখ পড়ল ছেলেটার উপর। বেশি হলে ৭-৮ বছর হবে বয়স। ধুলো মাখা শরীর। পড়নে ধুলো লেগে ধূসর হয়ে ওঠা কালো হাফ প্যান্ট। আইল্যান্ডের একটা গাছে ঠেস দিয়ে রাস্তার ওপারের একটা রেস্তোরার দিকে তাকিয়ে আছে। পেছন থেকে দেখে অন্তত তাই মনে হল।
রেস্তোরাটা দোতলায়। রাস্তার দিকটায় স্বচ্ছ কাঁচ লাগানো। কাঁচ ঘেঁষে এক লাইনে তিনটা টেবিল। এই অসময়েও তিনটিই ভরা। কোণার টেবিলটায় সম্ভবত এক জোড়া কপোত-কপোতী বসে আছে। ছেলেটা কিছু একটা বলায় মেয়েটা হেসে কুটি কুটি হচ্ছে। টেবিলে থাকা মিল্ক শেক জাতীয় পানীয়ের প্রতি তাদের খুব একটা আগ্রহী বলে মনে হল না। আরেক টেবিলে মধ্য বয়সী এক লোক বসা। এই গরমেও সুট-টাই পড়ে আছে। সামনে একটা চায়ের কাপ রাখা। ভদ্রলোককে খানিকটা চিন্তিত মনে হল।
মাঝের টেবিলে এক দম্পতি বসা। সাথে একটা বাচ্চা ছেলে আর কয়েকটা শপিং ব্যাগ। মহিলা বাচ্চাটাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। ছেলেটা কিছুতেই মুখ খুলছে না। আইল্যান্ডের ছেলেটার দিকে তাকালাম। এখনো একইভাবে দাঁড়িয়ে আছে; রেস্তোরার দিকে মাথা উঁচু করে। হঠাৎ করে বাস ছেড়ে দেওয়ায় সদ্য বাসে ওঠা একজন যেয়ে অন্য আরেক জনের উপর পড়ল। সেই সাথে তার মুখ থেকে ড্রাইভারের মাতৃ পরিচয় সংবলিত একটা গালি বের হয়ে এলো। আবার বাইরে তাকাতেই দেখলাম বাস অনেকখানি সামনে চলে এসেছে। মা তার সন্তানকে খাওয়াতে পেরেছিল কিনা তা আর দেখা হল না।।