
হ্যা ঠিকই শুনছেন! ক্লাস পালানোর মতো মিটিং থেকেও পালিয়েছিলাম! আসলে পালানো ছাড়া কোনো উপায়ও ছিলো না! সকাল থেকে একদম রাতে ডিনার পর্যন্ত টানা কার্যক্রম, কোনো ফ্রি টাইম নেই! এদিকে আমার ডাক্তারের কাছে এপয়েন্টমেন্ট নেয়া, শপিং বাকী! কি আর করা! মিটিংএর প্রথম দুই দিনই তিনটার পর পালিয়েছি!

ডাক্তার সাহেব শুধু শুধুই আমাকে টেস্টগুলি করিয়েছিলেন, সেইতো প্রথম ডাক্তার যে ওষুধগুলো দিয়েছিলেন, উনিও সেগুলিই দিলেন! মাঝখান থেকে আমার কিছু টাকা পয়সা গচ্ছা গেলো!দুইদিনে পুরো হায়দ্রাবাদ একদম চসে ফেলেছি! যেখানে যত শাড়ির দোকান আছে কোনটাতে যাওয়া বাদ দেইনি!

একটা ছোট্ট ঘটনা লেখার লোভ সামলাতে পারছি না! ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় এত জুতা ছিড়ত যে বন্ধুরা আমাকে জিগ্গেস করত, আমার পায়ে ব্লেড লাগানো আছে কিনা! তো ওখানে গিয়েও পরপর দুইটা ছিড়লো! ব্যাকআপে আর একটা থাকলেও সেটা ছিলো হিল! শাড়ি ছাড়া এখন আর হিল জুতা পরি না! গেলাম মুচির কাছে।মুচির দোকানে দেখি সে নাই! দোকানের পাশে দাড়ানো এক লোক মোবাইলে ফোন দিয়ে তাকে ডেকে আনলো! আমি তো মুচিকে আধাভাঙা হিন্দিতে বলার চেস্টা করলাম আমার স্যান্ডেলটা সেলাই করতে কত লাগবে? মুচির আমাকে উল্টা প্রশ্ন, “Do you understand English? It will cost 30rupies for each, no bargaining!”


এরমধ্যে একদিন আমার কলিগ একজনকে দেখিয়ে বললো, "ম্যাথিয়াসকে দেখেছো? সেই ২০০৬ থেকে জেনেটিক্সের উপর ওর পেপার পড়ছি, এখনও পুরোপুরি বুঝি না!!" প্রচন্ড মেধাবী এই কলিগের কথা শুনে আমি নতুনভাবে ম্যাথিয়াসের দিকে তাকালাম (কিছুটা লুলদৃস্টিতে, তবে এই লুল জ্ঞানের জন্য

শুক্রবার সকালটা আমাদের ফ্রি টাইম ছিলো। আয়োজকরা উদ্যোগ নিলেন সাইট সিয়িংএর! ব্রেকফাস্ট সেরেই গাড়ীতে গিয়ে উঠলাম।প্রথম গন্তব্য ৪০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী মেক্কা মসজিদ। আরবের পবিত্রভুমি মক্কা নগরীর মাটি থেকে নির্মিত ইট দিয়ে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয় বলে এর নাম মেক্কা মসজিদ। গোলকান্দা ফোর্টের ৬স্ঠ শাষক মুহাম্মদ কুলী কুতুব শাহ এই মসজিদ নির্মাণ শুরু করেন এবং মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে তা শেষ হয়।
মসজিদ অঙ্গনে অসংখ্য কবুতর।
মসজিদের ভেতরে মাজারের সারি।
মসজিদের ভেতরের অংশ, এই গেটের ভেতরে মেয়েদেরকে ঢুকতে দেয়া হয়না, আমি বাইরে থেকে ছবি তুলেছিলাম।
মসজিদ চত্ত্বর থেকে চারমিনার।
এরপর হায়দ্রাবাদের ল্যান্ডমার্ক মনুমেন্ট চারমিনার।
চারমিনারের পাশে রয়েছে লাড বাজার ক্ষ্যাত সরু গলি আর এই গলিগুলোতে রয়েছে বিখ্যাত হায়দ্রাবাদী কারুকার্যখচিত চুড়ি আর মুক্তা। আমাদের একটা দল চারমিনারের দোতালায় উঠে তার সৌন্দর্য পুরোপরি উপোভোগের জন্য চলে গেলো। আর আমি ডুবে রইলাম চুড়ি কেনার নেশায়। গাড়ীতে ফেরার পর অবশ্য মেয়েরা সবাই খুব আহাউহু করলো, কেন তারা আমার সাথে শপিং-এ গেলো না!!

এরপরের গন্তব্য কুতুবশাহী টম্ব। আমার খুব শখ ছিলো গোলকান্দা ফোর্ট দেখবার। কিন্তু সময় স্বল্পতার জন্য গোলকান্দা ফোর্ট না গিয়ে আমাদের নিয়ে গেলো কুতুবশাহী টম্ব।
গোলকান্দা ফোর্ট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত কুতুবশাহী টম্ব আজ প্রতিনিধিত্ব করছে কুতুবশাহী রাজবংশের স্থাপত্যবিষয়ক ঐতিহ্যের সবচেয়ে খাঁটি ও মহিমাম্বিত প্রদর্শনীর ।ইব্রাহীম বাগের ছবির মত সুন্দর সাজানো বাগান ও ভূ নৈস্বর্গের মধ্যেই রয়েছে সমাধি ক্ষেত্রগুলোর সৌন্দর্য এবং শ্রেষ্ঠত্ব। এই সমাধি ক্ষেত্রগুলো সাতজন কুতুবশাহী রাজার জন্য নিবেদিত, যারা প্রায় ১৭০ বছর আগে গোলকান্দার শাসক ছিলেন।
ছোট্ট একটা ঘটনা লেখার লোভ সামলাতে পারছি না। ম্যাথিয়াসকে বললাম
ওর সাথে একটা ছবি তুলতে চাই। ওমা সে বলে কিনা, " না না আমার বউ খুবই হিংসুটে। সে অন্য কোনো মেয়ের সাথে আমার ছবি তোলা পছন্দ করে না!"


সারাদিন রোদে ঘুরে যাচ্ছেতাই একটা প্যাক লান্চ খেয়ে আমরা যাত্রা করলাম ICRISAT এর দিকে। দারুন একটা সন্ধ্যা কাটিয়েছিলাম সেখানে।পর্ব ৫ এ থাকবে সে কাহিনী।
সবাই ভালো থাকুন, হাসিখুসি থাকুন।

মিটিং এর ফাঁকে হায়দ্রাবাদে: পর্ব ১
মিটিং এর ফাঁকে হায়দ্রাবাদে: পর্ব ২
মিটিং এর ফাঁকে হায়দ্রাবাদে: পর্ব ৩
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:০১