


এর আগে ফ্যামিলি ছেড়ে খুব বেশি সময় বাইরে থাকিনি কখনও, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় হোস্টেল লাইফ এড়িয়ে চলেছি এ কারণে। আর তাই, তিন বছর সবাইকে ছেড়ে থাকতে হবে, এই ভাবনাটাই পুড়িয়ে মারছিল আমাকে! মনে আছে সেসময় মামনির সাথে skype তে কথা বলার সময় কিভাবে জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখতাম। হয়তো কিছুক্ষন আগেই প্রচুর কান্নাকাটি করেছি, কিন্তু আমার মায়ের কাছে তা প্রকাশ করতাম না। জানতাম তাতে সে আরো বেশি ভেঙে পড়বে।
তখন খাওয়া দাওয়া করতে যেতে হতো হারার হলে মেইন ক্যাফেটারিয়াতে। ইরির মেইন ক্যাফেটারিয়ার ইন্টারন্যাশনাল খাবার দাবার এতোটাই ইন্টারন্যাশনাল (?) যে, কোনো " ইন্টারন্যাশনাল" মানুষজনেরই ঐ খাবার ভাল লাগে না!







(ইরির মেইন ক্যাফেটারিয়া

একদিকে দেশে সবাইকে ছেড়ে এসে মন খারাপ, অন্যদিকে খাওয়া দাওয়ার এই অবস্থা!


( সেসময় রান্না করা খাবার

আরওবেশি খারাপ লাগতো ছুটির দিনগুলিতে। ইরিটা কেমন ফাঁকা হয়ে যেত। নতুন নতুন এসেছি, রিসার্চের কাজও শুরু হয় নাই তেমনভাবে। বোরিংনেস কাটাতে আর মানুষজন দেখতে আমি ক্যাফেটারিয়ায় গিয়ে বসে থাকতাম। ছুটির দিনগুলিতে ইরি ক্যাফেটারিয়ায় অনেক বাইরের লোক আসত খেতে। ফিলিপিনোরা খেতে আর বেড়াতে খুবই পছন্দ করে।
ঠিক এমনি এক বিষন্ন ছুটির দিনে ক্যাফেটারিয়ায় এক বিশাল টেবিল দখল করে একমাত্র সঙ্গী এক কাপ কফি নিয়ে বসে ছিলাম। যদিও আমি চা প্রেমী, কফি প্রেমী নই।কিন্তু ফিলিপাইন হলো কফির দেশ,কফি না খেয়ে উপায় নাই।এমন সময় চোখে পড়লো কাঁচের দরজা ঠেলে ভিতরে আসছে একটা ফিলিপিনো পরিবার।বেশিরভাগ ফিলিপিনো মেয়ে চাকুরীজীবি এবং এরা রান্না বান্না করতে পছন্দ করে না। ছুটির দিনে তাই দলবেঁধে বাইরে গিয়ে খাওয়াটাই ট্রাডিশন।ঐ পরিবারটিতে বিভিন্ন বয়সের প্রায় ৮ থেকে ১০ জন সদস্য ছিলো, কিন্তু সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি কাড়লো বয়োঃজৈস্ঠ ব্যাক্তিটি। উনার হাটতে কষ্ট হচ্ছিল, তাই উনাকে ধরে ধরে নিয়ে আসছিলো অন্যরা। ওদের এই জিনিসটা আমার অসম্ভব ভালো লাগে। ওরা বয়স্ক ব্যাক্তিদের সম্মান করতে জানে। ব্যংকে, শপিং মলে এমনকি জিপ্পনীতে তাঁদের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। আমাদের দেশেও তো কত খাবারের রেস্টুরেন্ট রয়েছে, কিন্তু কয়টা পরিবার পরিবারের বয়স্ক ব্যাক্তিদের সাথে নিয়ে বাইরে খেতে যায়, বলুনতো?
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৪১