এক,
হোক তবে এক চৈনিক রূপকথা ।
এক পথিক যাচ্ছিলেন পথ দিয়ে , আর পথের পাশে এক চড়ুই পাখি পা দুটো উঁচু করে শুয়েছিল।
পথিক বললেন - কী করো চড়ুই ?
চড়ুই জবাব দেয় - শুনেছি আজ আঁকাশ ভেঙ্গে পড়বে পৃথিবীর বুকে । আমি তাই দুই পা উঁচু করে আছি , আঁকাশ আটকাব ।
পথিক হাসে । বোকা চড়ুই , তুমি কি এই ছোট্ট দুই পায়ে আঁকাশকে বাধা দিতে পারবে ?
চড়ুইয়ের অন্তর্গত আত্মবিশ্বাস ধ্বনিত হয় - হয়তো পারব , হয়তো না । তবু এই শান্তনা নিয়ে যেতে চাই - আমি চেষ্টা করেছিলাম কিছু একটা করতে ।
গল্প শেষ ।
দুই.
শরীরটা বেশ ফুলে ওঠছে চর্ব্য চোষ্য পেয়তে । রক্তের মাঝে আর প্রতিরোধ ডাক দেয় না , বরং কোলেস্টরেলের মাপজোক নিয়ে নিয়ত ব্যস্ত থাকি ।
আমরা বই পড়ছি , পত্রিকা পড়ছি , টিভি দেখছি আর হাহুতাশ করছি ।
গুটাতে গুটাতে সাবেক তারুন্য আশ্রয় নিয়েছে ড্রইংরুমে , আর ভার্সিটির তারুণ্য এখন নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিজের আস্তানায় । প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ তাই শাহবাগ আর জাবির প্রান্তিক চত্ত্বরে । আর ধীরে ধীরে মানচিত্রের বাকী সব গ্রাস করে নিচ্ছে অশুভ হায়েনারা ।
আমরা পিছু হটছি আর সান্তনা খুঁজছি কেউ একজন এসে সব কিছু ঠিক করে দেবে কোনকালে । কোন এক নূরুলদিন এসে জাগবার ডাক দেবে এই আশায় আমরা আজ খালি ঘুমচোখে ঝিমাই ।
আমাদের কষ্ট , আমাদের বেদনা , আমাদের পরাজয় হৃদপিন্ডে বহন করে তারপর খাই দাই , মধ্যবিত্ত জীবন যাপন করি , চাকুরিতে বসকে তোয়াজ করি , বেনিয়াবৃত্তি করি, ঈদ সংখ্যা পড়ি , কম্পিউটারের মনিটরে এসে ক্ষোভ উগলাই ।
তিন.
এই সময়ে মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় নিজেকে আয়নায় দেখি । আসলেই যা বিশ্বাস করি তার সাথে দাড়ানোর সাহস কি এখনও আছে ? এখনও কি আমরা না জাগলে সকাল হবে না এই দূ:খী দেশে ?
হয়তো হ্যা , হয়তো না ।
তবু সেই বোকা চড়ুই হতে ইচ্ছে করে ।
আমরা কয়েকজন বন্ধু ভাবছি , মানব ভাষ্কর্য হয়ে একদিন দাড়িয়ে পড়ব এয়ারপোর্টের সেই উলঙ্গ চত্ত্বরে ।
হয়তো কিছু হবে ।হয়তো কিছুই হবে না ।
তবু হোক একবেলার প্রতিবাদ ।
তবু সান্তনা নিয়ে যাই , এই প্রিয় জন্মভূমিকে হায়েনার থাবা থেকে বাঁচাতে আমিও ক্ষুদ্র এক চড়ুই ছিলাম ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৩:৪৬