সন্ধ্যা থেকে ঝাকঝমক এক পশলা বৃষ্টিতে শহর ভিজে গেছে। শুধু ভিজেনি শহরের রাস্তাগুলো ডুবিয়ে দিয়ে গেছে।
রাস্তায় জ্যাম লেগে গেছে, গাড়ির উপর গাড়ি।
প্রাইভেট কার গুলা হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে।
তাতে ট্রাফিক পুলিশের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
ভাবটা এমন ব্যাটা তুই হর্ন চেপে বসে থাক আমার সময় না হলে আমি সিগনাল ছাড়ছি না।
এর মধ্যে কানে একটা কথা এসে পৌছালো, রাস্তাটা কি তোর বাপের?
ঘাড় ফিরালাম, প্রাইভেট কারের সামনে দিয়া রিক্সা ঢুকিয়ে দিছে।
গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে, হাটা শুরু করলাম।
হালকা বৃষ্টিতে হাটার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ আছে আবার ভাঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে হাটার আনন্দ অন্যরকম।
ইচ্ছে হলো কাউকে ফোন দিয়ে বলি এই শহরে না আজ বৃষ্টি হচ্ছে সন্ধ্যায় ঝাকঝমক বৃষ্টি ছিলো এখন গুড়িগুড়ি বৃষ্টি, ভিজবা?
এই কথাটা এক মাত্র শুভ্রা মেয়েটাকে বলা যায় কিন্তু আমি যতোটা আনন্দ নিয়ে বলবো শুভ্রা ঠিক ততোটাই বিরক্তি নিয়ে বলবে অভ্র আপনার এই আজগুবি কথাবার্তা বলা বন্ধ করুন।
আর আপনি একা একা বৃষ্টিতে ভিজুন, জ্বর হলে আমাকে ফোন দিয়ে বলবেন না।
না শুধু শুধু শুভ্রাকে ফোন দিয়ে এই রকম আনন্দটা মাটি করা যায় না।
আচ্ছা আমার একটা বন্ধু আছে না ফার্মগেট লিয়াকত ভাইয়ের মেসে থাকে নাম আকাশ।
ওকে যদি ফোন দিয়ে বলি তুই না আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে চাইছিলি?
তুই বিজয় স্বরনী আয় আজকে একসাথে বৃষ্টিতে ভিজবো।
শহরে আজ গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
আকাশ কে ফোনে পাওয়া গেলো না, ফোন বন্ধ বেচারা মনে হয় টিউশনিতে আছে।
এখন আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবে না।
গ্রাম থেকে পড়তে আসা এই শহরের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীরা চলে টিউশনি করে। ডিম তাদের জাতীয় খাবার হিসাবে বিবেচিত।
মেস মানেই ডিম, ডিমের মর্যাদা এক মাত্র মেসে থাকা মানুষ গুলোই দিতে পাড়ে।
যদি বলা হয় ডিমের আত্মকাহিনী লিখো তাহলে মেসে থাকা প্রতিটা সদস্য ১০ এ ১০ পাবে।
ফার্মগেট এ ডাইনে, বামে, উপরে, নিচে তাকালে শুধু দেখা যায় হ্যাং কোচিং সেন্টার, ত্যাং কোচিং সেন্টার। দেয়ালে চোখ দিলে দেখা যায় 'বাসায় গিয়ে পড়াতে চাই ' সৌজন্য - অমুক স্যার।
যে ক পড়াতে জানে এই শহরে সেও স্যার।
আমার এক বন্ধু আছে যে 'ঞ' লিখতে কলম ভাঙ্গে ১০ টা ও একজন কোচিং সেন্টারের স্যার।
একদিন চা খেতে খেতে বললাম দোস্ত তুই কোচিং এ যখন 'ঞ' লিখতে হয় তখন কি করস?
ও ব্যাপারটা ভ্রু কুঁচকে নিচে, মানে আমার প্রশ্নটা ওর ভালো লাগেনি।
মিরপুর ১ থেকে হাঁটতে হাঁটতে মিরপুর-১০ এ চলে এসেছি, রাস্তার সিগনাল এখনো ছাড়েনি, ছাড়বে বা কিভাবে? রাস্তায় হাটু সমান পানি, অলরেডি দুইজন ড্রেনে কে নদী ভেবে সাতার সাতার খেলা করতেছে।
ব্যাপারটা হাসির কিন্তু হাসতে পাড়লাম না বেচারা অফিস থেকে ফিরতেছিলো, হাতে বাজারের ব্যাগ।
ধরাধরি করে দুই ব্যাক্তিকে ড্রেন থেকে উঠানো হলো।
যারা উঠিয়েছে তাদের মুখে বিজয়ের হাসি এ যেনো প্রথম সেশনে সাউথ আফ্রিকাকে বাংলাদেশ অল উইকেট করেছে টাইপ হাসি।
ওইদিকে তো সাউথ আফ্রিকার কোনো রকমে এক উইকেট ফেলতে পাড়ছে তাই এই হাসির কোনো মূল্য নেই। এক কথায় অমূল্য হাসি।
এই শহরে কতো বিচিত্র মানুষ তার মধ্যে আমিও একজন বিচিত্র মানুষ।
শহরে বিদ্যুৎ তার ঠিক করছে বিদ্যুৎ অফিসের লোক আমি সেটা নিয়েও লেখালেখি করি।
এই জন্য শুভ্রা আমাকে মাঝে মাঝে পাগল বলে, ভব পাগল।
শুভ্রা বলে আমার এই পাগলা টাইপ লেখা পড়বে না, কিন্তু আবার চুপেচুপে ঠিকি পড়ে সেটাও আমি জানি।
- আরিফ রুমি
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৯