বেশ কিছুদিন আগে গাবতলী বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে আছি এক লোকের অপেক্ষায়।
হানিফ কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
পিছন থেকে এক লোক কাঁধে হাত দিয়েই বলে উঠলেন আরিফ রুমি ভাই না?
আমি চমকে গিয়ে পিছনে তাকালাম।
এক যুবক, আমার চেয়ে ২ বছরের সিনিয়র হবে।
বড় ভাই বলা যায়।
আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না?
-আমি আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ড (নামটা মনে পড়ছে না)
অহ আচ্ছা, কেমন আছেন?
কেমন আছেন প্রশ্নটা করতেই তার মুখটা মলিন হয়ে গেলো।
চোখের কোনে দুই ফোটা জল ও এসে গেছে।
আমি বিভ্রতকর অবস্থায় পড়ে গেলাম।
কেমন আছেন জিজ্ঞেস করাতে কেউ কেঁদে ফেলছে এই অসস্থিকর অবস্থায় এর আগে কখনো পরিনি।
কেউ যদি খারাপ ও থাকে মুখের কোনে একটা হাসি দিয়ে বলবে ভালো আছি ভাই।
এই জন্যে আমি কাউকে হুট করে বলি না কেমন আছেন।
আমি যেটা বলি সেটা হচ্ছে কি অবস্থা।
কেমন আছেন বললে আবার না জানি কি মন খারাপের গল্প শুনিয়ে দেয় এই ভয়ে বলি কি অবস্থা।
আমি জিজ্ঞেস করলাম ভাই কিছু কি হয়েছে?
আর ব্যাগ ট্যাগ নিয়ে যাচ্ছেন কোথায়?
এরপর সে যে উত্তর দিয়েছিলো তাতে আমিই কি বলবো, কি করবো কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
১ ঘন্টা আগে তার বাবা মারা গেছে।
তার বাবাকে শেষবারের মতো দেখতে রাজবাড়ি তার গ্রামে যাচ্ছে।
গত কাল রাতেও কথা হয়েছে বাবার সাথে।
শেষবার বলেছিলো বাড়িতে আয় এসে ঘুরে যা।
আমি তাকে কিছু বলতেও পারছি না। নিজেকেও ধরে রাখতে পারছিনা।
সে এখন আমার পাশে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ আঙ্গুল নখ চিবাচ্ছে আর চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে।
আমি আশে পাশে তাকাচ্ছি কেউ দেখছে নাতো।
পরুষরা পাবলিক প্লেসে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে পাড়ে না। গুমরে কাঁদে, কারন পুরুষরা কাঁদে না।
এই ছেলেটার এখন চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু পাড়ছে না।
জিজ্ঞেস করলাম বাস কখন?
বললো ২০ মিনিট পড়েই।
আচ্ছা রুমি ভাই যাই শুধু শুধু আপনার মনটা খারাপ করে দিলাম। বেঁচে থাকলে দেখা হবে।
সে একদিকে হাঁটা ধরলো, আমি তার উল্টো দিকে।
আমি যাওয়ার সময় তাকে সাহস করে কিছু বলতে পাড়িনি।
শুধু কাঁধে হাত রেখে চোখ দিয়ে বলে দিলাম শক্ত হন।
এখন ভেঙ্গে পড়লে চলবে না।
এক ছেলে তার পায়ের তলার মাটি হারিয়েছে, সেই ছেলেকে আমি কি বলে সান্ত্বনা দিবো।
আমি তাকে যদি বলি সব ঠিক হয়ে যাবে।
সেটা হবে মিথ্যা আশ্বাস আর এই মুহূর্তে তাকে এই মিথ্যা আশ্বাসটা দিতে পারছিনা।
আমি তাকে ছেড়ে আসার সময় একবার ও পিছনে তাকাইনি।
সে কাঁদছে, সব কান্না আমার ভালো লাগে না। এই কান্নাটার গভীরতা অনেক।
এটা সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।
আমি হাসি খুশি মানুষ, কান্না দেখতে ভালো লাগে না।
মায়া বাড়ে, আর মায়া সব থেকে খারাপ জিনিস।
মায়া কাঁদে এবং কাঁদায়।
আমি আরেকটু হলেই মায়া বন্দী হয়ে যেতাম, তখন হয়তো তার সাথে কেঁদেই দিতাম।
কান্নার জলের প্রতি ফোটায় ফোটায় মায়া থাকে।
এই মায়ায় পড়তে নেই।
মানুষ জন্ম নেবে, মানুষ জন্ম নিয়ে মায়া বাড়াবে তারপর কিছু না বলে হুট করে একদিন মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে চলে যাবে।
প্রকৃতি কি নিষ্ঠুর নিয়ম।
এই নিয়ম আমার মানতে ইচ্ছে করে না।
মানুষ জন্ম নেবে, আনন্দ ফুর্তি করবে, মারা যাবে কোনো মায়া থাকবে না।
- আরিফ রুমি
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:১৩