এসএসসি এক্সামের সময় প্রথম পরীক্ষার দিনই অন্য স্কুলের এক ছেলের সাথে পরিচয় হয় আমার। কিন্তু আমাদের এক্সাম হল ছিলো ভিন্ন। গ্রুপ ও ছিলো ভিন্ন। পরীক্ষা আগে ও শেষে কথা হতো আমাদের। এসএসসি এক্সামের এক মাসে ছেলেটার সাথে ভালোই আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়। শেষ পরীক্ষা ছিলো ওর কৃষি শিক্ষা আমার কম্পিউটার।
আমার পরীক্ষা ছিলো দুপুর ২ টা থেকে, আমার এক্সাম হলে আসতে আসতে কাটায় কাটায় দুইটা বেজে গেছে। ছেলেটার ১ টায় এক্সাম শেষ হয়ে গিয়েছিলো তারপর ও ছেলেটা আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।
- কি খবর দোস্ত, আজকে এতো লেইট যে?
- আর বলিস না, ঘড়ির দিকে তাকাইনি।
- আজকে তোমার এক্সাম কেমন হলো?
- কৃষি শিক্ষা, ডাল - ভাত।
হঠাত করে ও বলে ফেললো দোস্ত আজকে তো পরীক্ষার শেষ ইনশাল্লাহ আবার দেখা হবে। আর আমার এলাকায় আইসো।
তোমার ফোন নাম্বারটা দাও, আমি তো ফোন চালাই না আমার বাসার নাম্বার রেখে দাও ওটাতে ফোন দিলেই পাবা।।
ও চলে যাবার পর আমি ১ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলাম।
মন খারাপ হয়ে গেলো, সেই মন খারাপ নিয়ে এক্সাম হলে ঢুকেছি।
এক্সাম হলে ঢুকে অবশ্য মনটা ভালো হয়ে গিয়েছিলো হলে গার্ড পড়েছিলো এক বড় ভাই তিনি একজন শিক্ষক হলেও আমাদের কাছে ছিলেন বড় ভাই।
শেষ পরীক্ষা, শেষ বিকেল কোনো প্যারা নেই, সবাই রিলাক্সে এক্সাম দিয়ে বেড়িয়েছে।
বাসায় আসার পর আমার মন প্রচুর খারাপ হয়ে গেছে। চোখের কোনে কয়েকফোটা পানি জমে গেছে।
স্কুল লাইফটা শেষ? আর কোনো দিন এক সাথে ক্লাস করবো না? আর কোনো দিন ক্লাসের পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে ক্রিকেট খেলতে যাবো না?
আর কোনোদিন বলবো না দেখাইলি না মনে রাখিস? আর কোনো দিন স্কুলের ছাদে পাটি বিছিয়ে ঘুমানো হবে না? আর কোনোদিন সাইকেল নিয়ে রাতের বেলা পূজা দেখতে যাওয়া হবে না এক সাথে? আর কোনো দিন গরমের রাতে স্কুলের সবুজ ঘাসের মাঠে শুয়ে এক সাথে আকাশ দেখা হবে না? আর কোনোদিন কিছুই হবে না?
বেশ কিছুদিন আগে সেই দোস্তের সাথে ধানমন্ডি ৩২ এ দেখা। আমি প্রথমে চিনতে পাড়িনি। কারন ও আগ থেকেই অনেক লম্বা ছিলো কিন্তু শুকনা।
আমি আর এক বড় ভাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছি। পিছন থকে কাঁধে বন্দুক, পায়ে বুট খাকি পুলিশের পোষাক পরা এক যুবক পাশে দাঁড়িয়ে বললো রঘুনাথপুরের আরিফ না?
আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে চিনতে চেষ্টা করলাম। পাড়লাম না, জন আব্রাহামের মতো বিশাল দেহ ও ক্রিকেটার ইরফান খানের মতো বিশাল লম্বা একটা ছেলে।
আরে আমমায় চিনতে পারছিস না, আমি ঝাটিবুনিয়ার রাসেল।
আমি রাসেলকে চিনতে পাড়ছি বাট এই রাসেল কে আমার চিন্তে কষ্ট হচ্ছে।
তুই রাসেল? তুই বলার পড়ে জিহ্বায় কামড় দিলাম। তুই বলাতে আমার কেমন জানি লাগছিলো।
- আপনি রাসেল।
- ওই শালা আপনি কি? তুই ক।
- না মানে দোটানায় পড়ে গেছি বুঝছিস, তোরে যদি আমি এখন তুই তোকারি করি মানুষ দেখলে বলবে বেয়াদব। তোর ছোটো ভাইয়ের মতো দেখায় আমারে।
- দূর হালা, বন্ধু বন্ধুই।
- তারপর কি অবস্থা রাসেল স্যার, পুলিশের পোষাক পড়ে আছেন। ধান্ধা টান্ধা করো নাকি?
- আরে না ডিউটি এখানে গত ১ মাস যাবত। ট্রান্সফার হয়েছি পিরোজপুরে, সামনের মাসে ওইখানে চলে যাবো।
তোরে যে কতোবার ফোন দিয়েছি, রেজাল্ট এর দিন, তোর আম্মু মনে হয় ধরছিলো বললো তুই নাকি ঢাকা।
- হু দোস্ত, কম্পিউটার প্রাক্টিক্যাল দিয়েই এক দিন ও বাড়িতে ছিলাম না ঢাকা চলে এসেছি, সেই থেকেই ঢাকা সেট।
কোনো জরুরি কাজ ছাড়া বাড়িতে যাওয়া হয় না।
- সময় হবে চল চা খাই।
বড় ভাই হা কইরা তাকাইয়া ছিলো, এই বিশাল দেহের অধিকারী এবং লম্বা বাঁশের মতো ছেলেটা যে আমার ফ্রেন্ড তার চোখকে বিশ্বাস করাতে পাড়ছিলেন না।
এরপর ১ ঘন্টা কথা হয়েছিলো ওর সাথে।
এখন পিরোজপুরে আছে। কিছুদিনের মধ্যে নাকি প্রোমোশন ও হয়ে যাবে।
ভালো থাক দোস্ত, হঠাত কইরা কেনো জানি তোরে নিয়া লিখতে ইচ্ছে করলো।
রাসেল
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:০১