প্রাইমারি থেকে আমাদের শিক্ষা দেয়া হয়েছে কিভাবে মানুষের সাথে কথা বলতে হবে। রাস্তাঘাটে মানুষকে দেখলে সালাম দিতে হয়।
এমন কোনো কথা বলা উচিত না যাতে মানুষ কষ্ট পায়।
ছোটো বেলায় যেটা শিখেছি অংক, একটু বড় হলাম সেটা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেলো গণিত । এরপর নাইন - টেন এ আসলাম হয়ে গেলো জেনারেল ম্যাথা - হায়ার ম্যাথ।
প্রাইমারীতে গণিত স্যার একটা শাস্তি দিতো, অংকের হোম ওয়ার্ক না করে আনলে পরেরদিন কালো ব্লাকবোর্ড এ চক দিয়ে সেই অংক করে স্যারের সামনে বুঝিয়ে দিতে হবে।
এর চেয়ে হোম ওয়ার্ক করাই তো ভালো।
কিন্তু হোম ওয়ার্ক, ধূর মর গিয়া, কালকে ব্লাকবোর্ড এ গিয়া বুঝিয়ে দিবো।
এটা ছিলো শাস্তি।
হাইস্কুল জীবনে ৫ বছরে যতোগুলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে প্রত্যেকটা অনুষ্ঠানে প্রত্যেকটা আইটেমে আমার নাম ছিলো।
ব্যান্ড সঙ্গীত ( তখন ব্যান্ড সঙ্গীত কি জানতাম না,ক্লাস টেনে উঠে জানলাম ব্যান্ড সঙ্গীত কি?), গজল, রবিন্দ্র সঙ্গীত (ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে " এই একটা গানই পাড়তাম) , আধুনিক গান, কমেডি মানে কৌতুক।
সব শেষে "নাচ" সব আইটেমে আমার নাম থাকবেই।
১০ টা আইটেমের মধ্যে যেকোনো ৫ টায় নাম দেয়া যাবে। আর সেই ৫ টার আইটেমে আরিফ নামে একটা নাম সব সময় থাকবেই।
গান পাড়ি কি না ওটা দেখার বিষয় না, ষ্টেজে উঠতে হবে। আর আমি সবসময় ষ্টেজ উপভোগ করতাম।
এলাকায় মেলা হলে মাইকে গান গাইতাম, যে কোনো যায়গায় সুযোগ হলেই গান গাইতাম।
এই জন্য পরিচিতিটা অন্য রকম ছিলো।
তা কথা হচ্ছে ভাই আপনি গান গাইতেন, নাচতেন, ব্লাকবোর্ড এ অংক করতেন ভালো কথা এগুলো আমাদের শুনিয়ে লাভ কি?
কয়েকটা ষ্টেজ শো করার পর কিছু ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করার পর ইনবক্সে কিছু মেসেজ আসে ভাইয়া, আপনিতো ষ্টেজ শো করেন। মানুষকে হাসান, ভালো ভালো কথা বলেন।
আমি নিয়মিত মিরাক্কেল দেখি, এনটিভির হাসো দেখি কমেডি শেখার খুব ইচ্ছা কিন্তু ষ্টেজে উঠতে ভয় লাগে।
আমি যখন কোনো ষ্টেজে কমেডি করতে উঠি বা গান গাইতে উঠি সবাই বলে তোমার সাহস আছে।
আমি বলি কিসের সাহস?
এই যে তুমি এতোগুলা মানুষের সামনে উঠে কথা বলো, মানুষকে হাসাও, গান গাও, ষ্টেজে উঠে অর্নগল কথা বলতে থাকো এটা অনেক সাহসের দরকার।
আমি তো ভয়েই ষ্টেজের ধারে কাছে যাই না।
কিন্তু আমার তো ভয় লাগে না, আমি নাচতে নাচতে ষ্টেজে উঠে যাই।
মনে মনে বলি আজকে হাসিয়ে গড়াগড়ি খাওয়াবো বা আজকে গান গেয়ে ষ্টেজ ফাটিয়ে ফেলবো। আজ গান গেয়ে ষ্টেজের নিচের মানুষগুলোকে নাচাবো।
আরেকটা কমন কথা শুনি,
ভাইয়া, আমি গুছিয়ে কথা বলতে পাড়িনা।
আমি ভালো প্রেজেন্টেশন দিতে পাড়িনা।
মানুষের মাঝখানে গেলে কি বলতে কি বলে ফেলি এই জন্য তেমন মানুষের সাথে মিশি না। আগ বাড়িয়ে মানুষের সাথে কথা বলি না।
ভয় লাগে।
তাদের কে বলি,
ওই যে বললাম ব্লাকবোর্ড, চক দিয়ে অংক করিয়ে সেটা আবার কতোগুলা ছাত্র-ছত্রীদের মাঝে বুঝিয়ে দিতে হতো। ওখান থেকেই ভয়টা পালিয়ে গেছে।
তোমরা যারা এখন যেটাকে প্রেজেন্টেশন বলো ওটা আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শাস্তি সরূপ ব্লাকবোর্ড এ অংক করে বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি।
তোমরা ষ্টেজে উঠতে ভয় পাও সেই ভয় আমি স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে রেখে এসেছি।
আজকে ক্লাসের দেয়া পড়া হয়নি তারপরো সেই ভয়ে কখনো শেষ বেঞ্চে গিয়ে বসিনি।
সব সময় প্রথম বেঞ্চটাই দখল রাখার চেষ্টা করেছি।
ওখান থেকেই ভয়টা পালিয়ে গেছে।
স্কুলে একবারে ভালো ছাত্র ছিলাম না আবার খারাপ ছাত্র ছিলাম না।
বাঁদরামিতে এক্সট্রা পরিচিতি ছিলো।
এখন বলতে গর্বই হয়, হয়তো লেখা পড়ার পিছনে লেগে থাকলে এতো কিছু শিখতাম না।
হয়তো যেটার হওয়ার কথা ছিলো সেটাই হয়েছি।
আপসোস করি না।
কখনো কোনো কিছুতে ভয় করিনি।
ইংলিশ এক্সামের আগের রাতে বিয়েতে নাচানাচি করে সকাল ১০ টায় এক্সাম দিতে গিয়েছি।তারপরো ফেল আসেনি, কনফিডেন্স ছিলো।
পরীক্ষা তো কি হয়েছে, ভয় পাওয়ার কি আছে?
পরীক্ষা পরীক্ষার যায়গায়, আমি আমার যায়গায়।
সব শেষে একটা কথাই বলবো,
ভয় পেলেই ভয়।
ভয়কে করো জয়।
এখন কি হয়েছি, সেটা বড় কথা নয়।
জীবন মানে যে টাকা না সেটা বুঝতে শিখেছি।
জীবনে মানে কতোটা সুখি আছি সেটা বুঝতে শিখেছি।
দিন শেষে কতো টাকা পকেটে আয় করেছি বা আছে সেই হিসাব করি না, দিন শেষে কতোটুকো মানুষ হতে পেড়েছি সেটাই হিসাব করি।
মৃত্যুর পর আমার কতো টাকা আছে এটা যাতে কেউ গুনতে না পাড়ে, মৃত্যুর পর মানুষ হিসাবে কতোগুলো ভালো কাজ করেছি সেটা মানুষ হিসেব করে আমাকে যেনো মনে করে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:৫৮