হায়রে যদি আমরা সময়মতোন আন্দোলন করতে পারতামঃ
১) মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপর সম্পূরক কর তিন শতাংশ থেকে বাড়ায়ে পাঁচ শতাংশ করসে। আর করপোরেশনের উপর ট্যাক্স কমাইসে। মানে আপনার মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপর টাকা বাড়ায়ে সরকারে কিছু নিবে, কিন্তু অলরেডি বিরাট আন্তর্জাতিক টেলিকম কম্পানির থেকে ট্যাক্স কমায়ে নিবে।মানে আপনার খরচ বাড়ে কিন্তু কিন্তু কম্পানির খরচ না বেড়ে উলটা কমে।
২) আন্দোলনের মুখে এনবিআর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভ্যাট তুলসিলো। সেই ভ্যাট আবার বসাইসে। তার মানে দেশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার খরচ বাড়বে। বেড়ে যে খরচ হবে সে খরচে বিদেশে পড়া যায়। দেশের গবেষণা করা কনসালটেন্সি ফার্মের উপর উৎসে কর বাড়াইসে আর বিদেশী কনসালটেন্ট ভাড়া করার উপর কর কমাইসে। তার মানে দেশে কারো থেকে গবেষণা করাইতে আপনার এক্সট্রা খরচ হবে বিদেশে কারো থেকে কনসালটেন্সি নেয়ার চেয়ে কম। তারমানে বুঝতেসেন? একহাতে দেশের থেকে জোর করে মেধা বিদেশে পাঠায় দেয়া-আরেকহাতে সেই বিদেশ থেকে কনসালটেন্সি নেয়া উৎসাহিত করা। দেশে মেধা কেমনে থাকবে?
৩) ভাবতেসেন করপোরেশনের উপর ট্যাক্স কমসে, যাক এখন ব্যবসা বেড়ে কিছু নতুন চাকরি পাবে দেশের মানুষ। নাহ, সেইটা হবে না। দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পখাত গার্মেন্টস সেক্টরের উপর এক্সট্রা উৎস কর বসাইসে দেড় পার্সেন্ট। এই বেচারা গার্মেন্টসগুলা লাভই করে হইতেসে দুই পার্সেন্ট থেকে তিন পার্সেন্টমতন। তার উপর দেড় পার্সেন্ট কর বসাইলে থাকে কি? এরপর যদি নিজেদের প্রফিট মার্জিন ধরে রাখতে গিয়ে গার্মেন্টসে সেফটি ইকুইপমেন্ট না রাখে, এদিকে ওদিকে ঘুষ দিয়ে বিল্ডিং কোড না মেনে কারখানা তুলে, তাইলে তো রানা প্লাজা আর তাজরীন গার্মেন্টস মার্কা ঘটনা ঘটবেই। সোজাপথে পয়সা যদি কম দেয়া লাগতো তাইলে বাকা পথে পয়সাই দেয়া লাগতো না।
৪) সোনালী ব্যাংক আর বেসিক ব্যাংক থেকে যে টাকাগুলা চুরি হইসে, সেই টাকা গভমেন্ট ফিরায়ে দিচ্ছে। কার টাকা দিয়ে ফিরায়ে দিচ্ছে? আপনার টাকা দিয়ে ফিরায়ে দিচ্ছে। সেই টাকা আপনি কখন দিলেন? ফোনে মিনিটপ্রতি বাড়তি খরচ দিয়ে দিলেন। শেয়ারবাজার সিধা করার জন্যে অর্থবরাদ্দ করসে। সেই শেয়ারবাজারে যারা কাহিনী করসে তাদের কিছু হইসে? যারা সোনালী ব্যাংক আর বেসিক ব্যাংক থেকে টাকা চুরি করসে তাদের কিছু হইসে? হয়নাই। দেশের শিল্পখাত বৃদ্ধির সুবিধার জন্য কি তাদের উপর ট্যাক্স কমানো হইসে? হয়নাই। তাইলে শেয়ারবাজার কেমনে চাঙ্গা হবে? মুনাফা যদি না থাকে, তাহলে মানুষ বিনিয়োগ কেন করবে? আচ্ছা, তাইলে শেয়ারবাজারে কেন টাকা বাড়ানো হইলো? আর কি, একহাতে টাকা দিবে, আরেকহাতে টাকা নিবে।
৫) আগে ট্যাক্স না দিয়ে যে টাকা ব্ল্যাকমানি হয়ে আছে-সেইটাকে হোয়াইট মানি করা যাবে নূন্যতম কর রেটে। তারমানে দাড়াইলো যে সময়ে ট্যাক্স না দিলে কোনই পেনাল্টি নাই। তাইলে কম্পানি টাইমমতো ট্যাক্স কেনো দিবে? দিবেনা।সরকারকে ট্যাক্স না দিয়ে সরকারের লোকজনের বাসায় ভেট পাঠাবে। আপনার কাছ থেকে কিন্তু সময়মতো ট্যাক্স কেটে ঠিকই নিবে-ফকরুদ্দিনে গিয়ে একপ্লেট বিরিয়ানি খান, সাথে সাথে ভ্যাট ধরায়ে দিবে।
৬) সরকারী বেসরকারী সবাইরে বলে ২০১৯ সালের মধ্যে পেনশন দিবো। সোজা বাংলায় বললেই হয় আমেরিকার মতন সোশ্যাল সিকিউরিটি দেয়ার ধান্দা করতেসে। সেইটা করা গেলে তো হইলোই-ভালোমতন জনগণের সমর্থন নিয়েই জনগণের পকেট মারা যায়। বুড়া হইলে সরকার ফ্রী পেনশন দিবে-তাইলে আর নিজের বীমা করার দরকার কি-গেলোগা মার্কেট থেকে টাকাপয়সা সরকারের পকেটে। আর সেই পেনশন বাইর করতে তো বঙ্গীয় উপায়ে পদে পদে ভাগ বাটোয়ারা চলবেই।
৭) উন্নয়ন খাতের চেয়ে অনুন্নয়ন খাত বড়। মানে সরকারের কাজের কাজ যেইগুলা, সেতু বানানো, রাস্তা বানানো, এইডি রেখে আগের ঋণের সুদ ফেরত দেয়া, সরকারী কর্মচারীদের বেতন বাড়ায়ে দেয়া-এগুলাতে খরচ বেশি। আগে ঋণ নিয়ে কি করসে? অন্য দেশের চেয়ে দেড়গুণ বেশি টাকা খরচ করে ফ্লাইওভার বানাইসে, যার একটার রাস্তা উল্টাদিকে আরেকটার থেকে গার্ডার খসে পড়ে। দেড়গুণ টাকা বেশি লাগসে কেন? সরকার থেকে নেমে রাস্তার পিচ পর্যন্ত আসতে আসতে এইদিকে ওইদিকে ভাগ বাটোয়ারা হইসে-আর সেইটা নিয়ে যাতে সবাই চুপচাপ থাকে, শান্তিতে থাকে, এইজন্যে বিরাট একটা আমলাতন্ত্রকে বাড়তি টাকা দিয়ে পুষতেসে। শুধু অর্থকড়ির জন্য তিনটা মন্ত্রণালয়- ফাইনান্স, কমার্স আর ইন্ডাস্ট্রি। এর মধ্যে আবার অর্থ মন্ত্রণালয় আর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দুই আলাদা মন্ত্রী। এতে কাজের কাজ যেইটা হইসে সেটা হইলো-একটা ফাইল কাজে আসার আগে একটা টেবিলের জায়গায় সাড়ে সাতশোটা টেবিলে ঘোরা লাগে। এই টেবিলে টেবিলে ঘুরানো আর টেবিলের নিচে কারসাজীর জন্য অর্থ বরাদ্দ বাড়সে আর ওইদিকে কিন্তু আস্তে করে কৃষিখাতে বরাদ্দ কমায়ে দিসে।
আমাদের অনেক বড় একটা সমস্যা হলো আমরা বাংলা সিনেমা দেখে বড় হইসি-পুলিশ আসে মারামারির পর। আমরাও আন্দোলন করি ঝামেলা লেগে যাওয়ার পর। যদি গোড়াতে আন্দোলন করতে পারতাম, শিক্ষিত একটা সাহসী আন্দোলন করতে পারতাম-পয়েন্ট টু পয়েন্ট দাবিদাওয়া নিয়ে, তাহলে হয়তো অনেক মারামারিই দেখা লাগতো না।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:১৪