শান্তির শহর সৈয়দপুর। এ শহরের মানুষ খুবই সহজ সরল ও অতিথিপরায়ন। কিন্তু একবার ভেবে দেখেছেন এই শান্তির শহর সৈয়দপুর জঙ্গিবাদ,সন্ত্রাবাদের দিক থেকে কতটা ঝুকিপূর্ণ? এটা বাস্তব যে সন্ত্রাসবাদ,জঙ্গিবাদ আজ আর কোন স্থানীয় সমস্যা নয়, আন্তর্জাতিক সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। আর তার চেয়ে বড় ভাবনার বিষয় এই জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদে ঝুকছে প্রাইভেট ভার্সিটিতে অধ্যায়নরত উচ্চ বিত্ত পরিবারের সন্তানেরা। কিন্তু কেন, তাদেরতো টাকা পয়সার কোন ঘাটতি নেই। এখানে পরিস্কার যে উঠতি তরুনদের যেভাবে ব্রেইনওয়াশ করা হচ্ছে তার মূলে টাকার চেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে ধর্মীয় অপব্যাখ্যা এবং এর পিছনে কাজ করছে মাদক।
সৈয়দপুর জঙ্গিবাদের ঝুকিতে যে কারনে তার মূলে কিন্তু এই মাদক। এখন মাদক কিভাবে জঙ্গিবাদের দিকে একটি যুবককে নিয়ে যায় তার পূর্ন বিশ্লেষন জানতে উৎকৃষ্ট উদাহরন হিসাবে দেখে নিতে পারেন বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ জঙ্গিবাদের ত্রাসসৃষ্টিকারী আইএস এর চেহরা।
জঙ্গিবাদ নিয়ে গভেষণাধর্মী নানা প্রতিবেদন ঘেটে দেখা যায় আইএস জঙ্গিরা উচ্চ ক্ষমতার নেশায় আসক্ত হয়েই বিবেক বিবেচনা বর্জিত নিরীহ মানুষদের হত্যায় মেতে উঠেছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যায় ‘ক্যপ্টাগন’ ও ‘অ্যাম্ফিটামিন’ নামক উচ্চ ক্ষমতার এই নেশার বড়ি গ্রহনে আইএস নামক জঙ্গিদের উম্মত্ততা আর বেড়ে যায় এবং মৃত্যুর পরোয়া না করে তারা নিরীহ যে কারও উপর ঝাপিয়ে পড়ছে। এই ‘ক্যপ্টাগন’ ও ‘অ্যাম্ফিটামিন’ নামক নেশার আদলে আইএস জঙ্গিরা তাদের জঙ্গিদলের নতুন সদস্যদের ব্রেইন ওয়াশ করে থাকে। আসক্ত নবীনদের তখন হিতাহিত জ্ঞান থাকে না বলে সহজেই জঙ্গিরা ধর্মের অপব্যাখ্যা করে হুর পরীর স্বপ্ন আর পরকালে বিনা হিসাবে জান্নাতের লোভ দেখিয়ে কথিত জিহাদে উদ্বুদ্ধ করছে উঠতি বয়সী নবীনদের।
মনোচিকিৎসকদের মতে ‘ক্যপ্টাগন’ ও ‘অ্যাম্ফিটামিন’ গ্রহনের পর শরীরে এক ধরনের উদ্দাম সৃষ্টি হয়, সাথে ক্ষুদামন্দা, অনিদ্রা থাকলেও তখন দেহে প্রচুর শক্তি অনুভূত হয়ে থাকে। ১৯৮৭ সালে জাতিসংঘ ‘ক্যপ্টাগন’ ও ‘অ্যাম্ফিটামিন’ উৎপাদন নিষিদ্ধ করলেও বর্তমানে আইএস জঙ্গিদের দ্বারা এর প্রসার অনেক দুরে এবং সেসব জঙ্গিদের হাত ধরে এই ট্যাবলেট এখন বাংলাদেশের জঙ্গিদের হাতে যে নাই তা দেশের বর্তমান অবস্থা দেখে না বলা মুশকিল।
সৈয়দপুরে ‘ক্যপ্টাগন’ ও ‘অ্যাম্ফিটামিন’ নামক মরণ নেশার আগমন না ঘটলেও স্থানীয় ভাবে বাবা নামে পরিচিত নেশা জাতীয় বড়ি ইয়াবা বড়ি এখন শহরের বিভিন্ন মহল্লায় বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। গোলাহাট, হাতিখানা, রেললাইনের ধারে, রসুলপুর, দুর্গামিল নতুন বাবুপাড়া, আবাসন সহ শহরের বিভিন্ন মহল্লায় ইয়াবার এখন প্রচুর দাপট। ঠিক এই যায়গায় সৈয়দপুর যেকোন সময় জঙ্গিবাদের দিকে হেলে পড়তে পারে। কারন ইতিমধ্যে এই ইয়াবার ছোবলে শহরের অনেক উঠতি বয়সের তরুন আসক্ত হয়ে পড়েছে। কাল যদি কেউ এই আসক্ত তরুনদের পরকালে বিনা হিসাবে জান্নাতের লোভ দেখিয়ে ননমুসলিম,মুশরিক সহ নিরীহদের হত্যা করতে উদ্বুদ্ধ করে তার কি কোন গ্যারান্টি আছে? অবশ্যই করতে পারে কারন আসক্তদের তখন তো আর হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। কারন এই ‘ক্যপ্টাগন’ ও ‘অ্যাম্ফিটামিন’ নামক নেশা দিয়ে নবীনদের আসক্ত করে এর ফায়দা উঠাচ্ছে জঙ্গিগোষ্ঠি আইএস। আর বর্তমানে প্রিয় শহর সৈয়দপুরে ইয়াবার যে প্রচলন দেখা যাচ্ছে তার ফায়দা উঠাতে জঙ্গিদের যে দেরি হবে না তা কিন্তু নয়। তাই সব সময় সজাগ থাকতে হবে সবাইকে।
মাদকের ভয়াবহতা উগ্রপন্থা বাড়িয়ে দিচ্ছে তাতে আর সন্ধেহ নেই। তরুণ প্রজন্মের মগজ ধোলাই করে উগ্রপথে ঠেলে দিচ্ছে এই জঙ্গিরা। দেশের মানুষ গুলশান হামলা,শোলাকিয়া হামলায় জঙ্গিগোষ্টির উৎপাত নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। শঙ্কার ভয় বাসা বুনেছে সর্বস্তরে, কেন উঠতি তরুনরা জঙ্গিগোষ্ঠিতে যোগ দেয়? কী লোভনীয় লুকিয়ে আছে এতে? ঘুরে ফিরে আসবে সেই একাকিত্ব,বেকারত্ব আর মাদক এর নাম। আর এই হতাশাগ্রস্ত উচ্চবিত্ত পরিবারের তরুনদের সুযোগ নিচ্ছে ওতপেতে থাকা আমাদের চারপাশে দুষ্ট মানুষ সব। ধর্ম তাদের কাছে কিছু না। যদি তারা প্রকৃত অর্থে ধর্ম মানতো তাহলে ‘ক্যপ্টাগন’ ও ‘অ্যাম্ফিটামিন’ নেশা সেবন আর ব্যবসা করে আইএস জঙ্গিরা মেয়েদের অপহরন আর ধর্ষন করতো না। ২০১৪ সালে সিএনএন একটি ভিডিও ফুটেজ প্রচার করে যেখানে দেখা যায় কারিম নামের এক আইএস জঙ্গি ‘ক্যপ্টাগন’ ও ‘অ্যাম্ফিটামিন’ নামক নেশার বড়ি সম্পর্কে বলছে তারা আমাদের ঔষধ দেয়; যার ফলে আমাদের মনে বিভ্রম তৈরি হয়। এরপর আমরা আমাদের জীবনের পরোয়া না করেই জিহাদের ময়দানে চলে যায়।
পাঠক খেয়াল করুন একটি মাদক কিভাবে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করছে উঠতি বয়সী তরুনদের। তাই এখন আমাদের প্রিয় শহর সৈয়দপুর, প্রানপ্রিয় দেশ বাংলাদেশ থেকে দুষ্ট লোকদের পরাজিত করতে হলে সম্মিলিতভাবে মাদকের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে হবে এবং প্রশাসনকে সৈয়দপুরে মাদক নির্মুলে আরো কঠোর হতে হবে সেই সাথে সন্ত্রাসবাদ,জঙ্গিবাদ সম্পর্কে কোন তথ্য পেলে অতিদ্রুত সৈয়দপুর থানাকে অবগত করুন। সাথে সাথে অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে। সৈয়দপুরে জঙ্গিবাদের দানা বাসা বাধার আগেই আসুন তাকে পরাজিত করতে নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী সম্মিলিত ভাবে এগিয়ে আসি। কারন শহর বাঁচলে, বাঁচবে দেশ।