রাবেয়া বেগম মারা যান দুপুর ২ টায়। মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। দলে দলে মানুষ আসছে। কেউ কাদো কাদো মুখ নিয়ে আসছেন,বাকিরা রাবেয়া বেগমের ছেলেদের খুজছেন কাজের জন্য। মিলাদে কি কি করা হবে তা নিয়েও কথা হচ্ছে। গরুর মাংস কত কেজি কিনতে হবে? মাংস কিনলে জেতা যাবে নাকি আস্তো গরু কেনাই লাভ, এইসব কথা হতে লাগলো। রাবেয়া বেগমের বড় ছেলের অফিসে একটা কাজ আছে আকবরের। সে কিছুতেই করাতে পারছিলো না। আজ আকবরও এসেছে। কেনা গরুর মাংস ভালো হবে কিনা সেই আলোচনায় সেও যোগ দিলো। সবাইকে জানিয়ে দিলো গরু সে নিজ দ্বায়িত্বে কিনবে এবং বাজারের দামের চেয়ে ২ হাজার টাকা কমেই কিনবে। মাংস প্রোসেস করার ব্যাপারটাও সেই দেখবে। খুবই ব্যাস্ত হয়ে পড়লো আকবর। তার কাজ যে এইবার হয়ে যাবে সেই ভেবেই ভালো লাগছে তার। কখন লাশ দাফন দেয়া যায় তা নিয়েও কথা হচ্ছে।
রাবেয়া বেগমের ভাগনে রফিকুর রহমান না আসা পর্যন্ত যেনব কিছুতেই দাফন দেয়া না হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। সরকারি উচ্চ পদের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম শেষ তিনি খালার বাসায় এসেছিলেন মেট্রিক পরীক্ষার পরে। রাবেয়া বেগম তার জন্য একটা মুরগি রান্না করেছিলেন,আদর যত্নের কোনো কমতি হয়নি। রফিকুল আলমের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তখনও সম্ভব হয় নি। তবে হয়ে যাবে,কাজ এগিয়ে রাখা দরকার। আবার সবাই খাবার মেনুতে ফেরত চলে গেলো। যারা গরুর মাংস খাবে না তাদের জন্য খাসির ব্যাবস্থাও করা হবে। ঝোল মাংস হবে নাকি রেজালা হবে এই নিয়ে বেশ খানিকক্ষণ কথা-কাটাকাটির পরে বিরিয়ানি ফাইনাল হলো।
এর মধ্যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। আশ্চর্য বেপার হচ্ছে রাবেয়া বেগম যে এতোটা সময় একা খাটে শুয়ে আছে কেউ খেয়ালই করেনি। তিনি থাকতেন চিলেকোঠার ঘরে। পাচ তলা বাড়ি পাচ ছেলের জন্য। তাই চিলেকোঠা ছাড়া উপায়ও ছিলো না। সন্ধ্যার পরে রাবেয়া বেগমের নাতনি এসে তার পাশে বসলো। দাদির হাত ধরবে কিনা বুঝতে পারছে না। দাদির ঘরে তেমন কখনো আসা হয়নি। যখন তাদের ফ্লাটে ছিলো তখন স্কুল শেষে দাদির সাথে নানান কথা হতো। তারপর দাদি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। চিলেকোঠায় তার ঘর হলো। শেষ সময়টায় শুয়ে থাকতে থাকতে ঘাড়ের কাছে পচন ধরলো।
রাত বাড়তেই চিলেকোঠা থেকে দুর্গন্ধ আসতে লাগলো।
#আমার_কথা