সরদার বাড়ির বড়ছেলে গতকাল রাতে মারা গেছে। বাবা মা এখনো বেচে আছেন। শুধু ছেলের সময় ফুরিয়ে গেল। লাশ রাখা হয়েছে বারান্দায়। দলে দলে লোক আসছে, লাশ দেখছে। আমার কাজ হচ্ছে লাশের মুখ দেখানো। একজন দেখে গেলে আমি মুখ ঢেকে দিচ্ছি। তারা একটু দুরে সরে গিয়ে পরিচিত মানুষ খোজেন । একটু দুরে গিয়ে গল্প করেন। মাসুদ সাহেবের ছেলে এইবার মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। সে হাসিমুখে সবার কাছে ছেলের জন্য দোয়া চাইছেন।
মাসুদ সাহেবের স্ত্রী মহিলাদের সাথে আছেন। একটু পর পর অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে কেউ কেউ। শুধু লাশের মায়ের কোনো হাহাকার নেই। তাকে ঘিরে সব মহিলারা বসে কাদছে। এই অঞ্চলের নিয়ম হচ্ছে মৃত বাড়ি থেকে কেউ না খেয়ে যাবে না। একদল মহিলা চুলায় রান্না চাপিয়েছে। চোখের পানি মুছতে মুছতে কাজ করছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানেও একটা স্বাভাবিক পরিবেশ হয়ে গেল। গভীর মনোযোগে লবন চেখে দেখা হচ্ছে। মাসুদ সাহেবের স্ত্রী তার বড় ছেলের জন্য পাত্রী খুজছেন। খুব চাপা গলায় দুই একজনের কাছে কলেজ পড়ুয়া মেয়ের সন্ধ্যান করলেন।
লাশের দাফন হলো আছরের পরে। সরদার সাহেব লাশ কবরে নামাবার সময় বুক ফাটিয়ে কাদলেন। একে একে সবাই চলে গেল।
সন্ধ্যার পরে বাড়িতে তেমন কেউ নেই। বারান্দার মিটমিট করে জ্বলা মোমবাতির আলোতে সরদার সাহেবের স্ত্রী বসে আছেন। তিনি কাদছেন। এ কান্না ক্ষনিকের জন্য না, এ কান্না সারা জীবনের। অনেক আদরে বড় করা ছেলের জন্য মায়ের কান্না কখনো থামবে না। এক সময় চোখের পানি শুকিয়ে যাবে,তখন থাকবে শুধু বুকে চাপা দেয়া কষ্ট। মাসুদ সাহেবের স্ত্রীর মুখে হাসি। বড় ছেলের জন্য পাত্রী পাওয়া গেছে। তিনি মেয়ের রুপ গুনের কথা স্বামীর সাথে বলতে বলতে বাড়ি ফিরছেন।
#আমার_কথা
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:৫০