বিষকাটালি
একদিন নদীদের নাগরিক হতে ইচ্ছা হলো
তারা শহরের পাশ দিয়ে বইলো
গত একবছর আমি ঘুমন্ত রাত, ঘুমন্ত দুপুর ও উষার শৈশকাল নিয়ে গবেষণা করেছি
গত দশপবছর আমি গোপনে নদী ও নির্বোরোধ প্রকল্পের কাছে গবেষণা শিখেছি
গত পনের বছর আমি অক্ষর অনিন্দ্য গবেষণা পত্র লিখেছি
ঊনিশ অষ্টাশি থেকে জীবিকাজাহ্নবিতে সাঁতার সংকুল ঢেউ, তেড়ে আসা পাঠচক্রের জ্ঞান
নিষিদ্ধ তত্ত্ব সব আহ্লাদে আস্বাদে নতুন সম্ভাবনায় অক্ষরমুক্ত করছি
আমি শুধু বিষ খাওয়া নারীদের দাফন করি
আমি শুধু রাস্তায় সন্তান কুড়িয়ে পাই
আমি শুধু বাঘের দুধে মানুষ হওয়া মানুষ দেখি
আমি শুধু হাসপাতালে লেবার ওয়ার্ডে ইতিহাসের ওঁয়া ওঁয়াও শুনি
আমি শুধু কাঁদি, আমি শুধু বিকাল ও সন্ধ্যার বিকল কাঠামো
একদিন শুধু বিষ জরজর নারীদের কথা শুনি
আমি শুধু সংসারে ফাঁসীর মঞ্চে আমারই অনন্যার আত্মহনন পর্ব দেখি
আমি দেখি ডানা ভাঙ্গা বৈমানিকের ফাঁসি
আমি দেখি জেলখানায় দেয়ালে দেয়ালে অমিমাংসীত সত্যের রক্তাক্ত চিঠি
আমি দেখি হাজার সৈনিকের ফাঁসি
আমি দেখি অকারণ মৃত্যুর মিছিলে সৈনিকের কুচকাওয়াজ ঐক্যের মরণ
তারপরও আমি দেখি ধড়ফড় করা সেই বিষবৃক্ষের ফল
খেয়েছিলো আমারই দেখা প্রথম নারী
আমারই দেখা দ্বীতিয় নারী
রমণ রুক্ষ্ম তার দেহ, বিষকাটালির গুণে মাটির কাছাকাছি গেরিলা সন্তর্পণে থাকা কেঁচো
প্রকাশ্য হয়
হ্যাঁ, হয়, এমনিও সজল বরষণ বর্শায়
চেতন চতুর প্রাণি চৈতন্যবান নয়
শুধু সরল বিশ্বাসে বার বার একই বিষাদে আত্মহত্যা করে।।
আমি দেখি লাশের নৃপতি
নির্ঘোষে নির্লিপ্ত ঘোষণা, মৃত্যুর প্রেসনোট
মঞ্জিলে মকসুদে স্মৃতিকাতর
লায়লা এসো, আবারও স্পর্শ হউক গরাদ অমানিশায়
আমি দেখি তোমার চোখ
দেখো, এই দেখো, আমাদেরই হস্তাক্ষরে রচিত ইশ্তেহার
প্রজন্ম প্রজাতির পরম্পরায়, ভেঙে দাও ক্ষমতার অহংকার
আমি সেইসব মানুষদের কথা বলছি
যারা জল কাদায় যুদ্ধ করেছিলো
আমি সেইসব মানুষদের কথা বলছি
যারা বিনা বিচারে ফাঁসিপ্রয়াণ বরণ করেছিলো
আমি সেইসব মানুষদের কথা বলছি
যারা একসাথে গরাদ অন্তরালে চিঠি লিখেছিলো
পৃথিবীর দীর্ঘতম কবিতা
একদিন নদীনাগরিক নায়াগ্রার মতো কাঁদলো
একদিন নদ অভাগী পূণ্যস্রোতের স্মৃতি নিয়ে
কাঁদলো; আজলা আঁচল ভরা তিয়াস-তিরাস ধারা নিজেরে হারালো
একদিন জেলখানা ভরে গেলো বিষকাটালি গাছে
কেঁচোর মতো কিলবিল ইতিহাস
কাঁচাকেঁচো অক্ষরের নিজস্ব রায়
কেঁচোকাঁচা মাটিতে লিখা হলো
একদিন ইংলিশ রোডের ইচ্ছা সহ বাঙলা বাজারের দিকে গেলাম
একদিন ব্রক্ষ্মপুত্রের আড্ডায় সদরঘাট গেলাম
একদিন আইন অনুষদের পাঠকক্ষের বাইরে এসে দেখি
বিষকাটালী গাছেও ফুল
আমি সেই ফুল নিয়ে পদ্যপরিশ্রান্ত
কবিতা আইন হয়ে উঠে, ফয়সালা পদ্যময় হয়
বিচার বিন্যস্ত হয় হরফের হরবোলা হয়ে
একদিন ইংলিশ রোডে খসরু হয়ে গেলাম
একদিন ইংগিতের পশ্চাতে ধাবমান সুবরাওয়ার্দী উদ্যানে
একদিন ছবির হাটে বিক্রি হয়ে গেলাম
একান্নবর্তী বন্ধুসকল হারালো কুটুমকালমিতা
একদিন শরীর চিনালো যে নারী, তাকেই হারিয়ে ফেলি
আবার ফিরে যাই আনারকলির গল্প নানা সম্পাদনায়
বাঙলাবাজার ঘিরে অক্ষরের মৃত্যু ঘনায়
আমি ফিরে যাই শরমসংকুল কালে আমার আদি ঠিকানায়
যেখানে দেহের প্রদীপ জ্বালা থাকে শ্রমরমণ কারখানায়
যেখানে গোপনের ভয় নাই গোপিনীর সাথে
সব কিছু ভেসে যায় দেহের সৌরভে
ক্লান্ত এক শিক্ষার্থী পড়ে থাকে মুক্তা সম্ভাবনায় ঝিনুকের বেশে দেহের সৈকতে
না, চেহারা নয়, না বয়স নয়, না ধর্ম নয়, শুধু প্রাপ্তিযোগে নেচে গেছি লক্ষ্মৌর দরবারে
কোন এক দরবেশের পেয়ারে ভূবন বিভূতি শিখে আয়নার ব্যবসায় আছি
কেউ বলেছিলো, গিলে খাবো
আমি বলেছিলাম, একাধিক অরণ্যে এক সাথে শিকার সম্ভব
কার্তিকের ওলানির আইল পথে যারাই হেঁটেছে
নিজের গন্তব্য সীমা, পদক্ষেপ ও পরমায়ু, নন্দনতত্ত্ব অস্বীকার মাত্র
এই সব কথার।।
ইংলিশ রোডের ঘ্রাণ নাকে ভুরভুর
ফরাসী সৌরভের এক আদি ফর্মূলা
টান ও টানাটানি, খালি থাকা ঘরের অস্তিত্বের আদিম আদি
সব ফেলে মিছিল যাত্রায়
শুধু থাকে আরাধনা, রাধালীলা, হাজার সত্যের শঙ্খধ্বনি
শুষ্ক টাগরায় শুষে নেয়া সমস্ত প্রেম।।
ব্রক্ষ্মপুত্র নাগরিক হতে চেয়েছিলো
বিশ্বাসই বিশুদ্ধ
তাই পূণ্যস্নানে এতো ভীড়।।
ইংলিশ রোড বার বার ঘুরে এসে যারা ঢাকায় ক্লিনিকের জন্ম দেখেছে তাদের নিয়ে গবেষণা করেছি
সিফিলিস গণোরিয়া হয়ে যারা বাসরে ঢুকেছে, তাদের নিয়ে গবেষণা করেছি
জলজ রোগের খবর মৃত মাছ জানে
নারীর গভীর খাদে এতো রোগ সে কেবল পুরুষ কারণ
দেখেছ ক্ষত পায়ে, ভ্যাজাইনা ও ভগাংকুর বিস্তৃত অসংখ্য ঘা, দগগগে পুঁজিতন্ত্র
তবুও পুরুষ গিয়েছে
ইংলিশ রোড মানে নারী নয়, পুরুষ।।
ইংলিশ রোড মানে অন্ধকারের উপনিবেশ
ইংলিশ রোড মানে শরীরে আসন পাতা, বসা_ বসন স্খলিত শরম সুন্দর আকাঙ্খার পাঠ বেশরম পর্দার ওপাড়
ইংলিশ রোড মানে উপনিবেশের অন্ধকার
এক পাঠাগার
একট বই
নারী অতীত, বর্তমান
না, ভবিষ্যত নয়।।
এখন ইংলিশ রোডে ব্রক্ষ্মপুত্র বাধা নাগর
এখন ইংলিশ রোডে খালাসের ঘর
সব নাগরের মতো
এখন বিষকাটানো সময়
এখন ইংলিশ রোড নিয়ে ভাবছি, গবেষণা করছি
পুরা ইনফর্মেশন সুপার হাইওয়ে ইংলিশ রোড কিংবা টানবাজার
জ্ঞানগণিকা ও জ্ঞান আলাদা করা মুশকিল।।
নিষ্পাপ, মাছুম, নির্বোরোধ প্রকলের তিনটি ধাপ
ভিজুয়াল ও ওর্যাঞল ডকুমেণ্টশন, লিটারারি পোয়েটিক ও ক্রিয়েটিভ ডকুমেণ্টন আর বাকী রইলো গভীর গবেষণা
অক্ষরে ও স্থির চিত্রে অস্থিরতা স্থির করাই গবেষণা।।
না, আগের ত্রিমাত্রাই_ ত্রিলোক মাত্রায়, পর্যবেক্ষণ, বোধ-বোধন
আর শুধু রোদন _ কান্না_ আকাশ _ আকাশি আয়না
বিষকাটালির ফরেন্সিক বীক্ষণ অনুবীক্ষণ নিশ্চিত সত্যের আভাস
আমি জানি, এই সব অনুসন্ধান, কিছুটা ভ্রমণ, অন্বেষণ অন্বেষা…।।
আমি শুধু পড়ে থাকি বালিয়াড়ি ঝোঁপে_ নিশ্চুপে
নিজের কান্দায় আমি ঘর বাঁধি স্বরূপের
আয়না অসীম ঘর।।