সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ চুশিলদের আগমণ প্রত্যাশিত নয়
Condom ( কনডম ) নামক বস্তুটির শুদ্ধ বাংলা হইল গর্ভনিরোধক খাপ । ইহা মূলত একখান বিবাহ + বস্তু । তবে আমরা হইলাম বাঙালি । বাঙালিরা সময়ের আগেই সব কিছু ব্যাবহার করিয়া ফেলি । কনডমও রক্ষা পায় নাই । সময়ে অসময়ে , রাত বিরাতে , অজস্র কনডম ব্যাবহার করা হইয়াছে ।
তবে ছুড়ি দিয়া যেমন মানুষ একাধারে সবজি কাটে আর মানুষের পেট চিরে , তেমন ই কনডমের ব্যাবহার ওঃ শুধু মাত্র গর্ভ নিরোধকের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে নি ।
বাজারে কনডমের চাহিদার সাথে আনুপাতিক হারে বাড়ে যোগান । একের পর এক কনডম বাহির হইয়াছে আর একেকজন লুফিয়া নিয়াছে । তাহাদিগকে ষড়ঋতুর নাম শুধাইতে বলিলে মাথা চুলকাইবে , কিন্তু বিভিন্ন গর্ভনিরোধক খাপ এর নাম সমূহ শুধাইতে বলিলে উলটো আপনার চুলকানি উঠিবে ।
সহজ সরল হিসাব অনুসারে কনডমের সহিত আমাদের মোলাকাত হওয়া সঠিক সময় বিবাহের পড়ে । কিন্তু ওই যে উপরে বললাম না , আমরা বাঙালি । সময়ের আগেই সব ব্যাবহার করিয়া ফেলি । বয়সের বাঁধা পেরিয়ে বহু আগেই আমাদের কাছে পৌঁছে যায় নানান নামের , নানা রঙের , গন্ধের গর্ভনিরোধক খাপ ।
খাপের সাথে আমার খাপ মিলিয়াছিল সেই ছোট বয়সে । একদা গ্রামের বাড়ি গিয়াছিলাম । পাশের বাড়িতে থাকতো আমার বন্ধু সোহেল । বৈকালিন ভ্রমণের সময় তাহার হাতে হালকা গোলাপি রঙের ‘’ ফুটকা ’’ দেখিলাম । সুতলির সাথে ইহা বেঁধে সে মহানন্দে খেলিতেছে ।
ওরে জিগালেম , ‘’ ওহে এই গোলাপি ফুটকা কইত্যে ? ‘’
সে উত্তর দিলো , ‘’ বাপের বালিশের নিচেত্যে ‘’
আমি মোটামুটি আচানকিত হইয়া কইলাম ‘’ তোর বাপে ফুটকা দিয়া কিতারে ? ‘’
ত্যাড়া চাহনি দিয়া কইল , ‘’ হেইডা বাপে কইতারে । ‘’
বন্ধু আমাকে কহিতে পারিলো না । অজানাকে জানার আগ্রহ প্রবলভাবে কষাঘাত করতেছিল । বন্ধুরে পাম পট্টি দিয়া ওর পকেটে রাখা ‘ফুটকার’ প্যাকেট থেকে দুইখান ফুটকা খসাইলাম । আগে ফুটকা কিনতাম ‘ছুটা’ আর এটা ব্রান্ডেড । নাম হইল ‘রাজা’ । হাতে নেওয়ার পর তেল জাতীয় পদার্থে আমার হাত পিচ্ছিল হইয়া ফুটকা পড়িয়া যাবার উপক্রম । বন্ধুরে শুধাইলাম
‘’ কিতাবে , এতো তেল কিরে ? তোর পকেটে কিতা ? ‘’
‘’ পকেটে কুস্তা নাই । এই ফুটকায় তেল ই থাকে ‘’
তেল থাকা বিশেষ জাতীয় ‘ফুটকা’ পকেটের মধ্যে গুঁজিয়া বাসায় চলিয়া আসিলাম । ওখানকার হৈহুল্লোড়ে ফুটকা নিয়া খেলার কথা ভুলিয়া ই গেলাম । পরদিন সকালে মা জননী প্যান্ট ধৌত করিবার তরে প্যান্ট নিয়া গেলেন । কিছুক্ষণের মধ্যেই মা আমাকে ডাকিলেন । ফুটকা দুইখানা আমার চোখের সামনে নাড়িতে নাড়িতে বলিলেন ,
‘‘ ইহা তোমার পকেটে কি করে ‘’
‘’ সোহেল থেইক্যা আনছি ‘ ‘
‘’ ওঃ কোথা থেকে আনছে ‘’
‘’ ওর বাপের কাছতে ‘’
এরপর মা আমার দুই ফুটকা ঢিল মারিয়া ডোবায় ফালাইয়া দিলেন । এবং সাবধান করিলেন ইহজন্মে যেন ইহাতে হাত না লাগাই ।
দুইদুইখান ফুটকা হারাবার শোকে কাতর হইয়া আপন শয়ন কক্ষে গুম মারিয়া পড়িয়া রইলাম । দুপুর বেলা অন্ন গ্রহণ করিবার তরে কক্ষ হইতে বের হইতেই দেখি বন্ধু আমার খাবার ঘরে বসে আছে । অন্ন গ্রহণ করিয়া তাহার সহিত ভ্রমণে বের হইলাম । পকেটে ফুটকা আছে কি না তাহা জিজ্ঞাসা করিলে জানতে পারি যে তাহার বাবা বালিশের নিচে আজ ফুটকা রাখে নি । বাধ্য হইয়া দুই বন্ধু দোকানে গিয়া রাজা ফুটকা চাইলাম । দোকানদার মুচকি হেসে দুই জোড়া প্যাকেট ধরিয়ে দিলো । মনের খুশীতে বাড়ি ফিরিয়ে ফুটকা নিয়া খেলিতে লাগিলুম ।
ফুটকা সাবান পানিতে ধৌত করন পূর্বক খেলিতে হইত । আমি ফুটকা ফুলাইয়া বন্ধুর কাছে দিতাম , সে সুতলি বেঁধে আসমানে উড়াইতো । ফুটকা ফুলাইতে ফুলাইতে ক্লান্ত হওয়া পূর্বক একবার আমার মুখ ফসকে একখান ফুটকা বেরিয়ে গেলো । ‘ভ্রুউউউউউউউ’ শব্দ করিয়া ইহা আকাশে উড়িয়া গেলো । ইহা দেখিয়া আমার সরল মনে একটা কুটিল খেলার বুদ্ধি জন্মাইলো ।
উঠুনে থাকা পাটশলার ভান্ডার হইতে পোক্ত একখান শোলা নিয়া ইহাকে বেজোড় খণ্ডে কাটিলাম । মাঝের নরম অংশ বের করিয়া ইহাকে ফাঁপা নলে পরিণত করিলাম । রাজা ফুটকা ফুলিয়ে ইহার পেছন দিক শোলার এক প্রান্তে আটকে দিলাম । সুতলি দিয়ে বেঁধে পার্শ্ববর্তী খালে নামালাম । তৎক্ষণাৎ ইহা আবারো ‘’ভ্রুউউউউউউউউ’’ শব্দ করিয়া স্পীড বোট এর মতো আগাইয়া চলিলো । ফুটকা স্পীড বোট এর এহেন সাফল্য দেখিয়া একের পর এক বোট পানিতে নামানো শুরু করিলাম ।
জ্ঞানীজন কহেন , সুখের সময় গুলো দ্রুত চলিয়া যায় । বেঁধে রাখা দুষ্কর । আমার সুখের সময় ওঃ শেষ হইয়া আসিলো । বন্ধু হইতে বিদায় লয়া পূর্বক গ্রামের বাড়ি ত্যাগ করিলাম । আসার সময় সে বন্ধুত্বের চিহ্ন বাবদ কয়েকটা ফুটকা হাতে গছিয়ে দিলো ।
বাসায় আসিলাম । সময় কাটিতে চায় না । এখানে ডোবা নাই । খাল নাই । পুকুর নাই । ফুটকা বোট বানাইতে পারতেছিনা । সুতলি দিয়া বাধিয়া আসমানে উড়াইয়া উড়াইয়া খেলিতে লাগিলাম ।
দ্রত ফুরাইয়া আইল ফুটকা ভান্ডার । এক সময় তাহা শূন্যে গিয়ে দাঁড়ালো । ফুটকার জন্যে মন আনচান করিতে লাগিলো । কিন্তু ফুটকার খোঁজ নাই । চরম ভাবে রাজা ফুটকা খরায় ভুগিতে লাগিলাম ।
কিছুকাল পরের কথা ।
চাচাতো ভাই সদ্য বিবাহ করিয়াছেন । দাওয়াত পাইয়া উনার বাসায় গেলুম । রাত বেশি হইয়া যাওয়ার দরুণ উনার বাসায় থাকতে বাধ্য হইলাম । পরদিন সকালে নাস্তা গ্রহণ করার সময় ভাইজান কে ডাকিতে গেলাম । ভাইজান রুমে নাই কিন্তু বিছানার উপর একখান সাদা নীল প্যাকেট আমার দৃষ্টি চরম ভাবে আকর্ষণ করিলো । প্যাকেট খুলিয়া তড়িঘড়ি করে খুলিলাম । দেখি আমার অতীত জীবনের ফুটকা । প্যাকেট উপুড় করিতেই একখান কাগজ বের হইয়া আসিলো । জিঘাংসার দরুণ কাগজ খুলিয়া পড়িতে লাগিলাম । প্রতিটা লাইন পড়িবার সাথে সাথে আমি প্রকম্পিত হইতেছিলাম এবং এতকাল আমি ফুটকা নামক বস্তু দিয়া কি কি করিয়াছি , কই কই মুখ দিয়াছি ভেবে ভেবে শিউরে উঠতে লাগলাম ।
ছোট বাংলা হরফের লেখার সাথে ছবি মিলিয়া পড়িতে পড়িতে আমার গা ঘিন ঘিন করিতে লাগিলো । দৌড়ে বাথরুমে এসে গড়্গড়ি দিলাম ।
গত কল্যের কথা ।
আমার ভাবী তথা আমার চাচাতো ভাইয়ের বউ প্রবল জ্বরে আক্রান্ত । ভাইজান বাড়িতে নাই । আমাকে ডেকে পাঠানো হল ভাবীসাবকে পাহারা দিতে । বাসায় গিয়ে দেখি ভাবী বিছানায় শুয়ে আছেন । কপালে হাত দিয়ে দেখি আগুণ গরম । দৌড়ে গেলুম ওষুধ নিয়ে আসার জনিনে । দোকানে মানুষের ভিড়ে দাঁড়ানোর ঠাই নাই । ভিড় ঠেলে দোকানীর বাড়িয়ে দেওয়া ওষুধ এর বাদামী প্যাকেট হাতে নিয়ে বাসায় পৌছালাম । ভাবীর হাতে দিয়া বলিলাম ‘ভাবী , জ্বর তো বেশি । এখন একটা নেন , আর রাতে আরেকটা । পানির গ্লাস হাতে দিয়া আমি অন্য রুমে চলিয়া গেলাম । ৫ মিনিটের মধ্যে আবার ডাক পড়িলো । ভাবীর কক্ষে গিয়া দেখি ভাবী ভ্যাবলার মতো তাকাইয়া আছেন । কহিলাম , ‘’ভাবী , কি হইছে ? ‘’
ভাবী কইলেন ‘’ তুমি এটা কি এনেছ ‘’ ।
‘’ ওষুধ আনছি ভাবী ‘’।
‘ কি ওষুধ ? ‘’ ।
‘’ জ্বর এর ওষুধ ‘’ ,
‘’ তাই ? দ্যাখো তো ‘’ বাদামী প্যাকেটটা বারাইয়া ধরিলেন । উনার হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে ভেতরে উঁকি দিতেই বুকটা ধুপ করে উঠলো । সাথে সাথে প্যাকেট বন্ধ করিয়া দোকানের দিকে উলটো পা হাঁটা ধরলাম । গাধা দোকানী আমাকে জ্বর এর ওষুধ না দিয়ে কনডমের প্যাকেট ধরিয়ে দিয়েছে ।
উপরিক্ত লেখা পঠিত হওয়ার মাধ্যমে আমরা জানিতে পারিলাম যে গর্ভনিরোধন খাপ শুধু মাত্র গর্ভ নিরোধক হিসেবেই নয় , শিশুদের চিত্তবিনোদন , খেলনা স্পীড বোট হিসেবেও ব্যবহার করা যাইতে পারে ।
গর্ভ নিরোধক আর বড়দের চিত্তবিনোদনের বস্তু নহে । ছোট বড় সবার সমান অধিকার ।
এতক্ষণ আপনারা যাহা পড়িয়াছেন তাহা সত্য ঘটনার আলোকে লিখিত । একদম টাটকা পোস্ট কারণ মাত্র ই লিখিলাম । ইহা প্রথম কিস্তি হিসেবে প্রকাশিত হইয়াছে । শিরোনামের সাথে মিল না পাওয়া গেলে লেখক দায়ী নহে । সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণে উদ্ভুত গুরুচণ্ডালী দোষ মস্তিষ্ক প্রসূত । জীবিত , মৃত বা ভবিষ্যতে জন্মগ্রহণ করিবে এমন কাহারো সাথে কোন কিছু মিলিয়া গেলে লেখক দায়ী নহে ।
দ্বিতীয় পর্ব - ।। ” গর্ভনিরোধক খাপ” এবং আমেরিকান খাপের রেডিয়াম প্রযুক্তিতে বাঙালির সর্বনাশ ।।
স্বদিচ্ছা এবং সময়ের সমন্বয় করিতে পারিলে পড়িয়া আসিতে পারেন
১. গরম মশলা রিভিউ
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১২ ভোর ৪:৪২