আমি একটা বাগান বানাবো। যার নাম দিবো স্বর্গোদ্যান। বাগানে থাকবে না কোন বেষ্টন। সমস্ত বাগানের প্রাচীর হবে কাশফুল এর গাছ দিয়ে।
সারা বছর থাকবে সেখানে সবুজ খড়ের পালা কিন্তু শরৎ এর দিনে সেই কাশবনে ফুটবে সাদা সাদা কাশফুল। শিহরণ জাগাবে বাতাসের সাথে সাথে। টুকরো টুকরো কাশফুল ভেসে বেড়াবে আমার সারা বাগানময়।
আমার বাগানে থাকবে শুধু দুটো কাঠের বেদী। একটি আমাদের দুইজনের জন্য আর অন্যটি শুধু আমার জন্য।
আমাদের বেদীতে বসবো আমরা দুজন। দুইজনে দুইজনার হাত ধরে নয় কিম্বা কোন আলতো স্পর্শ করে না। আমরা বসবো আমাদের সেই চিরাচরিত রুপে। ভেংচি কাটা, অদ্ভূত সব নামে ডাকার সেই মন নিয়ে।
এই বেদীর পিছনে থাকবে ছোট্ট একটা কচুরিপানার ডোবা। মাঝে মাঝে ওকে বলবো “একটা কচুরিপানার ফুল এনে দাও”
যদিও জানি এটা শোনার সাথে সাথে উত্তর আসবে “তোমার জন্য আমি এখন ঐ কচুরিপানার ফুল আনবো !! পারতাম না, নিজে আনো।”
এরপর কয়টা অদ্ভুত সব নামে ডাকবে, ভেংচি কাটবে তারপর ঠিকই এনে দেবে।
এই বেদী থেকে অনেক দূরে আর একটা বেদী থাকবে যেটা শুধু আমার জন্য। সেই বেদীতে বসে, এই আমি আমার আমি কে অবিস্কার করবো প্রতিদিন নতুন করে। সেখান থেকে আমি ঘ্রাণ নিবো হয়তো কারো বাগানের অবহেলায় ঝরে পরা গোলাপের পাপড়ির।
বেদীর সামনে থাকবে একটা পদ্মফুলের ছোট্ট পুকুর। বাতাসের আনাগোনা, পদ্মফুলের হেলে পড়া, পানি পোকার মাতামাতি এই সব আমি দেখবো বেদীতে বসে। দুটো ব্যাঙ থাকবে এই পদ্মফুলের ছোট্ট পুকুর। ব্যাঙের গ্যাঙর গ্যাঙ শোনার জন্য কান পেতে রইবো বেদীতে বসার সময় থেকে।
এই বেদী হবে আমার অভিমানী মনের চরণ ভুমি। সুখের প্রাপ্তি, পাওয়া না পাওয়ার খেলা, হারানোর বেদনা, জীবনের মায়া এই সব কিছুর হিসাব কষবো এই বেদীতে বসে।
কখনও কখনও আমার চোখের কোণে জমবে রংহীন জলরেখা। তবে সেই রংহীন জলরেখা উৎস কষ্ট হবে না। হবে জমে থাকা অভিমানের কারন।
আমি বড্ড অভিমানী একজন মানুষ। আমি অভিমান জমিয়ে রাখি একটু একটু করে। এক সময় সেই জমে থাকা অভিমান গুলো দানা বাঁধে। এরপর পাথর হয়ে মনে জায়গা করে নেয়। আমার মনের অভিমান গুলো জমে জমে পাথর হয়ে গেছে। এই পাথর এখন আর আমি চাইলে ও সরাতে পারবো না। ঘাঁটি বেঁধে আছে এই আমার মনে।
আমি একটা বাগান বানাবো, যার নাম রাখবো স্বর্গোদ্যান।
আমার বাগানের ঠিক মাঝে থাকবে একটা ছোট্ট কাঁদার মাঠ। সেই মাঠে দাঁড়িয়ে আমি বৃষ্টিতে ভিজবো, বাউন্ডলে রমণীদের মত করে। কাঁদায় লেপ্টে নিবো সেই বৃষ্টিতে ভেজার স্বাদ। যে স্বাদ এখনও নেওয়া হয়নি।
বাগানে ঢোকার মুখে প্রথমেই পড়বে দুটি গাছ। ডান পাশে গাছটা হবে কৃষ্ণচুড়া আর বাম পাশে গাছটা হবে সোনালু। বাগানে সবাই আসবে নগ্ন পায়ে। তবে বাগানে আসার আগে পাদুকা জোড়া অবশ্যয় রেখে আস্তে হবে কৃষ্ণচুড়া আর সোনালু গাছের নিচে।
বাগান থেকে যখন সবাই বের হবে আর দেখবে পাদুকা জোড়া উপর লাল আর হলুদ ফুলের আস্তরণ তখন সবার মনের কি হাল হবে সেটা আমরা এখনি কল্পনা করতে পারি।
পাদুকা জোড়া কে এমন করে ফুলের আলিঙ্গন হয়তো নতুন কোন মাত্র যোগ করবে কারো জীবনে। এই রঙিন ফুলের স্তর হয়তো আবার ও কাওকে নতুন করে ভালবাসতে শেখাবে, কিম্বা ভালবাসা শেখাবে।
--- চলবে
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৮