চম্পাকলি ফুলেফেঁপে গজগজ করছে স্বামীর গায়ে বাতাস করতে করতে। রাতের এই ভ্যাঁপসা গরমে মধ্যে গবগব করে ঘামছে নিজে কিন্তু তারপর ও স্বামী কে তাল পাখার বাতাস করতে হচ্ছে তার। চম্পাকলি ব্যাপার টা কোন ভাবে হজম করতে পারছে না, যে স্বামী নাক ডেকে ঘুমাবে আর সে শুয়ে বসে বাতাস করবে সারা রাত।
চম্পাকলির জান পুরাই কয়লাখনি বানিয়ে দিয়েছে তার স্বামী। কোন কিছু নিয়ে তার মাথা ব্যথা নেই তাই তাকে মাঝে মাঝে একটু অধটু টাইট দেয় চম্পাকলি অতিষ্ঠ হয়ে।
চম্পাকলি খুব বিখ্যাত তার স্বামীরর কাছে, দজ্জাল বউ হিসাবে। তবে তার সেই দজ্জাল রুপ শুধু মাত্র দেখতে পায় তার স্বামী। তার স্বামী বহুত কাকুতি মিনতি করে ও কখনও তাকে সবার সামনে প্রমান করতে পারেনি যে, সে খারাপ বউ। এমন কি তার শাশুড়ি পর্যন্ত এটা মানতে নারাজ যে তার ছেলের বউ খারাপ।
চম্পাকলি কিছুখন পাখা দিয়ে বাতাস করার পর একটা বুদ্ধি আটলো স্বামীকে শায়েস্তা করার জন্য। কারন তার অবহেলার কারনে শুধু মাত্র এই বাড়ীতে কারেন্ট আসছে না। চম্পাকলি হাতের পাখার ডাটি দিয়ে তার স্বামীর পায়ের তলায় কসে দিলো একটা কশান। সাধের আরামের ঘুমের মধ্যে এমন ব্যাথা পেয়ে কাঁচুমাচু করতে করতে ঘুম থেকে ঠেলে উঠলো বেচারা চম্পাকলির স্বামী। চম্পাকলি জানে তার স্বামী সরল মনের মানুষ আর একটু শক্ত করে ধরে ঝাঁকালে কলকল করে সব সত্যি কথা বলে দেবে। আর এখন সে এই সুযোগটা কাজে লাগেবে, এটা সে আগেই ভেবে নিয়েছে।
-তুমি আজ দুপুরবেলা বাজারে কি খেয়েছিলে?
ব্যাথা কু- কু করতে করতে স্বামী বেচারা বলল
- এই মাঝ রাতে মেরেধরে এই প্রশ্ন কোন করছিস তুই?
- ধান বিক্রি করা টাকা দিয়ে যে আজ বাজারে বিরিয়ানি খেয়েছো সেটা জানে আম্মা?
স্বামী বেচারা আমতাআমতা করে বলল- না।
চম্পাকলি এবার রাক্ষসির মত চোখ বড় বড় আর খামচি দিয়ে তার হাত ধরে বলল- এখন যদি আমি আম্মা কে কথাটা বলি তাহলে কি হবে বুঝতে পারছো?
স্বামী বেচারার প্রাণ এবার বধ হবার জোগাড় হল...
- না না... তুই বলিস না। মা তাহলে আমাকে কাঁচা কুঞ্চি দিয়ে পিটাবে।
- ঠিক আছে বলবো না তাহলে, যদি তুমি এখন আমাকে বাতাস করো। আর ফজরের আজান পর্যন্ত তুমি বাতাস করবা। এরপর আমি ঘুম থেকে উঠে বাতাস করবো তোমাকে।
বোকা স্বামী বলে উঠলো আজানের পর তো সব জানালা দরজা খুলে দিস। তখন তো আর বাতাস করা লাগে না।
দজ্জাল চম্পাকলি পাখার ডাটি দিয়ে আর একটা কশান দিয়ে বসলো তার স্বামী হাতের উপর আর বলল
- তখন কি করতে হয় সেটা আমি বুঝবোনে। কথা না মানলে কিন্তু এখনি আম্মা কাছে গিয়ে সব বলে দিবো। তখন বুঝবে মজা কাকে বলে। আম্মাকে না জানিয়ে ধান বেচা টাকা দিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ার মজা।
স্বামী বেচারা জানে তার মা তার বউ এর থেকে ও অনেক বেশি শক্ত। আর তার মা এই বয়সে ও তাকে মারতে দ্বিধা করবে না বিনা কাজে টাকা খরচ করার জন্য।
বেচারা স্বামী বুঝলো আবার ও সে চম্পাকলির বুদ্ধির কাছে সে হেরে গেল আর অত্যাচারের স্বীকার হল। তবে সে কোন ভাবে বুঝতে পারছে না সে কি ভাবে বুঝলো যে "আমি বাজার থেকে বিরিয়ানি খেয়ে এসেছি"। আমি তো তাকে বলিনি !?"
এখন আর বউ এর কথা না মেনে বিপদে পড়তে হবে আর সেই বিপদের নাম "মায়ের হাতের কাঁচা কুঞ্চির কশান"। আর তার মায়ের পক্ষে এই বয়সে ছেলে কে পেটানো অসম্ভব কিছু না।
বেচারা স্বামী তার বউ এর কাছে খুব নরম সুরে প্রশ্ন করলো "বউ তুই বুঝলি কিভাবে আমি বাজার থেকে বিরিয়ানি খেয়ে এসেছি ? আমি তো তোকে কিছু বলিনি ? "
চম্পাকলি কোন উত্তর করলো না শুধু বড় বড় চোখ করে আলাভোলা স্বামী কে শাসালো। চম্পাকলি পাখাটা স্বামীর হাতে গুজে দিয়ে শুয়ে পড়লো আর মুখ লুকিয়ে হাসতে লাগলো বিজয়ের হাসি। আর মনে মনে বলতে লাগলো "আরে বোকা খাওয়ার সময় এখানে ওখানে দাগ লাগালে কে না বুঝবে, আর দাগের সাথে তো কিছু টা হলে ও থাকে বিরিয়ানির ঘ্রাণ "
স্বামী বেচারা পাখা হাতে নিয়ে বাতাস করতে করতে চিন্তায় অস্তির, কিভাবে জানলো তার বউ এই গোপন খবর ? বউ এর ঘাড়ে আবার জিন-টিন আছে নাকি, যে খবর দিয়ে গেছে ?
অন্যদিকে চম্পাকলি আলাভোলা স্বামীকে চিন্তায় ফেলে নিশ্চিন্তে ফোস ফোস করে নাক ডাকে ঘুমাত লাগলো।
আর বেচারা স্বামী ঘুমিয়ে-ঘুমিয়ে ঝিমিয়ে-ঝিমিয়ে তার দজ্জাল বউ কে বাতাস করতে লাগলো ও চিন্তা করে বের করতে লাগলো কিভাবে বউ এই গোপন খবর জানলো।
-----
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৯