somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অর্বাচীন পথিক
https://www.facebook.com/fresh.wayfarer nলেখার কোন অংশ লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা যাবে না। বানান ভুল পাওয়া যেতে পারে এর জন্য আগে থেকেই ক্ষমা চাই । ভুল বানান গুলো ধরিয়ে দিতে সাহায্য করলে সেটা ঠিক করে দেওয়া হবে। (ব্লগের লিংক ফেসবুক শেয়ার করা

অসম (ছোট গল্প)

১২ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ রমনার চিরাচরিত চঞ্চল আর প্রাণবন্ত রুপটা যেন নেই। গাছগুলো কে অনেক বেশি হিজিবিজি আর বেমানান মনে হচ্ছে নয়লির কাছে। নয়লি ঠিক যে বেঞ্চয়ে বসে আছে; তাঁর সামনে একটা বিশাল কাঞ্চন গাছ। আর সেই গাছ জুড়ে ধরে আছে থোকা থোকা সাদা কাঞ্চন ফুল। তবে তাঁর কাছে এই সাদা কাঞ্চন ফুলের সাদা রং টা খুব চোখে লাগছে, এই ক্যাঁটকেটে রোদের জন্য। মাঝে মাঝে চোখ জোড়া জ্বলে যাচ্ছে নয়লির, সেই সাদা কাঞ্চন ফুলের চোখ ঝলসানোর উৎপাতে।

পায়ের কাছের ঘাস গুলো কে একে বারে ন্যাড়া মনে হচ্ছে তাঁর। মনে হচ্ছে কেউ যেন খাবলে উঠিয়ে নিয়েছে সবুজ ঘাস গুলো কে। নয়লি যে বেঞ্চয়ে বসে আছে তাঁর ঠিক পিছনে পার্কের কর্মচারীরা ঘাস কাটতে লেগেছে কিছুখন আগে থেকে। কাঁচা ঘাসের ঘ্রাণ তার খুব ভাল লাগে কিন্তু আজ খুব উটকো লাগছে ঘ্রাণ। এক কথায় বলা যায় এ সব কিছু খুব অসহ্য লাগছে নয়লির কাছে।

নয়লির পাশে বসে আছে অনঘ। আর সে এখন নয়লি এর কাছে দুনিয়ার শ্রেস্ট অপরাধী। শুধু যে অপরাধী তা নয় ঘৃণার পাত্র ও বটে।

নয়লি একে বারে কাকের মত কর্কশে গলায় আর ভাব বাচ্যে বলে উঠলো অনঘ কে উদ্দেশ্য করে
- কি প্রয়োজনের আমাকে এইখানে আসতে বলা হয়েছিল ? আমি কি সেটা জানতে পারি ?
- তুমি এই ভাবে কথা বলো না আমার সাথে ? প্লিজ নয়লি
- তো, কি ভাবে কথা বলতে হবে আমাকে ?
- আমি তো বলেছি আমার ভুল হয়েছে। আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি ডল-টা।

- এই সব মুখের কথায় আর চিড়া ভিজবে না কখনও। আমি আর তোমার সাথে কেন সম্পর্ক রাখতে চাই না। তোমার যা খুশি তুমি তাই করতে পারো। আর ফ্যাস ফ্যাস করে কেঁদে ও কেন লাভ হবে না। আর যাই হোক তাতে আমার মন গলবে না এটা জেনে রেখো।

- এই ভাবে আমাকে শাস্তি দিয়ো না প্লিজ। আমাকে ক্ষমা করবে না তুমি ? আমি তো স্বীকার করেছি, আমি মিথ্যা বলেছি তোমাকে।

- যে মিথ্যা বলেছ সেটা কি বলার মত ছিল। আর যাই হোক সেটা মশকরা করার মত ব্যাপার ছিল না। তুমি জানতে আমি তোমার তিন বছরের বড়, আর তুমি !! সুন্দর করে বানিয়ে বানিয়ে বলেছিলে তুমি আমার সমবয়সী। এটা কি মশকরা করার মত কোন ব্যাপার ছিল !! ? আর যদি আমি সত্যিটা জানতাম তাহলে কখন ও তোমার সাথে কোন সম্পর্কে জড়াতাম না। কারন আমাকে সমাজে থাকতে হবে আর এই অসম বয়সী সম্পর্ক কেউ ভাল চোখে দেখে না। সবাই আমার দিকে আঙুল তুলে বলবে "দেখো দেখো নয়লি একটা কচি ছেলের মাথা চিবিয়ে খাচ্ছে"।

- প্লিজ এই ভাবে বলো না। আমি জানি, আমি ভুল করেছি। তোমাকে তো আমি সত্যি বলেছি, প্রথমে বিষয়টা মজা করে বলে ছিলাম; যে আমি তোমার সমবয়সী। কিন্তু যখন বুঝতে পারলাম, আমি সত্যি সত্যি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি তখন আর সাহস হয়নি তোমাকে সত্যিটা বলার। কারন আমি তোমাকে যত খানি চিনেছি সেটাতে নিশ্চত ছিলাম, সত্যি জানার পর তুমি আর আমার সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে চাইবে না। আর সেই ভয়ে আমি এতদিন তোমাকে কিছু বলিনি। কারন আমি তোমাকে হারাতে চাই না।
সত্যি বলছি নয়লি, আমি তোমাকে খুব ভালবাসি।

নয়লি এবার আর ও কঠিন আর রুক্ষ হয়ে বললো - যে সম্পর্কের সুচনা মিথ্যা দিয়ে সেই সম্পর্ক কে আর যাই হোক; আমার পক্ষে আর বিশ্বাস করা সম্ভব না।

অনঘ এর মনটা একেবারে দমে গেলো; নয়লির এই কঠিন কথা শুনে। সাথে মাথাটা ও ঝিমঝিম করতে লাগলো। আবার ও হতাশা আর হারানের ভয় তাকে গ্রাস করতে শুরু করলো মুহূর্তের মধ্যে। যেন কেউ তাকে অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে প্রচণ্ড গতিতে,এই এক নিমেষে মধ্যে। ঠিক এই হারানের ভয়ে এত দিন নয়লির সাথে মিথ্যা অভিনয় করেছিল সে বয়স নিয়ে। আর আজ, সেই অন্ধকারেই তলিয়ে যাচ্ছে তাদের সম্পর্ক। এক পলকে ভালবাসা চলে এসেছে শূন্যের কোঠায়। আর বিশ্বাস, সেটার আর কোন মুল্য নেই এখন নয়লির কাছে। কারন সে নিজের হাতে সে পথ ধ্বংস করেছে।

নয়লির কথা শেষ হবার কয়েক মুহূর্ত পর অনঘ বলে উঠলো ''বেশ, এইটাই যদি তোমার শেষ কথা আর সিধান্ত হয় তাহলে আমি আর কি বললো"। শুধু তোমাকে এইটুকু বলতে চাই "হ্যাঁ এটা ঠিক, শুরুটা মিথ্যা ছিল কিন্তু আমার ভালবাসা মিথ্যা ছিল না। আর সমাজের কথা বললে তুমি ; সমাজ মানুষ সৃষ্টি করে। সমাজে এমন অনেক অসমবয়সী বিবাহিত দম্পতি আছে, যার দিব্বি সংসার করছে। আর তাঁরা যদি পারে তাহলে আমরা কেন পারবো না ?।'

তোমার কাছে আমার শেষ অনুরোধ "আমাকে ছেড়ে তুমি চলে যেও না...... প্লিজ"
অনঘ এর কথা শেষ হবার পর নয়লি এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে বলে উঠলো
- আমি স্বাভাবিক জীবন চাই। কোন ব্যতিক্রম জীবন আমার পছন্দ না। আর সমাজের অসম-বয়সী সম্পর্ক কে ব্যতিক্রমী ঘটনা মনে করা হয়। আর ঐ সব বিবাহিত দম্পতিদের আঁড় চোখে দেখা হয়। আমি আর আট-দশটা মানুষের মত জীবন চাই।
তোমার কাছে ও আমার একমাত্র আর শেষ অনুরোধ; দয়া করে আমার সাথে আর দেখা করার চেষ্টা করো না। আমার জীবন থেকে তুমি সরে দাঁড়াও।

কথা শেষ হওয়া মাত্র নয়লি উঠে দাঁড়ালো আর রমনার কংক্রিটের রাস্তা ধরে হনহন করে হেঁটে যেতে লাগলো। অনঘ ও উঠে দাঁড়িয়ে ছিল নয়লির দেখা দেখি কিন্তু নয়লি রুক্ষ কন্ঠে বলে গেছে যাবার সময় "আমি বেরিয়ে যাবার পর তুমি বের হবে, আমার সাথে না।"
অনঘ তাকিয়ে রইল নয়লি চলে যাবার পথের দিকে। সে একবার ও পিছনে ফিরে তাকাবে না এটা জানে অনঘ। কিন্তু তাঁর পরও অনঘ তাকিয়ে রইল নয়লির চলে যাওয়া পথের দিকে।

অনঘের মনে বার বার একটা চিন্তাই ঘুরপাঁক খেতে লাগলো "ও কি একা একা রাস্তা চিনে বের হতে পারবে রমনার থেকে ? ও তো কখনও একা একা রমনার থেকে বের হয়নি"


জীবনের সব ছক নিজের ইচ্ছা মত কাটা যাই না। নয়লির জীবনে ও ঠিক সেই রকম কিছু ঘটে ছিল। নয়লি চেয়ে ছিল অনঘ এর সাথে কোন সম্পর্ক রাখবে না আর সে ব্যতিক্রম সম্পর্ক চাই না কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি। নয়লি এই সম্পর্ক না রাখতে চাওয়ার ঘোষণার পরের রাতে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে অনঘ। এক পর্যায়ে তাকে ঘরের দরজা ভেঙ্গে বের করতে হয় আর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় জরুরী ভিত্তিতে। অতঃপর অনঘ এর বন্ধুদের অনুরোধে তাকে দেখতে যাওয়া নয়লির আর আবার ও নতুন করে তার প্রেমে পড়া। শেষমেষ আবার ও দুজনে তাদের ভুল গুলো শুধরে নতুন করে একসাথে পথ চলার প্রতিঙ্গা করে।
এবং অনেক চড়ায় উৎরাই পেরিয়ে আর নিন্দুকদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অবশেষে তাঁরা বিয়ে করে পাঁচ বছর পর দুই পরিবারের সম্মতি ক্রমে।

স্বর্গীয় প্রেম হয়তো এমনই নয়। মানে না কোন বাঁধা, মানে না সমাজের প্রচলিত নিয়ম আর বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না বয়সের পার্থক্য। আর তাই হয়তো ভালবাসা অমরত্ব নিয়ে এসেছে এই ধরাধামে সকলের জন্য।

আমার Facebook Page : Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:৩৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×