ঘটনা প্রবাহ-১
স্টাইল অ্যান্ড ফ্যাশন থেকে কেনা অ্যান্টিক ডিজাইনের থ্রি-পিসটা পড়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজেকে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে দেখতে লাগল সায়না। কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে । মা এই পরিবর্তনটা ধরে ফেলল নাকি কে জানে! ধরলে ধরুকগা! আজ স্বপ্নাতুর এর সাথে বাঁধের ধারে হাঁটতে যাবে সে। অদ্ভুত ভাল লাগায় তার মন আচ্ছন্ন। বের হওয়ার সময় মা’কে মিথ্যা বলল। বান্ধবীর জন্মদিনে যাচ্ছে, সন্ধার আগেই ফিরবে। আলসেটা টাইমলি আসলেই হয়। যে অলসের অলস! প্রেমিক সম্পর্কে এসব চিন্তা করতে করতে লজ্জায় তার মুখ লাল হয়ে এল।
বাঁধের কাছে পৌঁছে রিক্সায় বসেই সায়নার উৎসুক চোখ দুটি খুঁজতে লাগল স্বপ্নাতুরকে। কিন্তু নাহ! তার টিকিটারও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। রিকশাওয়ালা তাড়া দিতে লাগল। “আফা আরও ভড়া খাডন লাগবো। বইসা থাকলে তো আমগো পেট চলবো না। তাড়াতাড়ি ভড়াডা দিয়া বিদায় করেন’’। লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি পার্স থেকে টাকা বের করে ভাড়া মিটিয়ে দিল সায়না।
হেঁটে একটু সামনে এগিয়ে এসে রিস্টওয়াচে টাইম দেখল,৪.২৯। বাঁধে বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন শ্রেনীর লোক-সমাগম, কিছু জুটিও দেখা যাচ্ছে। সবাই একবার করে তাকাচ্ছে তার দিকে। সবগুলো চোখ যেন সায়নাকেই দেখছে। কিছু বখাটে ছেলে শিষ দিতে দিতে যাচ্ছিল। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একগাদা অশ্লীল মন্তব্য ছুঁড়ে দিল তার দিকে। কিছু কিছু কথা সায়নার কানে আসতে লাগল। “ও জামাল, জিগাত কত?’’ সব কয়টি ছেলে একযোগে হাসতে লাগল, যেন খুব মজার কিছু একটা ঘটেছে। ঘৃণায় সায়নার শরীর রি রি করে উঠল। মেয়েরা একাকি দাঁড়িয়ে থাকলেই ছেলেরা বিভিন্ন কটূক্তি করে! সেখানে সে ত রীতিমত সেজে গুজে এসেছে। এই অসহ্য পরিস্থিতি আজ পর্যন্ত বোঝানো গেল না স্বপ্নাতুরকে। ছেলেরা সব এরকমই! কিছু বললেই এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দেয়, কিংবা হেসে উড়িয়ে দেয়।
সহ্যের বাঁধ ভেঙ্গে যেত লাগল সায়নার। তার বিনে সুতোয় বাঁধা স্বপ্নগুলো অদূরে ধূমপায়ীদের সিগারেটের ধোঁয়ায় কুন্ডলী পাকিয়ে যাচ্ছে। এরকম একটা ইরেসপন্সিবল ছেলের সাথে সম্পর্ক রাখার কোন মানে হয় না। একসময় ডিসিশন নিল চলে যাবে। উঠতে যাবে,এই সময় দেখতে পেল তার খুব পরিচিত একটি সাইকেল। বেপরোয়া চালক দুর্বার গতিতে তার দিকে ছুটে আসছে। সায়নার ভয় করতে লাগল যে কোন সময় এক্সিডেন্ট হয়ে যেতে পারে। চিন্তা করেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল তার।
ঘটনা প্রবাহ-২
দেরি করাটা আমার একটা মুদ্রা দোষে পরিণত হয়েছে। ক্লাস ৯.৩০ এ হলে আমার ১০ মিনিট লেট হয়। ১২.৩০ এ হলেও আমি সেই ১০ মিনিটই লেট। তবে আমার চেয়েও দেরিতে দু এক জন আসে বলেই লেটলতিফ তকমাটা এখনও আমাকে ছুঁতে পারে নি। যে দুইটা কাজে আমি টাইমলি অ্যাটেন্ড করি তার একটা টিউশনি, আরেকটা সায়নার সাথে দেখা করা।
কিন্তু আজ বিধিবাম। মোবাইলে অ্যালার্ম দেয়া ছিল ৪ টায়, বেজে বেজে বন্ধ হয়ে গেছে। রুমমেটরা সব যে যার কাজে বেড়িয়ে গেছে, ফলে ডেকে দেয়ার কেউ নেই। উঠে দেখি ৪.৩০ বাজে। সর্বনাশ! ৪.৩০ এ সায়নার সাথে দেখা করার কথা। ফোন করে যে একটু জানাব, আমার প্রেমিকার তো আবার মোবাইল ই নেই। এই যুগে রিকশাওয়ালারও মোবাইল আছে! মনে মনে হবু শশুরকে কিছু গালিগালাজ দিলাম। জিন্স পড়েই শুয়েছিলাম। লাফ দিয়ে উঠে কোন রকম শার্টটা মাথা গলিয়ে দিচক্র যান নিয়ে রওনা হলাম। উপর ওয়ালাই জানেন আজ কি আছে কপালে।
ঘটনা প্রবাহ-৩
দুজন পাশাপাশি বসে আছি। সায়না ভীষণ রকম রেগে আছে। আমি বুঝতে পারছি না কি করা উচিত। রেগে যাওয়া প্রেমিকাকে কিভাবে শান্ত করতে হয় তা আমার জানা নেই। আমি তার প্রতিটি প্রশ্নের জবাব হেসে হেসে দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার হাসি পরিবেশনটা যথার্থ হচ্ছে না বুঝতে পারছি, কারণ সায়নার রাগ কমছে না। আমার হাসিটা হচ্ছে অসহায়ত্বের হাসি, শীতকালে ফেটে যাওয়া ঠোঁটের বিবর্ণ হাসি।
আমার মা জন্মের পর থেকে আমাকে হাসি শেখানোর অনেক চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পারেন নি। আমার মায়ের চেহারা এবং হাসি দুটোই অনেক সুন্দর। যার একটিও আমি পাই নি। এখানে অবশ্য সাইকোলজির একটা ব্যাপার আছে। আমি সেটাই সায়নার উপর অ্যাপ্লাই করার চেষ্টা করছি। হাসিটা এখানে জাস্ট একটা মিডিয়া।
আপনাদের কি মনে হয়? সায়না কি এক সময় হেসে উঠবে? ভালবাসার বাঁধ ভাঙ্গা হাসি.........
[ উৎসর্গঃ বাংলা ব্লগিং জগতের অন্যতম নক্ষত্র, আমার অত্যন্ত প্রিয় ইমন জুবায়ের ভাই ]
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৬