গোলাপ বিষয়ক রহস্য এবং অমীমাংসিত নীল পরীগণ
ইশকুল পলাতক বালক পাঁচিল ডিঙ্গিয়ে দ্যাখে পাখিদের সমাবেশ।
"গোলাপ বিষয়ক রহস্য এবং অমীমাংসিত নীল পরীগণ"- মুখবন্ধ পাঠ।
টিফিনের পয়সায় একটি গোলাপ! ইটের পিরামিডে বালিকা;
লন্ঠনের আভায় বালকের পাথরঘরে রত্নের সন্ধান।
ব্যালকনিতে বালিকা একা; উন্মুখ উদাসীন।
হাওয়ার ভাঁজে বালকের চিঠি— বালিকার সুর!
বালকের বালক কথন ফুরোয় না কখনো
রিকশা যোগে বাড়ী ফেরে বালিকা তখন।
পথে দ্যাখে যায় পাখি সমাবেশে নিমগ্ন বালক
শুনছে মায়াবতীকে, স্নিগ্ধ চোখে, আয়েশী ভঙ্গিতে!
কৃষ্ণচূড়ার রাঙ্গা আলোয়, ভেবেছিলো সুখ
তখনো ভাবেনি রক্তে আছে
কোমলমতী বেহালায় হাজার ঢঙ্গের দুখ!
বিষণ্নতায় সুবেজের আলাপণ।
নিভু চাঁদের মন্থর রাত্রিরে ক্রমশ শীতল থেকে শীতলতর হয়ে
ব্যাঙের হীম রক্তে ঈষৎ সূর্যের তাপ এনে দেওয়া হাসিতে
পাতাল সেঁচে তুলে আনছে কতিপয় রূপলোবান !
আলোর পিতা- সূর্যের পলি ছড়ানোর আগেই হীমাঙ্কের নীচে
ছেঁড়া কাঁথায় আপাদমস্তক ঢেকে রাখা উদ্বাস্তু বাতাসে
ভেসে আসছে প্রিয়তম সুরের ব্যঞ্জনা; বিষণ্ণতার গান!
************************************
সক্রেটিসের বিষের পেয়ালা এবং মৃত্যুবিষয়ক
সক্রেটিস তোমার বিষের পেয়ালা হাতে নিয়ে বসে আছি
হেমলক পান করে তোমার মতো ঘরময় পায়চারী করে
এক সময় আড়ষ্ঠ পা নিয়ে হেলে পড়বো মৃত্যুর দুয়ারে!
সক্রেটিস, তোমার জীবন যেমন সত্য, যেমন ছিলে নির্ভীক
তোমার সত্য প্রচারে, প্রাণঘাতক ঈশ্বরের হাজতে
নির্বিকারভাবে যেভাবে বলে গেছো তোমার সত্য,
তোমার ধর্ম এবঙ দর্শনের কথা, অশ্লীল নগ্নতার সন্ন্যাসে।
আমার ভেতরে আমি, দেব শিশু! দেবদারু গাছের চূঁড়ায়
হুহুবাতাসে কেঁদে উঠে আকাশ মিশ্রিত পাতারা! ঝরে পড়ে
বেদনার শুকনো ডাল! সক্রেটিস, তোমাকে পালিয়ে যেতে
সোনার মোহর নিয়ে এসছিলো তোমার শিষ্যরা, এসেছিলো
তোমার মনের টেরাকোটা মুছে দিয়ে দেশান্তরিত করতে,
তোমাকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়ছিলো তারা কৃতদাস হয়ে!
শহরে শহরে ক্রন্দনের রোল তুলে তুমি মরণ বেছে নিলে
তোমার সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে গেলে; তোমার খুলির কসম,
তোমার সেই খুলিতে নিখাদ বিষ হেমলক ঢেলে, আমিও
তোমার পথ বেছে নেবো; মরণ পথ ধরবো, মিথ্যার
আশ্রয় নিইনি। প্রাণের ওষ্ঠে, প্রাণ রেখে, একাকীত্বের সংসারে
আশ্রয়হীনতার আশ্রয় হতে চেয়ছিলাম, মৃত্যুর দরবারে!
**********************************
কবিতার ভাবনা এবং প্রিয় নামের কিছু পঙতি!
ভাবনাদের কোলজুড়ে কখনো চলে আসে কবিতা
অথবা কবিতায় লুকানো ভাবনারা ডালপালা ছড়িয়ে
হয়ে উঠে মহীরুহু; একটা রাত অথবা অনেক রাতের খোরাক
অথবা কিছুই না; কেবলই বিষণ্ণদিনে নিঃসঙ্গতার সঙ্গী।
একে আমরা নাম দেই খামখেয়ালীপনা!
হয়তো এই খামখেয়ালীপনার যুগল পদবিন্যাসে
অস্থির কিছু সময়, একান্নবতী সংসারে বারোয়ারি পদক্ষেপ,
হাতবদল কিছু সময়! মনের আয়নায় ব্যক্তিগত খতিয়ান
আর ঈশ্বর অভিমুখে ক্ষণজন্মা নিঃশ্বাসের প্রতিধ্বনি।
হয়তো আরো কিছু আছে, আরো কিছু থেকে যায়
বাদ পড়ে যায় মনের অজান্তে।
কবিতার ভাবনারা,
প্রিয়তম হাতে প্রিয় ফুলের মতো
নীলঘামে যেমন যমদূতের নাম লেখা থাকে
কপালের তিলকে যেমন লাস্যময়ী আঁধার
তেমনি কবিতার ভাবনারা আসে, যায়।
কখনো ধরা হয়, কখনো অধরার মতো উড়ে চলে যায়
ইথারের কানে কানে বলা কথোপকথন।
শুক্লপক্ষের কাল গত হলে আসে কৃষ্ণপক্ষের কাল
ঈশানের হাওয়া বদল হয় নৈঋতে
গোটা গোটা মানুষ গোটা গোটা ভাবনা
মিল অমিলের সৌন্দর্যে সাজানো হয় বাসর
তথাপি অমিলের মিলে ভাবনার কোল জুড়ে আসে কবিতা
বিষাদ সঙ্গীত, নিয়মতান্ত্রিক অনিয়মে
নিয়নের হলুদবাতি ঘুমিয়ে পড়লে অথবা ঢুলুঢুলু চোখে
তন্দ্রাছন্ন কবিতার খাতায় কয়েকটি শব্দ
প্রিয় নামের কিছু পঙতি!
*****************************
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:৫২