পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট আগামীদিনগুলোতে আরও তীব্র হতে যাচ্ছে। দেশের মূল দু'টি দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ গত দু'মাস থেকে যে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে আলোচনার জন্য চিঠিপএ চালাচালি চালিয়ে যাচ্ছিল তার অগ্রগতি থেমে গেছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অনড় অবস্থানের কারণে। যদিও রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই, তারপরেও জামাত ও মৌলবাদী চক্রকে সরকার পক্ষে আলোচনায় পাঁচ সদস্যদের মধ্যে অন্তর্ভূক্তির কারণে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন 14 দলীয় জোট সংস্কার সংলাপ প্রত্যাখ্যান করেছে।
আজকের দৈনিক ইওেফাকে বলা হয়, "...সরকারের পক্ষ থেকে শুক্রবার সংস্কার প্রস্তাব আলোচনার জন্য বিরোধী দলের কাছে জামায়াতসহ 4 দলীয় জোটের 5 সদস্যের নাম দিয়ে বিএনপি মহাসচিব যে চিঠি দিয়েছে তাতে জনগণের দাবি উপেক্ষা করা হয়েছে। জঙ্গিবাদের মদদদাতা, স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের প্রতিনিধিকে কমিটিতে অন্তভর্ুক্তির সিদ্ধান্ত তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার এর মাধ্যমে দেশ ও জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে। বিরোধী দলের দাবি অগ্রাহ্য করে জামায়াতকে সংলাপে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়ার চেষ্টা কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা রাজপথে আন্দোলন করেই সংস্কার দাবি আদায় করবো। তবে সরকারি দলের চিঠির আনুষ্ঠানিক উত্তর আমরা শিঘ্রই দেব। আব্দুল জলিল জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বলেন, এই দলটি জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত এবং স্বাধীনতা বিরোধী। এদের সাথে আমরা কোন অবস্থাতেই আলোচনায় বসতে পারি না। কারণ, জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক করা শায়খ রহমান এবং বাংলা ভাইদের সঙ্গেই বৈঠকে বসার শামিল। তিনি বলেন, দেশের মানুষ সংস্কারের প্রতি ইতিমধ্যে সমর্থন ব্যক্ত করেছে..."।
সংলাপ আর সমঝোতার মাধ্যমে অন্তবর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কাঠামো পরিবর্তনের ঐক্যবদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ সমাধান দেশের সাধারণ মানুষ একান্তভাবে কামনা করে। দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, তেল সংকট, মুদ্রার তারল্যের অভাব, জীবন-যাএার ব্যয় বৃদ্ধি আর রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সারাদেশকে অত্যন্ত অসহায় অবস্থায় ফেলে রেখেছে। আওয়ামী লীগ যদি তার 14 দলের জোটকে এককভাবে প্রতিনিধিত্ব করার মতো আস্থা ও আত্মবিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করে থাকতে পারে, তাহলে ক্ষমতাসীন চার দলীয় জোটের অবস্থা এতোই ভঙ্গুর যে তাদের শরীক দল তাদেরকে বিশ্বাস করতেও অপারগ বিএনপি'র একক প্রতিনিধিত্বের উপর। মনে রাখা উচিত যে, পাঞ্জাবীর কোণার সাথে শাড়ীর আঁচলের বন্ধন দিয়ে জোট করলে তা খুব মজবুত না হয়ে বরং খুব ঝুঁিকপূর্ণ হতে পারে। এতে জনপ্রিয় ক্ষমতাসীন দলকে খুব বেশী লজ্জাকর অবস্থায় পড়তে হতে পারে। দেশের লোকজন খুব বেশী ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। জীবণযুদ্ধে তাদের ক্রমশ: প্রান্তিকীকরণ আর মৌলবাদের বিষাক্ত ছোবল তাদেরকে রাজনৈতিক বিষয়ে অনেক বেশী সচেতন করে তুলছে। তাই একজন হাল ছেড়ে দিলে অন্যজনও তার সাথে যোগ দিয়ে নিয়তিনির্ভর ভাবনা অন্তত: জনপ্রিয় কোন সরকারের জন্য মঙ্গলকর হতে পারে না। এতোটুকু বুদ্ধিমওাও যদি বর্তমান সরকারের লোপ পায় তাহলে বলব তারা তাসের ঘর বানাতে ব্যস্ত।
"আমি হাল ছাড়লে তবে
তুমি হাল ধরবে জানি।
যা হবার আপনি হবে
মিছে এই টানাটানি।
ছেড়ে দে দেগো ছেড়ে,
নীরবে যা তুই হেরে,
যেখানে আছিস বসে
বসে থাক ভাগ্য মানি..."
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
লেখাটি আড্ডার ইংরেজী ভার্সনে পড়তে চাইলে: http://tinyurl.com/kq2r7
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০০৬ রাত ১১:২৮