সারা বিশ্বে আমরা যারা মুসলমান রয়েছি, আমরা কি আমাদের ধর্ম ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ বলে মেনে নিয়েছি? আমাদের আচার-ব্যবহার, উঠা-বসা, চাল-চলন, আমোদ-প্রমোদ ইত্যাদি কি ইসলামের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে, নাকি আমরা ইসলামের সীমাকে অতিক্রম করে ফেলছি?
কিছুদিন পূর্বে সারা বিশ্বব্যাপি পালিত হলো ২০১০ সালকে স্বাগত জানানোর উৎসব থার্টি ফাস্ট নাইট। এতে আমাদের দেশের মুসলমানসহ অন্যান্য দেশের মুসলমানগণ অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু আমরা মুসলমানরা কখনো ভেবে দেখেছি কি আমরা যেভাবে আমাদের ধর্মের সীমাকে অতিক্রম করে অন্য ধর্মের উৎসবগুলো পালন করছি, অন্য ধর্মাবলম্বীরা কি আমাদের ধর্মকে কিংবা উৎসবগুলোকে পালন করছে?
আমরা মুসলমানরা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ার জন্য প্রতিদিন মসজিদে যাই। কিন্তু কোন হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে যদি বলা হয় চলো আমার সাথে মসজিদে, নামায পড়বে! হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকটি মসজিদে যেতে অস্বীকার করবে। কিন্তু একজন মুসলমান কিন্তু ঠিকই হিন্দুদের পূজায় যায়, সেখানে ভোগ খায়। অথচ আমাদের পাশের দেশ ভারতেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মুসলমানদেরকে গরু কুরবানী করতে বাধা দিচ্ছে।
একইভাবে কোন খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীকেও মসজিদে আনা যাবে নামায পড়ার জন্য, বরং সুইজারল্যান্ডে উল্টা মসজিদে মিনার নির্মানে বাধা দেয়া হচ্ছে। এমনিভাবে কোন বিধর্মী হজ্জ করতেও যাবে না। বরং আমরা এর বিপরীত প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। আমেরিকাতে মক্কা শরীফ-এর আদলে তারা শরাবখানা নির্মান করেছে। সারা বিশ্বে নির্বিচারে মুসলমান শহীদ করা হচ্ছে, তারপরও মুসলমানরা বেখবর। নিজেদের পরিপূর্ণ দ্বীন ছেড়ে অন্য ধর্মের অনুষ্ঠান পালন করছে।
আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফ-এ ঘোষণা করেন, “আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পূর্ণ করে দিলাম এবং আমি তোমাদের দ্বীন ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট রইলাম।” (সূরা মায়িদা, আয়াতঃ ৩)
আবার হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, একদিন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট তাওরাত শরীফের একটি কপি এনে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটি তাওরাত শরীফের একটি কপি। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ করে রইলেন। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তা পড়তে আরম্ভ করলেন। আর এদিকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারক লাল হতে লাগলো। অর্থাৎ অসন্তুষ্টির ভাব ফুটে উঠলো। এটা দেখে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, হে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার জন্য আফসুস। আপনি কি দেখছেন না যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারক কি রূপ ধারণ করছে? তখন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারকের দিকে তাকালেন এবং অসন্তুষ্টির ভাব লক্ষ্য করে বললেন, আমি আল্লাহ পাক-এর অসন্তুষ্টি থেকে এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অসন্তুষ্টি থেকে আল্লাহ পাক-এর নিকট পানাহ চাচ্ছি। এবং আমরা আল্লাহ পাককে রব হিসেবে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে ও আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী হিসেবে পেয়ে খুশী হয়েছি। তখন রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সেই আল্লাহ পাক-এর কছম! যার অধিকারে আমার প্রাণ মুবারক রয়েছে, এ সময় যদি তোমাদের নিকট হযরত মুসা আলাইহিস সালাম (যার উপর তাওরাত কিতাব নাযিল হয়েছে) জাহির বা প্রকাশ হতেন আর তোমরা আমাকে ছেড়ে তাঁর অনুসরণ করতে তবুও তোমরা সরল পথ থেকে অবশ্যই বিচ্যুত অর্থাৎ গোমরাহ হয়ে যেতে। এমনকি তিনি যদি এখন হায়াতে থাকতেন আর আমাকে পেতেন তাহলে তিনিও নিশ্চয়ই আমার অনুসরণ করতেন।” (দারিমী, মিশকাত, মিরকাত)
এরপরও কি মুসলমানদের হুঁশ হবে না? তারা তাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ হিসেবে মেনে নিয়ে, তাতেই দৃঢ়চিত্ত থাকবে না? আল্লাহ্ পাক সকল মুসলমানকে পরিপূর্ণরূপে ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মানার তাওফিক দান করুন!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৯:০৫