ফেলানী, বাবার বড় আদরের নাম;
কতটুকু! তা নিশ্চয়ই কেউ জানে না?
যার চোখে মুখে ছিল
একটি পাখির বাসার মতন ঘর,
আলতা রাঙা বরণে কোমরে বিছা পেঁচিয়ে
ঘরকুঠো থেকে রান্না পর্যন্ত খেলার মতো করে সাজানো;
সকালে মোরগ ডাকে তার ঘুম ভাঙবে,
হিজলের ছায়ায় ঢেকে রাখবে সারাদিনের সকল ক্লান্তি গুলো
ছোট ছোট অভিমানগুলো থাকবে পুকুরের জলের মতো শান্ত ।
বাবা বলে ছিল, বুড়ি তোর বিয়ে দেব,
এ ভিনদেশী শহর থেকে
তার আগে আমরা বাড়ি যাব,
দিল্লীর ইটখোলার মাঝে স্বপ্নের জাল বুনা শুরু সেদিনই;
সামান্য ভাতে উদর ভরুক আর না ভরুক
মেয়েটা তো নিজের ঘরকন্না করবে।
তার এমন খুশির দিনে
পাড়ার সইরা দুষ্টমি করে তাকে কি বলেছিল আমাদের তা জানা হল না;
বিয়ের আগে দেশটায় একবার যেতে হবে,
কি আর করার, রক্তে মাংসে কামাই করা টাকা না হয় একটু বেশি নিক দালালগুলো,
তবুও তো এই ‘দিল্লীর কেতা দুরস্ত’ থেকে মুক্তি মিলবে।
ওহ হে! লজ্জা কাতর স্বরে ফেলানী ভাবছিল বাবাকে জানাতে,
তোমার জামাইর কুটম্বদের একবেলা দানাপানি খাওয়াতে হবে,
আমার সঙ্গে ভরা শীতের তোষক, দুই চারটা হাঁড়ি-বাটি আর সাথে জামাইয়ের হাতঘড়ি দিতে হবে।
সেটা বলা আর সম্ভব হলো না।
কুয়াশার ফাঁকে সে নিজের দেশে ফিরতে চেয়েছিল
কিন্তু অগত্যা কাটাতারের বেড়া কাল হয়ে দাড়ালো, এই যা,
বাবা অনায়াসে পার হয়ে ওপারে
কিন্তু ফেলানী?
ও বাবা! একটু দাঁড়াও,
দালালের মই বেয়ে সে দ্রুত নামতে চায়,
তাড়াতাড়ি করো ফেলানী তাড়াতাড়ি!
তাড়া দিচ্ছিল দালালরা।
ওড়নাটা জড়িয়ে ছিল তারের বেড়ায়,
একটু পরে আলো ফুটবে।
বাবা আমাকে নিয়ে যাও।
মা রে দেকি? গণ্ডগোল, দালাল নেই, নির্বাক বাবা।
হঠাৎ একটা বুলেট তেড়ে আসলো,
ফেলানী তখন অবোধ এক কিশোরী
রক্তে রঙ্গিন দেহ,
ঝুলন্ত তার লাশ।
দেশের মাটি তো দূরের কথা কোনো রাষ্ট্র তোমাকে বরণ করেনি।
পৌষের কুয়াশা ভেজা বিনা তোষকে মেয়েটা
বড় নিথরভাবে ঝুলে আছে কয়েকটা বাশের মাঝখানে,
আর আমরা কতেক অতিথি পরায়ণ ও বন্দু প্রতিম পরে আছি
ভারতীয় জামদানী আর তাদের দেয়া ভদ্রতার মুখোশ।
আমাদের ফেলানী,
কারো বোন কিংবা মেয়ে
আমাদের দূর্বলতার চির সাক্ষী হয়ে
পড়ে আছে একাকী,বড় অবহেলায় অযত্নে।
লেখক------------
সমাজকর্ম বিভাগ
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়.সিলেট।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:৪৯