আমি খুব সাধারন ছেলে। খুব একাকি। কারো সাথে মিশতে পারি না বলে আমার খুব দুর্নাম আছে আমার বন্ধু মহলে। দুর্নাম বলুক আর যাই বলুক আমি কিন্তু আমাকে নিয়ে খুশি। কে কি বললো তা নিয়ে খুব একটা আমি পাত্তা দেই না। আমি সবাইকে টাকার মাধ্যমে বিচার করি। কারন আমার টাকা আছে। আমার বাবা আমার জন্য যা রেখে গেছেন তা আমি সারা জীবনেও অঢেল খরচ করলেও শেষ করতে পারবোনা বলে বিশ্বাষ করি।
বাবা রেখে গেছেন বলতে আমি বুঝাতে চেয়েছি আমার বাবা নেই। তিনি গত কয়েক বছর আগে না ফেরার দেশে চলে গেছেন্। আর মা আমার জন্মের সময়েই মারা গেছেন। হয়তো আমার দিকে চেয়েই বাবা আর বিয়ে করেন নি। সবকিছু ঠিকই চলছিল কিন্তু আমেরিকা থেকে একটা বিজনেস ডিল পাকা করে ফেরার পথে আমেরিকাতেই সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। তার মৃত্যু আমাকে থুব বেশি আঘাত করে নি। কারন আমি তাকে কোন সময়ই কাছে পাই নি। তার থাকা আর না থাকা তাই আমাকে খুব একটা প্রভাবিত করতে পারে নি। ফলে আমি অল্প বয়সেই উত্তরাধিকার সুত্রে বিশাল সম্পদের মালিক হই। আর ব্যবসা তো আছেই। তা বাবার তৈরী করা ম্যানেজম্যান্টেই আপনা আপনি ব্যবসা চলছে। নামকাওয়াস্তে আমি বাবার অফিসে বসি। যা কিছু দেখার আমাদের কোম্পানির ম্যানেজার হামিদ সাহেবই দেখেন। তার সততা নিয়ে বাবার কোন প্রশ্ন ছিল না। তাই আমারও নেই। আমারও নেই। কারন আমাদের ব্যবসাটা তো উনিই চালাচ্ছেন। আর প্রতিমাসে আমি তো ব্যবসা থেকে মোটা অংকের লাভ পাচ্ছি। তাই টাকার কোন অভাব আমার নেই।
মেধাবী আমি কখনোই ছিলাম না। কিন্তু বাবার স্ট্যাটাসের কারনে পড়াশোনা আমার করতেই হয়েছে। ইন্টারপাশ করে তাই দেশের বিখ্যা্ত একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যাই। মেধায় আমি ভর্তি হওয়ার যোগ্য ছিলাম না। কিন্তু আমার বাবার টাকা ছিল। সেটার জোরেই সেখানে আমি ভর্তি হয়েছিলাম সেটা তো আর আপনাদের বলে বোঝাতে হবে না।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ফলে আমি পৃথিবীটাকে নতুন করে বুঝতে শিখেছি। সেখানে আমার মতো অনেক ধনী পরিবারের ছেলে মেয়েরা ছিল। চারদিকে শুধু টাকার ঝনঝনি শুনতাম আমি। আমি ব্যাপারটা উপভোগ করতাম। কারন টাকার ঝনিঝনি শুনানোর যোগ্যতা আমারও ছিল।
আমি একটু আত্মকেন্দ্রিক হওয়ায় ক্লাসের সবার সাথে আমার তেমন কোন বোঝাপড়া ছিল না। রোবটের মতো ক্লাসে যেতাম আর ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফিরতাম। মোটামুটি এভাবেই চলছিল আমার দিন। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষে পর্দাপনের আগে। ক্লাসের ছেলে মেয়েরা ক্লাস পার্টির আয়োজন করেছিল এবং অনিচ্ছা স্বত্তেও সেখানে আমার যোগ দিতে হয়েছিল।
আমি একটু আত্ম কেন্দ্রিক হওয়ার কারনে সেখানে আমার খুব একটা ভাল লাগছিল না। বের হয়ে আসবো এমন সময়ে আমারই এক ক্লাস মেট আমাকে বললো, কি রে কই যাস। ব্যাটা যাইস না, পার্টির পর আরেকটা পার্টি আছে। বয় তুই।
এক প্রকার জোর করে ফাহিম আমাকে রেথে দিল। হ্যা আমার সেই ক্লাস মেটের নাম ফাহিম। সরকারের এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার ছেলে। ওর বাবা যেই বেতন পায় তাতে আর যাই হোক এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের ছেলেকে পড়ানোর ক্ষমতা রাখে না। বোঝাই যায় তারা বাবার প্রচুর উপরি ইনকাম আছে।
যাই হোক পার্টি শেষে মেয়েরা চলে গেলেও ছেলেরা রয়ে গিয়েছিল। সেখানে কিছুক্ষন থেকে বুঝলাম ছেলেদের জন্য স্পেশাল ব্যবস্থা আছে। আর সেটা হচ্ছে নেশা। গাজা, হিরোইন, হালের ক্রেজ ইয়াবা, রাশিয়ান ভদকা থেকে শুরু করে নেশার কি নেই। সবই আছে। আমি আসলে নেশা না করলেও সেদিন সবার পাল্লায় পরে করলাম। বেশ ভালই লাগছিল। শরীরে কেমন যেন একটা ফুরফুরে ভাব চলে এসেছিল। মোটামুটি ভাবে মাতাল হয়েই বাসায় ফিরেছিলাম। বাবার চোখে পরে নি। হয়তো তিনি বাসাতেই ছিলেন না। আমি সরাসরি নিজের বিছানায় চলে যাই। সেই দিনের নেশা আমাকে ভালভাবেই গ্রাস করেছিল। তারপরও কিসের যেন অভাব বোধ করছিলাম। শুয়ে পড়লাম।
সেই দিন থেকে নেশার জগৎ এ আমি পা রাখি। তারপর থেকে নিয়মিত ভাবেই আমি নেশা করে আসছি। কিন্তু কোন নেশাই যেন আমাকে পুরোপুরি তৃপ্তি দিতে পারতো না। ফলে নিত্য নতুন নেশার খোজ আমি করে গেছি। কিন্তু কিছুই আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারে নি। এমনি করে দিন চলে যাচ্ছিল। এমন সময় একদিন বাবা মারা গেল। আগেই বলেছি আমার উপর তেমন কোন বাবার কোন প্রভাব ছিল না। তাই তার থাকা না থাকা আমার কাছে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ন ছিল না। এমন সময় মগবাজারের এক হোটেলের সামনে আমার পরিচয় হয় জলিল মিয়ার সাখে। সে বিভিন্ন হোটেলের মেয়ে সাপ্লাই দেয়ার ব্যবসা করতো। তার সাথে পরিচয় হওয়াটা ছিল দূর্ঘটনা। মগবাজারে এক হোটেলে আমার দুসম্পর্কের সম বয়সী এক ভাই এর সাথে দেখা করার সময় তার সাথে আমার পরিচয়। তার কাছে শুনলাম নারী দেহও নাকি পুরুষদের জন্য নেশার মতো। আমি আগ্রহী হই।
প্রথম দিন যে মেয়েটা এসেছিল সে অনেক লাজুক আর আমার মতোই অনভিঞ্জ ছিল। ফলে ব্যাপারটা আমি ভাল মতো নিতে পারি নি। জিনিসটার প্রতি আমার ঘেন্না ধরে গিয়েছিল।
তারপরও জলিল মিয়ার কথায় শেষ বারের মতো আরেক বারের মতো চেষ্টা করলাম, কিন্ত না। এবারও আমি হতাশ হলাম। তবে আমার মনে হলো আমি আমার মুল নেশা খুজে পেয়েছি। কাউকে ব্যাথা দিলে আমি প্রচন্ড রকমের আনন্দ পাই। আগের বারের তুলনায় এবারের মেয়েটা খুব আগ্রাসী ছিল। আমি যখন তাকে আমার সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরি তখন আমি নিজের মাঝে অমানুষিক আনন্দ খুজে পেলাম। নিজের সর্ব শক্তিদিয়ে আমি মেয়েটাকে ব্যাথা্ দেয়ার চেষ্টা করলাম। আর মেয়েটাও মনে হয় ব্যাপারটায় অভ্যস্ত ছিল। সেও প্রথমে স্বাভাবিক ভাবে নিলেও প্রতিমুহুর্তে আমি যখন ব্যাথার পরিমান বৃদ্ধি করছিলাম সে মনে হয় আর টিকতে পারলো না। ধাক্কা মেরে আমাকে ফেলে দিতে চাইলো। কিন্তু আমি ছিলাম আগ্রাসী। নিজের গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে তাকে চেপে ধরলাম। মেধার দিকে আমি খারাপ হলেও শক্তির দিক থেকে আমি যেকোন লোকের সাথে পাল্লা দেয়ার যোগ্য ছিলাম। ফলে আমার শরীরের পিষ্টনে কখন যো দম বন্ধ হয়ে সে মারা গেছে সেটা আমার খেয়াল হলো না। যখন খেয়াল হলো তখন সে চেনাজানা পৃথিবী থেকে অনেক দুরে। প্রথম বয় পেয়ে গেলাম। সেই দালাল জলিল মিয়াকে আমি কি বলবো।
তবে আমার হাতে ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র “অর্থ”। সেটার মাধ্যমেই জলিল মিয়াকে বশ করা কোন ব্যাপারই ছিল না। আর জলিল মিয়ারও আমার অর্থ সম্পর্কে কোন ধারনা ছিল না। তাই আমার অতি অল্প অর্থেই তাকে বশ করা গেল। জলিল মিয়াকে আমি নিজের করেই রেখে দিলাম। আর যাই হোক আমি আমার মূল নেশা সম্পর্কে ধারনা পেয়েছি। আর আমার এই নেশার বস্তু সাপ্লাই দেয়ার জন্য জলিল মিয়ার মতো লোকেদের তো আমার প্রয়োজন ছিল।
সেই থেকে জলিল মিয়া আমার হয়েই কাজ করে যাচ্ছিল। প্রতি সপ্তাহে একটি করে মেয়ের ব্যবস্থা জলিল মিয়া আমাকে করে দিত। আর আমার কাছে এসে মেয়েটা পৃথিবী থেকেই গায়েব হয়ে যেত। যেই দেশে মাঝে মাঝে বিশিষ্ট নাগরিকরাই দেশ থেকে গায়েব হয়ে যেত সেই দেশে একটা বেশ্যা গায়েব হয়ে গেলে সেটা নিয়ে আর কে খোজ করবে। যার ফলে আমার দিন ভালই কাটছিল।
প্রতিটা মেয়েকে হত্যার আগে তার উপর যতটা নির্যাতন করা যায় তার সবটুকুই আমি করতাম। কখনো কোন মেয়েকে বেধে তার শরীরকে ব্লেড দিয়ে কাটতাম। আর মেয়েটা যখন চিৎকার করতো তা আমি উপভোগ করতাম। রক্তে মেয়েটার পুরো শরীর ভেসে হয়ে যেত। তা দেখে আমি দারুন আনন্দ পেতাম আবার কখনো খাটের সাথে বেধে তার হাড় গুলো একটা একটা করে ভাঙ্গতাম। হাড় ভাঙ্গার শব্দ আমার কাছে খুবই মধুর লাগতো। বিশেষ করে যখন কট করে একটা শব্দে হারটা ভেঙ্গে যেত তখন। আর আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভাল লাগতো যখন বুকের হাড় গুলো ভাঙ্গতো। এক সাথে অনেকগুলো হাড় ভাঙ্গার শব্দ সত্যই আমার কাছে মধুর লাগতো। যেত পিয়ানোর এক একটি কর্ড বেজে চলছে। এভাবেই দিক চলে যেতে লাগলো। আমিও আমার এই নেশা নিয়ে উৎফুল্ল ছিলাম। দিনকে দিন আমার নেশা যেন বেড়েই যেতে লাগলো। এমনও হলো। সপ্তাহে ১ টি মেয়ের যায়গায় দুইটি মেয়ে আসতে লাগলো। তারপর তিনটি এভাবে প্রতিদিনই আমার জন্য মেয়ে যোগাড় করতে লাগলো জলিল মিয়া। কিন্তু সব নেশারই শেষ আছে। তার জায়গা নেয় নতুন আরেকটি নেশা। ফলে আগের নেশা আগ্রহ হারায়। একদিন আমি আবিস্কার করলাম আমি নিজে যেমন ব্যাথা দিতে ভালবাসি। তেমনি নিজে ব্যাথা পেতেও ভালবাসী।
২
নিজের ভিতরে এই নতুন নেশার উদ্রেক আমার ভালই লাগতো। প্রথম প্রথম নিজেকে অল্প অল্প ব্যাথা্ দিয়ে ব্যাপারটা উপভোগ করতে লাগলাম। কিন্তু সময় যত যেতে লাগলো ততোই আমার ব্যাথা পাওয়ার আগ্রহ বাড়তে লাগলো। একটা সময় ব্যাথা বিহিন অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করলেই আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারতাম না। কোন না কোন ভাবে নিজেকে ব্যাথা আমাকে দিতেই হবে। এমন সময় কিছু বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে এক বন্ধুর বাসায় টম হ্যাংসের দ্য ভিন্চি কোড দেখলাম। মুভি-টুভি আমার কাছে ভাল না লাগলেও এই মুভিটা আমাকে আকর্ষিত করলো, পুরো মুভিটা না, আসলে আমাকে আকর্ষিত করলো মুভিতে ওপাস দাই এর সদস্যের কাটাওলা চামড়ার বেল্ট। নিজের জন্য এই রকম একটা চামড়ার বেল্ট বানানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম। আর আমার এই ধরনের কাজের সহযোগীতার জন্য জলিল মিয়া তো আছেই।
জলিল মিয়া আসলেই একটা করিৎকর্মা লোক। তাকে সই দিন সন্ধ্যা বেলা আমার চাহিদাটা বুঝিয়ে দেয়া মাত্র তার পরের দিন দুপুর বেলা আমার চামড়ার বেল্ট এনে হাজির করলো। আমি আসলেই এমন করিৎকর্মা লোকদের পছন্দ করি।
সেই দিন রাত্রেই সেই বেল্টটা আমি পরার জন্য ট্রাই করলাম। যেসময় নিজের রানের উপর জোর দিয়ে বেল্ট বাধতে গেলাম তখন মনে হলো আমার রানের মাংসতে কেউ যেন গরম লোহার ছুরি ঢুকিয়ে দিয়েছে। নিজের দম বন্ধ হয়ে আসছে। তারপরও দাঁতে দাঁতে চেপে বেল্টটা পরে নিলাম। পুরো মাথা ঝিম ঝিম করছে। তারপরও যেন কেমন একটা সুখের অনুভুতি নিজের সারা শরীরে বয়ে যাচ্ছে। ব্যাথাটা আমি পুরোদমে উপভোগ করে যাচ্ছি। ভালই লাগছিল নিজের কাছে। নিজেকে মনে হলো প্রাচীন যুগের ব্যাথাকে জয় করা কোন সন্যাসীর মতো।
তারপর থেকে আমার জীবনের অন্যতম এক অনুসংগ পরিনত হলো এই কাটাওলা বেল্ট। বেল্টটা আমি নিয়মিত ভাবে পরিষ্কার করতাম। ফলে কোন ইনফেকশন হতো না আমার পায়ে। আর আমি রোটেশন করে দুই পায়েই বেল্ট ব্যবহার করতাম। কিন্তু তারপরও কি যেন আমি মিস করছি বলে আমার মনে হতো। নতুন উপায়ে নিজেকে ব্যাথা দেয়ার চেষ্টা করে যেতে লাগলাম। কিন্তু বেল্টের ধারে কাছে কোন পদ্ধতিই কাজে আসতো না। কিন্তু আমি ব্যাথাটা এখন শুধু রানের থেকে সারা শরীরে ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছিলাম। চিন্তা করতে লাগলাম আরো বেল্ট বানাবো নাকি। কিন্তু রানে বেল্ট বাধতে পারলেও শরীরে বাধতে পারবো না সেটা আমার ভালই জানা ছিল। ফলে বেল্ট বানানোর চিন্তা ভাবনা বাদ। এমন সময় মধ্যযুগে নির্যাতনের উপর বানানো হিন্ট্রি চ্যানেলের একটা প্রোগ্রাম দেখে আমি আমার সমস্যার সমাধান খুজে পাই। আমি বড় বড় কাটাওলা একটা আলমারীর মতো একটা জিনিসের সাথে পরিচিত হই সেই অনুষ্ঠানে। যেটা আয়রন মেইডেন নামে পরিচিত। যার দুই দিকেই বড় বড় কাঁটা থাকে। এবং আলমারীর মতো ওইটার দরজা বন্ধ করলে দুই দিকের কাটা দুই দিকের দেয়াল ছুযে ফেলে। ফলে ভিতরে আটকা পরে থাকা মানুষ খুব সহজেই কাঁটার আঘাতে এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে মারা যায়। জিনিসটা আমার মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হলো। আমি নিজের উপর জিনিসটা এ্যাপ্রাই করার চিন্তা করলাম এবং এই চিন্তাটা আমার মাথাতেই ঘুর পাক খেতে লাগলো। কিন্তু কোথায় পাবো আয়রন মেইডেন নামক এই মৃত্যু খাচা। কিন্তু আমার কাছে জলিল মিয়া ছিল। শুধু টাকা হলে সে বাঘের দুধও সংগ্রহ করে দিতে পারবে। মোটামুটি ভাবে তাকে বুঝিযে দিলাম কিভাবে তৈরী করতে হবে। এবং এমন ভাবে তৈরী করতে হবে যেন ভিতর থেকেই কন্ট্রোল করা যায় এই যন্ত্রটি। মোটামুটিভাবে বুঝিয়ে দেয়ার পর পুরান ঢাকার এক স্টিল আলমারীর দোকান থেকে আমার আয়রন মেইডেন তৈরী
করে এনে দিলো জলিল মিয়া।
চকচকে সিটের তৈরী আয়রন মেইডেনের স্টিলের তৈরী কাঁটাগুলো আমাকে সত্যই যেন জাদু করেছে। ভালই লাগছিল। দরজাটা যখন সুইচ দিয়ে বন্ধ করা হয় তখন দরজার কাটাগুলো খুব মস্রীন ভাবে বিপরিত দেয়ালের সা্থে মিসে যায়।
আমি বেশ কয়েকবার কাঁটা গুলো পরীক্ষা করলাম। বেশ কয়েকবার নিজে বাইরে থেকে সুইচ টিপে বন্ধ করলাম। ভিতরের দিকেও সুইচ আছে কিন্তু সেটা পরীক্ষা করার কোন উপায় নেই। নিজে ভিতরে ঢুকেই পরীক্ষা করতে হবে।
প্রস্তুতি নিতে লাগলাম নিজের তৈরী এই মৃত্যু আলমারীতে প্রবেশ করার জন্য।
রাত্রে গোছল করে ফ্রেস হয়ে আয়রন মেইডেনে ঢুকার প্রস্তুতি নিতে লাগলাম। শরীর থেকে সমস্ত কাপড় খুলে নগ্ন হয়ে প্রবেশ করলাম মৃত্যু আলমারীর ভিতরে। সুইচটা খুজে পেলাম। শরীরকে একবারে চাপমুক্ত করে দিলাম।
ভিতরে প্রবেশ করলাম। কেমন যেন একটা ভয় ভয় নিজের ভিতরে প্রবেশ করলো। কিছুটা নার্ভাস হয়ে পরলাম। আলমারীর ভিতরের সুইচটা এমন ভাবে তৈরী করা ওটা যতটুকু চাপ দেয়া হবে ঠিক ততটুকু কাঁটাই বের হবে। সুইচটা ডান হাতের কবজীর কাছে।
সুইচটার ভিতরে হালকা করে চাপ দিলাম। পিঠে চোখা চোখা কাটার স্পর্শ পেলাম। একটু একটু করে ব্যাথা বারছে। দুই হাতের কবজির কাছে লোহার স্পর্শ পেলাম। কবজিটা যেন চেপে ধরার চেষ্টা করছে। সারা শরীরে দাপিয়ে বেরাচ্ছে ব্যাথা। নিজের রানের উপরে তরল কিছুর স্পর্শ পেলাম। চটচটে জিনিসটা যে আমার নিজের রক্ত তা আমার বুঝতে দেরি হলো না। ধীরে ধীরে চাপ বাড়ছে। পিঠের মাঝে চেপে বসেছে কাঁটার পাহাড়। চাপ বাড়ছে ধীরে ধীরে। নিজের দুই কবজীতে সুই এই প্রবেশের মতো কিছু প্রবেশের অনুভূতি হলো আমার। রক্তে হাত ভিজে গেল আমার।কিন্তু চাপ কমালাম না। এদিকে আমার মাথায় লোহার কাঁটার চাপ ক্রমশ বারছে।কিন্তু এখনো তেমন কিছু হয় নি সেখানে।
ধীরে ধীরে চাপ বাড়াচ্ছি। ইতিমধ্যে আমার পশ্চাদ দেশে তিন থেকে চারটি লোহার কাটা ঢুকে গেছে। আটকা পরেছে আমার কবজী।ব্যাথায় প্রায় অঞ্জান হয়ে যাওয়ার অবস্থায় পৌছে গেলাম আমি। নিজকে ছুটিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু অবাক হয়ে ব্যাপারটা ধরতে পারলাম আমার কবজী আমি নারাতে পারছি না। এবং সেই সাথে আমার নির্দেশ অমান্য করে আমার কবজী ধীরে ধীরে চাপ বাড়িয়েই চলছে সুইচে। পরিস্থিতি সম্পূর্ন আমার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে। হঠাৎ কট করে একটা শব্দ করে আমার মেরুদন্ডের ভিতর দিয়ে একটা কাটা ঢুকে গেল। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার। কিন্তু কবজীর উপর থেকে চাপ কমাতে পারছি না। দুটি কাটা দুই কবজীর ভিতর দিয়ে ঢুকে অপর দিক দিয়ে বের হয়ে গেছে। চিৎকার দিতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু গলা দিয়ে কিছুই বের হলো না। এদিকে মাথার খুলির পেছনে ক্রমস চাপ বাড়ছে। যেকোন সময় ফেটে ভিতরে ঢুকে যাবে ইস্পাতের কাঁটা। চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। কিছুই অনুভুতি হচ্ছে না। হঠাৎ করে এক ঝলক আলোর ঝলকানীর পর অন্ধকার হয়ে গেলো আমার দুনিয়া।
দুই দিন পর
খবরঃ বাংলাদেশের বিশিস্ট ব্যবসায়ী প্রয়াত ইমতিয়াজ আহমেদের একমাত্র ছেলে ইমতিয়াজ গ্রুপের চেয়ারম্যান ইরতাজ আহমেদ বনানীতে নিজ বাসায় খুন। খুনের মোটিভ এখনো স্পস্ট নয়। বাড়িতে একাই বাস করতো ইরতাজ। আর বাড়িতে কোন কাজের লোকও ছিল না। খুনি ইরতাজকে মধ্যযুগীয় পন্থায় আডরন মেইডেন নামক এক বিশেষ ধরনের কাঁটাওলা আলমারীর ভেতরে ঢুকিয়ে তাকে খুন করেছে বলে নিশ্চিত করেছে মহানগর পুলিশ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৭