মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষ থেকে আদালতে উপস্থাপন করা সনদপত্র জাল ছিল। জাল সনদ দিয় আবারো অাদালতকে বিভ্রান্ত করা চেস্টা করে এই যুদ্ধাপরাধী সাকা। তার পক্ষ থেকে আপিল বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট। যে সার্টিফিকেটে সেশন ১৯৭১ দেখানো হয়েছে। এছাড়া প্রশংসাপত্রে সেশন দেখানো হয়েছে ১৯৭০-৭১। এমনকি সার্টিফিকেটে ১৯৭০ লেখার মধ্যে ১৯ সংখ্যাটি বড়, আর ৭০ সংখ্যাটি খুব ছোট। পাশাপাশি সার্টিফিকেট ও প্রশংসাপত্রে পাঞ্জাবের বানানও দু’রকম। একটাতে লেখা Punjab আরেকটাতে লেখা Panjab। এই দুই বানানের কারনে দুই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সাথে পড়ার ইতিহাসও রচনা করলো সাকা।

এছাড়া পাকিস্তানে বাংলাদেশের যিনি হাইকমিশনার আছেন তিনি সেখানে সত্যায়িতও করেননি। কাউন্টার সাইন করতে হয়, সেটা করা হয়নি। আইনের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য নয়।
১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কথা বলা হয়েছে। সে সময়ে একই বিভাগের (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) ছাত্ররা জানিয়েছেন ওই সময়ে সেমিস্টার পদ্ধতি ছিলো না। ক্রেডিট ট্রান্সফারেরও সুযোগ ছিলো না। এছাড়া সেশন হয় ১৯৭০-৭১। কিন্তু সাটিফিকেটে দেখা যাচ্ছে সেশন শুধু ১৯৭০।
এমনকি যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটের জন্য ছাত্রকেই আবেদন করতে হয়। কিন্তু তিনি জেলে থেকে কেমনে আবেদন করলেন!! তাহলে কিভাবে সার্টিফিকেট আসলো?
কেন সনদ জাল এবং অগ্রনযোগ্য ?
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রিভিউ শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তাঁর আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, চারটি প্রশ্ন করেন। সেগুলো হলো- এক. ট্রাইব্যুনাল এবং আপিল বিভাগে আপনাদের দেওয়া ডকুমেন্টগুলো ফেইক প্রমাণিত হওয়ার পরও নতুন করে কেন দিয়েছেন? দুই. লন্ডন ওয়াশিংটন থেকে হলফনামা দিয়েছেন। কিন্তু পাঞ্জাব থেকে দিতে পারেননি কেন?
তিন. কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন? এবং চার. ২০১২ সালের ডকুমেন্ট এখন দিচ্ছেন কেন?
প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ‘এখন যে সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন, তাতে উল্লেখ রয়েছে গ্রেডিং সিস্টেমের। কিন্তু ওই সময় গ্রেডিং ছিল না এবং সেমিস্টারও ছিল না। অনার্স ছিল ইয়ারভিত্তিক।’
এস কে সিনহা আরো বলেন, ‘সার্টিফিকেট আনতে হলে ছাত্রকে সরাসরি আবেদন করে সার্টিফিকেট আনতে হয়। কিন্তু আপনারা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সার্টিফিকেট ওঠানোর জন্য যে আবেদন করেছেন, সে মর্মে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। সার্টিফিকেট আনতে হলে দূতাবাসের মাধ্যমে আনতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশ দূতাবাসের কোনো সিল-স্বাক্ষর কিছু নেই। এ ছাড়া আপনাদের দেওয়া সার্টিফিকেটটি ইস্যু করা হয় ২০১২ সালে, যেটা সত্যায়িত করা হয় ২০১৫ সালে। ওই সময়ে যদি ইস্যু করা হয়, তবে আপিলের সময় জমা দিতে পারেননি কেন?’ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান থেকে সার্টিফিকেট এনে জমা দিলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে এ দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারে ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সংসদে এবং প্রেসিডেন্ট নিজেই বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁরা যদি কোনো সনদ দেন, এমনকি ওই দেশের প্রেসিডেন্টও যদি সনদ দেন, তবে এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে।’
এ সময় ওই সার্টিফিকেটের আরেকটি অসংলগ্নতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সার্টিফিকেটে ১৯০০ সালটি বড় আকারে লেখা থাকলেও ৭১ সংখ্যাটি ছোট করে লেখা আছে। এতে করে এটি যে জাল সার্টিফিকেট, তা বোঝা যায়। এসব বিবেচনায় বোঝা যায়, সার্টিফিকেটটি ভুয়া।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘আপনারা একটি মিথ্যাকে ঢাকতে গিয়ে আরো মিথ্যার জন্ম দিচ্ছেন। গঙ্গার জল বঙ্গোপসাগরে গড়াল।’
নিচের লিংকটি পাকিস্থানের পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটির
http://www.pu.edu.pk/
আর এটা ভারতের পাঞ্জাব ইউনিভাসিটির
http://puchd.ac.in/