পরীবাগের রাস্তাটা সন্ধ্যার পর বড্ড বেশিই ভুতুরে লাগে ।
আলো আধারীতে ছিনতাইয়ের ভয়ে শুচি সব সময়ই তটস্ত হয়ে রাস্তাটা পারি দেয় ।
বিশেষ করে নার্সারির জঙ্গলটা পাড়ি দেবার সময় মনে হয় এই বুঝি জঙ্গল থেকে কোন ছিনতাইকারী এসে ব্যাগটা ছিনিয়ে নিতে গিয়ে শুচির হাতেও চাকু, ছুরি চালিয়ে দিবে ।
রোজার সময় ভয়টা বেড়ে যায়, কেননা সামনে ঈদ থাকার কারণে ছিনতাইকারীদের ছিনতাইয়ের দৌড়াত্ব বেড়ে যায় ।
ঈদের কিছুদিন বাকী থাকতেই শুচি খেয়াল করছে ওর পেছন পেছন লম্বা চুল, মুখে দাড়ি, ইয়া বিশাল বপুর অধিকারী কেউ একজন আসে, শুচির হাঁটার গতি বাড়ার সাথে সাথে তার হাঁটার গতিও বাড়ে । ভয় তাড়াতে না পেরে শুচি বাধ্য হয় দৌড় শুরু করতে । যখন পিছন ফিরে তাকায় তখন দেখে নার্সারির জঙ্গলের অন্ধকারে সেই বিশাল দেহী মিলিয়ে গেছে ।
অফিস থেকে ছুটি পাওয়ার আগের তিনচারদিন শুচি আর ভয় সামলাতে না পেরে সেই রাস্তা দিয়ে না এসে বাধ্য হয়ে কষ্ট করে অনেক বেশি পথ পারি দিয়ে বাসায় ফিরেছে । তবুও ঈদের আগে ছিনতাইকারীর হাত থেকে বাঁচা তো গেল ।
ঈদের পর প্রথম দিন অফিস থেকে আগের রাস্তা দিয়ে ফেরার পথে কাউকে দেখেনি, শুচি যেন আশা করছিল...নিরাশ হতে হয়েছে ।
ঈদ বোনাস থেকে কেনা নতুন শখের মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে নাড়তে নাড়তে ফিরছিল সেদিন । হঠাৎ করেই আলো আধারীর সেই সন্ধ্যায় অন্ধকার ফুঁড়ে নার্সারির জঙ্গলের ভেতর থেকে নয়, রিতিমতো সামনে এসে হাজির হলো একই গড়নের নতুন কেউ ! এর শুধু চুল লম্বা নয় বা দাড়ি নেই মুখে !
"প্লিইজজ..." বলতে বলতেই শুচি পড়ে গেল রাস্তায় ।
মিনিট কয়েক হয়তো পার হয়েছে, এর মধ্যেই রমনা থানার পুলিশ হাজির হয়ে গেছে । বিশালদেহী মানুষটি শুধু করুণ ভাবে বলতে পারলো...আপনার সাথে পরিচয় হলো না, আগামী কালই আমার ফ্লাইট, ছুটি শেষ, ফিরে যাচ্ছি ।
সুপারভাইজার দেরী করালে পিএইচডি করতে যে কতো ঠেলা তা সিফাত হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে । এর মধ্যেই বয়স্ক ভদ্রলোক চিকিৎসার কারণে ঘুরতে নিউজিল্যান্ড পাড়ি দিয়েছে । যাবার আগে সিফাতকে বলে গেছে মলিন মুখ করে না থেকে মার কাছ থেকে ঘুরে আসো এই ক'দিন ।
সামনে ঈদ থাকায় এমনিতেই সিফাতের চরম মন খারাপ ছিল ।
ইনকমপ্লিট অবস্থায়ই মার কাছে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে ফেললো অনেক দ্রুতই ।
দেশে ফিরে অল্প কিছুদিন পুরনো বন্ধুদের খোঁজ নিতে নিতেই শেষ, সবাই চাকরী, চাকরীর খোঁজে মহাব্যস্ত ।
ইদানিং ইফতারির পর নার্সারি এলাকাতেই থাকতে ভালো লাগে । আধো অন্ধকারে সিফাত যেন নিজেকে খুঁজে পায় ।
প্রায়ই এক মেয়েকে কিছুটা ভয়ার্ত চোখে নার্সারির এলাকাটা পারি দিতে দেখে । মেয়েটার হাঁটার মধ্যে যথেষ্ট আত্নবিশ্বাস থাকলেও এমন ভীতু ভাবে তাকায় কেন বুঝতে পারে না সিফাত । কয়েকদিন পেছন পেছন গেছে পরিচিত হতে , মেয়েটা হয় হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেয়, অথবা দৌড় লাগায় । বেইজ্জতির ভয়ে সিফাত কোনদিন দৌড়ে মেয়েটির কাছে যেয়ে বলতে পারেনি শুধুই পরিচিত হতে ও মেয়েটির পিছু নেয় ।
ঈদের আগের রাতে মায়ের বকুনিতেই হোক বা ঈদের আনন্দেই হোক চুল, দাড়ি ছেটে একটু ভদ্রস্থ হয়েছে ।
ছুটি শেষ হয়ে গেছে কালকেই চলে যাচ্ছে...সন্ধ্যায় পায়ে পায়ে সিফাত নার্সারির আলো আধারীতে আসতে যেয়ে মেয়েটিকে দেখে এবার আর পিছু নেয়ার কথা না ভেবে একেবারে সামনে এসে হাজির !
হতবাক হয়ে সিফাত আবিষ্কার করলো মেয়েটি শুধু "প্লিইজজ..." বলতে বলতেই জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় পড়ে গেল ।
কিংকর্তব্যবিমুঢ় সিফাত ভাবতে ভাবতেই পুলিশ এসে হাজির । সন্দেহের বশেই ধরে নিয়ে যাচ্ছে সিফাতকে...
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিফাত শুধু করুণভাবে বলতে পারলো...আপনার সাথে পরিচয় হলো না, আগামী কালই আমার ফ্লাইট, ছুটি শেষ, ফিরে যাচ্ছি ।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা : ব্লগার ঘুমন্ত আমি ...
ছবি : নেট থেকে