গত দুই পর্বের লিংক
সহজ মেদভুড়ি নামা: প্যানক্রিয়াস, আপনার গ্লুকোজ লেভেলকে নরমাল রাখে।
Click This Link
সহজ মেদভূড়িনামাঃ লিভার, ভালো রাখুন, ভালো থাকুন-
Click This Link
হাই ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেট গ্রহন মেটাবোলিক সিনড্রম তৈরির জন্য যে দায়ী এটা এখন মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত। এই মেটাবোলিক সিনড্রমের একটা সিম্পটম হলো ওবেসিটি, হাইপারটেনশন এবং কার্ডিয়াক রিমডেলিং।
এর আগে আমরা দেখেছি রক্তে গ্লুকোজ আর ফ্যাটি এসিড বেশি হলে কিভাবে এটা আমাদের বিভিন্ন অরগানে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করে। এমনই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এর একটা এফেক্টেড অরগান হোলো আমাদের হার্ট বা হৃদপিন্ড।
হৃদপিন্ড একটা খুবই ডায়নামিক অরগান, মিনিটে এটা ৭২ বার স্পন্দিত হয়। মোটামুটি বুকের বাম পাশে এটার অবস্থান, ওজন ২৫০-৩৫০ গ্রাম হয়। হৃদপিন্ড তিন স্তর বিশিস্ট পেশি নিয়ে গঠিত, বাইরের স্টরকে বলে এপিকার্ডিয়াম, মাঝের স্তরকে বলে মায়োকার্ডিয়াম আর ভিতরের স্টরকে বলে এন্ডোকার্ডিয়াম। আমাদের হার্ট চারটি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত, বাম-ডান অলিন্দ (অ্যাট্রিয়াম), বাম-ডান নিলয় (ভেনট্রিকল)।
এর মধ্যে, অ্যাট্রিয়াম গুলা হোলো রিসিভিং চেম্বার আর ভেনট্রিকল গুলো হোলো ডিসচার্জিং চেম্বার। সারা শরীর থেকে আসা অক্সিজেন বিহীন রক্ত সুপেরিোর ভেনাকেভা দিয়া প্রথমে রাইট অ্যাট্রিয়ামে প্রবেশ করে, এটা তারপর ট্রাইকাসপিড ভালভ দিয়ে রাইট ভেনট্রিকলে প্রবেশ করে। রাইট ভেনট্রিকল এই রক্তকে পালমোনারী ভালব আর আর্টেরী দিয়ে ফুসফুসে পাঠায়ে দেয়। সেখানে অক্সিজেন নিয়ে এই রক্ত আবার পালমোনারী ভেইন দিয়া হৃদপিন্ডের লেফট্ অ্যাট্রিয়ামে আসে এবং বাইকাসপিড ভালভ দিয়ে লেফট্ ভেনট্রিকলে প্রবেশ করে। লেফট্ ভেনট্রিকল তখন এই রক্তকে সজোরে অ্যাওরটাতে পাঠায় দেয়, যার সবচেয়ে বিশুদ্ধ অংশ আমাদের মস্তিষ্কে পৌছায়।
হার্ট মাসল গুলা কার্ডিওমাইওসাইট নামের একধরণের কোষ দিয়া তৈরি, জম্মের সময় এই কার্ডিওমাইওসাইট গুলার সংখ্যা নির্দিষ্ট থাকে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে এদের সাইজ বাড়তে থাকে এবং পূর্ণতা পায়। আরও কতগুলা কোষ থাকে যেমন, ফাইব্রোব্লাস্ট, ম্যাক্রোফেজ ইত্যাদি। ফাইব্রোব্লাস্ট গুলার কাজ হোলো যেকোনো সেলুলার ড্যামেজ হলে তা পুরন করা।
ওবেসিটির ক্ষেত্রে একটা কমন সমস্যা হলো হার্ট বড় হয়ে যাওয়া (হাইপারট্রফি) বা রিমডেলিং। এই রিমডেলিং একসেনট্রিক বা কনসেনট্রিক দুই রকমই হতে পারে। আবার এই রি মডেলিং মুলত হয় লেফট ভেন্ট্রিকলে, রাইট ভেন্ট্রিকলে রিমডেলিং সচরাচর দেখা যায় না।
ওবেসিটির ক্ষেত্রে হার্টের কাজ বেশ জটিল একটা ফিজিওলজিক্যাল সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে যায়। এখানে কত গুলা ফ্যাক্টর কাজ করে-
১। উচ্চ রক্তচাপ,
২। ফ্রি-রেডিক্যাল, ফ্যাটি এসিড, গ্লুকোজ,
৩।লোকাল এনজিওটেনসিন
৪। ফাইব্রোব্লাস্ট
উচ্চ রক্তচাপ হার্টের রিমডেলিংয়ের জন্য একটা অন্যতম নিয়ামক। ক্রমাগত উচ্চ চাপ হার্টের উপর একটা বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে ফলে হার্টের চেম্বারগুলা বেলুনের মত বড় হতে থাকে, একে অনেক সময় বেলনিং অব হার্ট বলে।
উচ্চ রক্তচাপের ফলে সৃষ্ট শিয়ার স্ট্রেস আবার স্ট্রেস একটিভাটেড কাইনেজ সিসটেমকে সক্রিয় করে, ফলে কিছু কার্ডিওমাইওসাইট এপপটোসিস প্রক্রিয়ায় মারা যায়। এই কার্ডিওমাইওসাইট গুলার স্থানটুকু তখন ফাইব্রোব্লাস্ট গুলা দখল করে এবং প্রচুর পরিমান কোলাজেন সিক্রেট করে। এই প্রক্রিয়াকে বলে ফাইব্রসিস। ফাইব্রসিস হলে হার্টের স্পন্দনের যে সিনক্রোনাইজড ব্যাপার থাকে তা ফেইল করে। ফলে একসময় হার্ট আর ঠিক মত কাজ করতে পারে না।
এখানে আর একটা ব্যপার ঘটে তা হলো, লোকাল এনজিওটেনসিন, এই হরমোনটা রক্ত নালীর সেল গুলাকে প্রলিফেরেট করতে সাহা্য্য করে ফলে রক্ত নালীগুলো মোটা হয়ে এর ভিতরে রক্ত প্রবাহে বাধা দেয় (এটাও রক্তচাপ বৃদ্ধির একটা কারণ)। হার্টের ভিতর রক্ত সরবরাহ করে করোনারি আর্টেরী। উপরের কারণে বা রক্তে বেশি ফ্যাটি এসিড, কোলেস্টেরল থাকলে এই করোনারি আর্টেরী রক্তনালী বন্দ হয়ে যেতে পারে। এসময় যে অবস্থা হয় তাকে বলে ইসকেমিয়া, তাতে কোষ গুলা প্রয়োজনীয় অক্সিজেন আর নিউট্রিশন পায় না।
নিচের ছবিতে দেখুন-
ফ্রি-রেডিক্যাল, ফ্যাটি এসিড, গ্লুকোজ-
হার্টকে যেহেতু ক্রমাগতভাবে রক্ত পাম্প করতে হয় তাই এর এনার্জির ডিমান্ডও বেশি, ফলে এনার্জির জন্য একে ফ্যাটি এসিড, গ্লুকোজ ব্যবহার করতে হয়। আর তাতেও প্রচুর ফ্রি-রেডিক্যাল তৈরি হয়। এই ফ্রি-রেডিক্যাল তখন আবার কার্ডিওমাইওসাইট গুলাকে মেরে ফেলে আর ফাইব্রোব্লাস্ট গুলোকে একটিভেট করে প্রচুর পরিমান কোলাজেন সিক্রেট করে এবং ফাইব্রসিস হয়। ওবেসিটিতে ফ্রি-রেডিক্যাল, ফ্যাটি এসিডের বেশি সাপ্লাই হা্র্টের এনার্জি মেটাবোলিসম প্রক্রিয়াকে চেন্জ করে, ফলে প্রয়োজনের সময় হা্র্ট খুব বেশি এনার্জি সাপ্লাই পায় না।
আর এভাবেই ওবেসিটি আমাদের হার্টের উপর একটা খারাপ প্রভাব ফেলে, যা একসময় কার্ডিয়াক ডিজিজ ও কার্ডিয়াক ফেইলরের জন্য দায়ী হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:১৭