بسم الله الرحمن الرحيم
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ্র। অসংখ্য দরূদ নাযিল হোক তার নবীর উপর বারবার।
এক দম্পতির একসাথে পাঁচ সন্তান জন্ম নিয়েছে। অথচ ডাক্তাররা জন্মের কিছুদিন আগেও ঠিকভাবে বলতে পারলোনা। দেখুন, গর্ভে মোট কয়টি সন্তান আছে, এটা বলা কিন্তু এর চেয়ে অনেক সহজ যে গর্ভের সন্তানটি ছেলে নাকি মেয়ে। তো সংখ্যার বিষয়টিই যেখানে নিশ্চিতভাবে এবং নির্ভুলভাবে বলা যায় না সেখানে সন্তানটি ছেলে না মেয়ে সেটা কীভাবে ১০০% নিশ্চয়তা দেয়া যায়।এরকম ঘটনা আরো অনেকবার ঘটেছে। এই নয় যে এটাই প্রথম। একবার ঢাকার এক হাসপাতালে ডাক্তাররা বলেছিলো যে, একটা মেয়ে হবে পরে দেখা গেলো যে, ছেলে মেয়ে মিলিয়ে চারটা সন্তান হয়েছে।এটা আমাকে আমার এক শিক্ষক বলেছেন। উনার স্ত্রীর যখন সন্তান হয় তখন তাকে যেই হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন সেই হাসপাতালে সেই সময় এই ঘটনা ঘটে।এছাড়াও এমন ভুলের ঘটনা আরো বহুবার ঘটেছে। যাইহোক উপরের খবরটি দেখার জন্য নীচের লিংকগুলোতে দেখেন।
আমার দেশ
দৈনিক জনকন্ঠ
দৈনিক ডেসটিনি
দৈনিক প্রথম আলো
বাংলাদেশ প্রতিদিন
আর ""কারণ ২০ সপ্তাহ পরে আল্টাসনোগ্রাফি করালে তার রিপোর্ট কখনো ভুল হয় না।"" এই জাতীয় বৈজ্ঞানিক কথা আর না কপচালেই ভালো।
সূরা লোকমানের ৩৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে, ৫টি জিনিষের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ পাকের রয়েছে। এই আয়াতের তাফসীর আপনারা এই সাইট থেকে , তাফসীরে মা'রেফুল কোরআন থেকে পড়ে নিন। এখান থেকে এবং আদর্শ নারী মাসিক পত্রিকা থেকে পড়ে আমি যা বুঝলাম তা সংক্ষেপে বলছি।
এই আয়াতে পাঁচটি জিনিষের ৪র্থ ও ৫মটির ক্ষেত্রে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে এগুলোর জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ্রই রয়েছে। কিন্তু ২য়টির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, আল্লাহই বৃষ্টি বর্ষণ করেন; আর ৩য়টির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে
আল্লাহ জানেন মায়ের গর্ভে কি রয়েছে। তাহলে শুধু আল্লাহ্ জানেন, আর কেউ জানেনা, এই কথা আসলো কিভাবে? হ্যাঁ, আরবী বাক্যবিন্যাস, প্রকাশভঙ্গী , পূর্বাপর প্রেক্ষাপট, অন্যান্য আয়াত, বুখারী-মুসলিম শরীফের একটি হাদীস এবং শানে নুযুল থেকে বিজ্ঞ তাফসীরকারকরা একথা বুঝেছেন যে এখানে পাঁচটি বস্তুর জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট।
এখন এই তিন নং বিষয়টি হলো আমাদের আলোচ্য ক্ষেত্র। এখানে আল্লাহ বলেছেন যে, আল্লাহই জানেন মায়ের গর্ভে কি রয়েছে
এখন প্রশ্ন হলো, এই কথাটি থেকে মায়ের গর্ভে ছেলে আছে না মেয়ে আছে তা শুধু আল্লাহ জানেন এই সিদ্ধান্ত কিভাবে নেয়া হলো? এখানে তো ছেলে মেয়ের কথা কিছু বলা হয়নি। জবাব হলো, এটা তাফসীরকারকরা বলেছেন যে এই কথা দ্বারা এটাই উদ্দেশ্য যে মায়ের গর্ভে ছেলে না মেয়ে আছে এটা শুধু আল্লাহই জানেন।তাহলে দেখা যাচ্ছে যে ডাক্তাররা যদি ভবিষ্যতে কোন দিন ১০০% গ্যারান্টি দিয়েও বলতে পারে তবুও সেটা সরাসরি কোরানের বিরুদ্ধে যাচ্ছে না বরং তাফসীরের বিরুদ্ধে যাচ্ছে।
এখন কথা হলো এই তাফসীরটি কি এমন সর্ববাদীসম্মত অকাট্য যে, তা অস্বীকার করলে ঈমান থাকবে না। এখানে সংক্ষেপে শুধু এতটুকু বলা যায় যে, না, এই তাফসীরটি সেইসব তাফসীরের অন্তর্ভুক্ত নয়।
কিন্তু বলতে গেলে প্রায় সব তাফসীরকারই এই আয়াতের এই তাফসীর করেছেন যে, গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে; সাদা না কালো; সৌভাগ্যবান না দুর্ভাগা এসব শুধুমাত্র আল্লাহই জানেন। তবে তাফসীরে ইবনে কাসীরে এখানে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলা হয়েছে যে, গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে এটা ততক্ষণ পর্যন্ত শুধু আল্লাহই জানেন যতক্ষন না গর্ভের ভ্রূণকে ছেলে বা মেয়ে কোন একটা হিসাবে সৃষ্টি করা হয়। কেননা ছেলে বা মেয়ে হিসাবে সৃষ্টি হয়ে যাবার পর বা সৃষ্টির সময়ই সংশ্লিষ্ট ফেরেশতারা তা আল্লাহর পক্ষ থেকে জেনে যায় বলে সহী হাদীসে আছে। এবং তাফসীরে ইবনে কাসীরে আরো বলা হয়েছে যে, ফেরেশতারা ছাড়া আল্লাহ যাকে জানাতে চান এমন কেউও জানতে পারে। (এলহামের মাধ্যমে, তবে এলহাম ১০০% গ্যারান্টি দেয় না।)এই লিংক থেকে তাফসীরে ইবনে কাসীরের ১৫ নং খণ্ড ডাউনলোড করে সূরা লোকমানের ৩৪ নং আয়াতের তাফসীর দেখুন।
তাফসীরে ইবনে কাসীরের এই আলোচনা থেকে কিন্তু কেউ হুট করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাবেন না যে, তাহলে বুঝা গেলো যে ছেলে বা মেয়ে হিসাবে সৃষ্টি হয়ে যাবার পর ডাক্তাররা যদি বলে দিতে পারে তাহলে এটা কোরানের তাফসীরের বিরুদ্ধে যাবে না। এই সিদ্ধান্ত এই জন্য নেয়া যাবেনা যে, সহী হাদীসে এই পাঁচটি বিষয়কে গায়েবের বিষয়াবলীর অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে, আবার কোরানে আছে যে গায়েবের বিষয়গুলো আল্লাহ কাউকে না জানালে কেউ তা জানতে পারেনা। তাহলে তো দেখা যাচ্ছে শেষমেশ ডাক্তাররা যদি ছেলে না মেয়ে এটা বলে দিতে পারে তাহলে তা সরাসরি কোরানের বিরুদ্ধে না যাক কোরানের এই আয়াতের একটি তাফসীরকে ভুল প্রমাণিত করছে।
এর জবাবেই বলছি আরবীতে এবং কোরান ও হাদীসের পরিভাষায় "জানা" শুধু ঐটাকেই বলে যেটা ১০০% নিশ্চিত হয়, যেই জানার মধ্যে বিন্দু পরিমান সন্দেহও নেই। ১% সন্দেহ থাকলেও সেটাকে "এলেম" বা "জানা" বলা হবে না। ডাক্তাররা ছেলে বা মেয়ের কথা যে আগে থেকে বলে দেয়, এর মাঝে কিছু না কিছু সন্দেহ থেকেই যায় এবং আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি যে কেয়ামত পর্যন্তও ডাক্তাররা এটা কখনোই ১০০% নিশ্চিতভাবে বলতে পারবেনা যে মায়ের গর্ভে ছেলে আছে না মেয়ে। আপনারা আপনাদের সামনের জীবনেও এমন খবর আরো পাবেন যে ডাক্তাররা ছেলে মেয়ে বলতে গিয়ে ভুল করেছে বরং এরচেয়েও অনেক সহজ সন্তানের সংখ্যা নির্ধারণ করতেও ভুল করেছে।
দেখুন প্রবল ক্ষমতাশালী কোন বাদশাহ যদি ঘোষণা করে যে অমুক দিন অমুক জায়গায় অমুকের ফাঁসি হবে, তাহলে কি একথা বলা যাবে যে, আমরা অমুক লোকের মরণের জায়গা তার মরণের আগেই জেনে গেলাম। এমনও হতে পারে কোন দেশের ইতিহাসে নেই যে সরকার ফাঁসির আসামীদের ফাঁসির যেই দিন ও স্থান নির্ধারণ করেছে সেটার অন্যথা হয়েছে।তারপরও একথা বলা যাবে না আমরা অমুকের মরণের জায়গা সম্পরকে আগেই জেনে গিয়েছিলাম। কারণ যতক্ষণ না ফাঁসি হচ্ছে ততক্ষণ ১০০% নিশ্চিত হওয়ার কোন উপায় নেই, বলা তো যায় না কী ঘটে যায়। এখন পর্যন্ত বাচ্চার লিঙ্গ নির্ধারণের যেসব পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে, আপনি যদি সুস্থ বিবেক বুদ্ধি নিয়ে সেসব সম্পর্কে ভালো করে জ্ঞান অর্জন করেন তাহলে সহজেই বুঝতে পারবেন এসব পদ্ধতির মাধ্যমে একেবারে ১০০% নিশ্চয়তা অর্জন করা সম্ভব নয় বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেই। আবার যদি বাচ্চা হিজড়া হয় তাহলে তো কথাই নাই। নীচের কমেন্টগুলোতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা কি বলেছে পড়ে দেখুন।
ব্লগার অাতিকের জবাবটি এখানে কপি পেষ্ট করছি
"কোরআনেও এই ভাবে ই বলা হয়েছে। যেমন ঐ আয়াতের পরের অংশে আছে আগামী কাল কি হবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা। এখন একজন শিক্ষক বললেন কালকে তোমাদের ক্লাস টেস্ট হবে। এবং কালকে তিনি ক্লাস টেস্ট নিলেন। তাহলে কি আপনি বলবেন তিনি আগে থেকেই জানেন যে আগামী কাল কি হবে তা ঐ শিক্ষক জানেন? কখনই নয়। কারন এমন অনেক পরীক্ষার সময় অহরহ পরিবর্তন হয়। সুতরাং আগামীকালের সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কারও কাছে নেই। মাআরেফুল কোরআনে এব্যাপরে আরও বিস্তারিত আছে।"
সবাইকে শুকরিয়া জানাই।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৯