ছবিসূত্রঃ ইন্টারনেট।
১.
চাকরিতে এন্ট্রি রিক্যোয়ারমেন্ট হিসেবে বয়স বাড়ানোর যে দাবী তা সময়ের সাথে বাস্তবসম্মত। সংসদে গত বছর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নাকচের পর শিক্ষিত বেকাররা হতাশ হয়েছিল। সত্যি হতাশ হয়েছিল! দক্ষিণ এশিয়া-আফ্রিকা সহ সারাবিশ্বের উল্লেখযোগ্য দেশ গুলোতে যেখানে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা সর্বনিম্ন ৩৫ বছর থেকে লাইফটাইম সেখানে হতাশ হওয়াটা স্বাভাবিকই বটে। আমাদের দূর্ভাগ্য- আমাদের দেশে চাহিদার চেয়ে চাকরি অপ্রতুল। দেখা যায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে ৩য় শ্রেণীর লোক নেবে তিনজন- সেখানে আবেদন করে ৩০ হাজার জন। তরুণরা চাকরির পরীক্ষা দিতে দিতে হয়রান। সাধের চাকরি আর জোটে না। বিভিন্ন প্রকাশণীর গৎবাঁধা বই পড়তে পড়তে মোমের আলোতে কাটিয়ে দেয় জীবনের সেরা সময়। চাকরি আর হয় না! চলে যায় জীবনের ৩০ বসন্ত। সে পরিবারের কাছে ছোট হয়ে যায় । প্রতিনিয়ত সমাজের মানুষের প্রশ্নবাণে সে জর্জরিত। সে হেয়।
২.
কোন দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা কত সে তথ্য উপস্থাপন করতে চাই না। কারণ, একটু সচেতন মানুষগণ সে বিষয়টা অবগত আছেন। তবুও ছোট্ট করে বলি।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪০, বিভিন্ন প্রদেশে বয়সসীমা ৩৮ থেকে ৪০, শ্রীলংকায় ৪৫, ইন্দোনেশিয়ায় ৩৫, ইতালিতে ৩৫ বছর কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩৮, ফ্রান্সে ৪০, ফিলিপাইন, তুরস্ক ও সুইডেনে যথাক্রমে সর্বনিম্ন ১৮, ১৮ ও ১৬ এবং সর্বোচ্চ অবসরের আগের দিন পর্যন্ত। আফ্রিকায় চাকরি প্রার্থীদের বয়স বাংলাদেশের সরকারি চাকরির মতো সীমাবদ্ধ নেই। অর্থাৎ চাকরি প্রার্থীদের বয়স ২১ হলে এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে যেকোনো বয়সে আবেদন করা যায়।
রাশিয়া, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্যে যোগ্যতা থাকলে অবসরের আগের দিনও যে কেউ সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে পারেন।
৩.
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন বলেছে বাংলাদেশের যুবসমাজের ৯ দশমিক ১ শতাংশ বেকার।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য দিয়ে বিবিএসের (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো) সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশে প্রায় ২৬ লাখ বেকার রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ যুবক-যুবতী।
তো- এই ২৬ লাখ সংখ্যার যুবক-যুবতীরা কে?
-তারা অবশ্যই শিক্ষিত বেকার।
বিবিএস এর তথ্য ভাণ্ডার ছিল ২ বছর আগের। বাস্তবক্ষেত্রে হয়ত এই সংখ্যাটা এখন ৪০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
বাদ দেই এসব পরিসংখ্যান! শুধু বলি সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার ঢাকা নগরীর বিভিন্ন স্কুলগুলো ঘুরে আসেন। দেখতে পাবেন ঝাঁকে ঝাঁকে হতাশাগ্রস্ত শিক্ষিত বেকার।
৪.
যাঁরা সংসদে বসেন- তাঁরা নাকি জনগণের প্রতিনিধি। যাঁরা মন্ত্রী - যাঁরা নীতিনির্ধারক-- তাঁরা কী বুঝেন না বাস্তব ব্যপারটা! সরকারী চাকরীতে প্রবেশের বয়সসীমা ধরে প্রাইভেট সেক্টরেও চলছে রামরাজত্ব। সেখানে তো তারা আরেক কাঠি সরেস! তারা খুঁজে "কঁচি পোলাপান"।
নীতিনির্ধারকগন কি জানেন না সমাজের হালচাল!
আমাদের সমাজ কথা বলতে জানে। তারা কথা বলতে পারে " এতদিন পড়ালেখা করে বাল ফালাইছ! একটা চাকরিও যোগাড় করতে পারো না!"
তারা জানে বাস্তব পরিস্থিতি। তবুও তারা কথা বলে।
এই মানুষগুলো - এই বেকার মানুষগুলো দেশেরই মানুষ। এরা হতাশ মানে দেশের একটা অংশ হতাশ। এদের কাজের ক্ষেত্র তৈরী করে দেখুন অথবা ৩৫ বছরেও কাজ দিয়ে দেখুন তারা পৌঢ় নয়। তারা কাজ করতে পারে।
অনেক অনেক দাবী-তো মানা হয়। এমনকি হেফাজতের দাবীও আপনারা মেনেছেন। এবার না হয় আগামী নির্বাচনের কথা ভেবে এই দাবীটা মেনে দেখুন- রাজনৈতিক ভাবে ভেবে দেখুন।
৫.
অনেক দেখেছি । মনের ভিতর সংশয়। এই ব্যপারটা মনে হয় সরকারের উঁচুমহল আবারো বুঝতে চাইবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:২০