somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেত

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ৯:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গল্প


বেত
-আমিনুল ইসলাম মামুন

শরীফদের শ্রেণী শিক্ষক আমির আলী সাহেব খুবই রাগী একজন মানুষ। গায়ের রংটা তার ধবধবে ফর্সা। রাগলে তার দু’টো গাল আপেলের মতো লাল হয়ে যায়। প্রতিদিনই তিনি ক্লাসে ঢুকে বেত দিয়ে টেবিলের ওপর ‘কষ’ ‘কষ’ করে কয়েকটা আঘাত করেন। তার ওপর লালচে চোখের শাসানো ভাষাতো আছেই। তার হম্বি-তম্বিতে ছাত্র-ছাত্রীরা যতটুকু পড়া মুখস্ত করে আসে, তাও যেন ভুলে যায়। আজও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তারপর চড়া গলায় বললেন, `যারা পড়া মুখস্ত করে আসোনি তারা সবাই একদিকে এসে দাঁড়াও। আগে এদেরকে ধোলাই করে নিই।’

শ্রেণী কক্ষের ভেতরে যেন যথারীতি ভূমিকম্প হচ্ছে। যারা পড়া মুখস্ত করে আসেনি তারা সবাই বেঞ্চ থেকে উঠে এসে শিক্ষকের টেবিলের ডানপাশে দাঁড়াতে লাগলো। দাঁড়ানো শেষ হলে আমির আলী সাহেব এক এক করে গুনতে লাগলেন, এক... দুই... তিন...। এভাবে সতেরো পর্যন্ত। আমির আলী সাহেব মনে মনে ভাবলেন, এতোগুলোকে পেটাতে গেলে তো আমি নিজেই হয়রান হয়ে যাবো। তার চেয়ে ভালো ওদের একজনকে দিয়ে আরেকজনকে পেটানো যাক।

যেই ভাবা, সেই কাজ। হুঙ্কার ছেড়ে বললেন, ‘বাহ্ বাহ্ ..., এ তো দেখি পড়া না শেখাদের মিছিল হয়ে গেলো। সবুজ, তুমিতো পড়া শিখোছো। যাও, অফিস কক্ষ থেকে মোটা দেখে দশটা বেত নিয়ে আসও।’

সবুজ জানে বিলম্ব হলে এ কারণে তার ওপর খড়গ নেমে আসতে পারে। তাই দ্রুত পায়ে গিয়ে বেত নিয়ে এলো। ভীত কণ্ঠে বলল, ‘স্যার চিকন-মোটা মিলিয়ে নয়টা পেয়েছি।’

বেশ ভারী কণ্ঠে আমির আলী সাহেব বললেন, ‘চলবে।’

একটা বেত নিজ হাতে নিয়ে বললেন, ‘আটজন এখান থেকে আটটা বেত নিয়ে চারটা গ্রুপ করো। বাকিদের পালা পরে।’

অত্যন্ত ভীত ও ফ্যাকাশে মুখ নিয়ে এক এক করে আটজন টেবিলের ওপর থেকে আটটি বেত নিয়ে চারটি গ্রুপে একে অপরের মুখোমুখি দাঁড়ালো। তারপর বললেন, ‘এবার শুরু করো। যে খাতির করবে, তার জন্য আমি আছি।’

একজন সহপাঠি আরেকজন সহপাঠির গায়ে আঘাত করছে। এ যেন মূল আঘাতের চাইতে তিন-চারগুণ বেশি জোরে শরীরে বিধছে। রুমের ভেতরে শুধুই বেতের আঘাতের ‘কষ’ ‘কষ’ শব্দ শোনা যাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে পড়া মুখস্ত করাদের মধ্য থেকে একে একে আরও দু’জন পড়া মুখস্ত না করাদের সারিতে এসে হাজির হলো। তারা বাড়ি থেকে পড়া শিখে এসেছিল। কিন্তু এই অবস্থা দেখে ভয়ে সব পড়া খেয়ে ফেলেছে। আর একজন পেছনের দরজা দিয়ে দৌড়ে পালাতে গিয়ে স্কুলের বারান্দায় পড়ে যায়। কিন্তু আবার উঠে দৌড়ে পালিয়ে গেলো।

এমন সময় টেবিলের ওপর রাখা আমির আলী সাহেবের মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। বিরক্তির সাথে ফোনটির দিকে তাকিয়ে ‘এই জিনিসটা যে আবিস্কার করেছে, তাকে কাছে পেলে ইচ্ছেমতো বেত দিয়ে কষে পেটাতাম’ বলে কলটা রিসিভ করতে করতে বারান্দার দিকে গেলেন। এই সুযোগে ছাত্ররা ‘খাতির পর্ব’ সারতে বিন্দুমাত্রও দ্বিধা করলো না।

একটু পরই দেখা গেল আমির আলী সাহেবের অন্য হাতে থাকা বেতটি মাটিতে পড়ে গেল। চোখ দু’টি টলটল করে উঠলো পানিতে। ক্ষণিকের মধ্যেই আমির আলী জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলেন স্কুলের বারান্দায়। অন্য শিক্ষক ও ছাত্ররা এসে তাকে ধরাধরি করে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলেন স্কুল সংলগ্ন একটি ডাক্তার খানায়।

পরে জানা গেলো আমির আলী সাহেবের একমাত্র ছেলে যে স্কুলে পড়তো সে স্কুলের একজন বদমেজাজী শিক্ষকের হাতে অতিরিক্ত এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে অসতর্ক ও মাত্রাতিরিক্ত বেত্রাঘাতে জ্ঞান হারিয়েছিল। আধাঘণ্টা পর নিশ্চিত হওয়া গেলো যে, সে চলে গেছে না ফেরার দেশে।
E-mail : [email protected]
=====0=====
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×