নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সতেরো
বিসন্নতা জিনিসটা অনেকটা ব্ল্যাকহোলের মত।মানুষের সবটুকু ভালো আর সবটুকু আশা টেনে নিয়ে সে মনটাকে শূন্যতা করে দেয়।এই শূন্যতার বোধটা মানুষ সহ্য করতে পারেনা। আবার মন থেকে বের করে দিতেও পারেনা।ব্ল্যাকহোলের অসীম ভরটুকু তার মনের উপরে চেপে বসে থাকে।মনের এই অবস্থাটা খুবই বিচিত্র।
গভীর শূন্যতা কিন্ত তার ভার অসীম!
বুকের খোলা প্রান্তরে শুধু ঝড়ো হাওয়ার চলাচলের শব্দের মত হাহাকার করে বেড়ায় এক একটি পুরোনো স্মৃতি বা কোনো পূরণ না হওয়া স্বপ্ন।
শ্রাবনী তার বুকের মধ্যে একটা ব্লাকহোল বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে!তবে এই অবস্থা তার একদিনে হয়নি।বহু বছরের আশাভঙ্গ হওয়ার পুনরাবৃত্তি আর সামাজিক অবিচার তার মনটিকে এতটাই ভারাক্রান্ত করে ফেলেছে যে তার মনের গঠনটিই পরিবর্তিত হয়ে গেছে।তুষারের কাছে সে আশ্রয়ের জন্য গিয়েছিল কিন্ত সেই তাকে চূড়ান্ত নিরাশ্রয় করে ছেড়ে দিয়েছে।
যত যাই হোক তুষারের জন্য শ্রাবণীর ছিল এক বুক ভর্তি মায়া।তুষার খুব প্রাণখুলে হাসতে পারে।এই হাসিটা শ্রাবণী খুব ভালোবাসে।গল্প করতে করতে তুষারের মুখের প্রতিটা ভাবভঙ্গি সে লক্ষ্য করত।তার মুখটা, মুখের প্রতিটা ভঙ্গি শ্রাবণীর খুব চেনা।এই চেনা মুখটার জন্য তার খুব মায়া।মায়ার বাঁধনটা ছিড়তে তার খুব কষ্ট হয়!
তুষারের কিছু জিনিস খুব ভালো লাগত তার কাছে।ছেলেরা মেয়েদের উপর কেমন যেন একটা আধিপত্য বিস্তার করতে চায়।অনেকটা যেন বাধ্যগত বানানোর চেষ্টা থাকে ছেলেটার।নিজের ইচ্ছামত মেয়েটিকে পরিবর্তিত করার জিদ থাকে অনেক ছেলের মধ্যে।তুষার এই জিনিসটা করতো না।ভাল কাজে,পড়াশোনায় বা ক্যারিয়ারে সে শ্রাবণীকে বরাবর খুবই উৎসাহ দিয়ে গিয়েছে।সেইসাথে সাধ্যমত সাহায্য করেছে।অনেকবেশি নির্ভরযোগ্য বন্ধুত্ব ছিল তাদের মধ্যে।শ্রাবনীর মনে হতো তুষারের সাথে জীবন কাটাতে হলে তাকে খুব বেশি পরিবর্তিত হতে হবে না।ইচ্ছা মতো জীবনটাকে সাজিয়ে নেয়া যাবে।এটা এদেশে বিরল একটা জিনিস।উচ্চশিক্ষিত এবং উচ্চপদস্থ বেশিরভাগ ছেলের ক্ষেত্রেও এই বিষয়টা পাওয়া যায় না।বেশিরভাগ প্রগতিশীল মানুষও ঘরে স্ত্রীর মতামতকে তেমন মূল্য দেন না, নিজের মতটাই চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করেন।তুষারের মধ্যে জাতিগতভাবে নারীদেরকে তুচ্ছ ভাবার প্রবণতা ছিলনা।এই জিনিসটার খুব কদর করতো শ্রাবনী।সে জানতো অনেক ভাল ছেলে হয়ত সে পাবে কিন্ত ছেলেদেরর মধ্যে এমন মানসিকতাটা পাওয়ার কোনো গ্যারান্টি নেই।
এইজন্যেই তার শত ভুল ক্ষমা করে দিয়ে প্রতিবারই নতুন করে শুরু করতে চেয়েছে সে।তার কাছে প্রতিবারই মনে হয়েছে আর একটুখানি বোঝাপড়া ঠিক হলে তারা খুব সুখি একটা কাপল হতে পারবে।কিন্ত প্রতিবারই ঐ একটুখানি বাকি থেকে গেছে।আসলে বোঝাপড়ার জন্য দুপক্ষের আগ্রহ প্রয়োজন হয় তুষারের দিক থেকে তেমন আগ্রহ ছিলনা কখনোই।শ্রাবণীর বন্ধু হিসাবে তুষার খুব ভাল হলেও প্রেমিক হিসাবে তার ভূমিকা ছিল ধ্বংসাত্মক!
চাকরি পাওয়ার পর তুষার যে তাকে হিংসা করেছে ব্যাপারটা তা নয় তবে বলত তুমি বুঝবা না চাকরির স্ট্রাগল কি জিনিস।তব শ্রাবণী যখন তাকে চাকরির পরীক্ষা কেমন হচ্ছে জিগাসা করত তখন সে বলত-এই আলোচনা বাদ দাও তো।শ্রাবণী ভেবেছে তুষার যা পছন্দ করছে না সে তা আর জিগাসা করবে না।মুখে জিজ্ঞাসা না করলেও মনে মনে ঠিকই খেয়াল রেখেছে সে।তবে তুষার তাকে বলেছে তোমার চাকরি আছে,তুমি তো ভাল আছ।এই একা জীবনের কষ্টটা সে একেবারেই বিবেচনায় আনেনি।শ্রাবণী মনের কোনো দুঃখের কথা তাকে বলতে গিয়ে বকা খেয়ে ঠিক করেছে নিজের কথা আর বলবে না।তাই তুষারের সাথে শেয়ারিং অনেক কমিয়ে দিয়েছে সে অভিমান করে।সেই তুষারই এসসময় অভিযোগ করেছে যে শ্রাবণী তার পরীক্ষার খোঁজ রাখেনা,তার সাথে কথা শেয়ার করে না।তুষার আসলে কি চায় তা নিজেও জানেনা।তার জীবনের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যেও হয়ত নেই।এইসব নিয়ে কথা কাটাকাটি করতে গিয়ে অসংখ্যবার দগ্ধ হয়েছে সে।তার দিকেই অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছে।তুষার তাকেই বলেছে তুমি কেয়ারিং না।গার্লফ্রেন্ড হিসাবে তুমি ইন্সপায়ারিং না।অথচ কেয়ার বা উৎসাহ দিতে গেলে সে নিতেও চায়নি।
তুষারের সাথে পুরো ব্যাপারটা ছিল অনেকটা স্লো পয়জনিং এর মত।সেই নিভৃতপল্লীর ঘরে বসে দেখা স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করার পথে অনেক বাধাই তো এসেছে।অনেকেই সমালোচনা করেছে,বলেছে সে পারবে না।তবুও নিজের ভেতরে প্রজ্জ্বলিত থাকা অনির্বাণ প্রদীপটিকে সে নিভে যেতে দেয়নি।আত্মবিশ্বাস সে কখনো হারায় নি।তুষারের বিভিন্ন সময়ে বলা কথাগুলো খারাপ লাগলেও সেগুলো শুরুতে বড় কোনো ক্ষতি করেনি।কিন্ত দিনে দিনে মনের গোপনে কোথায় যেন ক্ষয় হতে শুরু হয়েছে। কারন সেগুলো সে ভুলে যেতে পারেনি পুরোপুরি।এসিড জমিয়ে রাখলে ক্ষয় তো হবেই একদিন।
যখন একেএকে বন্ধুবান্ধব সবাই জীবনে সেটেল হয়ে যাওয়া শুরু করেছে তখন ভেতরে ভেতরে সে দিশেহারা বোধ করেছে।কখনো আশা কখনো দুরাশা,এই অনিশ্চয়তাই তাকে ক্ষয় করেছে সবচেয়ে বেশি।সংসার সন্তান নিয়ে স্বাভাবিক জীবনের স্বপ্ন সে দেখবেই বা না কেন?একবার মনে হয়েছে তুষার সিরিয়াস হয়েছে এবার হয়ত বিয়েটা হবে,অন্যবার তার চিরাচরিত ঢিলামী দেখে সে বুঝতে পেরেছে সেই আশাটুকু নেই। তুষার বিয়ে নিয়ে ভাবছেই না।মুখ ফুটে যদি শ্রাবণী বলেছে বাসায় ছেলে দেখছে,আমার বিয়ে হয়ে যাবে।প্রতিবার তুষার বলেছে বিয়ে হয়ে গেলে আমি আর কি করতে পারব?তোমাকে ধরে রাখব কিভাবে?আসলে যে সে ধরে রাখার চেষ্টাটাই করছে না সেটা সে একবারও ভেবে দেখেনি।
শ্রাবনী জানে তুষার বিয়ে না করলে তাকে অন্য কারো কথা ভাবতে হবে।কিন্ত অন্য একজন কে গ্রহন করতে হলে প্রাক্তনকে তো আগে মন থেকে সরাতে হবে।দূরে সরে থাকতেও তো দেয়নি তুষার তাকে।এদিকে নিজে গ্রহনও করেনি।ধরে রেখে যে শান্তিতে আর যত্নে রেখেছে ব্যাপারটা তাওনা।
ব্যাপারটা যেন কাঁটা বিধিয়ে অনর্গল খুঁচিয়ে যাওয়ার মত।কোথাও যদি কাঁটার ব্যাথা থাকে তাহলে একসময় মানুষের সেটাও সহ্য হয়ে যায়।কিন্তু ব্যাথা যদি কমতে বাড়তে থাকে তবে সেটা হয়ে ওঠে অসহ্য।নিরাশা জিনিসটা হয়ত এতটাও খারাপ না।কিন্ত আশা নিরাশার দোলাচলের মাঝে বেশিদিন থাকলে মানুষ পাগলের মত হয়ে যায়।সেটাই হয়েছে তার ক্ষেত্রে।
একটা মানুষ চূড়ান্ত খারাপ হলে তাকে ভুলে যাওয়া সহজ, ঘৃণা করাও সহজ।কিন্ত তুষারের মত কেউ হলে তাকে নিয়ে কি করা যাবে?তুষারের যেগুলো ভাল সেগুলো খুবই ভাল,আর যেটুকু শ্রাবণী সহ্য করতে পারেনা তা আসলেই সহ্য করার মত না।নিজের খামখেয়ালিপনা এতটাও থাকা উচিত না যেটাতে অন্য মানুষের ক্ষতি হয়।
তবুও শ্রাবণী চেষ্টা করেছে বিষয়গুলো মেনে নেয়ার।কিন্ত নিজের জীবনে যখন অনিশ্চয়তার ঝড় তখন প্রেমিক যদি সেটা না বুঝে গল্পগুজব করেই সময় কাটাতে চায় তাহলে সেটা মেনে নেয়া অসম্ভব।প্রেমিকার মন যে বোঝে না সে কেমন প্রেমিক?শ্রাবণী যদি একা না থাকতো তাহলে হয়ত তুষারকে ঝেড়ে ফেলতে তার এত কষ্ট হতোনা।নিজের একাকিত্ব আর তুষারের প্রতি তার হৃদয়ের দূর্বলতার কাছে বারবার সে পরাজিত হয়েছে।
মনের ভেতরে রাগ, ক্ষোভ,দুঃখ,অভিমান জমে জমে কেমন যেন আগ্নেয়গিরির মত হয়ে গেছে তার।কোন সুযোগে একটু ফাটল দেখা দিলে একের পর এক অগ্নুৎপাতের মত সব বের হয়ে আসতে চায়।তার ফিটনেসটাও নষ্ট হয়েছে খুব বেশি।শরীর আগের চেয়ে অনেক ভারী হয়ে গিয়েছে।ঘরে বাইরে এ নিয়ে খুব কথা শুনতে হয় তাকে।
কথা সে শোনে না কি নিয়ে?বিয়ে কেন হচ্ছে না এত বয়স হলেও সেটার জবাব দিতে দিতে সে হয়রান।সব মিলিয়ে শ্রাবণীর মানসিক চাপ এমন একটা অবস্থায় চলে গিয়েছে যে তার মনে হয় যে মাথাটা একদিন বোমার মত ফেটে যাবে।বন্ধুরা সবাই যার যার জীবনে ব্যস্ত।তাদের কাছে সাপোর্ট পাওয়া যায় না।যারা ফ্রী থাকে তাদের ফোন দিলে ঘুরে ফিরে অপ্রিয় বিষয়গুলোর আলোচনা চলে আসে।আত্মীয়দের কাছেও সেই একই ব্যাপার।ভয়ে ভয়ে সব মানুষের ভীড় এড়িয়ে চলে সে।কিন্ত মানুষের সঙ্গটাই তার এখন সবচেয়ে বেশি দরকার।আজ সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বয়স চলে গেলেও বিয়ে হয়নি বলে সকলের কাছে সে অবাঞ্চিত!
শ্রাবনীর কাছে মনে হয় তার সাইক্রিয়াটিস্ট এর কাছে যাওয়া দরকার কিন্ত এদেশে ওটা করলে গুজব রটবে যে তার মাথায় গন্ডগোল দেখা দিয়েছে।এমনিতেই কারা যেন রটিয়েছে তার বাচ্চা হবেনা বলেই কেউ তাকে বিয়ে করেনা।এসব কথা শুনলে শ্রাবনীর ভীষণ কান্না পায় কিন্ত কেন যেন সে মন খুলে কাঁদতেও পারেনা।
তার মনের মধ্যে নিজেকে নিয়েই হাজারো সংশয়।তুষারের বলা কথাগুলো সে নিজেই ঘুরেফিরে আওড়াতে থাকে।
মনে মনে বলে, আমিতো ভালনা।আমার চেহারা ভালো না,আমার ফিগার ভালো না এই জন্য তুষার আমাকে ভালবাসে না।
কখনো বলে আমার কথা শুনতে তো ওর ভাল লাগেনা।কেন সে আমাকে বিয়ে করবে?
আমিতো তার ভালো গার্লফ্রেন্ড হতে পারিনি।আমার হাসি সুন্দর না এই জন্যেই আমার এই দশা।আমি কাওকে সন্তষ্ট করতে পারিনি এই জন্যেই সবাই আমাকে খারাপ বলে।আমি ভালনা বলেই আল্লাহ আমাকে এত শাস্তি দিচ্ছেন।আমি ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য না বলেই আত্মীয়রা আমাকে এত অপছন্দ করে।
এমনিতে সে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে অফিসের কাজকর্ম করে কিন্ত বাড়ি ফিরলে শুরু হয় তার মন খারাপের পালা।অফিসে কেউ কিছু বললেও তার মনে হয় সে ভালনা বলেই তার সাথে সবাই এমন করছে।মাঝেমাঝে সে ইনিয়েবিনিয়ে কাঁদে,আপন মনেই একাএকা আবোল তাবোল বকে।রান্না করতে গেলে একটু ছ্যাঁকা লাগলেও সে মনে মনে ভাবে---আমার সাথেই তো এমন হবে।আমি ভালনা এইজন্যেই আল্লাহ আমাকে শাস্তি দেবেন।তার মনের অবস্থা এমন হয়েছে যে কেউ একটু কষ্ট দিলে বা কটু কথা বললেও তার সমস্ত কষ্টের কথা মনে পড়ে যায়।এরপর সে নিজেকেই দগ্ধ করতে থাকে,নিজেকেই দোষারোপ করতে থাকে।মাঝে মাঝে হু হু করে কেঁদে উঠে বলে কেন?কেন হে খোদা?আমার এত কষ্ট কেন?
আজকাল শ্রাবণী বই পড়তে পারেনা।মুভি দেখতে তার ইচ্ছা করেনা।টেলিভিশন চালিয়ে বসে থাকলেও কি হচ্ছে তার মাথায় ঢোকে না।সে শুধুই তাকিয়ে থাকে।সূচ সুতা নিয়ে বসে না সে অনেকদিন।সে শুধু আকাশপাতাল ভাবতে থাকে।
সারাজীবন এলাকার যে ছেলেগুলো তার সাথে শত্রুতা করেছে তারা এখন ভাল চাকরি করছে।নিজ পছন্দে সুন্দর মেয়ে দেখে বিয়ে করেছে।আর সে তো তার যোগ্য অবস্থানে যেতে পারেইনি বরং তার সাথে একের পর এক খারাপ জিনিসই হয়ে যাচ্ছে।বয়স তার ত্রিশ ছুঁয়েছে কিন্ত জীবনটা তার অগোছালো।এলাকার খারাপ মানুষগুলো তার মাকে অনর্গল সে কথা শুনিয়ে যায়।
জীবনে কারো ক্ষতি না করা,এতখানি স্ট্রাগল করা শ্রাবণীর কি তবে আর সুন্দর জীবন হবে না?
সে এবং তার মা কি তবে ব্যার্থ হয়ে গেল।শ্রাবনী জানে সে এলাকার একটা আইকন।তাকে দেখে অনেক গ্রাম্য বাবা মা তাদের মেয়ের পড়ালেখার পেছনে খরচ করা শুরু করেছে।তার অল্পশিক্ষিত বান্ধবীদের ভাল বিয়ে হয়েছে কিন্ত সে অবিবাহিত!এটা সবদিক থেকেই একটা খারাপ উদাহরণ। সবাই আগে পজেটিভ ভাবে তার উদাহরণ দিত এখন দিচ্ছে নেগেটিভ ভাবে।মেয়ে এতবেশি যোগ্য হলে তার বিয়ে হবে না!মেয়েদের বাবা-মা কে বলছে সবাই।
শ্রাবণীর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল একদিন সে সুন্দর একটা জীবন গড়তে পারবে আর যারা তার সাথে ভয়ানক শত্রুতা করেছে তাদের সাজা হবে।কিন্ত বাস্তবে হয়েছে উল্টোটা।সাজাটা তার হচ্ছে।নিজের মনোবল আর বিশ্বাসগত দিক থেকে জোর একটা ধাক্কা লেগেছে এতে।তার মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে গেছে সে আল্লাহ তাকে পছন্দ করেন না।
বেঁচে থাকার ইচ্ছাটুকু তার হারিয়ে গেছে।নিজের যত্ন নেয়া বা সাজগোছ করা কিছুই সে করতে পারেনা।ফিটনেসের জন্য একটু ব্যায়াম করতে গেলে মনে হয় কি হবে এসব করে?এমনিতেও তো কেও তাকে ভালবাসে না।চিকন হলেই কি ভালোবাসবে?তার গায়ের ক্ষতগুলোর কথা শুনলে তাকে কি কোনো ভাল ছেলে বিয়ে করবে?আধা শিক্ষিত বয়ষ্ক টাইপ কাওকে হয়ত তার বিয়ে করতে হবে।এর চেয়ে তো মরে যাওয়াও ভালো।
শ্রাবণীর বুকের ভেতরের উচ্ছল নদীতে চর পড়তে শুরু করেছে।আত্ম দহন, দুশ্চিন্তা, সিদ্ধান্তহীনতা আর একাকিত্ব মিলে তাকে গভীর বিসন্নতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।নিজে সব কিছু ঠিকমতো করার পরেও যখন কিছুই ঠিক থাকেনা তখন কতটা অসহায় লাগে তা কে বুঝতে পারবে?
এই বিসন্নতার বিষয়টি সে সযতনে সবার থেকে লুকিয়ে রাখে।তার মা শায়লা বেগমের থেকেও।সবার সামনে হয়ত হাসিমুখ ধরে রাখে আর মনে মনে বলতে থাকে আমার ভাল হবে না,আমায় কেউ ভালবাসে না,আমার বেঁচে থাকার অধিকার নেই।বাঁচার আকুতিতে মরিয়া হয়ে মাঝে মাঝে সে তুষারের দিকে হাত বাড়ায়।নিজের মনের অবস্থা তাকে খুলে বলতে চায়।সেখান থেকে বরাবরের মতই আরো বেশি আঘাত নিয়ে ফিরে আসে!তখন মাঝে মাঝে চিৎকার করে কাঁদে কিন্ত বুক হালকা হয় না। এই সময়ে বিছানায় কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে সে কবরের কথা চিন্তা করে।ভাবে সেখানে থাকলে হয়ত যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে পারতো। আশ্চর্য মানুষ এতটাও একা হয়!
এমন সময়ে মনের সবটুকু জোর এক করে সে তুষারকে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্তটা নিয়েছে।মনের এই অবস্থা থেকে রাতারাতি উঠে আসা সম্ভব না।তবে তুষারের ব্যাপারে কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার পর শ্রাবণী দোটানা অবস্থা থেকে কিছুটা মুক্তি পেল।তার মা অনেকদিন থেকে বলছিল শারীরিক সমস্যা কেন হলো জানতে একটা ভাল ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা তবে শ্রাবণীর ইচ্ছা করেনি।সে শেষ পর্যন্ত ঠিক করল ডাক্তার দেখাবে।
আঠারো
লম্বা ফরসা সৌম্যদর্শন এক ভদ্রলোক টেবিলের অপর পাশে বসে শ্রাবণীকে লক্ষ্য করছেন।তিনি কিছুক্ষণ পর বললেন খুব মন খারাপ করে থাক?শ্রাবণী চমকে উঠে ভাবলো লোকটি কিভাবে জানলো এ কথা?
ডাক্তার বলতে থাকলেন তোমাকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে তুমি খুব দুশ্চিন্তা কর।রিপোর্টে তেমন কোনো সমস্যা নেই।সামান্য একটু হরমোনের গোলমাল আছে।হরমোনের ওষুধও খাওয়া হয়েছে আগের রিপোর্টে দেখছি।সেটা নিয়ে অবশ্য চিন্তা করার কিছু নেই।অনেকে পানি খেলেও বাড়ে।কারো কারো জেনেটিক গঠনই হয় এমন।আমি কিছু ঔষধ দেব যেটা দুশ্চিন্তা দূর করতে সাহায্য করবে।তুমি আগে নিজের দুশ্চিন্তা দূর কর,মনটাকে শান্ত কর।
প্রেসক্রিপশন নিয়ে শ্রাবণী মায়ের সাথে বাইরে বের হয়ে আসে।থাকতে না পেরে সে মায়ের কাছে তার মানসিক চাপের কথা কিছুটা বলেছে।বলতে না চাইলেও মন হালকা করার জন্য তুষার তার সাথে কি আচরণ করে কিছুটা বলেছে।সব শুনে শায়লা বেগম হতভম্ব হয়ে গেছেন।ছেলেটার ব্যাপারে তিনি পজিটিভ ছিলেন না কিন্ত এটাও ভাবেননি ছেলেটি এমন করবে।তিনি ঠিক করেন মেয়ের দিকে বিশেষভাবে নজর দেবেন।
এর একমাস পর কয়েক দিনের ছুটি নিয়ে শ্রাবণীকে বাড়ি যেতে হলো।শায়লা বেগম মেয়ের জন্য একটি মেডিটেশন কোর্সে রেজিষ্ট্রেশন করেছেন।শ্রাবণী খুবই বিরক্ত।শায়লা বেগম বুঝিয়ে শুনিয়ে তাকে সেখানে পাঠালেন।কোর্সটা শেষ করার পর সে বুঝতে পারলো এটা খুব ভাল একটা সিদ্ধান্ত ছিল।
সে কখনো বুঝতে পারতো না যে সে কারো ক্ষতি না করলেও অন্যরা কেন তার ক্ষতি করতে চায় বা তাকে খারাপ বলে।সেই কোর্স থেকেই সে শিখেছে কারও ক্ষতি না করলেও লোকে শত্রুতা করতে পারে,এতে নিজেকে দোষারোপ করার কিছু নেই।নিজের কনফিডেন্স যেন ধোঁয়ার মত উবে গিয়েছিল।সেই কোর্সে শেখানো বিষয়গুলো দিয়ে ধীরে ধীরে তা সে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করে।আর সবচেয়ে বেশি চেষ্টা করে নিজেকে ভাল রাখার।মেডিটেশন কোর্স থেকে এটাই হয়ত তার সবচেয়ে মূল্যবান শিক্ষা--'নিজেকে ভাল রাখতে হবে,নিজের মনকে শান্ত রাখতে হবে।আর সেটা করতে হবে নিজেকেই'
ডাক্তারের দেয়া ঔষধটা কাজ করছে।শ্রাবণীর মন খুব হালকা লাগে।মনের উপর বসে থাকা দুশ্চিন্তার চাপটা আর নেই।তবে দিন রাত সারাদিন খুব ঘুম পায় তার।সে ঘুমায়ও অনেক। প্রথম এক মাসেই তার ওজন কমেছে ছয় কেজি।শ্রাবণী এ নিয়ে ইন্টারনেটে পড়াশোনা করে দেখেছে।দুশ্চিন্তায় থাকলে এক ধরনের স্ট্রেস হরমোন নিঃসৃত হয় যা শরীরের ক্ষতি করে অনেকভাবে।কারও কারো ওজন বেড়ে যায়,কারো কমে যায়।ঔষধগুলো খাবার পর থেকে মনে হচ্ছে গত দুইতিন বছরে এতটা হালকা মন নিয়ে থাকেনি সে। একটু একটু করে নিজের যত্নও নিতে থাকে শ্রাবণী।
তার মা তোড়জোড় করে ছেলে খোঁজার চেষ্টা করছেন।আত্মীয়দের বলা হয়েছে।কেউ কেউ তাচ্ছিল্য করেছে,কেউ কেউ সাড়া দিয়েছে।শ্রাবণী মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্য কাওকে গ্রহণ করার।সে অবশ্যই নিজেকে আরেকটা সুযোগ দেবে।
এর মধ্যে একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো!তাদের অফিসে নতুন কিছু অফিসার এসেছে। তার মধ্যে একজন খুবই সুদর্শন!মাঝারি আকৃতির ছেলেটি এতটাই ফরসা যে তাকে মেয়ে ভেবে ভুল হয়।ছেলেটি পোশাকে পরিচ্ছদেও খুব স্মার্ট। চাকরিতে জুনিয়র হলেও বয়েসে তার চেয়ে বছর দুয়েকের বড়ই হবে।চাকরিতে জয়েন করার একমাসের মধ্যে সে শ্রাবণীকে প্রপোজ করে বসল।অন্যকিছু নয় একদম সরাসরি বিয়ের প্রপোজাল। অফিসে কেউ বিয়ের প্রপোজাল দিলে খুব মুশকিল! কে কোথায় দেখে ফেলবে তার ঠিক নেই!শ্রাবণী তখনকার মত বুঝিয়ে তাকে ফেরত পাঠায়।বলে ভেবে দেখবে।বাসায় এসে সে ভাবে মাকে বিষয়টা জানাতে হবে।
চলবে--
১৯ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৪৫
সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: অবশ্যই!
আর তা যদি বহুদিনের সম্পর্ক হয় তাহলে বুকটা খালি হয়ে যায়!
২| ১৯ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: শুধু শ্রাবনী না প্রতিটা মানুষের মধ্যেই একটা ব্লাকহোল আছে।
২০ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ৮:২৭
সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: তাই নাকি?
৩| ১৯ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:৫৭
করুণাধারা বলেছেন: সবকটা পর্ব পড়েছি, অফলাইনে থাকায় মন্তব্য করা হয়ে ওঠেনি।
চমৎকার লিখেছেন, প্রতি পর্ব শেষে পরের পর্বের জন্য আগ্রহ জেগে থাকে।
২০ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ৮:২৯
সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: ধন্যবাদ চমৎকার মন্তব্যের জন্য--
এমন উৎসাহ পেলে লেখার আগ্রহ বাড়ে---
৪| ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৪
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: এ পর্ব অনেকটা শ্রাবনীর স্বীকারোক্তির মত হয়ে গেল। যা বিয়ে নামক লাডডু না খাওয়ার বিরহে এবং অবদমিত কামে কাতর।
কোথায় যেন পড়েছিলাম - "অবদমিত কাম মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু" ।শ্রাবনীর অবস্থা দেখে তাই মনে হচছে।তার জরুরী ভাবে কাম থেরাপী দরকার মনে লয়। না হলে বিয়ে নিয়ে তার এত উতলা হওয়ার কিছু আছে বলে মনে হয়না। আর সে বিয়ে করেনি বলে তার জীবনের সব শেষ হয়ে গেছে এমনটা ভাবাও তার বোকামীর লক্ষণ।
এটা ঠিক গভীর রাতে মনের মাঝে কামশয়তান বেটা ঢিল মারে কিন্তু তাকে নিয়ন্ত্রনের হাজারো উপায় দুনিয়াতে বিদ্যমান।তাই বিয়ে না হওয়ার জন্য এত হতাশা শ্রাবনীর মত উচচশিক্ষিত,স্বনির্ভর রমনীকে মানায় না।আর বিয়ে মানেই যে সব সুখের আধার এমন নয়।এ দিললিকা লাডডু না যে খালি মজাই মজা।বিয়ের মজা (প্যারা) কি জিনিষ তা যারা করছে তারাই জানে।বিয়ে অনেকটা টয়লেটের মত।অনেক প্রেশার নিয়ে টয়লেটের ভিতরে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে আর যেই মাত্র ভিতরে ঢুকে তার সাথে সাথে বাইরে বেরিয়ে আসার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে।ঐখানে নাকি দম বন্ধ হয়ে আসে।ঠিক সেই রকম যারা বিয়ে করেনি তারা বিয়ে কল্পনায় (fantasy ) ভোগে আর যারা বিয়ে করেছে তারা তা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় বের করতে করতে পেরেশান হয়ে পড়ে।
মায়ের ভূমিকা ভাল লাগল। তার এরকম ভূমিকা আরো আগে নেয়া উচিত ছিল। এ ক্ষেএে মা হয়ত সবচেয়ে বেশী সহায়তা করতে পারে শ্রাবনীকে এ হতাশা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য।
সবশেষের twist (প্যারাটা) ভাল লাগল।রুচিতে পরিবর্তন অইব,মনে নতুন রং লাগব বলে মনে লয় পরের পর্বে শ্রাবনীর।
২১ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:৫৭
সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: আপনার সুদীর্ঘ মন্তব্য পড়ে মনে হচ্ছে আপনি আসল পয়েন্টটি মিস করে গেছে।অবশ্য এমনও হতে যে আমি নিজেই গুছিয়ে লিখতে পারছি না।
সুশিক্ষিত আর স্মার্ট হলেই যে নারীরা সমাজের বাইরে চলে যায় তা নয়।
বরং সব গুন থাকা সত্ত্বেও যে শুধুমাত্র বিয়ে না হওয়ার কারনে আজও একটি মেয়েকে এতটা সামাজিক টর্চার সহ্য করতে হয় এবং সকলেই তার জীবন বৃথা এটাই প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে।একসময় মেয়েটি নিজের কনফিডেন্স হারিয়ে ফেলে এবং ডিপ্রেশনে চলে যায়--এবিষয়টিই এই অংশটুকুতে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।
অবদমিত কামের যে বিষয়টি আপনি তুলে ধরেছেন সেটি আসলে আমাদের পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবেরই প্রকাশ!
পুরুষের কাছে বিয়ের ব্যাপারটা শুধুই কাম হতে পারে কিন্ত নারীদের কাছে তা আরো গভীর কিছু।
শ্রাবনীর মত ত্রিশোর্ধ নারী কামের চেয়েও সামাজিক নিরাপত্তার অভাবটুকু বেশি করে অনুভব করে কারন এদেশে নারীদের সেই নিরাপত্তা নেই।ছোট শহরে একাকি মেয়েদের জন্য নেই বাইরের দেশের মত ক্লাব বা স্পোর্টস এর সুযোগ।এমনকি একা একা পার্কে যাওয়াও নিরাপদ না।এমন ক্ষেত্রে নিজের জীবনসঙ্গী, সংসার,সন্তান হয় তার আশ্রয়ের জায়গা।
বিয়েটাকে টয়লেটের সাথে তুলনা করেছেন দেখলাম।সত্যি কথাটি হচ্ছে এদেশে কি সংসারের ভেতরে কি তার বাইরে সব জায়গাতেই মেয়েরা প্রেশারে থাকে।
৫| ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:১১
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: নারী-পুরুষ নির্বিশেষে উভ্য়েই সামাজিক জীব। উভয়ের মৌলিক মানবিক চাহিদা তথা জৈবিক চাহিদা রয়েছে।উভয়ের কাছ থেকেই সমাজের কিছু প্রত্যাশা রয়েছে এবং উভয়েরই সমাজের প্রতি কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে।
আমি আসলে পয়েন্টটি মিস করিনি তবে তাতে আমি মেইন ফোকাস দিতে ইচছুক না।এটা ঠিক যে,সমাজে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা কিছুটা বেশী সমস্যার মুখোমুখি হয়।আমি আসলে এটাই বলতে চেয়েছি সমস্যা থাকবে তারপরেও শ্রাবনী তথা সকল নারীকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে এ সকল সমস্যা এড়িয়ে ।আবার এটাও সত্যি যে ,পরিণত বয়সের একটা মেয়ের বিয়ে না হলে এবং একা থাকলে আমাদের সমাজে ভাল চোখে মেয়েটিকে দেখা হ্য়না আর মেয়েটি অনেক অনভিপ্রেত ঘটনার মুখোমুখি হয়।
আর সুস্স্থ্ স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের অধিকারী নারী-পরুষ কেউ কামকে অস্বীকার করতে পারেনা।এটা মৌলিক মানবিক চাহিদারই একটা অংশ। আর আমাদের সমাজে বর্তমানে নর-নারী নির্বিশেষে সবাই একটা দুর্যোগের সময় পার করছে।তবে নারীদের ক্ষেত্রে তা নরদের তুলনায় একটু বেশী অনিরাপদ এবং কঠিন - এটা ঠিক ।
৩০ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:০২
সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: লেখার এই অংশটিতে জৈবিক চাহিদার বিষয়টি বলা হয়নি।
৬| ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:২০
সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: সুখের সংজ্ঞা আসলেই অজানা।
৩০ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৪৩
সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: একেকজনের কাছে সুখের সংজ্ঞা একেক রকম।
৭| ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৪০
সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: বরাবরের মতোই অসাধারণ। এই সিরিজটি শুধু প্রেমের নয়, সমাজের গল্প বলে। শ্রাবণীর মনের একেকটি দ্বিধা দ্বন্দ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সমাজের "ক্যাজুয়াল অমানবিকতা!" আমি প্রথমে কনফিউজড ছিলাম ওর মতো শিক্ষিত, চাকরিজীবী মেয়ে কেন তুষারের মতো কেয়ারলেস, মিথ্যুককে ছাড়তে পারছেনা। একটা মেয়ে হয়েও আমি এটা বুঝতে পারিনি কেন হাজারটা মেয়ে প্রেমিক/স্বামী গোত্রীয় মানুষগুলোর অবহেলা, অত্যাচার এমনকি মারধোরও সহ্য করে যায় আমৃত্যু।
শ্রাবণী বারবার ভেবেছে অন্য ছেলেদের মধ্যে তুষারের মতো সবকিছুতে সাপোর্ট করার গুণটি থাকবেনা। সত্যিই তো! যে সমাজে ভাবে - ইভটিজিং নায়কোচিত, ধর্ষণ পুরুষত্ব, বউ পেটানো বীরত্ব, এসিড নিক্ষেপ ছেলেমানুষী - সেই সমাজের কাছ থেকে কি আশা করা যায়? বেশিরভাগ পুরুষকেই তিলে তিলে নারীর প্রতি অসম্মান/সহিংসতার শিক্ষা দিয়ে বড় করা হচ্ছে। মেয়েরা তাই যাকে পাচ্ছে তাকেই মন্দের ভালো ভেবে চালিয়ে নিচ্ছে। প্রেমিক সময় না দিলে ভাবছে সাপোর্ট তো করে, স্বামী পড়াশোনা/চাকরি বন্ধ করে দিলে ভাবছে মারধোর তো করেনা, মারধোর করলে ভাবছে লয়াল তো, চিট করলে ভাবছে সন্তানের কি হবে এবং সামনেও ভালোপুরুষ জীবনে পাবার নিশ্চয়তা নেই। যেহেতু সমাজে সিস্টেম্যাটিক্যালি ছেলেদের বোধ বিবেককে মেরে ফেলা হয় ছোট থেকেই। পর্বের পর পর্ব শ্রাবণীর মনের কথাগুলো লিখে আপনি গুছিয়ে নিজের লেখার পারপজ ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু হয়ত অনেক পাঠক সামাজিক ইস্যুটিকে গুরুত্ব দেবেই না, এমনকোন এংগেল বের করবে যার সাথে প্লটের কোন সম্পর্কই নেই। কিন্তু আপনি লিখতে থাকুন আপু, সমাজ একদিন বদলাবে। এযুগের নিচু মন-মানসিকতার যেসব পুরুষ রয়েছে - তাদেরকে পাল্টাতে হয়ত পারবনা। সমাজের এত বছরের কন্ডিশনিং এর কারণে, এই সচেতনী লেখার অর্থ তারা বুঝেও না বোঝার ভান করবে, অথবা মনে মনে স্ল্যাট শেমিং/রেপ থ্রেট দেবে। কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ জেনারেশনকে আমরা নিরাপদ করতে পারব ইনশাল্লাহ।
৩০ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৫৯
সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: অদ্ভুত এক সমাজে বাস করছি আমরা।এখানে ভিক্টিমকেই দোষারোপ করা হয় সবচেয়ে বেশি।অথচ কেউ যখন হাজার কষ্ট আর বাঁধা অতিক্রম করেও মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে চায় তাখন তাকে সামান্য একটু প্রশংসাও করা হয় না।আমাদের সমাজে আসলেই ছেলেগুলোর বিবেকবোধ ছোটবেলাতেই মেরে ফেলা হয়।তাদের দৃষ্টিতে সমগ্র পৃথিবীর অধিপতি তারা।নারী শুধুই ভোগের বস্ত।
শ্রাবনীর গল্পটিতে সসমসাময়িক সময়ের মানসিক দ্বন্দ্ব আর সংগ্রামের বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
লেখা চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণা আর সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আর পরের পর্বগুলো পাঠের আমন্ত্রণ জানাই।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৫৫
মনিরা সুলতানা বলেছেন: সম্পর্কের মৃত্যু ভীষণ কষ্টের