নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“ কাউকে জ্ঞান বিতরণের আগে জেনে নিও যে তার মধ্যে সেই জ্ঞানের পিপাসা আছে কি-না। অন্যথায় এ ধরণের জ্ঞান বিতরণ করা হবে এক ধরণের জবরদস্তি। জন্তুর সাথে জবরদস্তি করা যায়, মানুষের সাথে নয়। হিউম্যান উইল রিভল্ট। ” -আহমদ ছফা ।

আহমেদ রুহুল আমিন

“ মানূষের জীবনকাল মাত্র দুই দিনের যার একদিন যায় স্বপ্ন দেখতে- একদিন যায় স্বপ্ন ভাঙ্গতে ” ।

আহমেদ রুহুল আমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

।। একজন মা ও তার বেওয়ারিশ বিড়াল মাতৃকতা ।। - আহমেদ রুহুল আমিন ।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৪৮

একটি জীবনঘনিষ্ঠ গল্প । উত্তরবঙ্গের একটি জেলা শহরে খুব কাছ থেকে দেখা একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের নানা উত্থান পতনের এই কাহিনী এই সমাজে- যাদের কেউ খোঁজখবর রাখেনা বা কোনদিন কেউ খোঁজখবর রাখার চেষ্টাও করেনি .... !
। এটি একটি বড়গল্প, তাই ধারাবাহিকভাবে পর্ব আকারে সামু‘র সম্মানীত পাঠকদের জন্য পোস্ট করলাম ।

(পর্ব-২)

ভিতরগড় মহারাজার দিঘী ও এখানকার প্রত্মতাত্বিক প্রাচীন নিদর্শন দেখতে প্রায় সবসময়ই এখানে লোকজনের আনাগোনা লেগেই থাকে । বিশেষ করে, পহেলা বৈশাখে এখানে মেলা বসার কারণে কেনু মিয়াও তিন/চার দিনের জন্য মেলায় চায়ের দোকান দেয় । মেলায় তীল ধারনের জায়গা থাকেনা বলে তার চায়ের দোকানে একটা নুতন ছেলে রাখে যে আলেয়ার থেকে দুই বছরের বড় হবে। ছেলেটার নাম কামরুল সংক্ষেপে কামু বলে ডাকে সবাই। ওর বাড়ি পঞ্চগড় শহরের লাগোয়া চানপাড়া গ্রামে । বোর্ড অফিসের আনছার চৌকিদারের কেমন যেন ভাগিনা । সেই যোগাড় করে দিয়েছে তাকে । বাপমরা এতিম ছেলে । মা ছেড়ে চলে গেছে ঢাকায় গার্মেন্টসের কাকে যেন বিয়ে করে । এখন ছেলের খোঁজ রাখেনা । তাই সদ্য মামার বাড়িতে এসেছে । এখানে মেলা জমে খুব সংক্ষিপ্ত সময় নিয়ে - এই তিন-চার দিন । এলাকাটি ভারত- বাংলাদেশ বোর্ডার সংলগ্ন হওয়ায় পহেলা বৈশাখে এই পাড়ের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয় । তাছাড়া বাংলা শেষবর্ষ ও নববর্ষ মিলে এলাকায় এটি 'শেরুয়া-বিষুয়ার' মেলা হিসেবেও নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে । এখান থেকে সামান্য উত্তরে গেলে ইন্ডিয়ার কাটাতারের বেড়া ।এই কাটাতারের বেড়ায় বাংলা সালের শেষদিন এবং নুতন বছরের প্রথম দিন দুই পাড়ের মানূষের মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ ও বিভিন্ন উপহার বিনিময় হয় । মেলার শুরুতেই প্রথম দুই দিন খুব জমজমাট কেনাবেচা হয় কেনু মিয়ার দোকানে । নুতন ছেলে কামুসহ পাঁচজন মানুষও সামাল দিতে হিমসিম খেতে হয় । তৃতীয় দিন খুব ভোর বেলা উঠে প্রাকৃতিক কর্ম সারতে কামু মহারাজার দিঘীর জঙ্গলের ভিতরে যায় । অনেকক্ষণ না ফেরায় আলেয়া দেখে- 'ও' দিঘীর ধারে পায়চারি করছে ।

সামনে কিছুদুর এগিয়ে গিয়ে আলেয়া হাঁক দেয় -
: 'ওই চেংরা.... দিঘীর পানিত নাভিসনা.... বোঁচা টানে লে যাবে তোক ...'।

- ওর চিৎকারে এই ভোর বেলায় মহারাজার দিঘীর এ পাড়ের পানকৌরির ঝাঁক উড়াল দিয়ে অন্য পাড়ে গিয়ে পড়ল ।

কামু ভয় পেয়ে যায়...এমন বড় দিঘী... কী তার স্বচ্ছ পানি..ওর নেমে সাঁতার কাটতে ইচ্ছে করছে.. । কিন্তু বোঁচার ( কুমির জাতীয প্রাণি ) কথা শুনে ওর গা শির- শির করে.. ।

আলেয়া আবারও বলে -
: 'বুঝচিনা বাউ...হামার গ্রামত একটা ছুয়া এইঠে সাতরায় দিঘি পাড় হচিল ....পাড়ত উঠার আগে অক বোঁচায় টানে লে গেইছে.. । অর মা এলাও আসে অর বেটাক ছাবে ...কতকি মানত-ছানত কইছে..বেটার আর খোঁজ- খবর পায়নি..' ।

জীবনে এই প্রথম অপরিচিত কোন মেয়ে তার সাথে কথা বলছে বলে একই সাথে লজ্জা ও ভাললাগা শুরু করে কামুর । দু'জনে দিঘির পাড়ে হাঁটতে হাঁটতে উঁচু টিলায় উঠে লক্ষ্য করে উত্তরে আকাশসীমায় সবেমাত্র 'কাঞ্চনজঙ্ঘার' পাহাড়টায় লাল আভা পড়ে রোদের ঝিলিক লাগতে শুরু করেছে । এক অদ্ভুত অনুভুতি দু'জনকে অন্য ভাললাগার জগতে নিয়ে যায় । দু'জনে গোল ঘড়ের বেঞ্চীতে একটু জিরিয়ে নেয়ার সময় আলেয়া বিস্মিতভাবে লক্ষ্য করে একটা মাদি ভাড়বিড়ালের দু‘টো তুলতুলে বাচ্চা বেঞ্চীর নীচে ঘুমুচ্ছে । ওর খুব মায়া হলো বাচ্চা দু'টোর জন্য । হাত দিয়ে ধরতে যাবে এমন সময় তার বাপের ডাকে সন্বিত ফেরে দু'জনে এক ভোঁদৌড় দিয়ে দোকানে চলে এসে পসরা সাজাতে শুরু করে ।


( ক্রমশঃ )

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: চলুক।

১০ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৩৮

আহমেদ রুহুল আমিন বলেছেন: ধন্যবাদ..।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.